ত্বকের সার্বিক সুস্থতার জন্য ভিটামিন সি এর উপকারিতাগুলো জানেন কি? মসৃণ, উজ্জ্বল কিংবা দাগহীন ত্বকের রহস্য লুকিয়ে রয়েছে ওই ভিটামিন সি এর মধ্যেই!
সেজন্যই তো কমলালেবু থেকে শুরু করে বাতাবিলেবু, ত্বকের যত্নে কেউ কারো চেয়ে কম যায় না।
ভিটামিন সি, যা কিনা অ্যাসকর্বিক অ্যাসিড নামেও পরিচিত, তা কিন্তু আদতে খুব শক্তিশালী একটা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা আমাদের শরীরে অনাক্রম্যতা বাড়াতে সাহায্য করে।
সোজা বাংলায় ভিটামিন সি হলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের গোডাউন, ফলে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে ত্বক বাঁচাতে হলে ভিটামিন সি ছাড়া গতি নেই!
এটি সূর্য রশ্মিতে পুড়ে যাওয়া, কালো হওয়া ত্বকের লাবণ্য ফিরিয়ে আনে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়াও রোধ করে।
তাই ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফেসওয়াশ, টোনার এবং ময়েশ্চেরাইজিং ক্রিম ব্যবহারে উপকারিতা পাওয়া যায়।
শুধু তাই নয়, কোলাজেনের বৃদ্ধি ঘটিয়ে ত্বক টানটান সতেজ রাখতেও জুড়ি নেই ভিটামিন সি এর।
ঝলমলে মসৃণ ত্বক আর সেই সঙ্গে মনকাড়া চনমনে সুগন্ধ, সব মিলিয়ে ভিটামিন সি মানেই একঝলক খুশির বাতাস!
রূপচর্চার জগতে ভিটামিন সি এতটাই জনপ্রিয় যে একাধিক স্কিনকেয়ার প্রডাক্টেও ভিটামিন সি এর নির্যাস মেশানো হয়।
আর তাতেই অনেক মেয়ে বিভ্রান্ত হয়ে যান! কীভাবে আর কখন ভিটামিন সি যুক্ত ক্রিম বা সিরাম মাখলে তার পুরো ফায়দাটা তোলা যাবে, তা তারা বুঝে উঠতে পারেন না।
এ সমস্ত প্রশ্নেরই আজ জবাব নিয়ে এসেছি আমরা! জেনে নিন ঠিক কীভাবে ভিটামিন ই মাখলে তার সম্পূর্ণ উপকারিতা উসুল করে নিতে পারবে আপনার ত্বক।
ভিটামিন সি আপনাকে বাঁচাতে পারে
সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রেডিয়েশনের ফলে কিন্তু অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হয়, যার প্রভাব খুব সহজেই দেখা যায় আপনার মুখে।
আর যার ফলে অকালে মুখে বয়সের চাপ, সান স্পট এমনকি স্কিন ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগও হতে পারে।
এসবের থেকে বাঁচার কিন্তু খুব সহজ রাস্তা আছে আপনাদের সামনেই।
আলট্রা ভায়োলেট রে থেকে থেকে বাঁচার জন্য তো সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেনই। সেটায় যেন থাকে পর্যাপ্ত এসপিএফ (নূন্যতম ৫০) ও ভিটামিন সি।
আমাদের ত্বক সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মির সংস্পর্শে আসার ফলে যে সান ড্যামেজ আর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, তা থেকেও ভিটামিন সি ত্বককে রক্ষা করে।
এছাড়া সান বার্ন, ত্বকের লাল ভাব, র্যাশ ইত্যাদি কমাতে যদি চান, তাহলে ভিটামিন সি আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড হতে পারে।
তাছাড়া ভিটামিন সি কিন্তু আপনার মুখকে উজ্জ্বল আর রেডিয়ান্ট গ্লোয়িং করতে আর স্কিনকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে দারুণ কাজে লাগে।
তাই ভিটামিন সি যুক্ত খাবার, ফল ইত্যাদি কিন্তু আপনাকে এক্ষেত্রে সহজেই সাহায্য করতে পারে।
ত্বকের যত্নে ভিটামিন সি
আমাদের শরীরে, ত্বকের ক্ষেত্রে ভিটামিন সি কিন্তু খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। ত্বকের প্রধান প্রোটিন কোলাজেন সংশ্লেষে ভিটামিন সি সাহায্য করে।
তাছাড়া আপনার কাটা, ঘা, দাগ ইত্যাদি সারাতেও কিন্তু ভিটামিন সি-র জুড়ি নেই। তাই ব্রণের দাগ সারাতে ভিটামিন সি এর জুড়ি নেই।
ভিটামিন সি এর সিরাম
অ্যাসকরবিক অ্যাসিড হিসেবে পরিচিত এই ভিটামিন আমরা খাবারের মাধ্যমে পাই। আবার ওষুধের দোকানে ভিটামিন সি ট্যাবলেট পাওয়া যায়।
রোগ প্র্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আর সর্দি-কাশি দূরে রাখতে চিকিৎসকরা ভিটামিন সি গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
তবে এই ভিটামিন ত্বকের কোষকলা ক্ষয় প্রতিরোধ করার প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। আর এই উপকার পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ত্বকে ভিটামিন সি এর সিরাম ব্যবহার করা।
ত্বক টান টান রাখতে ‘কোলাজেন’ সহায়তা করে। যা তারুণ্য বজায় রাখে। ভিটামিন ‘সি’ ত্বকে কোলাজেনের মাত্রা বাড়িয়ে ত্বক উজ্জ্বল ও টানটান রাখতে সহায়তা করে।
সকালে না রাতে? কখন ভিটামিন সি?
