বর্তমানের তাপদাহ গ্রীষ্মকালটা যেন খুব বেশিই গরম লাগছে।
পারদে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রী দেখালেও, অনুভূতিতে তা ৪২ ডিগ্রীকেও ছাড়িয়ে গেছে।
তার সাথে চলছে এদেশের বিখ্যাত আর্দ্রতার আবহাওয়া।
এরফলে প্রচন্ড ঘামছি আমরা সবাই-ই সারাদিনে।
এসব কারণেই পাচ্ছে প্রচন্ড তেষ্টা, ঢকঢক করেকিছুক্ষণ পর পরই খাচ্ছি নানা পানীয়, পানি এবং জুস।
তবে স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে, মানুষ অন্যান্য পানীয় বাদ দিয়ে, মিনারেল ওয়াটার বা সাধারণ পানিই বেশি পান করছে।
প্রচন্ড গরমে, এই পানি নরমাল তাপমাত্রার না খেয়ে অনেকেই ঠান্ডা খাচ্ছে কিছু স্বস্তি পেতে।
তবে তাতেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই সমাজেই প্রচলিত কিছু ধারণা, যার মধ্যে অন্যতম হল- ঠান্ডা পানি খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
ভ্রান্ত ধারণার সূচনাকথা
ঠান্ডা পানি পান শরীরের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে, এই ধারণা বেশ প্রচলিত তাদের মধ্যে, যারা ওজন কমাতে বা শরীর ফিট রাখতে নানা সচেতনতা অবলম্বন করেন।
অনেকের ধারণা, ঠান্ডা পানি শরীরের ম্যাটিবুলিজম কমিয়ে ফেলে।
মেদ জমে বেশি ঠান্ডা পানি খেলে।
এছাড়াও নানা ধারণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও নাকি কমে যায় ঠান্ডা পানি খেলে।
তবে এসব ধারণা কতটা সঠিক?
এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তা আসলে প্রযোজ্য?
আজ এ বিষয় নিয়েই গ্ল্যামোজেনের আলোচনা।
প্রকৃত সত্য
“ঠান্ডা পানি খাওয়া যাবে কিনা”- এই প্রশ্নের উত্তরে প্রথমেই বলে দেই- যাবে।
নরমাল টেম্পারেচারের পানি, সামান্য ঠান্ডা পানি, বরফ মেশানো পানি, কুসুম গরম পানি- যে কোন তাপমাত্রার পানিই খাওয়া যাবে।
এতে করে ওজন বৃদ্ধিতে কোন প্রকার প্রভাব ফেলবে না।
পানির ক্যালরির মাত্রা শূণ্য (০), তা আপনি যত পরিমাণ পানিই পান করেন না কেন।
আপনার ক্যালরি ইন্টেক যখন জিরো, তখন কেন তা আপনার ওজন বৃদ্ধি করবে, বলতে পারেন?
সুতরাং আপনি যে তাপমাত্রার পানিই খান না কেন, তা ওজন বৃদ্ধি করবে না।
ঠান্ডা পানির নেপথ্যে
ঠান্ডা পানি পান করলে, শরীরের মেটাবলিজম মোটেও কমবে না।
আপনি যে তাপমাত্রার পানিই পান করেন না কেন, তা শরীরে প্রবেশের বেশ কিছুক্ষণ পরে, অটোমেটিক মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে।
ফলে কোলেস্ট্রোল, এক্সটা ফ্যাট বার্নে পানি আসলে সাহায্যই করে।
একারণেই পুষ্টিবিদ এবং ডাক্তাররা প্রচুর পানি পান করতে বলেন , যারা ওজন কমাতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে।
এখন এক নাগাড়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করা আসলেই কিছুটা বিরক্তিকর এবং কঠিন।
এবং এই বিরক্তিটাকে কাটাতে, কেউ যদি ঠান্ডা পানি পানও করেন, তাতে মোটেও কোন ক্ষতি হবে না, ওজন কমানোর জন্য।
শরীরের একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রা আছে।
সেই তাপমাত্রার নিচে পানি পান করলে, শরীর প্রথমে নিজের তাপমাত্রায় সেটাকে আনে, এবং শারীরবৃত্তীয় কাজে সে পানিকে ব্যবহার করে।
তাই ঠান্ডা পানি খেলে বরং কিছুটা ক্যালরি বার্নই হয়, ঐ ঠান্ডা পানিকে শরীরের নিজের তাপমাত্রায় নিয়ে আসতে।
পানির পানের অভ্যাস্ততা
বছরের এই সময়টায় গরমের পরিমাণ এত্ত বেশি হচ্ছে যে, যারা কম পানি পান করেন সাধারণত, তারাও বেশ পানি পান করছেন পিপাসায়।
অতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতায় সারাক্ষণ ঘামার ফলে, শরীরের পানির চাহিদাও অনেক বেশি থাকে।
তাই এই গরমে আপনার যত বেশি পানি খেতে ইচ্ছে করে, খাবেন।
যে তাপমাত্রার পানি ইন্টেকে আরাম পান, সেটাই ব্যবহার করবেন।
দৈনিক ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করতেই হবে, এ গরমের ক্ষতিকর প্রভাব কাটাতে।
তা ঠান্ডা পানি হলেও সমস্যা নেই।
ওজন বৃদ্ধি করবে না।
পানি স্বল্পতায় শরীরে মারাত্মক ডিহাইড্রেশন দেখা দিবে।
প্রচন্ড মাথা ব্যাথা , চোখের দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা সহ নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিবে।
সবচেয়ে ভয়ংকর ইফেক্ট করবে কিডনিতে।
ইউরিন ইনফেকশন, কিডনি ইনফেকশন সহ নানা বিপদজনক শারীরিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে।
তাই পানি পানের গোল সেট করুন।
আশে পাশে বোতলে কিংবা কুলার ফ্লাক্সে ঠান্ডা পানি রাখুন। মোবাইলে রিমাইন্ডার দিন ২০ মিনিট পর পর পানি খাওয়ার।
এভাবে প্রতি ২-৩ ঘন্টাতেই গড়ে ১ লিটার করে পানি খাওয়া হয়ে যাবে।
ফলে যতই ঘামেন না কেন, শরীরের কোষগুলো তাদের চাহিদা মাফিক পানি পাওয়ায়,শরীর ঠান্ডা থাকবে, সতেজ থাকবে, এনার্জি পাবেন এই গরমেও কাজ করার।
কিন্তু সতর্কতা…
ঠান্ডা পানি কিংবা তাজা ফলের জুস খেলে কোন সমস্যাই হবে না।
কিন্তু প্রচন্ড গরমের জন্যই হোক, কিংবা দীর্ঘ ক্লান্তির কারণে, ঠান্ডা পানির সাথে চিনি বা এরকম কিছু মিশিয়ে খেলে, ওজন বাড়বে।
তাই চেষ্টা করবেন,ফলের তাজা রস খেতে।
চিনি এভোয়েড করতে।
খুব বেশি মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করলে, চিনির বদলে মধু ব্যবহার করুন, তবে সেটাও পরিমাণে সামান্য।
অনেকে আবার সহজলভ্য বলে, কোল্ড ড্রিংক্স, কার্বোনেট জাতীয় পানীয় দোকান থেকে ঠান্ডা কিনে খান।
অনেকে আবার বোতলজাত বা প্যাকেটজাত জুস পান করেন আশে পাশের দোকান থেকে কিনে।
এটা মারাত্মক ক্ষতি করবে শরীরের।
কারণ এগুলোতে প্রচুর পরিমাণ সুগার বা চিনি দেয়া থাকে।
এছাড়াও স্বাদ এবং রঙের জন্য নানা ক্ষতিকারণ ক্যামিকেলও ব্যবহার করা হয়। শরীর প্রচন্ড গরমে এমনিতেই ঘেমে পানি স্বল্পতায় ভুগছে।
এর মধ্যে যদি এসকল ক্ষতিকর উপাদান সমৃদ্ধ পানীয় শরীর গ্রহণ করে, তবে প্রাথমিকভাবে শরীরের ক্ষতিটা না বুঝলেও, একটা সময়ে কিডনি ফেইলের মতো মারাত্মক জটিলতায় ভুগতেই হবে।
তাই এসকল ব্যাপারে সতর্ক থাকতেই হবে।
মানুষের শরীরের ৭০% অংশই জলীয় পদার্থের , তথা পানির সমন্বয়ে তৈরী।
তাই এই পানি ভীষণ ভাবে প্রয়োজনীয় একটা উপাদান আমাদের জন্য।
যে উপাদানের গুরুত্ব যতটা, সেটা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণার পরিমাণও বেশি হয়।
ওজন কমাতে পানি যেহেতু একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে, নানা পানীয় জুস সাজেস্ট করা হয়, তাই এসব নিয়ে ভ্রান্ত ধারণার সংখ্যাও ক্রমে বাড়তেই থাকে।
তবে বর্তমানের সহজলভ্য ইন্টারনেট এবং বিজ্ঞানের জ্ঞান ক্রমবৃদ্ধির যুগে, এসব ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে আমরা সহজেই উপেক্ষা করতে পারি।
সঠিক তথ্য দিয়ে নিজের এবং আশেপাশের পরিচিত মানুষদের সাহায্য করতে পারি।
এর মাধ্যমেই বিকশিত করতে পারব নিজেদের শারীরিক এবং অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যকে।
আর এসব ব্যাপারেই গ্ল্যামোজেন তার প্রিয় পাঠকদের পাশে দাঁড়াতে সর্বদা সচেষ্ট থাকে।