চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল এখন খুব সাধারণ একটি সমস্যা।
চোখের নিচে কালো দাগ বা বিবর্ণ হয়ে যাওয়াকে আন্ডার আই ডার্ক সার্কেল বলা হয়।
আমাদের চোখের আশেপাশে রক্তের ছোট ছোট কৌশিকনালী থাকে, যা আমাদের চোখের চারপাশের কোষগুলোকে অক্সিজেন সরবরাহ করে।
কিন্তু বিভিন্ন কারণে এই কৌশিকনালীগুলো ফেটে যেতে পারে।
আর এই কৌশীকনালির ব্লিডিং এর জন্যই চোখের চারপাশে কালো দেখায়।
স্কিন-এর রঙের উপর নির্ভর করে ডার্ক সার্কেল নীল, বেগুনি, বাদামী বা কালো রঙের হতে পারে।
ডার্ক সার্কেল হওয়ার অন্যতম কারণ হলো জিনগত বা বংশগত কারণ।
এটি জেনারেশন থেকে জেনারেশন পর্যন্ত যেতে পারে। যেমন – দাদার ছিল, বাবার হয়েছে এখন আবার ছেলেরও হয়েছে, এমন৷ আরেকটি কারণ হলো ঘুমের অভাব।
ঘুম ঠিকমতো না হলে চোখের নিচে কালো দাগ বা কালচে ভাব আসতে পারে
কেউ যদি দিনে কম করে হলেও ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা না ঘুমায়, তাহলে তার চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।
আমাদের চোখের নিচের অংশের ত্বক অত্যন্ত নরম এবং কোমল হয়।
অতিরিক্ত চুলকানো এবং ঘষাঘষির কারণেও চোখের নিচে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল দেখা দেয়।
রক্তস্বল্পতা বা ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি কিংবা পুষ্টির অভাবে চোখের নিচে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল হয় ৷
পরিপূর্ণ বিশ্রাম এর অভাবেও ডার্ক সার্কেল দেখা দেয়
আমাদের বর্তমান সময়ের জীবনযাপন এতই জ্যামযুক্ত যে আমাদের চোখের চাপটাও অনেক। আমরা দীর্ঘক্ষন ল্যাপটপ, কম্পিউটার বা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকি।
এর কারণেও চোখের নিচে কালো দাগ দেখা দেয়। ডার্ক সার্কেল হবার অন্যতম কারণ হলো মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা।
অতিরিক্ত চাপ নিয়ে কাজ করলে বা চিন্তায় থাকলে চোখের নিচে কালো দাগ হতে পারে।
ঘুমের অভাবে বা মানসিক চাপের কারণে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। তখন চোখের নিচে কালো দাগ চলে আসে।
বয়সের সাথে সাথে আমাদের শরীরে কম বেশি চর্বি জমতে শুরু করে। এর কারণেও কালো একটা ভাব চোখের নিচে পড়তে দেখা যায়, চর্বি সরে গেল একধরণের শূন্যতার সৃষ্টি হয়।
তাই চোখের নিচে কালো ভাব দেখা যায়। স্কিন ল্যাগজেটি অর্থাৎ বলিরেখা পড়লে ত্বক ঝুলে গেলে চোখের নিচে কালচে ভাব ফুটে উঠে।
এটি সাধারণত বয়স হলে দেখা দেয়। সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি নিয়ে তো আমরা সবাই জানি।
এই সূর্যরশ্মি স্কিনের জন্য যেমন ভয়াবহ ঠিক তেমনি চোখের জন্যও। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি চোখের আশেপাশের পাতলা স্কিনের জন্য বেশ ক্ষতিকর।
অনেক সময় প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার না করার কারণে ডার্ক সার্কেল দেখা দেয়
ডিহাইড্রেশন-এর কারনেও কিন্তু চোখের নিচে কালো দাগ এর মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়। থাইরয়েড গ্রন্থির কাজকর্মে সাম্যতা না থাকলেও ডার্ক সার্কেল হতে পারে।
আমরা সকলেই জানি স্কিন কেয়ার-এর জন্য গোলাপজল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঠিক তেমনি চোখের নিচের কালো দাগের জন্য গোলাপজল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ছোট পরিষ্কার কাপড়ের টুকরা গোলাপ জলে ভিজিয়ে চোখের উপরে রেখে দিন।
এতে করে চোখের নিচের কালো দাগ দূর হবে।
কফিতে আছে ক্যাফেইন যা চোখের নিচের ফোলা ভাব বা পাফিনেস দূর করে এবং ফ্রি র্যাডিক্যালসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও স্কিনকে রক্ষা করে।
চোখের চারপাশের ত্বকে নিয়মিত কফির ব্যবহার তাই কমিয়ে দিতে পারে ডার্ক সার্কেল।

