নরমাল, অয়েলি এবং সেন্সিটিভ স্কিনের ডেইলি স্কিন কেয়ার রুটিন

বিভিন্ন ধরণের ত্বকের ধরণ বুঝে বিভিন্ন ত্বকের আলাদা আলাদা করে যত্ন নেওয়া উচিত।

আর রোজের যত্ন রোজ না নিলে ত্বক কিন্তু দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

তাই আপনাদের জন্য রইলো নরমাল, অয়েলি এবং সেনসেটিভ ত্বকের প্রতিদিনের স্কিন কেয়ার রুটিন।

১. নরমাল স্কিন কেয়ার রুটিন

যাঁরা নরমাল স্কিনের অধিকারী, তাঁরা খুবই ভাগ্যবান। কারণ নরমাল স্কিনে অ্যান্টি এজিং, ব্রণ বা সংবেদনশীবতার সমস্যা নেই।

কিন্তু তাই বলে আলাদা করে ত্বকের যত্নের প্রয়োজন নেই, এমনটা কিন্তু কখনওই নয়।

এমন ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য নর্মাল স্কিনেরও রোজকার একটা রুটিন মেনে চলা উচিত।

সকালের রুটিন

ক্লিনজার

  • নরমাল ত্বকের জন্য একটা মাইল্ড ক্লিনজার বেছে নিন। তার ফেনাটাও যেন মৃদু হয় এবং সালফেটমুক্ত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। যেমন- জেন্টল ফোমিং ক্লিনজার।

টোনার

  • টোনারের ক্ষেত্রে উপকরণগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেকারণে মৃদু কিছু নির্যাস, যেমন হোয়াইট টি এক্সট্র্যাক্ট, গ্রীন টি এবং ক্যামোমিল-আপনার ত্বকের জন্য একদম মানানসই।
    যেমন- পিউরিফাইং ফেসিয়াল টোনার।
  • বিশেষ টিপস- টোনার ব্যবহারের আগে সেটি ফ্রিজে রেখে তারপর ব্যবহার করুন। ঠান্ডা ঠান্ডা টোনার মুখে অ্যাপ্লাই করলে এটি ত্বকের পোরসগুলিকে টাইট করে এবং ত্বককে সদাজাগ্রত রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

সিরাম

  • নরমাল স্কিনের জন্য হ্যালুরোনিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফেসিয়াল সিরাম সর্বোত্তম।
    এই উপকরণগুলি কেবলই যে কোষের মেরামত করে তা নয়, সেইসঙ্গে ত্বককে আঁটোসাঁটো রাখতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে।
  • সেইসঙ্গে ত্বকের ওপর থাকা ডার্ক স্পটগুলিকেও হালকা করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
    এর জন্য আপনারা সারা বছর ধরে ভিটমিন সি + ই সিরামটি ব্যবহার করতে পারেন, খুব ভালো উপকার পাবেন।

ময়েশ্চারাইজার

  • ত্বকের ওপর সিরাম অ্যাপ্লাই করে নেওয়ার পর কয়েক মিনিট সেটি শুকোনোর জন্য সময় দিন এরপর ভালো ফল পেতে আপনাকে একটি হাইড্রেটিং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে, যাতে ত্বকের উজ্জ্বলতা, মসৃণতা এবং স্থিতিস্থাপকতা বজায় থাকে।
  • এর জন্য আপনারা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট CoQ10 ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।

এসপিএফ

  • সকালের স্কিন কেয়ার রুটিন শেষ হোক একটা এসপিএফ যুক্ত হাইড্রেটিং ময়েশ্চারাইজারের হাত ধরে। সারা মুখে এবং ঘাড়ে-গলাতেও এটি ভালভাবে অ্যাপ্লাই করুন।
  • আর এর জন্য কোনও ভালো UVA/UVB-যুক্ত হালকা এবং হাইড্রেটিং ময়েশ্চারাইজারের সন্ধান করুন, যা আপনার ত্বককে রক্ষা করবে এবং ত্বকের পোরসগুলি বুজে যেতে দেবে না। এর জন্য ময়েশ্চারাইজার উইথ এসপিএফ ২০ একবার ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

রাতের রুটিন

ক্লিনজার

  • সারা দিন যদি মুখে মেকআপ থাকে, তাহলে রাতে বাড়ি ফেরার পর ত্বকের ক্লিনজিং ভীষণভাবে জরুরী।
    এর জন্য সকালের মতোই মাইল্ড ক্লিনজার দিয়ে ত্বক ক্লিনজিং করে নিন। এতে আপনার সারাদিনের ধুলো-ময়লা সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।

টোনার

  • স্কিনের টোনিং-এর জন্য সকালের টোনারটাই ব্যবহার করুন। অবশ্যই ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করুন।
    ত্বকের অতিরিক্ত ময়লা বা মেকআপের অংশ মুছে ফেলতে টোনার সবচেয়ে উপযোগী।

