ব্ল্যাক হেডস একটি জেদি সমস্যা। কারণ এটি স্থায়ীভাবে দূর করা খুব কঠিন।
আমরা যদি রেগুলার ত্বক পরিষ্কার করি, এরপরও এই সমস্যা ফিরে আসতে পারে।
তাই প্রতিদিন পরিচর্যা করা জরুরি।
ব্ল্যাক হেডস কী?
ব্ল্যাক হেডস হচ্ছে ছোট ছোট বাম্পস যার উপর কোন ধরনের পর্দা থাকে না।
এটা বাতাসের ছোয়া পেয়ে অক্সিডাইজ হয়ে কালো বর্ণের হয়ে যায়।
সাধারণত আমাদের ত্বকের আটকে থাকা লোমকূপগুলোর কারণে দেখা দেয়।
এইগুলো আমাদের ফেইস ছাড়াও ঘারে, পিঠে, হাতের বাহুতে বা গলায় ও হতে পারে।
ব্ল্যাক হেডস কেনো হয়?
ব্ল্যাক হেডস হওয়ার সাধারণ যে কারণ তা হলো আমাদের ত্বকের পোরগুলো সবসময়ই খোলা থাকে।
এই অবস্থায় ধুলোবালি, ময়লা এগুলো খুব সহজেই ঢুকে পোরস বা লোমকূপগুলোতে জমে যায়।
জমতে জমতে সেটা এক পর্যায়ে শক্ত হতে থাকে।
শক্ত হয়ে আমাদের ত্বকের পোরসগুলোকে বন্ধ করে দেয় যার ফলে নানা ময়লা ও জীবাণুর সাথে মিলে শক্ত দানাদার জাতীয় বাম্পস দেখা দেয়।
এইগুলো বাতাসের সংমিশ্রণে অক্সিডাইজ হয়ে কালো হয়ে যায়।
এইগুলোই মূলত ব্ল্যাক হেডদ আর এইভাবেই এটি আমাদের ত্বকে বাসা বেধে নেয়।
ওয়েলি স্কিনে ব্ল্যাক হেডস এর সমস্যা অনেক বেশি দেখা দেয়।
ওয়েলি স্কিনে তেল অনেক বেশি উৎপন্ন হয় যার কারণে ব্ল্যাক হেডস এর সমস্যাও বেশি দেখা দেয়।
তাছাড়াও হোরমোনাল পরিবর্তন, বার্থ কন্ট্রোল পিল, কিছু নির্দিষ্ট মেডিসিন এর জন্যেও ব্ল্যাক হেডস এর সমস্যা দেখা দেয়।
ব্ল্যাক হেডস দূর করার ঘরোয়া উপায়
ব্ল্যাক হেডস দূর করতে ঘরোয়া উপায়ের কোনো জুরি নেই।
হাতের কাছে থাকা কিছু ঘরোয়া জিনিস দিয়েই তৈরি করে ফেলতে পারেন ব্ল্যাক হেডস দূর করার কার্যকরী প্যাক।
চলুন জেনে নেয়া যাক।
১. এক্সফোলিয়েটেশন
ব্ল্যাক হেডস দূর করার অন্যতম উপায় হলো ত্বককে এক্সফোলিয়েট করা।
ত্বক নিয়ম মতো এক্সফোলিয়েট করার মাধ্যমে ব্ল্যাক হেডস এর মতো জেদি সমস্যাও খুব সহযে দূর করা সম্ভব।
এর সাথে সাথে ত্বকের ডেড সেল ও দূর হয়ে ত্বককে ভিতর থেকে উজ্জ্বল ও গ্লো করে তোলে।
যা যা প্রয়োজন
- ব্রাউন সুগার বা বাদামী চিনি
- মধু
- লেবু
যেভাবে তৈরি করবেন
বাদামী চিনি ১ চামচ, মধু হাফ চা চামচ আর লেবুর রস ১/২ ফোটা দিয়ে ভালোভাবে মিক্স করতে হবে।
যাদের ত্বকে লেবু স্যুট করে না তারা লেবু বাদ দিয়ে বাকি গুলো এপ্লাই করবেন।
মিক্স করা হয়ে গেলে একটা ক্রিম টাইপ দানাদান মিক্সার পাবেন।
এবার এই মিক্সার ব্ল্যাক হেডস যে অংশ গুলোতে আছে সেইগুলোতে এপ্লাই করুন।
ম্যাসাজ করুন সার্কুলার মোশনে।
৫ মিনিট পর এটা ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ইউস করুন।
এই স্ক্রাবটি সপ্তাহে ২/৩ বার করলে খুব তারাতাড়ি ব্ল্যাক হেডস দূর হবে
২. ডিমের সাদা অংশ
ডিমের সাদা অংশ ব্ল্যাক হেডস দূর করতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী।
যা যা প্রয়োজন
- ডিমের সাদা অংশ
- ফেশিয়াল টিস্যু
যেভাবে তৈরি করবেন
ডিম থেকে কুসুম ও এর সাদা অংশ আলাদা করে নিন।
বাটিতে নিয়ে সেটা ভালোভাবে হুইস্ক করে নিন।
ঠিকমতো ব্লেন্ডিং হয়ে গেলে সেটা আপনার চোখ ও ঠোটের এরিয়া ছাড়া অন্য অংশে এপ্লাই করুন।
এটার উপর ফেশিয়াল টিস্যু গুলো আটকে দিন।
এবার ১০/১৫ মিনিয় অপেক্ষা করুন।
