অ্যালোভেরার সাথে সৌন্দর্যচর্চার সম্পর্ক শতাব্দী প্রাচীন।
ভেষজ উপাদান হিসেবে এর ব্যবহার চলে আসছে দীর্ঘসময় ধরে।
কিন্তু বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে এই অ্যালোভেরাবা ঘৃতকুমারীর তেল।
যার উল্লেখ আমাদের বহু প্রাচীন গ্রন্থ ও পুঁথিতে মেলে।
স্কিন ও হেয়ার স্পেশালিস্ট হিসেবে পরিচিত অ্যালোভেরা আপনাকে সফ্ট ও ক্লিয়ার ত্বক ও ড্যানড্রাফ মুক্ত চুল উপহার দেবে।
এমনকি অ্যালোভেরা মশা নিরোধক এবং এন্টিসেপটিক হিসেবেও কাজ করে।
অ্যালোভেরার নানা গুন
- ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে অ্যালোভেরা ক্রনিক স্কিনের রোগ – কাটাছেঁড়া, কালশিটে দাগ, পোড়ার ক্ষত এমনকি কনস্টিপেশন নিরাময় এর জন্যেও ব্যবহার করা হতো।
- এতে থাকা আর্থাকুইনন ও গ্লাইকসাইডস ও প্রোটিন এর সাথে দুধ, তেল, মধু ইত্যাদি ব্যবহার করে মেডিক্যাল কাজকর্মে লাগানো হতো।
- বাড়িতে আপনি অ্যালোভেরার অংশ ও পাল্প সয়াবিন, অলিভ, জোজোবা, নারকেল, মিনারেল ইত্যাদি তেল এর সাথে মিক্স করে লাগাতে পারেন।
- এটি এন্টি ইনফ্লেমেটরী এবং এন্টি মাইক্রোবিয়াল যাতে বৃদ্ধি উদ্দীপক কম্পাউন্ড গ্লুকোমেওনন থাকে। এগুলি স্কিনের কোলাজেন সংশ্লেষ করে ও হেয়ার রিগ্রোথ-এ সাহায্য করে।
অ্যালোভেরা তেল অ্যাপ্লাই করার ধরণ ও ক্ষেত্র
অ্যালোভেরার তেল নানা রকম ভাবে আমাদের সাহায্য করে।
বিশেষ করে ত্বক ও চুলের যত্ন নিতে।
সঠিক ভাবে এর ব্যবহার করা গেলে দারুন রেজাল্ট পাওয়া সম্ভব।
নিয়মিত যদি এই তেলের সাহায্যে ত্বক ও চুলের যত্ন কেউ নিতে পারে, সে হাজার একটা সমস্যা থেকে দূরে থাকবে হলফ করে বলতে পারি।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে
- অ্যালোভেরাতে অ্যালোসিন থাকে যা আপনার স্কিনটোনে প্রভাব ফেলে। এটি মেলানিন এর উৎপাদন কমায় যাতে আপনার স্কিন দেখতে লাগে ব্রাইট।
- সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি আপনার ত্বকে ফেলে ডার্ক স্পট ও পিগমেন্টেশন। অ্যালোভেরা তেল সেই ট্যানিং বা সানবার্ন এর উপর কাজ করে আপনার স্কিনকে দেবে নতুন টেক্সচার।
- ভার্জিন কোকোনাট অয়েল এর সাথে অ্যালোভেরার নির্যাস মিক্স করে ত্বকে লাগান। এতে আপনার অস্বস্তিকর অক্সিডেসন বা দুর্গন্ধ ছড়ানো – কোনোটাই হবে না।
- অ্যালোভেরা তেল আপনার ত্বকের এপিথেলিয়াল সেল লেয়ারে কাজ করে তাকে করে তোলে এজিং এর প্রতিরোধী ও নারিশমেন্টও দেয়।
অ্যাকনের যম
- একটি স্টাডিতে দেখা গেছে অ্যালোভেরা অয়েল এর সাথে ওসিমাম তেল এর মিশ্রণ অ্যাকনের সংক্রমণ কমায়।
- এই মিশ্রণটি ২-৫দিন ব্যবহার করুন, কথা দিচ্ছি একনের দাগ ৫০% উঠবেই। এর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ক্রনিক ও গভীর ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
- এছাড়াও চা গাছের তেলের সাথে অ্যালোভেরা মিক্স করে প্যাক বানান ও তারপর কিছুক্ষন লাগিয়ে রাখুন। এতে থাকা ম্যানোস ফসফেট এরিথেমা বা লালচে দাগ ও বাম্প রোধ করবে।
- এই প্যাক আপনার ত্বকের সিবাম গ্রন্থির অতিরিক্ত ক্ষরণ আটকাবে।
- ত্বকের টিস্যু পুনর্জীবিত করে বন্ধ লোমকূপ গুলি উন্মুক্ত করবে।
স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে
- প্রেগনেন্সির সময় বা ওয়েট লিফটিং বা দ্রুত ওজন হ্রাস পেলে শরীরে স্ট্রেচ মার্ক্স এর দাগ থেকেই যায়।
- এবার এগুলো ট্রিট করার বাজারে কোনো পার্টিকুলার ওষুধ নেই। স্টেরয়েডযুক্ত ক্রিম এর ব্যবহার হতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ।
- তাই অ্যালোভেরা জেল এর সাথে আমন্ড অয়েল মিশিয়ে স্ট্রেচ মার্কসে লাগান। এতে স্কিন লাল হবেনা ও ইচিং এর সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন।
হেয়ারফলের নিবারণ
- অ্যালোভেরাতে থাকে প্রোটিওলাইটিক এনজাইম যেটা চুলের স্ক্যাল্প এর স্কীনসেলের যত্ন নেয়।
- অ্যালোভেরা তেল প্রকৃতপক্ষে একটা কন্ডিশনার যা চুলকে করে স্মুথ আর সাইনি।
- অ্যালোভেরাতে থাকা ১৮রকম আমিনো এসিড ও তার সাথে ভিটামিন এ,বি,সি ও ই ফ্লেকি ড্যানড্রফ দূর করে চুলে কেরাটিনের যোগান অক্ষুন্ন রাখে।
- ফলে চুল পড়া,খুশকি ইত্যাদির প্রাদুর্ভাব কমে আপনি পান ড্রাই স্ক্যাল্প থেকে মুক্তি।
- মাথায় পিএইচ এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে অ্যালোভেরা অয়েল যদি আপনি সেটা অলিভ, কোকোনাট, সেসেমে এর সাথে মিশিয়ে মেসেজ করেন। এটি ন্যাচারাল ময়শ্চারাইজার এর কাজ করবে।
- এতে থাকা পলিস্যাকারাইড ইলাস্টিন ফাইবারের ড্যামেজ কন্ট্রোল করে।
মশা নিরোধক
- অ্যালোভেরার নির্যাস অলিভ অয়েলের সাথে দিলে তা কিন্তু উত্তম মস্কিটো রেপেলেন্ট এর কাজ করে।
- স্টাডি বলছে এটি যারা ইউজ করেছেন তারা কম মশার কামড় খেয়েছেন। সাথে পেয়েছেন আগের চেয়ে ভালো স্মুথ স্কিন।
- এর এন্টি প্যারাসাইটিক উপাদান আপনাকে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষাকবচ প্রদান করবে।
- তবে ব্যবহার করার সময় নিজের স্কিনের সেনসিটিভিটি অনুযায়ীই ইউজ করবেন।