Search
Close this search box.

মাটির পাত্রে পানি পানের উপকারিতা

প্লাস্টিকের বোতল থেকে কাচের বোতল গুলো পানীয় জলের জন্য ব্যবহৃত হওয়ার পরে, বাজারে মাটির বোতলগুলো আরও একটি বিকল্প হয়েছে কিংবা হতে পারে।

মাটির পাত্র গুলোকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় দেখায় এদের গড়ন ও বিভিন্ন ডিজাইনের কারণে।

এটি আগে ব্যবহৃত মাটির কলসির স্মরণ করিয়ে দেয় যা সাধারণত ঘটি বা মটকা নামে পরিচিত।

তবে আপনি যদি এই বোতলগুলি কেনার ব্যাপারে দোটানায় ভুগে থাকেন, তবে এখানে কয়েকটি বিষয় জানাবো যা আপনাকে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।

প্লাস্টিকের বোতল নয় কেন?

আজকাল এটা মোটামুটি সবার ই জানা যে প্লাস্টিক পরিবেশের খুব ক্ষতি করে সাথে এটি অস্বাস্থ্যকর তো বটেই।

প্লাস্টিকের কারণে পরিবেশ দূষণ এড়াতেই বোতল পালটে ফেলা দরকার।

তাছাড়া সবরকমের প্লাস্টিকে পানি খাওয়াও ঠিক নয়।

বিশেষ করে বাজারচলতি ঠাণ্ডা পানীয় বা পানির বোতল কিন্তু একবার ব্যবহারযোগ্য।

সেগুলির পুনর্ব্যবহার করা কখনই উচিৎ নয়।

নিয়মিত এই সব বোতল থেকে পানি পান করলে প্লাস্টিকের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় হরমোনের সমস্যা থেকে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।

তাই এই ধরনের বোতল একবার ব্যবহারের পরেই হাতের চাপে ভেঙে রিসাইকল বিনে ফেলে দিতে হবে।

মাটির পাত্রে কেনো পান করবেন?

পানি রাখার মাটির পাত্র একদম প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয় কোনো রকম রাসায়নিক উপাদান ছাড়াই।

তাই এর মাধ্যমে দেহের কোনো ক্ষতি হওয়ার কথা চিন্তাও করা যায় না। 

মাটির পাত্রে পানি রাখলে সুবিধাগুলো

মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে

একটি মাটির পাত্র থেকে পানি পান করা আপনার দেহে প্লাস্টিকের থেকে ভিন্ন টেস্টোস্টেরনের একটি স্তর বজায় রাখে, যার ফলে আমাদের দেহে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ হ্রাস পায়।

মাটির পাত্র পানি প্রাকৃতিকভাবে শীতল রাখে যা শরীরের হজম শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। 

প্রাকৃতিক ভাবে ঠান্ডা রাখে

বাষ্পীভবন এর কারণে মাটির কলসিতে পানি ঠাণ্ডা হয়।

যখন কোন তরল পদার্থ বাষ্পীভূত হয় তখন তার উষ্ণতা কমতে থাকে।

বাষ্পীভবনের জন্য যে তাপের প্রয়োজন তা তরল পদার্থেই সরবরাহ করে থাকে। তাপ হারানোর কারণে তরল পদার্থের উষ্ণতা কমে যায়।

মাটির কলসি বানানোর সময় মাটির সঙ্গে খানিকটা বালি মেশানো হয় এবং মাটির কলসির গায়ে অসংখ্য ছোট ছোট ছিদ্র থাকে।

খালি চোখে এই ছিদ্রগুলি দেখা যায় না। ওই ছিদ্রগুলো দিয়ে পানি আস্তে আস্তে বাষ্পীভূত হতে থাকে। তারপর বাষ্প হয়ে উড়ে যায়।

বাষ্প হওয়ার জন্য পানির যে তাপের দরকার, তা মাটির কলসির ভেতরের পানি থেকে আসে।

ফলে পানি থেকে ক্রমাগত তাপ বাষ্পাকারে বেরিয়ে যাবার কারণে মাটির কলসি ঠাণ্ডা থাকে।

মাটির কলসির গায়ে হাত দিলেই এই ঠাণ্ডা ভাবটা অনুভব করা যায়। তাই পানি খুব ঠান্ডা থাকে