ভিটামিন সি এর মূল কাজটা হলো ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে বাঁচানো আর ফ্রি র্যাডিক্যালের আক্রমণ প্রতিহত করা।
এজন্য অনেকেই দিনের বেলাতেই ভিটামিন সি-যুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকেন।
কিন্তু দিনের বেলা ভিটামিন সি মাখার সমস্যা হলো, তা রোদের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে, ফলে যাদের ত্বক সেনসিটিভ, তাদের ত্বকে জ্বালা করতে পারে।
পর্যাপ্ত এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিনের সঙ্গে ভিটামিন সি মিশিয়ে মাখলে জ্বালাভাব খানিকটা কমে বটে।
কিন্তু তাও আমাদের পরামর্শ যদি মানেন, ভিটামিন সি দিনের বেলা না মাখাই ভালো। বরং রাতে ঘুমানোর আগে নাইট ক্রিমের সঙ্গেই মেখে নিন।
যখন ঘুমাবেন, সেই সময় ভিটামিন সি আপনার ত্বকের কোলাজেন বাড়িয়ে তুলে ত্বক টানটান, তারুণ্য ধরে রাখবে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন ভিটামিন সি?
প্রথমেই মনে রাখা দরকার, খুব অল্প পরিমাণে ভিটামিন সি সম্বলিত প্রসাধনী নিলেই কাজ দেবে। একগাদা নিয়ে নষ্ট করবেন না।
মুখ পরিষ্কার করে টোনার লাগিয়ে নিন, এর পর লাগান ভিটামিন সি যুক্ত সিরাম।
ত্বক তা শুষে নিলে তারপর ময়শ্চারাইজার বা নাইট ক্রিম মেখে নেবেন। সারাদিনে একবার মাখলেই যথেষ্ট!
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে সারা মুখে ফোঁটা ফোঁটা করে ভিটামিন সি সিরাম লাগিয়ে আঙুল দিয়ে ট্যাপ করে করে মুখের সঙ্গে মিশিয়ে দিন।
সকালে উঠে মুখ ধুয়ে পর্যাপ্ত এসপিএফ-যুক্ত সানস্ক্রিন মেখে নেবেন।
আর একটা কথা! ভিটামিন সি মাখলে কিন্তু সানস্ক্রিন মাখতেই হবে!
এমনকী, আপনি যদি রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগেও ভিটামিন সি মেখে থাকেন, তাহলেও পরের দিন বাইরে বের হবার আগে অবশ্যই ব্রড-স্পেকট্রাম ও অন্তত ৫০ এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন মেখে নেবেন।
মনে রাখবেন
শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় ভিটামিন সি। এছাড়া ত্বক ও হাড়ের কোলাজেনের সুরক্ষা দিতে, দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভিটামিন সি উপকারি।
ভিটামিন সি এর অভাবে অবসন্নতা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
যদি দেখেন যে ক্লান্তিবোধ আপনাকে গ্রাস করে নিচ্ছে, ক্রমশ ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছেন, মাথা ব্যথা হচ্ছে ঘন ঘন, দুর্বল হয়ে পড়ছে নখের স্বাস্থ্য – তাহলে অতি অবশ্যই ভিটামিন সি বেশি করে খেতে হবে।
টকজাতীয় সব ধরনের ফলে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
লেবু, মাল্টা, কমলা, জলপাই, আমলকী, আনারস ইত্যাদিতে ভিটামিন সি থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, কাঁচামরিচেও ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
অতএব, নিজের শরীরের উপকারিতায় ভিটামিন সি এর ব্যবহার নিশ্চিত করুন। মন থেকে ত্বক, সব সুস্থ রাখুন।