সুন্দর মুখশ্রী নষ্ট হয়ে অসুন্দর, ক্ষত ও অবাঞ্ছিত দাগ কার নয় দুশ্চিন্তার কারণ।
আর বিশেষভাবে ললনাদের জন্য বয়ে আনে এক দুঃসহ যাতনা।
উঠতি বয়সের যুবক- যুবতীদের জন্য এটি একটি দারুন মন কষ্টের এবং যেন এক সামাজিক আতঙ্ক।
ব্রণ বা একনে হচ্ছে সিবেসাস গ্লান্ডের গোলযোগ সংক্রান্ত ত্বকের একটি খুব প্রচলিত রোগ।
সিবেসাস গ্লান্ডগুলো মাথা ও মুখসহ মানব দেহের সর্বত্র ত্বকের নিচে হেয়ার ফলিকল বা কেশ গর্ভের গায়ে অবস্থান করে।
সিবাম নামে এক প্রকার তৈলাক্ত পদার্থ ক্ষরণ করে এরা।
যা লোমকূপ দিয়ে দেহের বাইরে এসে মুখ ও গাত্র ত্বককে মসৃণ ও তৈলাক্ত / তেলতেলে রাখে এবং চুলকে ও তৈলাক্ত রাখে।
এর ফলে ত্বকের কোষগুলো নরম থাকে এবং অকালে শুকিয়ে বা কুচকে যায় না।
ত্বকের যেসব সূক্ষ সূক্ষ ছিদ্র বা লোমকূপ দিয়ে সিরাম বের হয় সেগুলো কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে সিবাম বাইরে আসতে পারে না।
উহা জমতে থাকে এবং একসময় চামড়া ঠেলে উপরে উঠে ফলে।
পিম্পল বা ফুসকুড়ির মতো দেখায় অনেক সময় ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন হয়ে পুঁজ ও জমে- এগুলোকেই ব্রণ বলে।
বয়সন্ধিকালের একনে
সাধারণত ১২/১৪ বৎসর বয়স হতে ২৮-৩০ বৎসর বয়স পর্যন্ত মুখে ব্রণ দেখা দেয়।
২০/২২ বছর বয়সেই সবচেয়ে বেশি থাকে।
বেশ কিছু কারণে বয়সন্ধিকালে একনে দেখা দেয়
- জন্মগত বা পূর্ব পুরুষের ধারা অনুসারে ব্রণ হতে পারে।
- হরমোন- এ্যান্ড্রোজেন, এ্ষ্ট্রাজেন সিরাম ও ত্বকে বসবাস কারী জীবানুদের ইন্ট্রার এ্যাকশন বা ভারসাম্যের গোলযোগ হেতু।
- বিশেষ করে বয়সন্ধিকালে সেক্স হর্মোন ক্ষরণ বৃদ্ধির ফলে সিবেসাম গ্লান্ড আকারে বেরে যায়।
- এবং কর্মতৎপরতা ও বৃদ্ধি পেয়ে বেশি করে সিরাম বা তেল উৎপন্ন হয়ে ব্রন ডেকে আনতে সাহায্য করে।
- অধিক মশলাযুক্ত বা গরম মশলা বেশি খেলে এই রোগ হতে পারে এবং এলার্জিটিক খাবারে বেড়ে যেতে পারে।
- যাদের কোষ্ঠ কাঠিন্য সর্বদা অবস্থান করে।
- অনিয়মিতভাবে ২/৪ দিন পর পর পায়খানা হয় তাদের ব্রণ দেখা দেয়।
- অতিরিক্ত ইন্দ্রিয় সেবাই ব্রণেরর অন্যতম কারণ হতে পারে।
- এবং রাত্রি জাগরণ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নোংরা জীবন যাপন, আলো বাতাসহীন ঘরে থাকা।
- লিভারের ক্রিয়ার গোলযোগ, পেটের পীড়ায় ভোগা।
- উত্তেজক বস্তুর ব্যবহার, অতিরিক্ত কসমেটিকস ব্যবহারের কুফল এবং অত্যান্ত গরম ঠান্ডা থেকে।
- বিসদৃশ ঔষধ সেবনের ফলে এবং জন্ম নিয়ন্ত্রনের বড়ি খাওয়ার ফলে ব্রণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত আবেগের ফলেও হতে পারে। মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাব দেখা দেয়ার পূর্বে/পরে/সময়ে এবং গোলযোগের ফলেও হতে পারে।
লক্ষণানুসারে ব্রণ তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়
ভালগারিস- এ ব্রন অতি সাধারণ প্রকৃতির এতে সাদা শাসের মত থাকে । ৪/৬ দিনের মধ্যে ধীরে ধীরে কমে যায়। পরে কালো দাগও মিলে যায়।
রেজিওলো- ইহা রক্তিম বর্ণের আশ-পাশের শিরাগুলো স্ফীত হয়ে উঠে। গরম থাকে। ব্যথা বেদনার সৃষ্টি হয়। সহজে আরোগ্য হতে চায় না।
ইন্ডোরেটা- আকারে গুটিকার মতো। পরিণত বয়সে এবং পুরুষদের বেলায় বেশি দেখা যায় এবং মাসিক ঋতুর গোলযোগ হেতু।
লক্ষণসমূহ
- ছোট ফুসকুড়ির ন্যায় উদ্ভেদ।