নাইট ক্রিম

  • নরমাল ত্বকের যত্নে রাতে নাইট ক্রিমের ব্যবহার বিশেষভাবে জরুরী। রাতের বেলায় ত্বকে টু-ইন-ওয়ান নাইটক্রিম ব্যবহার করুন, যা আপনার ত্বককে ময়েশ্চারাইজও করবে।
  • কোষ গঠন করে ত্বককে উজ্জ্বল এবং সুন্দর করে তোলার জন্য নাইটক্রিম অবশ্যই অ্যাপ্লাই করুন।

ময়েশ্চারাইজার

  • সবার শেষ ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে এবং তারুণ্যময় দেখাতে অ্যান্টি-এজিং এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, যেটি সকালে ব্যবহার করেছেন।

২. অয়েলি স্কিন কেয়ার রুটিন

তৈলাক্ত ত্বকে ওভারঅ্যাক্টিভ গ্ল্যান্ড থাকে, যার ফলে আপনার ত্বকে প্রয়োজনের চেয়েও অনেক বেশি তেল তৈরি হয়।

কখনও কখনও এটি জেনেটিকও হতে পারে, আবার কোনও ভুল স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারের ফলেও ত্বক তৈলাক্ত হতে পারে। তাই তৈলাক্ত ত্বকের চাই বিশেষ।

স্টেপ ১

  • সকাল-বিকেল ক্লিনজিং- যেকোনও স্কিন কেয়ার রুটিনে ক্লিনজিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বেশিরভাগ মানুষই সকালে ক্লিনজিং করেন।
    তবে তৈলাক্ত ত্বক যাঁদের তাঁদের জন্য এই স্টেপটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই এক্সফলিয়েটিং ক্লিনজার ব্যবহার করে ত্বক পরিষ্কার করে নিন।
    কেবল দিনের বেলায় নয়। দিনে এবং রাতে এই ক্লিনজার ব্যবহার করুন।

স্টেপ ২

  • টোনার- ত্বকের অতিরিক্ত ধুলো-ময়লা তুলে ফেলার পর গুরুত্বপূর্ণ স্টেপটি হল টোনিং।
    তৈলাক্ত ত্বকের জন্য আপনার প্রয়োজন এবং এক্সফলিয়েটিং টোনার, যা স্যালিসিলিক অ্যাসিড, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ হতে হবে।

স্টেপ ৩

  • ত্বকের ট্রিটমেন্ট- তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ বা অ্যাকনে হওয়ার প্রবণতা সবথেকে বেশি হয়।
    সেক্ষেত্রে ত্বকে যদি ব্রণ বা অ্যাকনের প্রবণতা বেশি থাকে, তাহলে দিনের বেলায় বেনজোয়ল পারক্সাইড বা সালফার ব্যবহার করা হয়, যাতে ত্বকে তেল উৎপাদন রোধ করা যায় এবং ব্রেকআউট রোধ করা যায়।

স্টেপ ৪

  • সকাল বিকেল ময়শ্চারাইজার- তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
    অনেকে অবশ্য মনে করেন, তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের প্রয়োজন পড়ে না।
    কিন্তু এ ধারণা ভুল, যেকোনও ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
    অ্যাকনেযুক্ত অয়েলি স্কিনের জন্য অবশ্যই লাইট ওয়েট, তেল-মুক্ত, জল-বেসড ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন।

অন্যান্য স্টেপ

ব্লটিং পেপার ব্যবহার করুন

আপনার ত্বকে যদি অতিরিক্ত তেল থাকে তাহলে বাড়তি তেল শুষে নেওয়ার জন্য ব্লটিং পেপার ব্যবহার করতে পারেন।
এর জন্য একটি ব্লটিং পেপার নিয়ে, মুখের ওপর আলতো করে চেপে ধরুন।
এতে আপনার মুখের বাড়তি তেল শুষে যেতে পারে।
এই পদ্ধতিটি আপনারা সারা দিন ধরেই বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার করতে পারেন।

এক্সসারসাইজের পর মুখ ধোয়া

আমেরিকান একাডেমী ও ডারমেটোলজির মত অনুসারে, যোগা বা অনুশীলনের পর অবশ্যই মুখ ধুয়ে নিন।

যোগাভ্যাসের পর যদি স্নান না করেন, তাহলে অবশ্যই মুখ ধুয়ে নেবেন, এতে আপনার মুখে ঘাম, ময়লা, তেল জমতে পারে না।

