মনের এক গভীর সমস্যা হচ্ছে একাকীত্ব।
যা ধীরে ধীরে একজন মানুষকে অক্ষম করে দেয়।
তাই নিজের মধ্যে কখনোই একাকীত্বকে জায়গা করে নেয়ার সুযোগ দেয়া যাবে না।
ভ্যালেন্টাইন কিংবা ভালোবাসার মাসে এই একাকীত্বটা যেন দ্বিগুণ হয়ে যায়।
এই একাকীত্ববোধ ধীরে ধীরে এতোটাই অসুস্থ করে তোলে যে, এক পর্যায় গিয়ে সুইসাইড বা আত্মহত্যা করার মন-মানসিকতার সৃষ্টি হতে পারে।
ডিপ্রেশন, ফ্রাস্ট্রেশনের পাল্লায় পড়ে অনেকে ভুলভাল সিদ্ধান্ত নেয়।
গবেষণা বলছে, ১৫টা সিগারেট খেলে শরীরের যে পরিমাণ ক্ষতি হয় একাকীত্বের কারণেও শারীরিকভাবে ঠিক একই পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে।
যতো বেশি একাকীত্বকে প্রশ্রয় দেবেন এটি ততো বেশি গ্রাস করতে থাকবে।
পৃথিবীর সব কিছু অসহ্য মনে হবে আপনার কাছে।
তাই ভালো থাকতে হলে এই একাকীত্ব দূর করাটা জরুরি।
জেনে নিন একাকীত্ব ঘোচাতে কী কী করা যেতে পারে।
একাকীত্বের কারণ খুঁজে বের করুন
কিছুটা সময় নিয়ে চিন্তা করুন ঠিক কী কারণে একাকীত্বে ভোগেন?
যদি উত্তর হয় যথেষ্ট বন্ধু নেই বা ভালোবাসার মানুষটি নেই তবে একাকীত্ববোধ দূর করতে বিভিন্ন ক্লাবে যোগদান করতে পারেন।
বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
মাঝে মাঝে ফ্রি সময়গুলো অসহায় শিশুদের সাথে কাটান।
তাদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করুন। তাদের কিছু উপহার দিন।
বই পড়ার অভ্যাস
সবাই জানি, বই পড়ার অভ্যাস পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ অভ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম।
তবে খুব কমই কথাটা মানে না অনেকে।
যখনই ফ্রি সময় পাবেন তখনই বইপড়া অভ্যাসটি চর্চা করতে পারেন।
এ অভ্যাসটি সবার চেয়ে আলাদা করে তুলবে।
চিন্তায় আমূল পরিবর্তন এনে দেবে।
তাই এরপর থেকে আপনি আপনার অবসর সময়ে বই পড়ে কাটাতে পারেন।
এবং নিজের একাকীত্ব থেকে বের হয়ে আসতে পারেন।
যখন উপন্যাসের চরিত্রগুলো পড়বেন তখন খারাপ সময়ে তারা নানা রকম অসুবিধাগুলো কীভাবে জয় করলো তা কল্পনায় উপলব্ধি করতে পারেন।
এবং তাদের মতো করে আপনিও আপনার খারাপ সময়গুলো অতিক্রম করার অনুপ্রেরণা পাবেন।
ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবুন
আপনি যখনই একা থাকবেন তখন আপনি আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করতে পারেন।
আপনি চিন্তা করতে পারেন কোন কাজটি আমার জন্য ভালো হতে পারে, চাকরি নাকি বিজনেস?
কী করলে আমার ভালো হবে, ব্যাংকে চাকরি নাকি সরকারী চাকরি?