- গালে মুখে এবং পিঠে বেশী হয়।
- ফুসকুড়িগুলো স্ফীত হয়ে, লাল হয়,ব্যাথা থাকে।
- উদ্ভেদগুলো টিপে দিলে অনেক সময় ভাতের ন্যায় পদার্থ বের হয়।
- ধীরে ধীরে মুখমন্ডলের চারদিকে এবং বুকে পিঠে ছড়িয়ে পড়ে।
- অনেক সময় পেকে পুঁজ হয়ে এবং ব্যথা করতে পারে। চাপের ফলে ফোড়ার আকার ধারণ করতে পারে।
জেনে রাখুন
বয়সন্ধিকালে মুখের ত্বকে প্রবল ব্রণের প্রকোপে ভোগে বেশির ভাগ তরুণ-তরুণী।
এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কয়েকটি টিপস অবশ্যই জেনে রাখা উচিত।
ব্রণের সহজলভ্য কিছু প্রতিকার ব্যবহার করতে পারেন: ব্রণ দূর করার জন্য প্রচলিত কিছু ফেসওয়াশ বা একনে ট্রিটমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
যেগুলো ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দরকার হয় না। বেশ কম দামে কিনতে পারেন এসব ফেসওয়াশ।
অনেকে ভাবেন দাম বেশি হলে সেগুলো বেশি কার্যকর হবে। আসলে কিন্তু তা নয়।
ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে পারেন: অল্প কিছু ব্রণের জন্য ঘরোয়া উপায় গুলি বেশি কাজে লাগে। যেমন টি ট্রি অয়েল।
ব্রণের ওপর কটন বাড দিয়ে মেখে দিলে তা সাধারণত তরুণদের ব্রণ দূর করতে কাজে আসে।
টি ট্রি অয়েল একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক যা কিনা ত্বকের জীবাণু দূর করার মাধ্যমে ব্রণ ভালো করে।
উপদ্রব বেশি হলে ডাক্তার দেখান: তরুণ-তরুণীরা ব্রণের বিষয়ে বিব্রত থাকে।
তারা কারো সঙ্গেই এ নিয়ে কথা বলতে চায় না।
কিন্তু ব্রণের উপদ্রব বেশি হলে ত্বকের ডাক্তার অর্থাত্ ডার্মাটোলজিস্ট দেখানো উচিত।
নয়তো স্থায়ী দাগ পড়ে যেতে পারে মুখে।
জেনে নিন কী ধরনের ব্রণের উপদ্রব হচ্ছে: কিছু ব্রণ ত্বকের ইনফেকশন এর চিহ্ন।
তাই এগুলো সারাতে সময় বেশি লাগে।
মূলত ৫ ধরনের টিনেজ একনে আছে
কমেডোন: এ ধরনের ব্রণকে আমরা চিনি হোয়াইট হেডস বা ব্ল্যাক হেডস নামে। এগুলো তেমন ব্যথা হয় না।
ত্বকের রোমকূপ আটকে গেলে কমেডোন তৈরি হয়। এর ভিতরে ঢুকে গেলে তখন বড় ব্রণ তৈরি হয়।
প্যপিউল: রোমকূপ আটকে গিয়ে যখন এতে বেশি ময়লা আটকে যায় তখন তা কালচে ফোলা ব্রনের আকার ধারণ করে। একেই পপিউল বলে।
পস্টিউল: এগুলোকে আমরা ব্রণ বলে চিনি। এগুলি হলো লালচে ব্রন যার উপর দিয়ে সাদা পুঁজ জমে থাকে।
নডিউল: নডিউল এক ধরনের ব্রণ। এগুলো ত্বকের ভেতরের দিকে শক্ত হয়ে থাকে এবং ক্ষতের মতো দেখা যায়।
সিস্টিক: সিস্টিক একনেও বেশ গুরুতর। এগুলো ত্বকের ভেতরের দিকে থাকে এবং এ থেকে ত্বকে দাগ হতে পারে। তবে তা শক্ত নয় বরং এর ভিতরে পুঁজ থাকতে পারে।
খেয়াল রাখবেন
সাবধানে মুখ ধুতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে অতিরিক্ত মুখ ধোয়া টাও অনেক সময় ব্রণের কারণ হতে পারে।
আলতো হাতে দিনে কয়েকবার কোন সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া উচিত।
মুখ ধোয়ার জন্য কোমল কুসুম গরম জল এবং একটি তোয়ালে ব্যবহার করতে পারেন।
ব্রণ মুখে হাত/ নখ লগিানো কোনক্রমেই সমচিন নয়। বেশী তৈলাক্ত, চুলকানী যুক্ত খাবার বর্জনীয়। এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে হবে।
যারা ব্রনে ভোগে তাদের মুখে তেল বা ক্রিম মাখা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ সেবন করবেন না।