Search
Close this search box.

ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার সচেতনতায় করণীয়

মাতৃদুগ্ধ হচ্ছে শিশুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। মানবশিশু কে বাঁচিয়ে রাখে এই অমূল্য তরল।

কিন্তু এই অমূল্য রত্নের যে আধার সেই মাতৃস্তনের স্বাস্থ্য? তা নিয়ে কি ভাবি আমরা?

জন্মদাত্রী মায়েদের সুস্বাস্থ্য একটি জাতি গঠনের মূল শর্ত। আমরা কি তা নিয়ে সচেতন?

আজ এমনই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলবো আমরা। জানবো স্তন ক্যান্সার নিয়ে।

যে রোগটি দিন দিন আমাদের দেশেও বেড়েই চলেছে।

শুধুমাত্র সংকোচের কারণে ঝরে যাচ্ছে অনেক প্রাণ।

যা কিনা কোনভাবেই কাম্য নয়।

স্তন ক্যান্সার দিবস

১৯৯৮ সাল ঘোষণা করা হয় স্তন ক্যান্সার দিবস।

প্রতি বছর এই দিনটি পালন হয়ে আসছে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরী করতে।

কিন্ত শুরু হলোই বা কিভাবে?

শুরু হয়েছিলো ১৯৯২ সালে পিঙ্ক রিবন মুভমেন্ট এর মাধ্যমে। চারলট হ্যালির মাধ্যমে।

যিনি তখন স্তন ক্যান্সারে ভুগছিলেন। আমেরিকার বাসিন্দা ছিলেন।

তৃণমূল নাগরিক হিসেবে তিনি আমেরিকায় তার এলাকার শপিং মলের সামনে প্ল্যাকার্ড এ একটি পিচ রিবন এঁকে দাঁড়ান।

তাতে লিখেছিলেন মাত্র ১.৮% অর্থ আমেরিকা ব্যয় করে ক্যান্সার চিকিৎসায়।

অথচ এর খরচ আরো ব্যয় বহুল। জলদিই তা ছড়িয়ে পড়ে  বিভিন্ন ম্যগাজিন আর পত্রিকায়।

যেহেতু গোলাপি রঙ নারীসুলভ হিসেবে ধরা হয়, তাই ম্যাগাজিন গুলো পিঙ্ক রিবনের মাধ্যমে তা সকলের নজরে আনতে চেস্টা করে।

ধীরে ধীরে কানাডায় ও সাড়া মেলে।

তারা কুইন এলিজাবেথ আর পিঙ্ক রিবন খচিত মুদ্রা বিক্রি করে এর অর্থ সাহায্য যোগাড় করতে।

যাতে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ফান্ড করা যায়। অপরদিকে অস্ট্রেলিয়ান

ক্রিকেটার গ্লেন ম্যাকগ্রার স্ত্রী ২০০৮ সালে মারা যান এই স্তন ক্যান্সারে। তার ক্যান্সার ধরা পড়ে অনেক পরে।

স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা হতে আর কেউ যেন স্তন ক্যান্সারে ভুক্তভোগী না হন তা নিয়ে সচেতন করতে তিনি প্রচারণা চালান।

অস্ট্রেলিয়া দল প্রথমে শুরু করে পিঙ্ক ক্যাপ পরিধানের মাধ্যমে। চারদিকে দ্রুতই সাড়া মেলে।

তিনি ৬ মিলিয়ন অর্থ সাহায্য তুলতে সমর্থ হন। যা পরবর্তীতে ক্যান্সার ফাউন্ডেশনে দান করা হয়।

স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা

ক্যান্সারের এই ধরণটির ৬ রকমের ট্রিট্মেন্ট রয়েছে।

রোগীর রোগের ধরণ, মাত্রা, আর কোন পর্যায়ে আছেন তা নির্ণয় করে চিকিৎসক কোন পদ্ধতিতে যাবেন তা নির্ধারণ করে থাকেন।

