সন্তান জন্মানোর পর একটা বাড়তি পাওনা হলো পেটে মাতৃত্বজনিত দাগ বা স্ট্রেচ মার্কস।
গর্ভবতী হওয়ার পর মেয়েদের শরীরে অসংখ্য পরিবর্তন আসে।
তার মধ্যে অন্যতম হলো ওজন বেড়ে যাওয়া। আর ওজন বেড়ে এলে স্ট্রেচ মার্ক দেখা দেওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
এই দাগ দূর করার উপায় খুঁজে থাকেন অনেকেই। কেউবা আবার জানতে চান এটা কি আসলেই দূর করা সম্ভব কিনা।
সেই আলোচনা নিয়েই হাজির আমরা। আসুন জেনে নেয়া যাক, মাতৃত্বজনিত এই দাগগুলো আসলেই দূর করা সম্ভব কিনা।
যেভাবে তৈরি হয় মাতৃত্বজনিত দাগ
একজন মা প্রায় ৪০ সপ্তাহ ধরে তাঁর সন্তানকে প্রায় দুই লিটার পানিসহ গর্ভে ধারণ করেন৷ তাছাড়া তখন জরায়ুর আয়তন আগের চেয়ে ২০ গুণ বড় হয়৷
তবে মেয়েদের পেটের ত্বকের টিস্যু এমনভাবে তৈরি যে, তা ধীরে ধীরে রাবারের মতো ঢিলা বা বড় হতে পারে৷
গর্ভে থাকা সন্তানের আকার বড় হওয়ার সাথে সাথে পেটও বড় হতে থাকে৷
ফলে তখন স্বাভাবিকভাবেই পেটে টান পড়ে৷ এতে পেটে প্রথমে লালভাব পরে নীল হয়ে যাওয়া ফাটা দাগ দেখা দেয়৷
শরীরের কোথায় কোথায় স্ট্রেচ মার্ক পড়ে?
স্ট্রেচ মার্ক কোথায় পড়ে এবং কেন পড়ে সেটা খুব সহজেই বোঝা সম্ভব: শরীরের যে সব জায়গায় ফ্যাট সবচেয়ে বেশি জমে, স্ট্রেচ মার্কও সেখানে সেখানেই দেখা দেয়।
অর্থাৎ নিতম্ব, কোমর, উরু আর পেটেই স্ট্রেচ মার্ক দেখা যায়।
তবে এমনটা যে সবার ক্ষেত্রেই হয় তা কিন্তু নয়৷ এর পেছনে কিছুটা বংশগত কারণও থাকতে পারে৷
কখন স্ট্রেচ মার্ক পড়া শুরু হয়
স্ট্রেচ মার্ক এড়ানো যায় না, কিন্তু গর্ভাবস্থার অন্তত চারমাস থেকে পাঁচমাস না হলে স্ট্রেচ মার্ক পড়া শুরু হয় না।
ফলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এই সময়টা কিন্তু যথেষ্ট! আমরা দিয়ে দিচ্ছি কিছু টিপস।
এই দাগ প্রতিরোধ করার কিছু পরামর্শ
গর্ভবতী থাকাকালীন স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে৷ অর্থাৎ খাবারের তালিকায় থাকতে হবে শস্যদানাযুক্ত খাবার, মাছ এবং বিভিন্ন সবজি৷
যেমন ব্রোকলি, গাজর এবং ভিটামিন ‘ই’ ও ‘সি’ যুক্ত খাবার৷ তাছাড়া চিনিবিহীন চা এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে৷
হাঁটাহাঁটি করলে শরীরে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন হয়৷ ফলে ত্বক দাগ হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারে৷
গর্ভবতীরা ‘ইয়োগা’ বা যোগ ব্যায়ামের মতো হালকা ব্যায়াম করতে পারেন৷
প্রথমে ঠাণ্ডা, পরে গরম, আবার ঠাণ্ডা – এভাবে শাওয়ার নিলে ত্বকে ব্লাড সার্কুলেশন ভালোভাবে হয়৷
গর্ভধারণের শুরু থেকেই এমনটা করা উচিত৷ প্রতিদিনই গোসল করার সময় পেট, নিতম্ব, ঊরু ও স্তনে আলাদা আলাদাভাবে ঠাণ্ডা-গরম-ঠাণ্ডা পানির শাওয়ার নিতে হবে৷
মনে রাখতে হবে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিয়েই গোসল শেষ করতে হবে৷ গোসলের সময় শরীর হালকাভাবে ম্যাসাজ করলে ত্বকে দাগ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে৷
পেটে তেল মালিশের কার্যকারিতা
পেটের সন্তানের জন্ম যাতে সহজভাবে হয় সেজন্য গর্ভবতী নারীদের পেটে তেল মালিশ করার প্রচলন এশিয়ার দেশগুলোতে বহু আগে থেকেই চলে আসছে৷
