গরমকাল তো চলেই এল। এখনই যা রোদের তাপ, তাতে আমাদের নাভিশ্বাস হওয়ার অবস্থা।
আর গরম মানেই আমাদের চিন্তার কারণ হয় ঘামাচি।
কিন্তু ঘামাচি ছাড়াও এই গরমে আরেকটি জিনিস হয় যা আমাদের খুবই সমস্যার মধ্যে ফেলে।
আর সেটি হলো গরম গোটা। যে কোনও জায়গায় এই গরম গোটা হতে পারে আর একবার এই গরম গোটা হলে আমাদের অস্বস্তির শেষ থাকে না।
একদিকে যেমন জ্বালা, তেমনই দেখতেও খুব খারাপ লাগে।
তাই এখন থেকেই যত্ন নেওয়া শুরু করুন, যাতে কম থাকতে থাকতেই এই গরম গোটা থেকে আপনি নিস্তার পেতে পারেন।
কেন হয় এই গরম গোটা বা ফোঁড়া?
গরম গোটা হল এক ধরণের ফুসকুড়ি যার মধ্যে জলীয় পদার্থ থাকে। আর এটি যেখানে হয় তার চারদিকটা লালচে হয়ে থাকে।
মূলত মুখে, ঘাড়ে, গলায়, বগলে এই গরম গোটা হয়। খুবই জ্বালা করে তখন। ইনফেকশনের থেকেই এই সমস্যা বেশি হয়।
বাইরে থেকে জার্ম যখন আমাদের স্কিনের সংস্পর্শে আসে তখন এই গোটা তৈরি হয়।
আর এমনিতেই গরমে আমাদের শরীর সব সময়ে ঘামে ভিজে থাকে।
তাই অপরিচ্ছন্নতার জন্য এই ব্যাকটেরিয়া খুব সহজেই আক্রমণ করে।
যদি আমরা এই গরম গোটা বেশি খুঁটি, তাহলে তা আরও ছড়িয়ে যায়।
তাই এটি দূর করার ৬টি উপায় আজ আপনাদের জানাবো। একবার সেগুলি ট্রাই করেই দেখুন।
১. হিট ব্যবহার করুন
যে জায়গায় এই গরম গোটা হয়েছে সেখানে গরম তাপ দিন। এর ফলে সেই জায়গায় রক্তের সঞ্চালন বাড়ে।
তখন রক্তের মাধ্যমে ওই অঞ্চলে শ্বেত রক্ত কণিকার মাত্রা বেড়ে যায়।
আর আমরা জানি যে শ্বেত রক্ত কণিকা আমাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
শ্বেত রক্ত কণিকা ওই জায়গায় অ্যান্টিবডি তৈরি করে। সেই অ্যান্টিবডি ইনফেকশনের সঙ্গে লড়াই করে।
উপকরণ
গরম তাপ নেওয়ার জন্য সুতির কাপড়।
পদ্ধতি
একটি কাপড় গরম করে নিন। সেটি ওই অঞ্চলে সেক দিন অন্তত ২০ মিনিট ধরে।
এটি দিনে তিন বার করুন সময় পেলে। দেখবেন উপকার পাবেনই।
২. এপসম সল্ট ব্যবহার করুন
এপসম সল্ট গরম গোটার ভিতর যে জলীয় পদার্থ আছে সেটিকে শুকিয়ে আনে।
ফলে ওই জায়গাটি তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে আসে।
উপকরণ
পরিমাণ মতো এপসম সল্ট।
পদ্ধতি
উষ্ণ জলের মধ্যে এপসম সল্ট দিন আর সেটি পুরোপুরি মিশে যেতে দিন।
তারপর সেই জলে খানিকক্ষণ থাকুন। বা যে জায়গায় ওই গরম গোটা হয়েছে সেখানে ওই জল ব্যবহার করুন।
এটি দিনে তিন বার করুন। খুব ভালো ফল পাবেন।
৩. কাজে আসবে টি ট্রি অয়েল
এই গরম গোটার মূলে আছে ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব।
টি ট্রি অয়েলে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল আর অ্যান্টি সেপটিক উপাদান।
তাই এটি ওই অঞ্চলের ব্যাকটেরিয়া বা ইনফেকশনের সঙ্গে লড়াই করে।
উপকরণ
কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল, ২ ফোঁটা নারকেল বা অলিভ তেল।
পদ্ধতি
টি ট্রি অয়েলের সঙ্গে নারকেল বা অলিভ তেল মিশিয়ে নিন।
এবার এই মিশ্রণ ওই গরম গোটার উপরে ব্যবহার করুন।
রোজ দিনে অন্তত দু বার করে ব্যবহার করুন। খুব তাড়াতাড়ি গোটা শুকিয়ে এসে আপনি আরাম পাবেন।
৪. ক্যাস্টর অয়েলের তুলনা নেই
গরম গোটা হলে সেই জায়গায় খুবই ব্যথা করে। আর বগলে এটি হলে তো কথাই নেই।
ক্যাস্টর অয়েলে আছে রিসিনোলেইক নামের একটি উপাদান যা এই প্রদাহ বা যন্ত্রণা কম করে।
তাই ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করুন।
উপকরণ
কয়েক ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল।
পদ্ধতি
কয়েক ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে গরম গোটার উপর সরাসরি লাগান। খুব ভালো ফল পেতে সপ্তাহে তিন দিন এটি ব্যবহার করুন।
৫. হলুদ গুঁড়ো করবে সমাধান
আমরা সবাই জানি হলুদ গুঁড়োর মধ্যে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল আর অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান।
তাই হলুদ গুঁড়ো খুব সুন্দর ভাবে আপনার ত্বকে হওয়া ইনফেকশনের হাত থেকে আপনাকে রেহাই দেবে।
উপকরণ
১ চামচ হলুদ গুঁড়ো, জল।
পদ্ধতি
হলুদ গুঁড়ো আর জল নিয়ে ভালো করে মেশান। একটি পেস্ট তৈরি করুন।
ওই পেস্ট এবার গরম গোটার উপর প্রয়োগ করুন। ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
রোজ এক বার করে ব্যবহার করলেই হবে।
৬. নিম তেলে হবে ম্যাজিক
নিম এমন একটি পাতা যা রোগ জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করার জন্য অনবদ্য।
আমাদের হাম হলে তো আমরা নিমের ডাল ব্যবহার করি, সঙ্গে পাতাও।
এর কারণ নিমে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি সেপটিক আর অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল উপাদান।
তাই এটি সহজেই আপনার ইনফেকশন কম করে আপনাকে আরাম দেয়।
উপকরণ
কয়েক ফোঁটা নিম তেল।
পদ্ধতি
দোকান থেকে ভালো ব্র্যান্ডের নিম তেল কিনে আনুন।
সেই তেল সরাসরি ব্যবহার করুন গরম গোটার উপর। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন।
এটি রোজ তিন বার অবশ্যই করুন। উপকার পেতে আপনি বাধ্য।
আশা করছি তাহলে এই গরমে আপনাকে আর গরম গোটার সমস্যায় জেরবার হতে হবে না।
যা দু-একটা হয়েছে এখন সেগুলো এই কয়েকটা পদ্ধতি মেনে তাড়াতাড়ি সারিয়ে নিন আর আপনার রোজকার দিন এনজয় করুন।