আমরা আপাতত প্রধান কয়েকটির ব্যাপারে আলোচনা করবো।

১.ম্যাস্টেক্টমি

এক্ষেত্রে রোগীর স্তনে বেশী ক্যান্সার কোষ ছড়ালে তা কেটে ফেলা হয়।

অনেক বিখ্যাত অভিনেত্রী আর মডেল এই অপারেশানের পর ও তাদের কাজ চালিয়ে গেছেন।

২.রেডিয়েশান থেরাপি

এটা ২ ধরণের হয়। এক্সটারনাল রেডিয়েশান থেরাপিতে মেশিনের মাধ্যমে।

মেশিন বাইরে থেকে রেডিয়েশান লাইটের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ গুলোকে মেরে ফেলতে বা আর বৃদ্ধি যাতে না পায় সেই কাজ করে।

আর ইন্টারনাল ব্রেকিথেরাপিতে যন্ত্র ভিতরে প্রবেশ করে।

কোষগুলোর চারদিকে থেকে রেডিয়েশন প্রয়োগ করা হয়।

৩.কেমোথেরাপি

বহুল প্রচলিত একটি থেরাপি। ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয়।

এতে করে রক্তে ক্যান্সার কোষ ছড়ানো ঠেকানো হয়।

৪. হরমোন থেরাপি

এস্ট্রজেন হরমোন ক্যান্সার কোসে প্রয়োগ করে নির্মূল করার চেষ্টা করা হয়।

যাতে শরীরের স্বাভাবিক কোষগুলো পুনর্গঠিত হয়ে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে থামিয়ে দিতে পারে।

এছাড়া অন্য হরমোনও প্রয়োগ করা হয়।

৫. টার্গেট থেরাপি

নির্দিষ্ট জায়গায় প্রয়োজনীয় প্রোটিন আর ওষুধ প্রয়োগ করে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে কমানো হয়। শেষে ক্যান্সার কোষগুলো মরে যায়।

ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্ণয়ের উপায়

সবার আগে আমাদের জানতে হবে কীভাবে এই ক্যান্সার ঘরে বসেই শুরুতেই সতর্কতার সাথে শনাক্ত করা যায়। চলুন জেনে নেয়া যাক।

১.মাসিকের পর আয়নার সামনে দাঁড়ান। স্তনের কোন রকম চামড়া বা কোন পরিবর্তন দেখছেন কিনা খেয়াল করুন।

২.স্তনের আকারে কোন পরিবর্তন এসেছে কিনা দেখুন।

৩.চামড়া কোথাও অস্বাভাবিকভাবে কুচকে যাচ্ছে কিনা দেখুন।

৪.বোটা দেবে যাচ্ছে কিনা বা শক্ত হয়ে গিয়েছে কিনা খেয়াল করুন। বা কোন রকম তরল বের হলে সাবধান হোন।

৫.চামড়ায় কোথাও বেশী মোটা হয়ে গিয়েছে কিনা খেয়াল করুন।

৬. স্তনে চাপ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন কোন রকম অস্বাভাবিক চাকা বা টিউমার অনুভব করছেন কিনা।

৭.কোন রকম চুলকনি হচ্ছে কিনা চামড়ায় দেখুন।

এগুলোর কোনটি যদি দেখা দেয় সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যান। স্ক্রিনিং সহ অন্যান্য পরীক্ষা জলদি করিয়ে ফেলুন।

মনে রাখবেন যত জলদি ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারবেন তত জলদি আপনি নিরাময় করতে পারবেন।

জেনে রাখা জরুরি যে, মোট ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের ২৫%-ই স্তন ক্যান্সারের শিকার। এমনকি মোট স্তন ক্যান্সারের রোগীদের ১০% পুরুষও আছেন।

প্রতিবছর ক্যান্সারে আক্রান্ত ২৫% রোগী মারা যান সারা পৃথিবীতে।

অতএব দ্রুত শনাক্ত এবং সচেতনতাই পারে আমাদের এ প্রাণঘাতী রোগটি থেকে বাঁচাতে।

তাই সংকোচ না করে আওয়াজ তুলুন।

আপনার জীবনের চেয়ে মূল্যবান অবশ্যই কিছু নয়। জীবনকে ভালোবাসুন, সুস্থ থাকুন।