অ্যাপল সিডার ভিনেগারের নাম সবাই শুনেছেন নিশ্চয়ই।
এটি আমাদের নানা ধরণের সমস্যা সমাধানের উপায় হিসেবে খুব ভালো কাজ করে।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার আমাদের আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। রক্তে সুগার লেভেল কম করে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
কিন্তু এটা কি জানা আছে যে, অ্যাপল সিডার ভিনেগার আপনার ডায়েট চার্টে অ্যাড করে মিলে আপনার ওজন কমার ক্ষেত্রে এটা সাহায্য করবে।
কি এবার হুরমুরিয়ে পড়লেন তো জানার জন্য যে, কীভাবে এটা ওজন কমাতে সাহায্য করে?
হ্যাঁ, এই বিষয়েই আজ জানাবো।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার কী?
অ্যাপল সিডার ভিনেগার এমন একটি উপাদান যা দুই ধাপ ফার্মেন্টেড প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়।
ফার্মেন্টেড করা হয় বলেই এর গন্ধটা বাজে। কিন্তু এটি গুণে ভরপুর। ফার্মেন্টেড প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর গুণাগুণ বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।
প্রথমে অ্যাপলগুলোকে কেটে ছোট ছোট টুকরো করা হয়। এর সাথে ইস্ট বা ছত্রাক মিশানো হয়। ফলে এর সুগার অ্যালকোহলে রূপান্তরিত হয়।
দ্বিতীয় ধাপে অ্যাসিটিক অ্যাসিড ব্যাক্টেরিয়া মিশিয়ে সেটিকে আবার ফার্মেন্ট করে পরিণত করা হয় ভিনেগার।
অ্যাসিটিক অ্যাসিড হচ্ছে অ্যাপল সিডার ভিনেগারের মূল উপকরণ।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের পুষ্টিগুণাগুণ
অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যগুণ।
ছাড়া ওজন কমাতে, কোলেস্টেরল হ্রাস করা, রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও এর কার্যকারিতা বিদ্যমান।
ওজন কমাতে অ্যাপল সিডার ভিনেগার
এসিটিক অ্যাসিড একটি শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি আপনার দেহে অ্যাসিটেট এবং হাইড্রোজেনে দ্রবীভূত হয়। এটাই মূলত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- রক্তে সুগার লেভেল কমায়: এসিটিক অ্যাসিড আমাদের শরীরের লিভার ও আমাদের মাংশপেশির উন্নতি করে। তারা রক্তের সুগার শোষণ করে। যার ফলে রক্তে সুগার লেভেল কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- ক্ষুধা নিবারক হিসেবে: অ্যাপল সিডার ভিনেগার আমাদের ক্ষুধা নিবারণ করে অনেক্ষণ ক্ষুধা কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। ফলে সুগার ইন্টেক কম হয়। আর যার ফলে ফ্যাট লস হয়।
- ইনসুলিন লেভেল কমায়: অ্যাপল সিডার ভিনেগারে থাকা এসিটিক অ্যাসিড গ্লুকোজেনে ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে।
- মেদ স্টোরেজ কমায়: লিভার ফ্যাট ককয়ে এটা ফ্যাট জমতে বাধা দেয়। যার ফলে ফ্যাট জমতে পারে না। এইভাবে ওজন হ্রাস হয়।
- মেটাবোলিজম বৃদ্ধি করে: এটা এনজাইম এর মাত্রা বৃদ্ধি করে ফ্যাট বার্নিং ত্বরান্বিত করে।
দেখা গিয়েছে যে, যারা রেগুলার এক টেবিল চামচ করে ভিনেগার তাদের রেগুলার ডায়েটে অ্যাড করছেন তারা খুব ভালো উপকার পাচ্ছেন।
- ওজন হ্রাস: ২.৬ পাউন্ড
- শরীরের মেদ কমায়: ০.৭%
আর যারা রেগুলার দুই টেবিল চামচ করে ভিনেগার খাচ্ছেন তারা আরো দ্বিগুণ ভালো ফলাফল পাচ্ছেন।
- ওজন হ্রাস: ৩.৭ পাউন্ড
- শরীরের মেদ কমায়: ০.৯%
কীভাবে অ্যাপল সিডার ভিনেগার আপনার রেগুলার ডায়েট চার্টে অ্যাড করবেন?