পরিবেশ বান্ধব

প্লাস্টিকের বোতল থেকে মাটির বোতল খুব ভালো একটি পছন্দ কারণ এটি পরিবেশ বান্ধব এবং কাচের বোতলগুলির চেয়ে ভাল পছন্দ কারণ এগুলি আরও সহজলভ্য। 

মাটিতে যেমন প্লাস্টিক পুরোপুরি মিশতে পারে না তেমন মাটির বোতল বা পাত্র পুরোপুরি মিশে যায়। 

প্লাস্টিক যে একেবারেই মেশে না তা নয়, খুব ধীরে ধীরে মিশে।

সেটা কয়েকশ বছর লেগে যেতে পারে।

অধিকাংশ অনুজীব বা আমাদের পরিবেশে সাধারনত যে সমস্ত অনুজীব পাওয়া যায় তারা প্রচলিত প্লাস্টিক বা পলিথিনকে ভাঙতে পারে না।

এর কারন, পলিথিন হচ্ছে ইথিলিন এর পলিমার।

অর্থাৎ একের পর এক ইথিলিন অনু পাশাপাশি বসে যে ইথিলিন এর শিকল তৈরি করে তাকেই পলিথিন বা প্রচলিত প্লাস্টিক বলে।

এর নানা ধরন রয়েছে।

এর সাথে নানা উপাদান যুক্ত করে এর তাপ সহ্যের ক্ষমতা, চাপ সহ্যের ক্ষমতা, দীর্ঘস্থায়িত্ব, আকৃতি ইত্যাদি পরিবর্তন করে নানা ধরনের প্লাস্টিক তৈরি করা হয়েছে।

তবে মূল কথা হচ্ছে, প্রচলিত প্লাস্টিক এর ইথিলিন আসে নানা ধরনের পেট্রোলিয়াম থেকে।

এর যে সরল শিকল (একটির পর একটি ইথিলিন অনুর শিকল) তা প্রকৃতিতে সাধারনত পাওয়া যায় এমন অধিকাংশ অনুজীবই ভাঙতে পারে না, অর্থাৎ এদের কাছে এমন এনজাইম নেই যা এই সরল শিকল ভাঙতে পারে।

ফলে এই সব পলিথিনের মাটির সাথে মিশে যেতে বহু বছর লেগে যায়।

প্রকৃতির ক্ষারক

মাটি প্রকৃতির ক্ষারক এবং এটি যখন পানির অম্লতার সংস্পর্শে আসে তখন এটি যথাযথ পিএইচ ভারসাম্য সরবরাহ করে।

যথাযথ পিএইচ ভারসাম্য সহ জল অম্লতা দূর করতে সহায়তা করে এবং গ্যাস্ট্রোনমিক ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।

নিরাময় ক্ষমতা

কাদামাটি, খনিজ এবং বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয় শক্তিতে পূর্ণ হয় তাই যখন জলটি এতে সংরক্ষণ করা হয়, তখন এটি নিরাময় করার ক্ষমতা গুলির সাথে জলকে চার্জ করে।

অস্বাস্থ্যকর 

প্লাস্টিকের বোতলের বদলে পানি সংরক্ষণ করুন মাটির পাত্রে।

কারণ প্লাস্টিকের থাকে বিপিএ-এর মতো কেমিক্যাল যা অস্বাস্থ্যকর।

মাটির পাত্রে সংরক্ষণ করা পানির স্বাদে কোনও ধরনের পরিবর্তন হয় না।

ফলে এটি যেমন স্বাস্থ্যকর তেমনি খেতেও ভালো। 

প্লাস্টিকে পানি রাখলে প্লাস্টিকের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের পানির সাথে মিশে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে যার ফলে আমাদের শরীরে এটি ধীরে ধীরে ক্ষতি সাধন করতে থাকে।

পরবর্তীতে আমাদের নানা সমস্যায় ভুগতে হতে পারে যা ক্যান্সার পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা ও রাখে।

কিন্তু মাটির পাত্র ১০০% প্রাকৃতিক হওয়ার কারণে তা সম্পুর্ণ ঝুকি মুক্ত।

আর এটি পানির স্বাদ ও স্বাভাবিক রাখে। তাই প্লাস্টিক বর্জন করে আমাদের সবার উচিত মাটির পাত্রে পানি পান করা।