আপনি যখন আপনার একাকীত্বের সময় এই সকল প্রশ্ন আপনার মনকে করবেন।
তখন আপনি নিজের অজান্তেই আপনার একাকীত্ব থেকে বের হয়ে আসবেন।
নিজেকে আর একা মনে হবে না।
এবং আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে আপনি বেশ কিছু ভালো চিন্তা-ভাবনার বিকাশ ঘটবে।
তাই নিজের একাকীত্ব দূর করতে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করুন।
মেডিটেশন
আপনি নিয়মিত মেডিটেশন করলে আপনার সকল হতাশা, একাকীত্ব, বিষণ্ণতা খুব সহজে দূর করতে পারবেন।
মেডিটেশনের প্রথম লাভই হলো, ‘টেনশন মুক্তি’।
বলা হয়, টেনশন ও শিথিলায়ন একসাথে থাকতে পারে না।
যে শরীরে টেনশন থাকে, সে শরীরে শিথিলায়ন থাকে না এবং শিথিল হলে টেনশন পালিয়ে যায়।
আমরা জানি, মনোদৈহিক ৭৫ ভাগ রোগের কারণই টেনশন।
তাই মেডিটেশন করলে আপনি অনায়াসেই শতকরা ৭৫ ভাগ মনোদৈহিক রোগ-
যেমনঃ মাইগ্রেন, সাইনুসাইটিস, ঘাড়ে-পিঠে-কোমরে বা শরীরের যেকোনো স্থানে দীর্ঘদিনের ব্যথা, হজমের সমস্যা, আইবিএস, এসিডিটি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, অনিদ্রা প্রভৃতি রোগগুলো থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
মানুষ নানা কারণেই একাকীত্ববোধ করেন।
তাই সবার আগেই সেই কারণগুলো খুঁজে বের করুন।
আর সেভাবেই নিজের একাকীত্ব দূর করার চেষ্টা করুন।
নিজের জন্য কিছু করার চেষ্টা করুন
কিছু পাওয়ার ব্যাপারে বেশি ছটফট করলে কিন্তু একাকীত্ব এড়াতে পারবেন না।
আজ যা চাইছেন তা কাল পেলে কী এমন ক্ষতি, ভেবে দেখুন।
ভালো করে ভাবলেই বুঝতে পারবেন ক্ষতি আসলে কিছু নেই।
এ আপনার অস্থিরতা, একমুখী ভাবনা।
কাজেই অযথা কষ্ট পেতে না চাইলে একটু নমনীয় করুন নিজেকে।
একাকীত্ব বোধের সঙ্গে কখনো মিশে থাকে দুশ্চিন্তা, অশান্তি।
ব্যস্ত থাকলে তা সব সময় সামনে আসে না। একা হলেই মনকে চঞ্চল করে তোলে।
এ রকম হলে প্রধান কাজ টেনশন কমানো।
কীভাবে করবেন তা জেনে নিন মনোবিদের কাছে।
নিজের সময়টাকে কাজে লাগান
একাকীত্বের সময়টাকে কাজে লাগান। অর্থকরী কাজ করুন, এতে সময়ও কাটবে, হাতে টাকাপয়সা এলে আগ্রহও বাড়বে।
সমমানসিকতার মানুষের সঙ্গে মেলামেশাও বাড়ান।
একা থাকলে প্রথমেই যে চিন্তা মনে আসে তা হল, বিপদে কাকে পাশে পাব? অমূলক চিন্তা।
কারণ আপনি যদি সব সময় সবার পাশে থাকেন, তারাও আপনার বিপদে পাশে থাকবেন। কাজেই স্বার্থপর না হলে বিপদে সঙ্গীর অভাব হবে না।
গলাগলি করে থাকার ইচ্ছে না মিটলেই যদি ভাবেন একা হয়ে গেলেন, তাহলে বিপদ।
কারণ সবার কাছে সম্পর্কের সংজ্ঞা এক নয়।
অন্য জন হয়তো এত মিলমিশ ভালোবাসেন না, শ্বাস ফেলার অবসর চান।
তাকে সেটা দিয়ে দেখুন, এতে লাভই হবে।
হয়তো তিনি আরো কাছে চলে আসবেন। সম্পর্কের গভীরতা বাড়বে।
কারণ ঘ্যানঘ্যান করে বা দোষারোপ করে আর যাই হোক, নৈকট্য আদায় করা যায় না।
একা হতে না চাইলে কোনো সম্পর্কেরই বেশি গভীরে যাবেন না।
একটু দূরত্ব রাখুন। তাতে হতাশা আসে কম। সব দিক বজায় থাকে।
হঠাৎ খুব একা লাগলে কী কী করলে একাকীত্ব দূর হতে পারে তার ফর্দ বানান।
টিভি দেখুন, গান শুনুন বা বই পড়ুন।
মোট কথা যা পাচ্ছেন, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন।
আড্ডার মধ্যমণি হতে চাইলে একটু পড়াশোনা করুন।
ভালো সিনেমা–থিয়েটার দেখুন। খেলা বা দেশবিদেশের খবরাখবর রাখতে পারলে ভালো।
রসিকতাপূর্ণ হলে তো কথাই নেই। মোট কথা, নিজস্বতা বলে কিছু একটা যেন থাকে।
শরীর ঠিক রাখুন। ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাওয়া–দাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
সঙ্গে একটু আধটু রূপচর্চায় সময় বেশ ভালো কাটবে।
একাকীত্বের সবচেয়ে বড় দাওয়াই প্রেম।
তবে যে কোনো সম্পর্কেই ভেবেচিন্তে না এগোলে বিপদে পড়ার আশঙ্কা আছে।
প্রেমে ঝগড়া বা খিটখিট করে যাবেন না।
তাতে অশান্তি বেড়ে আরো একা হয়ে যাবেন।
কাজেই সহ্যশক্তিও একটু আধটু বাড়ান। ঘন ঘন বিরক্ত হলে মন ভালো থাকে এমন কিছু অভ্যাস করুন।
একান্তই তা না পারলে মনোবিদদের সাহায্য নিন।