Search
Close this search box.

সাধারণ খাবার যখন হতে পারে ক্ষতির কারণ

মানুষ চাল, মাছ, মাংস, শাক-সবজি মিলিয়ে কয়েক হাজার ধরনের খাবার খেয়ে থাকেন।

তবে এসবের মধ্যে বেশ কিছু খাবার রয়েছে, যা অনেক সময় শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

আপাত দৃষ্টিতে এসব খাবারের অনেকগুলোই নিরাপদ মনে হলেও বিশেষ কারণে বা বিশেষ অবস্থায় এগুলো বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে, হয়ে উঠতে পারে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।

কোনও কোনও খাবার রয়েছে, যা তাৎক্ষণিকভাবে মানুষের মৃত্যুও ঘটাতে পারে।

আবার কোনও কোনও খাবারের কারণে হওয়া ক্ষতি তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা না গেলেও তা দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ক্ষতি করে থাকে।

যেসব খাবার অবস্থাভেদে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে, এরকম কয়েকটি খাবারের বর্ণনা তুলে ধরা হলো-

পটকা মাছ

বাংলাদেশ, চীন, জাপান, কোরিয়া-সহ বেশ কিছু দেশের মানুষের কাছে পটকা মাছ বা পাফার ফিশ বেশ জনপ্রিয় একটি মাছ।

কিন্তু এই মাছটি ঠিকভাবে প্রসেস করা সম্ভব না হলে এটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে।

কেননা, এর শরীরে থাকে বিষাক্ত টিউরোটক্সিন নামক উপাদান, যা সায়ানাইডের তুলনায় বহুগুণ বেশি কার্যকর। 

এই মাছ খাওয়ার আগে দক্ষতার সঙ্গে মাছের শরীরের বিষাক্ত অংশটি আলাদা করে ফেলতে হবে।

এমনিতে মাছটি হয়তো ক্ষতিকর নয়, কিন্তু বিষাক্ত অংশটি কোনওভাবে মাছের শরীরে রয়ে গেলে আর তা মানুষের পাকস্থলীতে চলে গেলে অল্পক্ষণের মধ্যে এটা মানুষকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করতে পারে- এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে।

মাশরুম

বিশ্বের অনেক দেশেই মাশরুম একটি জনপ্রিয় এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার।

মাশরুম রক্তচাপ কমাতে, টিউমার কোষের বিরুদ্ধে, বহুমূত্র রোগীদের জন্য, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, বাত-ব্যথার মতো রোগের বিরুদ্ধে উপকারী বলে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন।

তবে প্রকৃতিতে মাশরুমের হাজার রকমের জাত রয়েছে এবং এগুলোর অনেকগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

যেমন- শুধু উত্তর আমেরিকাতেই মাশরুমের ১০ হাজারের বেশি প্রজাতি রয়েছে।

খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে এগুলোর ২০ শতাংশই মানুষকে অসুস্থ করে দিতে পারে। আর শতকরা এক ভাগ তাৎক্ষণিকভাবে মানুষকে মেরেও ফেলতে পারে।

মাশরুমের নানা জাতের মধ্যে বাংলাদেশে চাষ হয়ে থাকে ৮-১০টি জাতের।

কিন্তু বাংলাদেশেই পাওয়া যায় মাশরুমের এমন অনেক জাত, বিশেষ করে বুনো মাশরুম, যা অনেক সময় শরীরের জন্য বিষাক্ত ও ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হতে পারে।

পরিচিত জাতের বাইরে অন্য মাশরুম, বিশেষ করে বুনো মাশরুম কখনোই খাওয়া উচিত নয়। কারণ মাশরুম শরীরের জন্য উপকারী হলেও সব মাশরুম উপকারী নয়।

বরং অনেক মাশরুম মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

বিশেষ করে ব্যাঙের ছাতা বলে পরিচিত বুনো মাশরুমে এক ধরণের ছত্রাক থাকে, যা লিভার ও কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

খেসারি ডাল

বাংলাদেশে মসুর ও মুগডালের পাশাপাশি অনেকের খাদ্য তালিকায় খেসারি ডালও থাকে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ডালে বোয়া (BOAA) নামের এক প্রকার অ্যালানাইন অ্যামিনো অ্যাসিড থাকতে পারে, যা বিষাক্ত নিউরোটক্সিন তৈরি করে।

এই অ্যাসিড ‘নিউরো-ল্যাথারিজম’ বা স্নায়ুবিক পঙ্গুতা তৈরি করতে পারে।

এই রোগের লক্ষণ অনেক সময় হঠাৎ করেই দেখা দেয়।

এতে করে হাঁটতে গিয়ে অসুবিধা এবং অসহ্য যন্ত্রণা হওয়া কিংবা পা অবশ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পরে।

বেশিদিন ধরে খেসারির ডাল খেলে এই রোগ হতে পারে।

আলু

আলুতে শেকড়ের জন্ম হলে সেখানে গ্লাইকোঅ্যালকালোইড নামের এক ধরণের উপাদান তৈরি হয়।

বিশেষ করে, দীর্ঘদিন যাবৎ আলু পড়ে থাকলে এই ধরণের উপাদানের জন্ম হয়।

অনেক সময় গাছের পাতায় বা কাণ্ডেও এই উপাদান থাকে। বিশেষ করে, আলুর গায়ে শেকড় জন্মালে যে লাল রঙের গাদ তৈরি হয়, সেখানে এই উপাদান বেশি থাকে।

এই গ্লাইকোঅ্যালকালোইড শরীরে প্রবেশ করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

