দিন যত যাচ্ছে গরম ততই বাড়ছে।
অতিরিক্ত গরমে আমাদের সবার ই নাজেহাল অবস্থা হয়ে যায়।
গরমে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বেড়ে গেলে ফরম লাগার পাশাপাশি শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ও বের হয়ে যায় ফলে শরীর অসুস্থ ও ডিহাইড্রেট হয়ে পরে ।
কেনো ফলের শরবত বা পানীয় জরুরি
এই গরমে শরীর আর্দ্র ও ঠান্ডা রাখা খুব জরুরি।
তার জন্য প্রয়োজন ফলের শরবত বা পানীয়।
ফলে থাকে প্রচুর পানি ও ভিটামিন যা শরীর কে ঠান্ডা ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে।
আমাদের দেশীয় ফল ভিটামিন এ পরিপূর্ণ আর খুব ই সহজলভ্য।
তাই আমাদের হাতের কাছে থাকা ও খুব কম খরচে বানিয়ে ফেলা যাবে যেকোনো শরবত।
কিন্তু তা অবশ্যই হতে হবে স্বাস্থ্যকর।
৭ টি স্বাস্থ্যকর শরবত বা শেক
লেবুর পানি
আমাদের দেশে শরবতের কথা মাথায় আসলেই যেটার কথা সবার আগে আসে সেটা হচ্ছে লেবু।
লেবুতে আছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সমারোহ যা আমাদের বিভিন্ন রোগের ও সল্যুশনস।
লেবুতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও উদ্দীপনা যোগায়।
এ ছাড়া এর ফ্ল্যাভোনয়েড নামের উপাদান যকৃতে চর্বি ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমায়।
এক গ্লাস ঠান্ডা পানিতে ২ চামচ লেবুর রস, চিনি, তোকমাদানা ও সামান্য বরফ কুচি দিয়ে খুন সহজেই এই শরবত বানিয়ে খেয়ে নিতে পারেন।
এই গরমে লেবুর শরবত সবচেয়ে ইফেক্টিভ উপায় নিজের শরীর কে সতেজ রাখার।
লাচ্ছি
লাচ্ছি তে আছে এমন কিছু উপাদান যা শরীরকে ঠান্ডা করে মনে আনে তৃপ্তি।
এই গরমে লাচ্ছি যেমন উপকারী একটি পানীয় তেমনি খুব মজাদার ও একটি খাবার।
২ চামচ মিষ্টি দই, লিকুইড দুধ ২৫০ মি লি, গুড়া দুধ দেড় চামচ, চিনি ও সামান্য বরফ কুচি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিলেই রেডি।
ক্যালরি এভয়েড করতে চাইলে চিনির বদলে আখের গুড় দিয়েও বানিয়ে পান করা যাবে।
তরমুজের জুস
তরমুজ একটি গ্রীষ্মকালীন ফল।
এটি খুব ঠান্ডা যা গ্রীষ্মকালে বেশ জনপ্রিয়।
এতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে।
এই ফলে ৬% চিনি এবং ৯২% জল এবং অন্যান্য উপাদান ২%।
এই ফলটি ভিটামিন এ জাতীয় ফল।
খুবই মিষ্টি ও সতেজকারক তরমুজের শরবত গরমের চমৎকার পানীয়।
তরমুজে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে।
তরমুজ কেটে টুকরো টুকরো করে ব্লেন্ডারে দিন।
তার সাথে কিছু পুদিনা পাতা যোগ করে ভালোনভাবে ব্লেন্ড করুন।
যারা বিট লবণ পছন্দ করে চাইলে বিট লবণ এড করে নিতে পারেন।
এটা যেহেতু প্রাকৃতিক ভাবেই খুব মিষ্টি তাই আলাদা চিনি যোগ করার প্রয়োজন পড়ে না।
তরমুজ প্রাকৃতিক ভাবে আর্দ্রতা রক্ষাকারী একটি ফল।
এতে অনেক আঁশ থাকে যা অনেকক্ষণ পেট ভরা-ভাব আনে ও শরীর আর্দ্র রাখে।
পাশাপাশি ইলেক্ট্রোলাইট, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ।
কলা ও আপেলের মিল্কশেক
সাধারণত একটি বড় কলায় (৮-৯ ইঞ্চি) রয়েছে ১২০ ক্যালরি ও ৪৯০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম।
গবেষকদের মাধ্যমে জানা গিয়েছে যে, একটি কলায় প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম থাকে।
আর মানবদেহে প্রতিদিন ১৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়ামের যোগান দেয়া গেলেই স্ট্রোকের হাত থেকে বছরে বেঁচে যেতে পারে ১০ লক্ষ মানুষ।
তাই নিঃসন্দেহে কলা খুবই উপকারী একটি ফল।
খোসাসহ আপেলের প্রতি ১০০ গ্রাম অংশে রয়েছে প্রায় ৮০% পানি, যা শরীরের জন্য অতীব দরকারি।
এই ২ টি ফল বারোমাসি যা আপনি খুব সহজেই যে কোনো সময় ই এই দল দুটো দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন গরমের চমৎকার পানীয়।
একটি ব্লেন্ডারে ছোট সাইজ এর ২ টি কলা, মিডিয়াম সাইজ এর একটি আপেল, গুড়া দুধ ২ চামচ, লিকুইড দুধ ২৫০ মিলি, ভ্যানিলা এসেন্স, দারচিনি গুড়া, চিনি, পানি ও বরফ কুচি দিয়ে ব্লেন্ড করুন।
ব্লেন্ড করা শেষে একটি গ্লাসে সার্ভ করুন আর ঠান্ডা ঠান্ডা পান করুন।
শশার জুস
শশা হচ্ছে অন্যতম আর্দ্রতা রক্ষাকারী একটি ফল যা গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।
এটি ক্যালরি কমাতে ও খুব বেশি কার্যকর।
শশার শরবত শরীর ও মন দুটোই ঠান্ডা করতে খুব ভালো কাজ করে ।
ব্লেন্ডারে ১ টি শশা কেটে দিন, তাতে পুদিনা, লেবুর রস, দুধ, এলাচ গুড়া, চিনি ও ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালো মত ব্লেন্ড করে সার্ভ করুন।
শশা তে থাকা আঁশ পেট ভরা ভাব আনে ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের চাহিদা কমায়।
খেজুরের জুস
খেজুর হলো শক্তির উৎস। এটি অত্যন্ত মজাদার ও বেশ পরিচিত একটি ফল।
এতে রয়েছে ফ্রুকটোজ এবং গ্লাইসেমিক যা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়।
তাই খেজুর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়।
আছে প্রচুর ভিটামিন বি যা ভিটামিন বি সিক্স মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
এগুলো গেলো খেজুরের গুণাগুণ। গরমে কিভাবে বানিয়ে পান করবেন তা জেনে নিন।
কয়েকটি খেজুর কুচি কুচি করে ব্লেন্ডার বা জুশারে দিন।
তাতে লিকুইড দুধ মিক্স করে ব্লেন্ড করে ফেলুন।
এটা চিনির বিকল্প তাই জুস টিতে চিনির প্রয়োজনে নেই।
এই জুস টি খেলে শক্তি ও সতেজ থাকা যাবে এই দাবদাহ গরমেও।
খেজুরের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলা হয় তা হলো চারটি বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, এক গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ দশমিক ৮ গ্রাম ফাইবার। এছাড়াও খেজুরের রয়েছে আরও অনেক পুষ্টি উপাদান।
জিরার লেমোনেড
জিরা পানি হচ্ছে একটি ভেষজ পানীয়।
নানা ধরণের অসুখের আরোগ্য সাধনে ও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে জিরা পানির প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি।
আর এই প্রচন্ড গরমে জিরার পানি পান করে আপনিও পেতে পারেন তৃপ্তি ও শান্তি।
দেড় চামচ লেবুর রস, ১ চামচ আদার রস, চিনি, বিট লবণ, সাদা লবণ, ভেজে নেয়া জিরা ঠান্ডা পানির সাথে মিক্স করে বানিয়ে ফেলুন জিরা পানি যা এই গরমেও রাখবে রিফ্রেশিং।