বাইরে বের হলেই সানস্ক্রিন

নূন্যতম এসপিএফ ৫০-যুক্ত সানস্ক্রিন বাইরে বেরলেই অবশ্যই ব্যবহার করুন।

৩. সেনসেটিভ স্কিন কেয়ার রুটিন

সকল মানুষের ত্বকের ধরণ খানিকটা হলেও সংবেদনশীল কিংবা সেনসেটিভ।

আপনার ত্বক যদি সহজেই লাল হয়ে যায়, কিংবা অল্পেতেই জ্বালাভা অনুভূত হয়, ব়্যাশ-ফুসকুড়ির সমস্যা লেগেই থাকে তাহলে বুঝবেন আপনার সেনসেটিভ স্কিন।

এই ধরণের স্কিনেরও চাই বিশেষ যত্ন।

সকালের রুটিন

ক্লিনজার

  • সকালে উঠে একদম কোমড় বেঁধে ত্বক পরিষ্কার করার কোনও প্রয়োজন নেই।
    সেক্ষেত্রে সকালে উঠে হালকা হাতে ত্বক ক্লিনজিং করে নিতে হবে, যাতে আগের রাতের ক্রিম বা কোনও চটচটে পদার্থের অবশিষ্টাংশ সম্পূর্ণভাবে উঠে গিয়ে ত্বক সতেজ হয়ে ওঠে। তবে এটি অ্যাপ্লাই কিংবা রিমুভ করার জন্য জলের প্রয়োজন নেই, এতে আপনার ত্বকের লাল ভাব কমাতে অনেকটাই সাহায্য করবে।

ফেস মিস্ট

  • সেনসেটিভ স্কিনের জন্য ফেস মিস্ট একটি আবশ্যিক পণ্য। দিনের বিভিন্ন সময়ে আপনারা প্রয়োজন মতো ফেস মিস্ট ব্যবহার করতে পারেন।
    কেবলমাত্র ত্বককে সতেজ করাই নয়, সেইসঙ্গে নির্জীব ত্বককে সজীব করে তুলতে সাহায্য করবে ফেস মিস্ট।

ময়েশ্চারাইজার

  • সংবেদনশীল ত্বকে প্রায়শই হাইড্রেশনের অভাব হয়। তাই সারাদিন তরতাজা থাকার জন্য ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।
    এর জন্য আপনারা কোনও হালকা, অ্যালানটোন যুক্ত, প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, কার্নেশন অয়েলযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

রাতের রুটিন

মেকআপ রিমুভার বা মিসেলার ওয়াটারঃ

  • সেনসেটিভ ত্বকে মেকআপ অ্যাপ্লাই করার পর তা তোলার জন্য অবশ্যই মিসেলার ওয়াটার ব্যবহার করুন। সেনসেটিভ স্কিনে স্ক্রাবিং এড়িয়ে চলতে মেকআপ তোলার ক্ষেত্রে মিসেলার ওয়াটার ব্যবহার করা আদর্শ।

ক্লিনজার

  • একটি সাধারণ, নন-ফোমিং জেল টেক্সচারের ক্লিনজার আর্দ্রতার মাত্রাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে ত্বককে পরিষ্কার করতে পারে। এর জন্য গ্লিসারিন সমৃদ্ধ কোনও ক্লিনজার ব্যবহার করুন এবং উষ্ণ জলে ধুয়ে ফেলুন। এটি সহজেই ত্বককে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

ল্যাকটিক অ্যাসিড সিরাম

  • সেনসেটিভ ত্বকের এক্সফলিয়েটিং করার প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড বেশি স্ট্রং হতে পারে, পরিবর্তে ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ সিরাম ব্যবহার করুন।
    সপ্তাহে ২দিন এটির ব্যবহার করতে পারেন, তবে আপনার ত্বক যদি অতিরিক্ত সেনসেটিভ হয়, তাহলে ময়েশ্চারাইজারের ওপর সিরাম প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন।

ময়েশ্চারাইজার

  • সংবেদনশীল ত্বকের জন্য ভারী ও চটচটে নয় এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন এবং তা যদি ভিটামিন ই সমৃদ্ধ হয়, তাহলে তো আর কথাই নেই।
    এতে আপনার পোরস বন্ধ হবে না। সারা রাত ত্বকের হাইড্রেশন যাতে ভাল হয়, তার জন্য রাতে ঘুমোনোর আগে মুখে মোটা করো ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করুন।
    এতে রাতে ঘুমোনোর সময় লালচেভাব এবং প্রদাহ হ্রাস করতে সাহায্য করে।

শিট মাস্ক

  • স্নিগ্ধ-শীতল শিট-মাস্ক সেনসেটিভ স্কিনের জ্বালা-প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এর জন্য মাস্ক ব্যবহারের আগে তা ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। এর জন্য অ্যালোভেরা, শসার নির্যাস-সমৃদ্ধ শিট মাস্ক ব্যবহার করুন।