মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর উপায়

স্মৃতিশক্তিই মানুষের বড় সম্বল। এই শক্তি ছাড়া মানুষ জড় পদার্থের সমান।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। বর্তমানে অল্প বয়সীদের মধ্যেও এর প্রভাব পড়ছে।

কেউ বলে, ‘এত পড়ি তবু মনে থাকেনা’, আবার অনেকের মতে, ‘আমার বুদ্ধি কম তাই ভাল ফল হয়নি’।

এর কারণ কিন্তু স্মৃতিশক্তি কম হওয়া। 

এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিনিয়তই বহু চেষ্টা করে যাই আমরা

বৃদ্ধকালে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়াটা যেমন স্বাভাবিক তেমনি অল্প বয়সে এর প্রভাব পড়া অস্বাভাবিক।

এখন প্রশ্ন, এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী? হ্যাঁ, বহু উপায় রয়েছে।

তবে দেখে নিন সেই বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলগুলি, যা আপনার স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।

স্মৃতিশক্তি নষ্টের বড় কারণ হলো মানসিক স্ট্রেস।

এটি যেমন সাময়িক স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে তেমনই অত্যাধিক স্ট্রেস দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিশক্তিও নষ্ট করে।

মনকে এর থেকে দূরে রাখতে বই পড়ুন, গান শুনুন বা নিজের ভাল লাগা কিছু কাজ করুন।

ঘুমোতে যাওয়ার আগে বা বেশি স্ট্রেস অনুভব করলে শান্ত হয়ে বসে চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস গ্রহণ করুন।

এতে, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং মস্তিষ্ককে সচল রাখে।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সঠিক খাবার খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন

কারণ, আমরা সারাদিনে যা খাই তার মাত্র ২০ শতাংশ শর্করা ও শক্তি আমাদের মস্তিস্কে প্রবেশ করে।

মস্তিস্কের সঠিক সঞ্চালন নির্ভর করে গ্লুকোজের মাত্রার উপর। এই মাত্রার ঘাটতি হলেই দেখা দেয় নানান সমস্যা।

তাই মস্তিস্কের কার্যক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে নিয়মমাফিক এবং স্বাস্থ্যকর খাবার অত্যন্ত প্রয়োজন।

যেমন- কলাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি, যা নার্ভ ইমপালস্ ট্রান্সমিশনে সাহায্য করে এবং ব্রেনকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

মাছের মাথা ও তেল- প্রবাদে বলে, মাছ ও মাছের মাথা হল ব্রেনের খাদ্য, একেবারে ঠিক।

কারণ, মাছের তেল ব্রেন সেল গঠন করে এবং মস্তিষ্কের প্রদাহ কমায় ও মস্তিষ্ককে রক্ষা করে।

এছাড়া, মাছের তেলে ওমেগা-৩ পাওয়া যায়, যা ব্রেনের জন্য উপকারি।

কলিজা- মাংসের কলিজায় থাকে আয়রন ও ভিটামিন বি, যা মস্তিস্কের জন্য উপকারি।

এছাড়াও, বিভিন্ন শাকসবজি, পালং শাক, বিভিন্ন ফল, সামুদ্রিক মাছ, বাদাম, তেলের বীজ, বিনস্ ইত্যাদি মস্তিষ্কের জন্য উপকারি।

স্মরণশক্তি বাড়ানোর আর এক উপায় হলো মেডিটেশন

এর ফলে আমাদের মনের চিন্তা ও চাপ অনেকটাই কমে যায়।

আর, এই মেডিটেশন করলে যেকোনও কাজেই মনোযোগ বাড়ে এবং ব্রেনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

ফলে, কোনও কিছু মনে রাখার বা মনে করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়না।

প্রতিদিন নিয়মমাফিক সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে কমপক্ষে ১৫ মিনিট মেডিটেশন করুন।

চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে মনকে শান্ত করার চেষ্টা করুন। এক সপ্তাহের মধ্যে আপনি এর সুফল পেতে পারেন।

রোজ ব্যায়াম করুন আমরা সকলে জানি, ব্রেনের মধ্যে থাকা হিপোক্যাম্পাস মস্তিষ্কের স্মৃতি ধরে রাখতে কাজ করে।

বৈজ্ঞানিক মতে, ব্যায়াম দেহের সাথে সাথে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি উদঘাটন করে এবং মগজে নতুন কোষের জন্ম হয়।

ব্যায়াম করার ফলে এই হিপোক্যাম্পাস উত্তেজিত ও স্ফীত হয়ে উঠে এবং স্মৃতি ধরে রাখতে সহায়তা করে।

আবার প্রতিনিয়ত কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম করলে মস্তিস্কে bouncy castleঅক্সিজেন এবং গ্লুকোজ সরবরাহ হয়, যা কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

যদি আপনি স্মরণশক্তি বাড়াতে চান,তবে রোজ নিয়মমাফিক সকাল বা সন্ধ্যে ব্যায়াম করতে থাকুন।

নতুন কিছু শিখুন বাঁধাধরা জাগতিক জীবন থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু করার বা শেখার চেষ্টা করুন

নতুন কাজ করার মাধ্যমে মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জ করুন। এভাবেই মগজের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।

যেমন- ছবি আঁকা শিখুন, গান করার চেষ্টা করুন, কোনও যন্ত্রাংশ বাজান বা বিদেশি ভাষা শিখুন। এতে স্মৃতিশক্তি বাড়বে।

অবসর সময়ে ব্রেন গেম খেলুন স্মার্ট ফোনের স্মার্ট গেম ছেড়ে ব্রেন গেম খেলুন।

ভাল না লাগলেও এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে দাবা খেলুন।

পেপার বা মোবাইলে ক্রসওয়ার্ড সমাধান করুন।

একটি গবেষণায় জানা গেছে, মস্তিষ্কের রোগ ‘ডিম্যানশিয়া’-র থেকে রক্ষা করে এই ধরনের গেমগুলি।

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে ঘুম অত্যন্ত কার্যকরী।

রোজ রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমোন এবং সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠুন।

কারণ, ঘুম মস্তিস্কের সক্রিয়তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

চেষ্টা করুন রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে ঘুমোনোর।

নিয়ম মেনে ৮ ঘণ্টা ঘুমোন।

আশাকরি, উপকার পাবেন।