বর্তমান সময়ে কিটো ডায়েট খুব প্রচলিত একটি খাদ্যাভ্যাস পদ্ধতি। নানারকম ডায়েটের মধ্য থেকে অনেকেই কিটো ডায়েটকে বেছে নিচ্ছেন। কিটো ডায়েট করে নিজের আমূল পরিবর্তন করেছেন বলে জানাচ্ছেন অনেকেই। যার মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে শরীরের মেদ ঝরিয়ে ফেলা সম্ভব।তবে, কিটো ডায়েট করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
কীভাবে কিটো ডায়েটে করতে হয়?
চাল, আটা, চিনি, আলু, দুধ ও সয়াবিন তেলের তৈরি যেকোনো খাবার তিন/চার সপ্তাহ খাওয়া যাবে না।
যেমন ভাত, রুটি, পাউরুটি, মিষ্টি, ফাস্টফুড, বাইরের ভাঁজা-পোড়া, কোল্ড ড্রিংস ইত্যাদি।
যেসব ফল স্বাদে মিষ্টি সেগুলোও সাময়িক সময়ের জন্য বাদ দিতে হবে।মোট কথা দুই/তিন সপ্তাহ শরীরকে সুগার ও শর্করা মুক্ত রাখতে হবে।
কিটো ডায়েট চার প্রকার
১. স্ট্যান্ডার্ড কিটোজনিক ডায়েট
এটাতে কার্ব ৫%, প্রোটিন ২৫ % আর ফ্যাট ৭০% থাকে।
২. সাইক্লিক্যাল কিটোজনিক ডায়েট
এই কিটো তে সপ্তাহে দুদিন হাই কার্ব খাওয়া যায়।
৩. টার্গেটেড কিটোজনিক ডায়েট
এই কিটোতে ওয়ার্ক আউটের আগে বা পরে কার্ব খেতে পাওয়া যায়।
৪. হাই প্রোটিন কিটো ডায়েট
এটা অনেকটা স্ট্যান্ডার্ড কিটো ডায়েটের মতোই, শুধু প্রোটিন ২৫% থেকে বেড়ে ৩৫% হয়ে যায়।এটাতে ফ্যাট ৬০%, প্রোটিন ৩৫% আর ফ্যাট ৫%. বডি বিল্ডার বা এথেলেটরা এটা করে থাকে।
কী কী খেতে পারবেন?
- গরু, মুরগি, সবধরনের মাছ, ডিম, বাটার, পনির, দই, ঘি, বাদাম।
- হেলদি অয়েল-যেমন অলিভ ওয়েল, কোকনাট ওয়েল, সূর্যমুখী অয়েল।
- যেকোন লাল-সবুজ সবজি, পালং, ব্রকলি, বাধাকপি, ফুলকপি, লাউ।
কিটোজেনিক ডায়েটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- কিটোজেনিক ডায়েট গ্রহণ করলে শুরুর দিকে সাধারণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন, পানি ও লবণের ভারসাম্যহীনতা।
- হঠাৎ কিটো ডায়েট শুরু করলে শরীরে পানি ও মিনারেলের ভারসাম্য কমে যেতে পারে। ফলে রক্তচাপের কম বেশি হতে পারে। এতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কিংবা লবণ বাদ দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
- অতিরিক্ত ফ্যাট গ্রহণের ফলে কিটো ডায়েটে হজমের সমস্যা হতে পারে। কারও কারও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। তখন ফাইবার জাতীয় সবজি বেশি করে খেতে হবে।
- ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্টও ওষুধ হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। অনেকের আবার ডায়রিয়াও হতে দেখা যায়। এমন হলে স্যালাইন ও ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
- তবে ২-৩ সপ্তাহ ধরে কিটো ডায়েট চার্ট মেনে চললে ধীরে ধীরে তা শরীরের সাথে মানিয়ে যায় এবং পরে আর কোনো সমস্যা হয় না।
- কিটো ডায়েটের কয়েকটি খারাপ দিক হলো অধিক চর্বি ও প্রোটিনের জন্য একদিকে ডায়রিয়া, অন্যদিকে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
- কিডনিতে পাথর ও কিডনির অন্যান্য সমস্যা, হৃদ্রোগ, পিত্তথলিতে পাথর (গলব্লাডার স্টোন), প্যানক্রিয়াসের অসুস্থতা, থাইরয়েডের সমস্যা, হজম শক্তি কমে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়া প্রভৃতি দেখা দিতে পারে।
- বেশি প্রোটিন ও চর্বির জন্য ত্বকে ফুসকুড়ি (র্যাশ) ওঠা, ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হওয়া প্রভৃতিও উল্লেখযোগ্য। ডায়রিয়ার জন্য শরীর দুর্বল হয়ে কর্মক্ষমতা কমে যায়।
জেনে রাখুন
খাবারে শর্করা অর্থাৎ ভাত, রুটি, চিড়া, মুড়ি, খই ইত্যাদি বাদ দিলে দেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
শর্করা শক্তির অন্যতম উৎস। এর অভাবে শরীরে দহন ক্রিয়া থেমে যায়।
ফলে কিটোন বডি নামে দেহে ক্ষতিকর পদার্থ সৃষ্টি হয়। প্রদাহ হয়ে ওঠে অম্লত্ব।
শর্করা বাদ দিলে ওজন অবশ্যই কমবে। তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে অস্বীকার করা যাবে না।
কিটো ডায়েট ৭-১০ দিন এমনকি ১৫ দিন পর্যন্ত চালানো যায়। তবে জীবনভর নয়।
কিটোজেনিক ডায়েটের অতিরিক্ত প্রোটিন একদিকে যেমন ব্যয়বহুল, অন্যদিকে এটা কিডনির ওপর চাপ ফেলে।
এবং রক্তের চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
সুতরাং ওজন কমাতে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার কবলে না পড়াই ভালো।
সহজলভ্য সুষম খাবার পরিমিত পরিমাণে খান।
পয়সা খরচ করে নয়, কম খরচে ওজন কমান।