অ্যাপল সিডার ভিনেগার বিভিন্নভাবে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অ্যাড করতে পারবেন।
যেভাবে অ্যাড করতে পারবেন।
সালাদ ড্রেসিং
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- অ্যাপল সিডার ভিনেগার
- সালাদ (শশা, গাজর, টম্যাটো, অ্যাভোকাডো)
- অলিভ অয়েল
অ্যাপল সিডার ভিনেগার আপনি সালাদের ড্রেসিং হিসেবে অ্যাড করতে পারেন।
অলিভ অয়েলের সাথে এক টেবিল চামচ ভিনেগার অ্যাড করে সালাদের সাথে মিক্স করে খাবেন।
সেক্ষেত্রে খুব ভালো রেজাল্ট পাবেন। এটা সালাদের স্বাদ ও বাড়াবে আর ওজন কমাতেও সাহায্য করবে।
পানির সাথে মিক্স করে
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- পানি
- অ্যাপল সিডার ভিনেগার
এক গ্লাস পানির সাথে এক টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার অ্যাড করে খেলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যাবে।
আপনি রেগুলার সকালে উঠে খালি পেটে খেলে এটা সবচেয়ে কার্যকরী হবে।
ফ্রেশ লেমনেড ড্রিংক
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- কমলার রস
- লেবুর রস
- পুদিনা পাতা
- আদা কুচি
- অ্যাপল সিডার ভিনেগার
- পানি
একটি বড় জগ নিন। এতে কমলার রস, লেবুর রস, পুদিনা কুচি, আদা কুচি, এক কাপ জগ আর ২ চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার নিয়ে ভালোভাবে মিক্স করুন।
এই ড্রিংক রেগুলার খেলে শরীর ভালো থাকলে আর ওজন কমাতেও সাহায্য করবে।
জিঞ্জার স্পাইস অ্যাপল সিডার ভিনেগার ড্রিংক
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- অ্যাপল সিডার ভিনেগার
- আদা গুড়া
- মধু
- ঠান্ডা পানি
এক জগ ঠান্ডা পানিতে এক টেবিল চামচ আদা গুড়া করুন। সাথে দুই টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার ও মধু অ্যাড করে খুব ভালোভাবে মিক্স করে নিলেই রেডি।
অ্যাপল পাই অ্যাপল সিডার ভিনেগার ড্রিংক
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- অ্যাপল সিডার ভিনেগার
- অর্গানিক অ্যাপল জুস
- মধু
- দারুচিনি গুড়া
- পানি
২ কাপ পানি নিন। তাতে দুই টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিক্স করুন। মিক্সারের সাথে দুই টেবিল চামচ অর্গানিক অ্যাপল জুস, এক টেবিল চামচ মধু ও এক টেবিল চামচের কম পরিমাণে দারুচিনি গুড়া অ্যাড করুন। ভালোভানে মিক্স করে পান করুন।
বিশেষ সতর্কতা
অ্যাপল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
- অ্যাপল সিডার ভিনেগার কোনো কিছু সাথে না মিশিয়ে বা ডিরেক্ট খাওয়া যাবে না।
- এক দিনে ২ বারের বেশি ড্রিংক হিসেবে পান করা যাবে না।
- একটি গ্লাসে এক টেবিল চামচ বা দুই টেবিল চামচ নিয়ে সেটা গুলে খেতে পারবেন।এর বেশি অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিক্স করে খাওয়া যাবে না।
- বেশি বেশি বা খুব ঘন ঘন পান করা যাবে না তাতে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়।
- অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এবং অ্যাসিটিক অ্যাসিডের ফলে ক্ষুধা কমে যায়।শরীরে পর্যাপ্ত ক্যালরি গ্রহণে ব্যাঘাত ঘটে।
- আবার কখনো কখনো বদহজমের কারণে ক্ষুধা কমে যায় ও বমি ভাব দেখা যায়।
- দীর্ঘ সময় ধরে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করলে হাড়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- দীর্ঘদিন পান করতে থাকলে হাড় থেকে খনিজগুলো বের হয়ে যায়। উচ্চ অ্যাসিডের মাত্রায় নতুন হাড়ের গঠনও হ্রাস করতে পারে।