সময়ের সাথে সাথে বদলে যায় অনেক কিছুই। তেমনি বদলাতে থাকে আমাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলোও।
আমাদের বয়স যেমন বেড়ে চলে তেমনি বয়সের ছাপটাও আমাদের ত্বকে তার অস্তিত্ব জানান দিয়ে যেতে যেন পিছপা হয় না।
সুন্দর তারুণ্যময় ত্বকও আস্তে আস্তে তার দীপ্তি হারায়। স্বাস্থ্যজ্জল ঘন কালো চুলও হুট করেই তার লাবণ্য হারায়।
এসময় হতাশায় পরে যাই আমরা অনেকেই। হতাশ হবারই কথা!
তবে সমস্যা আছে জেনে এর কোন সমাধান নেই ভাবাটা কিন্তু একদমই ভুল।
আমরা জেনে নিব আমাদের মুখের এই বয়সের ছাপ কমিয়ে আনতে ভিটামিন ই কিভাবে কাজ করে।
চেহারায় বয়সের ছাপ কেন পড়ে?
কোন সমস্যার সমাধান চাওয়ার আগে, সমস্যাটি কেন হচ্ছে তা জেনে নেয়াটা বেশি জরুরী।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক কাজ কর্ম নানা কারণে ব্যাহত হয়।
কোলাজেন নামক একটি উপাদান মূলত আমাদের স্কিনের তারুণ্য ধরে রাখতে কাজ করে।
স্কিনকে টানটান রাখার পাশাপাশি মসৃণ রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে এই উপাদানটি।
কিন্তু আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে আমাদের স্কিনের এই কোলাজেন উৎপাদনের ক্ষমতাও কমতে শুরু করে।
এর ফলে ত্বকের স্বাভাবিক তারুণ্যও আস্তে আস্তে বিলীন হতে থাকে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে তবে কি শুধু কোলাজেন নামক একটি উপাদানই এই সমস্যার জন্যে দায়ী? তা কিন্তু নয়।
প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় আমরা এমন অনেক কাজ বুঝে না বুঝে করে চলেছি যার জন্যেও আমাদের ত্বকে দ্রুত বয়সের ছাপ পড়ে যায়।
যেমন, সারাদিন পরিমিত পরিমাণে পানি না পান করলে, ঠিক মত না ঘুমালে, খুব বেশি বাইরে বা রোদে থাকা হলে।
পাশাপাশি ধূমপান করা এবং নানা রকম মানসিক চাপ থেকেও আমাদের চেহারায় সহজেই বয়সের ছাপ পড়ে যায়।
স্কিন টাইপ এবং ভিটামিন ই
আমাদের স্কিনে ন্যাচারাল ভাবেই ভিটামিন ই থাকে।
তবে ড্রাই, কম্বিনেশন এবং নরমাল স্কিনের চেয়ে যাদের স্কিন তুলনামূলক ভাবে একটু অয়েলি তাদের ত্বকে ভিটামিন ই উপাদানটির প্রোডাকশন বেশি হয়ে থাকে।
তাই দেখা যায়, অয়েলি স্কিন যাদের তাদের যতটা না বেশি ভিটামিন ই প্রয়োজন এর চেয়ে অনেক গুণ বেশি প্রয়োজন হয় ড্রাই স্কিন যাদের তাদের।
এবং বিশেষত দেখা যায় অয়েলি স্কিনের চেয়ে ড্রাই স্কিন যাদের তাদের মুখে বয়সের ছাপও পরে তাড়াতাড়ি।
তাই স্বাভাবিক ভাবেই যাদের ড্রাই স্কিন তাদের ভিটামিন ই এর প্রয়োজনীয়তা অন্যান্য স্কিন টাইপের চেয়ে বেশি।
আমাদের স্কিনে থাকা ভিটামিন ই এর পরিমাণ কমে যায় কেন?
