মুখে, বিশেষ করে দুই গালে, কপালে, গলায়, পিঠে অনেকেরই ছোপ দাগ পড়ে।
তবে যারা নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেন, রোদের হাত থেকে সুরক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করেন, তারা দীর্ঘদিন এই ধরনের স্পটের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে সক্ষম হন।
ত্বকের যত্নআত্তির ব্যাপারে কোনওরকম সমঝোতা না করাই ভালো। নিয়মিত ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চরাইজিংয়ের রুটিন মেনে চলুন।
রাতে শুতে যাওয়ার আগে নিশ্চিত করুন ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকছে।
মনে রাখবেন যে আমরা আজকাল দিনের অনেকটা সময়, এমনকী রাতের বেলাতেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকি।
তাই যতটা আন্দাজ করা যায়, আসলে আপনার ত্বকের তার চেয়ে অনেক বেশি আর্দ্রতা প্রয়োজন।
নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল, সুইট আমন্ড অয়েলও ময়েশ্চরাইজার হিসেবে খুব কাজের।
আপনার ত্বকের জন্য কোনটা সবচেয়ে ভালো, সেটা কেবল বুঝে নিতে হবে।
কোন কোন কারণে ত্বকে কালো ছোপ পড়ার আশঙ্কা বাড়ে
রোদ
ত্বকের নিদাগ উজ্জ্বলতার সবচেয়ে বড়ো শত্রু হচ্ছে সূর্যের চড়া আলো। রোদে বের হবার আগে অতি অবশ্যই মুখসহ শরীরের সব খোলা অংশে সানস্ক্রিনের প্রলেপ লাগান।
সাঁতার কাটার সময় ব্যবহার করুন ওয়াটারপ্রুফ সানস্ক্রিন। সানস্ক্রিনের আস্তরণ না থাকলে আপনার ত্বক নিজেই নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য বেশি বেশি করে মেলানিন তৈরি করবে।
ফলে গাঢ় দাগের সংখ্যাও বাড়বে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
হরমোনের অতিরিক্ত বেশি বা কম ক্ষরণের জন্য আপনার ত্বকে গাঢ়রঙের দাগ-ছোপ পড়তে পারে।
প্রেগন্যান্সি বা মেনোপজ়ের কারণেও হরমোনের স্তরে ভারসাম্যের অভাব দেখা দেয়।
এর ফলে মেলানিনের উৎপাদনেও সাম্য থাকে না। ফলে মুখে, কাঁধে, গলায় ছোপ-ছোপ দাগ দেখা দিতে পারে।
ত্বককে রোমহীন রাখার অনন্ত প্রচেষ্টা
অনেকেই ত্বকের বাড়তি রোমের আস্তরণ সরিয়ে ফেলতে চান।
সে কারণে রোম তোলার ক্রিম, টুইজার, ওয়্যাক্স ইত্যাদি নানা পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়।
কিন্তু নিরন্তর এই প্রচেষ্টা চালাতে গিয়ে ত্বকের স্পর্শকাতরতা বাড়ে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে দাগ-ছোপের আশঙ্কাও।
ব্রণ বা চোট-আঘাতের দাগ
ব্রণ বা ফোড়া হলে খুঁটবেন না, হাত লাগাবেন না বেশি। তা হলে কিন্তু দাগ চট করে মিলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।
এছাড়াও
লিভারের সমস্যা হলে, বয়সের কারণে, দুশ্চিন্তা, ডায়াবেটিস ও অতিরিক্ত রাসায়নিক পণ্যের ব্যবহার করার ফলে ত্বকে ছোপ দাগ পড়তে পারে।
কোন কোন ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে এই দাগ মিলিয়ে যেতে পারে
ভিটামিন ই তেল
যদি আপনার ভিটামিন ই তেলে কোনও অ্যালার্জি থাকে, তা হলে আলাদা কথা।
না হলে দাগ-ছোপে সরাসরি তা ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল কিনে এনে তা থেকে তেল বের করে নিয়েও সরাসরি দাগের উপর লাগানো সম্ভব।
তবে যাদের ব্রণ হবার টেন্ডেন্সি আছে, তারা আমন্ড, সানফ্লাওয়ার সিডস, শুকনো অ্যাপ্রিকট ইত্যাদি রাখুন খাদ্য তালিকায়।
আলুর রস
আলু খুব ভালো করে ধুয়ে ছেঁচে রস বের করে নিন। তার পর সরাসরি সেই রস লাগিয়ে নিন দাগ-ছোপে।
মিনিট দশেক অপেক্ষার পর ধুয়ে ফেলতে পারেন। ফেস প্যাক বানানো যায় আলুর রস আর মধু দিয়েও।
অ্যালোভেরা জেল
এই অ্যালোভেরা জেলও দাগ-ছোপ তাড়াতে খুব কার্যকর। সরাসরি অ্যালো ভেরা পাতা থেকে জেল বের করে নিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন।
অ্যালোভেরা জেল, চিনির মিশ্রণ তৈরি করে লাগিয়ে নিন ত্বকে।
আমন্ডের তেল
রাতে শুতে যাওয়ার আগে ময়েশ্চরাইজারের বদলে কয়েক ফোঁটা সুইট আমন্ড অয়েল ব্যবহার করে দেখুন, চোখে পড়ার মতো ভালো ফল পাবেন!