এছাড়া ডায়ারিয়া, মাথাব্যথা, এমনকি মানুষ কোমায়ও চলে যেতে পারেন। বলা হয়ে থাকে, কেউ কোনওভাবে তিন থেকে ছয় মিলিগ্রাম পরিমাণ এই গ্লাইকোঅ্যালকালোইড খেয়ে ফেললে তার মৃত্যু হতে পারে।

এছাড়া আলুতে অনেক সময় সবুজ রঙের এক ধরণের পদার্থ দেখা যায়।

সেটা হলো কারসিনোজেনিক নামের একটা উপাদান, যা ক্যানসারের কারণ হতে পারে। তাই এ ধরণের আলু খাওয়া উচিত নয়।

টমেটো

টমেটো গাছের পাতা এবং কাণ্ডে অ্যালকালাই থাকে, যা পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

কাঁচা টমেটোর ভেতর এই উপাদান থাকে বলে মনে করা হয়।

এই কারণে ভালো করে রান্না না করে কাঁচা টমেটো খাওয়া উচিত নয়।

কারণ, বেশি পরিমাণে কাঁচা টমেটো খেলে যে কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।

এমনকি- কাঁচা টমেটো খেয়ে মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

তাই টমেটো গাছের পাতাও কোনওভাবে খাওয়া উচিত নয়।

কাজু বাদাম

কাজু বাদামের দুইটি জাত রয়েছে – একটি মিষ্টি, অপরটি তিতকুটে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি পুষ্টিকর খাবার হলেও তেতো কাজুবাদামের ভেতর সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড নামের একটি বিষাক্ত উপাদান থাকে, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।

কারণ তা শরীরে হাইড্রোজেন সায়ানাইড তৈরি করতে পারে।

কাঁচা অবস্থায় তেতো কাজুবাদাম খাওয়া একেবারে উচিত নয়।

বলা হয়, প্রতিটা তেতো কাজুবাদামের ভেতর ছয় মিলিগ্রাম হাইড্রোজেন সায়ানাইড থাকে।

কারো শরীরে ১০০ মিলিগ্রাম হাইড্রোজেন সায়ানাইড প্রবেশ করলে তা তার মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট হতে পারে।

আপেল

আসলে ঠিক আপেল নয়, আপেলের বিচির ভেতর খানিকটা পরিমাণে সায়ানাইড থাকে।

ফলে কারো শরীরের ভেতর যদি বেশি পরিমাণে আপেল বিচি বা বিচির নির্যাস প্রবেশ করে, তাহলে তা তাকে মেরে ফেলার মতো সায়ানাইড তৈরি করতে পারে।

আর সায়ানাইড হলো একটি মারাত্মক ধরণের বিষ।

অনেক সময় অনেকে আপেলের জুস তৈরি করে খান।

তখন যদি অনেকগুলো বিচি-সহ আপেলের জুস করা হয়, তাহলে সেই বিচির কারণে ওই জুসে মারাত্মক বিষ তৈরি হতে পারে।

তবে বিচি বাদ দিলে আপেলের বাকি অংশে অনেক পুষ্টি রয়েছে। তাই বিচিসহ আপেল খাবেন না।

কাঁচা মধু

মৌমাছির চাক ভাঙ্গা তাজা মধু সংগ্রহ করতে অনেকেই পছন্দ করেন।

কিন্তু খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাস্তুরায়িত করা হয়নি এমন কাঁচা মধু শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

কারণ কাঁচা মধুর মধ্যে অনেক বিষাক্ত উপাদান থাকতে পারে, যার কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

এছাড়া এমন মধু খাওয়ার ফলে ঘোর ঘোর ভাব আসা, দুর্বল লাগা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বমি করার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।

কাঁচা মধুর ভেতর গ্রায়ানোটক্সিন নামের একটি উপাদান থাকে। এর এক চামচ পেটে গেলে হালকাভাবে এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

কিন্তু বেশি খাওয়া হলে সেটার ফলাফল হতে পারে মারাত্মক।

তাই বিশেষজ্ঞরা কাঁচা মধু না খেয়ে সেটা প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়ার পরামর্শ দেন।

বিশেষ করে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে সেই মধুর ভেতর যেন মৌমাছির চাকের বা মৌমাছির কোন অংশ না থাকে।

মটরশুঁটি-শিমের বিচি

বাংলাদেশে মটরশুঁটি ও শিমের বিচি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার।

শিমের বিচি অবশ্য সারা বিশ্বেই একটি জনপ্রিয় খাবার।

মটরশুঁটি ও শিমের মধ্যে ফাইটোহেমাগ্লুটিনিন নামের একটা পদার্থ থাকে, যা অনেকের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এ কারণে রান্নার আগে মটরশুঁটি ও শিমের বিচি অবশ্যই ১৫ মিনিটি ধরে পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি ফেলে দিয়ে আবারও রান্না করতে হবে।

কামরাঙ্গা

এটি বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ফল।

সাধারণ মানুষ এটি খেলে কোন সমস্যা নেই।

তবে যাদের কিডনির বা স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এই ফলটি ক্ষতিকারক।

কচু

এটি বাংলাদেশে একটি সবজি এবং এর পাতা শাক হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

কচু গাছ যদি ছায়ায় জন্মে বা বড় হয়, তাহলে এর মধ্যে এমন একটি কম্পোনেন্ট তৈরি হয়, যা অনেকের জন্য অ্যালার্জি তৈরি করে।

ফলে কচু খেলে তাদের চুলকানি হয়, গলা ফুলে যায়।

এর কারণ হলো, কচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট।

অনেক সময় এতে করে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতে পারে।

কচু জাতীয় জিনিস খেতে হলে সঙ্গে লেবু খেতে হবে।

সেটা কচুর অক্সালেটের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ করে।