তবে এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে দু’রকম তেল। এমনি যে কোনো তেলের সাথে এসেনশিয়াল অয়েল।
যেখানে এসেনশিয়াল অয়েল শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের জোগান দেয়,দাগ মেলাতে সাহায্য করে। আর এমনি তেল স্কিনকে হাইড্রেটেড রাখে,ময়েশ্চারাইজড রাখে।
স্কিনকে ভেতর থেকে নারিশ করে। তাই রোজ এই তেল ব্যবহার করলে, দাগ ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে জার্মান ফার্মাসিস্ট তানিয়া ফ্রানৎস বলছেন, সবচেয়ে ভালো হয় যদি প্রতিদিন দুই বেলা সুগন্ধি বা রাসায়নিক পদার্থ ছাড়া তৈরি বাদাম তেল মালিশ করা হয় পেটে এবং তার আশেপাশে৷ কারণ বাদাম তেল ত্বককে মসৃণ ও সুন্দর রাখে৷
তেল মালিশ করার উপায়
হাতে তেল নিয়ে খুব ধীরে ধীরে প্রথমে নাভি থেকে শুরু করে পেটের চারিদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মালিশ করতে হবে৷
মনে রাখতে হবে কোনোভাবে যেন পেটে চাপ না লাগে৷
কিছুক্ষণ পর শুধু বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনি দিয়ে খুব মোলায়েমভাবে নাভি থেকে ওপরের দিকে ঘোরাতে হবে৷ এভাবে নিয়মিত যত্ন নিলে শতভাগ না হলেও পেট অনেকটাই দাগমুক্ত রাখা সম্ভব৷
যদি কোনো এসেনশিয়াল অয়েল না পান, তাহলে কাজে লাগান শুধু অলিভ অয়েলকে।এতে আছে ভিটামিন এ, ডি ও ই যা স্কিনকে এক্সফোলিয়েট করে।
স্কিনকে রাখে ময়েশ্চারাইজড। রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। তার ফলে দাগ ধীরে ধীরে হালকা হয়।
অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারে রয়েছে উপকার
অ্যালোভেরা জেল নিয়ে ওই দাগের জায়গায় লাগান। হালকা ম্যাসাজ করে লাগাবেন।
ভালো করে ম্যাসাজ করে লাগাবেন যতক্ষণ না স্কিনে ওটা ভালো ভাবে মিশে যাচ্ছে। স্কিনে ভালো ভাবে মিশে গেলে, ব্যাস তারপর আর ম্যাসাজ করার দরকার নেই।
এটা ধোবার দরকার নেই। রাতে লাগিয়ে সারারাত রেখে দিন। এটা রোজ রাতে করুন। তবে সময় থাকলে দিনে দু’বার করেও লাগাতে পারেন, আরও ভালো ফলের জন্য।
অস্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন না
গর্ভাবস্থায় আপনি আসলে দু’জন মানুষের খাবার খান, তাই কথায় কথায় খিদে পাওয়া স্বাভাবিক!
কিন্তু সেই খিদে পাওয়াকে গাদা গাদা জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অজুহাত বলে ধরে নেবেন না। খিদে মেটাতে বাটি ভরে টাটকা ফল খান।
জাঙ্ক ফুড আপনাকে অস্বাস্থ্যকর বাড়তি ওজন ছাড়া আর কিছু দেবে না। আর অতিরিক্ত বাড়তি ওজন হলে স্ট্রেচ মার্ক নিয়ে মুশকিলে পড়তে হবে।
মনে রাখবেন
গর্ভাবস্থায় আপনার ত্বক তার স্বাভাবিক তেল হারিয়ে ফেলে, ফলে ত্বকের রুক্ষতা কমাতে সেই তেলের অভাব পূরণ করা খুব জরুরি।
এক্ষেত্রে ময়শ্চারাইজার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। কমপক্ষে দিনে দুই বার ময়শ্চারাইজ করা জরুরি।
একটা ব্যাপার পরিস্কার মনে রাখা দরকার, এই ফেটে যাওয়া দাগ কিন্তু কখনোই পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয়।
মানে আপনি যদি একদম গর্ভধারণের আগের মত পেট চান তাহলে সেটা এভাবে সম্ভব নয়।
তবে চেষ্টা করলে দাগগুলো হালকা করে দেয়ার ব্যবস্থা করা যায়। মানে স্কিনের সাথে অনেকটাই মিলিয়ে যাবে যদি এগুলো ট্রাই করেন।