ডার্ক সার্কেল দূর করতে ভেষজ চা পান করতে পারেন
দিনে একবার ভেষজ চা পান করুন।
এর সাথে সামান্য আদা, তুলসী পাতা, জাফরান এবং সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে ভালো ফলাফল পেতে পারেন।
শসার মধ্যে রয়েছে ত্বক উজ্জ্বলকারী উপাদান। এগুলো চোখের নিচের কালো দাগ দ্রুত দূর করতে সাহায্য করে।
একটি শসাকে গোল করে কেটে ফ্রিজে ৩০ মিনিট রেখে দিন। চোখে ১০ মিনিট রাখুন। এবার জায়গাটি ধুয়ে ফেলুন।
কয়েক সপ্তাহ ধরে দিনে দুইবার এ পদ্ধতি অনুসরণ করুন। এছাড়া অর্ধেক শসা গ্রেট করে তার রস বের করে নিন।
এর সাথে মিশিয়ে নিন ২-৩ ড্রপ ভিটামিন-ই অয়েল। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।
এভাবে ১ মাস এ পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
আলুর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট। এটি চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে উপকারী।
পাশাপাশি এটি চোখের নিচের ফোলাভাব কমায়। একটি আলুর খোসা ছিলে, গ্রেট করে এর রস বের করুন।
একটি কটন বলের মধ্যে ভেজান এবং চোখের উপর দিন।
এভাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখুন৷ এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন৷ কয়েক সপ্তাহ দিনে এক থেকে দুইবার এই পদ্ধতি অবলম্বন করুন।
রস দেওয়ার পাশাপাশি আলু কেটে চোখলর উপরে দিতে পারেন।
এছাড়াও আলুর রস এর সাথে মধু মিশিয়ে চোখে এপ্লাই করতে পারেন সপ্তাহে দুই বার৷

সেনসিটিভ ত্বকের জন্য আলমন্ড অয়েল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
সুইট আলমন্ড অয়েল স্কিন টোন উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে চোখের উপরে এবং চোখের চারপাশের দুই ফোঁটা সুইট আলমন্ড অয়েল লাগিয়ে নিন এবং সকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
সমস্যা না কমা পর্যন্ত রোজ ব্যবহার করুন৷
ডার্ক সার্কেল দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন টমেটো। এক চামচ টমেটোর রস এবং আধা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে তা চোখের নিচে লাগান।
এরপর ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। দিনে একবার করে টানা ১০ দিন ব্যবহার করুন।

এছড়াও ব্যবহার করতে পারেন গ্রিন টি
গ্রিন টি ব্যাগ পানিতে ভিজিয়ে ফ্রিজে ঠান্ডা করে প্রতিদিন রাত্রে ঘুমানোর আগে চোখে ১০ মিনিট লাগিয়ে অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।
প্রতিদিন বাহিরে বের হবার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এছাড়াও ব্যবহার করতে পারেন আই ক্রিম বা আই সিরাম।
চোখের চারপাশের ত্বকের লেয়ার পাতলা হওয়ার কারণে এই এরিয়া বেশ সেনসিটিভ হয়।
তাই সাধারণ ময়েশ্চারাইজার দিয়ে চোখের এরিয়ার পুরোপুরি যত্ন নেওয়া হয় না।
অন্যদিকে আই ক্রিমের উপাদানগুলো অন্যান্য ময়েশ্চারাইজারের তুলনায় একটু বেশি কোমল হয়ে থাকে, যা চোখের চারপাশের নরম ত্বককে কোনোরকম ক্ষতি করা ছাড়াই প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা দেয়।

এছাড়া ডার্ক সার্কেল দূর করতে পর্যাপ্ত পানি পান এবং পর্যাপ্ত ঘুমের কোনো বিকল্প নেই
যত কিছুই করেন না কেন ঘুম যদি ভালো না হয় তবে চোখের নিচে কালি পড়বেই। এজন্য পর্যাপ্ত ঘুম ও শরীরে যত্ন নিতে হবে।
আমাদের চোখ এবং চোখের আশেপাশে ত্বক অত্যন্ত সেনসিটিভ তাই চোখের কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল দূর করতে গিয়ে যেন চোখের মারাত্মক কোন সমস্যা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।