ধীরে ধীরে আমাদের বয়স সময়ের সাথে বেড়েই চলেছে।
সময় এবং বয়সের সাথে সাথে আমাদের স্কিনে থাকা প্রয়োজনীয় সব উপাদানগুলোর প্রোডাকশন এবং কাজ করার ক্ষমতাও কিন্তু কমে যেতে থাকে।
একই ভাবে শরীরে বিদ্যমান ভিটামিন ই এর পরিমাণও কিন্তু আস্তে আস্তে কমে আসে।
এর পাশাপাশি বাহ্যিক কারণ তো আছেই। তাদের মধ্যে অন্যতম হল ক্ষতিকর সূর্যরশ্মি।
সূর্যরশ্মিতে থাকে ক্ষতিকারক আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি।
তাই আমাদের স্কিন যত বেশি এই আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির সংস্পর্শে আসে তত বেশি আমাদের স্কিনের সেলগুলোও ড্যামেজ হতে থাকে।
কিছু কিছু উপাদান এই ক্ষতিকারক আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির বিপক্ষে ফাইট করে।
তাদের মধ্যে ভিটামিন ই অন্যতম। ভিটামিন ই তে রয়েছে একটি স্ট্রং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।
এই উপাদানটির মেইন কাজই হচ্ছে ক্ষতিকারক আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে শক্তি সঞ্চয় করা এবং তা ব্যবহার করে আমাদের স্কিনের উপর একটি ডিফেন্স সিস্টেম গড়ে তোলা।
তবে একটা সময় স্কিনকে রক্ষা করতে করতে ভিটামিন ই এর নিজস্ব কার্যক্ষমতাও কমে আসতে থাকে।
এই পর্যায়ই মূলত আমাদের প্রয়োজন হয় ভিটামিন ই যুক্ত স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টসের, যা ভিটামিন ই এর কার্যক্ষমতা পুনরায় বৃদ্ধি করতে হেল্প করে।
ভিটামিন ই কীভাবে অ্যান্টি এজিংয়ে সাহায্য করে?
স্কিনের নানা ধরনের সমস্যাগুলোর মধ্যে পিগমেন্টেশন বা মুখে নানা রকম দাগ, বয়সের ছাপ পরে যাওয়া এগুলো খুবই কমন।
এছাড়াও আন ইভেন স্কিনটোন এর সমস্যায়ও ভোগেন অনেকেই।
ভিটামিন ই তে থাকা দারুণ কার্যকরী হিলিং প্রপারটিজ আমাদের স্কিনের এই ধরণের সমস্যা গুলোর সমাধান দিতে কাজ করে থাকে।
অনেকেই কনফিউসড থাকেন ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি কি একসাথে ইউজ করা যাবে কি না? অবশ্যই যাবে!
বরং যে সকল প্রোডাক্টস এ একই সাথে ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি থাকে তা আমাদের স্কিনের ড্যামেজ রিপেয়ারে আরও বেশি কার্যকরী।
নানা ধরনের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস এবং ভিটামিন ই
যেকোনো টাইপের স্কিনের জন্যেই ভিটামিন ই অনেক বেশি হেল্পফুল এবং প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।
তবে ড্রাই স্কিন যাদের তারা যখনই কোন প্রোডাক্ট কিনতে যাবেন অবশ্যই খেয়াল করে দেখবেন ইনগ্র্যাডিয়েন্টস লিস্টে ভিটামিন ই উপাদানটি ম্যানশন করা আছে কি না।
যাদের স্কিন খসখসে এবং রুক্ষ তাদের জন্যে ভিটামিন ই যুক্ত সিরাম ব্যবহারের বিকল্প নেই।
হাত পায়ের যত্নে বা চুলের যত্নেও ভিটামিন ই যুক্ত প্রোডাক্টস স্কিন এবং হেয়ারকে ময়েশ্চারাইজ রাখতে সাহায্য করবে।
মনে রাখতে হবে, যখনই আমাদের স্কিনে সেবামের প্রোডাকশন কমে যায় তখনই কিন্তু আমাদের স্কিনের চামড়া ঝুলে পরা, বলিরেখা দেখা দেয়া, চামড়া কুঁচকে যাওয়া, মলিন হয়ে যাওয়ার মত সিরিয়াস সমস্যা দেখা দিতে থাকে।
তাহলে বুঝতেই পারছি, বার্ধক্য রোধে ভিটামিন ই উপাদানটির প্রয়োজনীয়তা কত বেশি।
তবে চিন্তার কোন কারণ নেই! চেষ্টা করবেন যেকোন স্কিন কেয়ার বা হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টস যেমন- ক্রিম, আই ক্রিম, সিরাম, ময়েশ্চারাইজার, হ্যান্ড ক্রিম, অয়েল বাছাই করার সময় ভিটামিন ই যুক্ত প্রোডাক্ট বাছাই করে নিতে।
স্পেশালই যাদের স্কিন তুলনামূলকভাবে ড্রাই বা রুক্ষ।
তাহলে আজকে আমরা জেনে নিলাম অ্যান্টি এজিং এর জন্যে ভিটামিন ই কিভাবে কাজ করে এবং এর নানা গুনাগুণ নিয়ে।
তবে আরও ভাল হয় যদি সমস্যা শুরু হওয়ার আগেই একটু সাবধান হওয়া যায়।
তাই দুশ্চিন্তা এক দিকে রেখে ত্রিশ চল্লিশের কোঠায় বয়স আসার আগেই নিজেকে ভালো রাখতে প্রস্তুতি শুরু হোক এখনই।
বয়সের ছাপ কমাতে নানা উপাদানের মধ্যে অবশ্যই সিলেক্ট করে নিন ভিটামিন ই যুক্ত প্রোডাক্টস।