বেসন
ত্বক উজ্জ্বল করতে বেসন খুব ভালো কাজ করে।
আধা চা-চামচ হলুদ, দুই চা-চামচ বেসন ও কয়েক ফোঁটা কাঁচা দুধ মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে মুখে মাখুন।
শুকানোর জন্য ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।
গ্লিসারিন ও গোলাপ জল
গোলাপ জল ও গ্লিসারিন একসঙ্গে কালচে ভাব দূর করার পাশাপাশি ঠোঁটের চারপাশের শুষ্কতা কমায়।
দুইটি উপাদান সমপরিমাণে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে মেখে সারা রাত রেখে দিন। পরদিন সকালে তা ধুয়ে ফেলুন।
ওটমিল
ওটমিলে আছে আন্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী উপাদান যা পিগমেন্টেইশন কমাতে সহায়াত করে।
এক চা-চামচ ওটমিল গুঁড়া করে সামান্য পানি দিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি মুখে মেখে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
শুকিয়ে আসলে আলতোভাবে মালিশ করে তা ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুবার ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
চন্দনের গুঁড়া
চন্দনের গুঁড়া কালো দাগ দূর করার পাশাপাশি ত্বককে নরম ও মসৃণ করে। গোলাপজল অথবা গ্লিসারিনের সঙ্গে চন্দনের গুঁড়ো মিশিয়ে মুখে লাগান।
শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
কাজুবাদাম
১০টি বাদাম সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে বাদাম বেটে এর সঙ্গে চন্দনের গুঁড়া ও মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন।
এই প্যাক মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
টোম্যাটোর রস
টমেটো ফ্রিজে রাখুন। এরপর ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা টমেটো বের করে কেটে মুখে হালকাভাবে ঘষুন।
কালো দাগ দূর করতে দিনে অন্তত দুবার এভাবে মুখে ঠান্ডা টমেটোর রস লাগান।
হলুদ ও দুধ
হলুদ গুঁড়ার সঙ্গে দুধ মিশিয়ে মুখে লাগান। কিছুক্ষণ পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুদিন এই প্যাক মুখে লাগান।
টক দই
টক দই পুরো মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। টানা চার সপ্তাহ এই প্যাক দিনে অন্তত দুবার ব্যবহার করুন। এটি আপনার ত্বকের জন্য উপকারি।
বাটার মিল্ক বা ছাচ
দুধ থেকে মাখন বের করার পর যে টক তরলটি অবশিষ্ট থাকে তাকে বাটারমিল্ক বা ছাচ বলে।
বাটারমিল্কে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড আদতে আলফা হাইড্রক্সিল অ্যাসিড, যা মুখের মৃত কোষকে দূর করে আপনার মুখকে উজ্জ্বল করবে ও সেইসাথে মুখের কালো ছোপ দূর করার জন্যও বাটারমিল্ক অব্যর্থ দাওয়াই হিসেবে বহু প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
৪ চামচ বাটারমিল্ক ও ২ চামচ টোম্যাটোর রস একসাথে মিশিয়ে তুলোয় করে মুখে মাখুন। ১৫ মিনিট রেখে হালকা গরম জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
এক সপ্তাহ নিয়ম করে এটা করার পর আপনার ত্বকের পরিবর্তন ভালোভাবেই লক্ষ্য করতে পারবেন।
পাকা পেঁপে
পেঁপেতে থাকা প্যাপেইন উৎসেচক আপনার মুখের কালো ছোপ, ব্রণর দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
পাকা পেঁপে ও দুধ পেস্ট বানিয়ে মুখে মাখুন। ১৫-২০ মিনিট রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সাথে সাথে ফল পাবেন।
পরামর্শ
১. রোদে যাওয়ার আগে নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
২. ত্বক সব সময় পরিষ্কার রাখুন।
৩. ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না।
৪. দিনে অন্তত দুবার ভালো করে মুখ ধোয়ার চেষ্টা করুন।
৫. নিয়মিত আট ঘণ্টা ঘুমান আর দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকুন।