লেবু ভিটামিন সি-তে ভরপুর। লেবুর ভিটামিন সি শরীরের নানা উপকারে আসে।
ওজন কমানো, রক্তের কোলেস্টেরল কমানো ছাড়াও রক্তস্বল্পতা কমাতে লেবুর অনেক ভূমিকা রয়েছে।
লেবুতে রয়েছে পেকটিন, খাদ্য আঁশ, যা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে।
এর ফলে ওজন কমে। দৈনন্দিন খাবারে লোহা বা আয়রন থাকে, যা শোষণের জন্য ভিটামিন সির প্রয়োজন হয়।
তাই খাবারের সঙ্গে লেবু খেলে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়ক হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, লেবুতে থাকা ভিটামিন সি ক্যানসারের ক্ষতিকর কোষ ধ্বংস করে, ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
লেবুতে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সমারোহ যা শরীরকে বিভিন্ন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
আমরা প্রাত্যহিক জীবনে লেবু, সকলেই কম বেশি খেয়ে থাকি।
সাধারণত খাবারের স্বাদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়।
আবার অনেকে এটির আচার তৈরি করেও খেয়ে থাকেন।
লেবু আকারে ছোট ফল হলেও এর উপকারিতা প্রচুর আর পুষ্টিগুণেও ভরপুর।
আসুন জেনে নিন লেবুর অসাধারণ কিছু উপকারিতা।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
লেবুতে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সমারোহ যা শরীরকে বিভিন্ন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
নিয়মিত লেবু খাদ্যতালিকায় রেখে আমারা ক্যান্সারের হাত থেতে রক্ষা পেতে পারি।
পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে
যারা পেটের গোলযোগে ভুগছেন তাদের জন্য লেবু আদর্শ টনিক।
পেটের গোলযোগের মধ্যে ডায়রিয়া, বদহজম, কোষ্টকাঠিন্য, আমাদের অস্বস্তিতে ফেলে দেয়।
দিনর শুরুতে এক গ্লাস লেবু+লবন পানি আপনাকে এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দেবে।
লেবুর সঙ্গে এক চা চামচ মধু হলে আরো ভাল।
ফুসফুসের জন্য ভালো
লেবু ফুসফুসের যত্ন নেয় এবং শরীর থেকে বিষাক্ত দ্রব্য বের করে দেয়, লেবু শরীরের চর্বি ও লিপিডের মাত্রা কম রাখে।
ক্ষত সারায়
লেবুর উচ্চ ভিটামিন যা শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যে কোন ভাইরাস জনিত ইনফেকশন যেমন ঠান্ডা, সর্দি, জ্বর দমনে লেবু খুব কার্যকারী, মুত্রনালীর ক্ষত সারাতেও লেবুর গুরুত্ব রয়েছে।
হাইপার টেনশন কমায়
যারা খাবারে যথেষ্ট পটাশিয়াম গ্রহণ করে না, তারা সহজেই নান রকম হৃদরোগে আক্রন্ত হয়ে পড়ে।
লেবুর রসে যথেষ্ট পরিমান পটাশিয়ামরয়েছে যা হাইপার টেনশন কমাতে সাহয্য করে।
ত্বকের যত্নে
প্রাকৃতিক পরিষ্কারক হিসাবে লেবুর জুড়ি নেই, এটি ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে, মধুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
এটি ত্বকের সংকোচন সৃষ্টিকারী পদার্থকে নিয়ন্ত্রণ রাখে। চামড়ার অতিরিক্ত তেল অপসারণ করে।
লেবুর রস প্রাকৃতিক অ্যানটি সেপটিক। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর করে। ব্রণ সারিয়ে তোলে, ত্বকের রং উজ্জ্বল করে।
বয়সের বলিরেখা দূর করে।
মুখের দুর্গন্ধ দুর করে
মাড়ির ব্যথা, দাঁতের সমস্যা, মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। লেবুর পানি খাবার পর দাঁত ব্রাশ করার প্রয়োজন নেই।
নখকে সুন্দর করে
একটুকরা লেবু দিয়ে নখ পলিশ করলে নখ তার বিবর্ণতা থেকে উজ্জল রং ফিরে পায়। লেবুর পানিতে পা, হাত, ডুবিয়ে রাখলেও একটি উপকার হয়।
ওজন কমাতে
নিয়মিত ফ্রেশ লেবুর জুস+পানি খেলে ধীরে ধীরে ওজন কমাতে সাহয্য করবে।
পিএইচ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
শুনলে অবাক হতে হয়, লেবু অম্লীয় হওয়া সত্ত্বেও শরীরে প্রয়োজনে ক্ষারধর্মী আচরণ করে।
এটি শরীরে এসিডিটি তৈরি করে না। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রাকে সঠিক অবস্থায় রাখে। লেবুর রস+লবণপানি পান করলে পিএইচ মাত্রা ঠিক থাকে।
গর্ভবতী নারীদের সুস্থতায়
গর্ভবতী নারীদের জন্য খুবই ভালো লেবুজল।
এটা শুধু গর্ভবতীর শরীরই ভালো রাখে না বরং গর্ভের শিশুর অনেক বেশি উপকার করে।
লেবুর ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম শিশুর হাড়, মস্তিষ্ক ও দেহের কোষ গঠনে সহায়তা করে।
শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে
যাদের হালকা শ্বাসকষ্ট আছে, তারা নিয়ম করে খাবারের আগে এক চামচ লেবুর রস খেতে পারেন।
যারা মাইল্ড অ্যাজমায় ভুগছেন, লেবুর রস তাদের জন্য ওষুধের বিকল্প হিসেবেই কাজ করবে।
বয়সের ছাপ দূর করে
বয়সের ছাপ পড়ে বলিরেখার মাধ্যমে। তাছাড়া অনেকের এমনিতেই বলিরেখা পড়তে পারে।
লেবুর রস এই বলিরেখা দূর করতে দারুণ কার্যকর। রেখাগুলোতে লেবুর রস দিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন ও ধুয়ে ফেলুন।
কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
লেবুর অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। মুরগির স্যুপের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে দুর্বলতা কমে।
ক্যানসার বা অস্ত্রোপচারের পর এভাবে স্যুপ খেলে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব।
খেলাধুলার পর লেবুর শরবত খেলে শরীরে ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য রক্ষা হয়।
তবে অনেকে বেশি ভালো ফল পাওয়ার আশায় পুরো একটা লেবু বা একাধিক লেবু একবারে খেয়ে ফেলেন, যা মোটেও ঠিক নয়।
মনে রাখবেন অতিরিক্ত কিছুই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
- যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত লেবু খেলে বুক জ্বালা করে।
- লেবুতে কারো কারো অ্যালার্জি হয়ে থাকে, তাই আগে থেকে জেনে নিয়ে লেবু চিকিৎসা শুরু করা উচিত৷ তা নাহলে হিতে-বিপরীত হতে পারে৷
- ওজন কমানোর জন্য খাদ্যাভ্যাসে লাগাম টানা হলে কার্বোহাইড্রেট ও অন্যান্য পুষ্টিগুণের অভাব দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে লেবুপানি পানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে শরীরে ক্লান্তি ভর করতে পারে।
- অতিরিক্ত লেবু সেবনে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে পেট ফাঁপাসহ নানান ধরনের সমস্যা ও অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
- অতিরিক্ত লেবু ও লেবুর শরবত পানের ফলে পেটে ও তলপেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- লেবুর শরবত বেশি পান করলে কিছুটা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
- যেকোনো মানুষের পরিমিত লেবু খাওয়া স্বাস্থের জন্য ভালো কিন্তু অতিরিক্ত লেবু স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।