মিক্সারড়ি শুকিয়ে গেলে টিস্যু পেপারগুলো আসতে করে টেনে ফেলুন।
ব্ল্যাক হেডস গুলো দেখা যাবে এর মধ্যেই উঠে এসেছে।
৩. বেকিং সোডা
বেকিং সোডা আপনার রান্না ঘরে থাকা সবচেয়ে সহজলভ্য একটি উপাদান।
রান্নার প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি এটি ত্বকের জন্যেও নানা ভাবে কার্যকর।
বেকিং সোডার মাধ্যমে আমাদের ত্বক এক্সফোলিয়েট করা যায়, যা খুবই কার্যকরী।
যা যা প্রয়োজন
- ২ টেবিল চামচ বেকিং সোডা
- ২ টেবিল চামচ পানি
যেভাবে তৈরি করবেন
একটি বাটিতে ২ টেবিল চামচ বেকিং সোডা আর ২ টেবিল চামচ পানি নিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন।
পানি একটু গরম করে নিলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যাবে।
এই ঘন পেস্ট আপনার ত্বকের ব্ল্যাক হেডস এর জায়গায় ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন।
২০ মিনিট পর ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ইউস করুন। এই প্যাক সপ্তাহে ২/৩ বার করতে পারেন। তবে এর বেশি করলে ক্ষতি।
৪. কস্তুরি হলুদ
রুপচর্চায় হলুদের উপকারিতা সবাই শুনেছেন।
কিন্তু কস্তুরি হলুদের কথা খুব কম মানুষ ই জানে।
কস্তুরি হলুদ, সাধারণ হলুদের চেয়েও অনেক বেশি কার্যকরী।
এটিতে রয়েছে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি-ফাংগাল ও এন্টি-ইনফ্ল্যেমাটিরি উপাদান যা ত্বকের ব্ল্যাক হেডস দূর করা ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রেও উপকারী।
এটি সাধারণ হলুদের মত হলুদ ছোপ রাখে না।
ছোপ ছোপ দাহ এড়াতে কস্তুরি হলুদ খুব ভালো কাজ করে।
যা যা প্রয়োজন
- ৩/৪ চিমটি কস্তুরি হলুদ
- নারকেল তেল
- পানি
যেভাবে তৈরি করবেন
প্রত্যেকটি উপাদান একসাথে মিক্স করে ঘন পেস্ট তৈরি করুন।
এটি আপনার ত্বকে ম্যাসাজ করতে থাকুন।
কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করার পর ১০/১২ মিনিটের জন্য মিক্সার টি সেট হতে দিন।
তারপর ভালোভাবে মুখ ধুয়ে তাতে ময়েশ্চারাইজার ইউস করুন।
৫. টি ট্রি ওয়েল
ব্ল্যাক হেডস দূর করতে টি ট্রি ওয়েল খুব উপকারী।
টি ট্রি ওয়েল ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ত্বকের নানা সমস্যা থেকে রেহাই করে।
বাজারে বিভিন্ন উপাদানে টি ট্রি ওয়েল ব্যবহার করা হয়, যেমন ফেইসওয়াশ, সাবান, ক্রিম ও বিভিন্ন এসেন্সিয়াল ওয়েল।
ব্ল্যাক হেডস এর জন্য টি ট্রি এসেন্সিয়াল ওয়েল ব্যবহার করা বেশি কার্যকর হবে।
টি ট্রি এসেন্সিয়াল ওয়েল আর্গান ওয়েল এর সাথে মিক্স করে এপ্লাই করতে পারেন।
এক্ষেত্রে খুব ভালো রেজাল্ট পাওয়া যাবে।
এইতো গেলো প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে ব্ল্যাক হেডস রিমুভ করা যায়।
প্যাকগুলো থেকে পছন্দ মতো প্যাক রেগুলার এপ্লাই করার মাধ্যমে ব্ল্যাক হেডস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
তাছাড়াও যারা ব্যস্ততার জন্যে ঘরোয়া উপায়ে স্কিনের যত্ন নিতে পারে না তাদের জন্য নোস পোর স্ট্রিপস হতে পারে এক অনন্য সমাধান।
এটি ব্যবহারের নিয়মও খুবই সহজ।
আলাদা কোন ঝামেলা নেই।
খুব সহজেই ইন্সট্যান্টলি আমাদের নাকে জমে থাকা ব্ল্যাক হেডস পরিষ্কার করে ফেইসে ক্লিন একটি লুক এনে দিবে।