একজোড়া ঘন, সুঠাম, সুন্দর ভুরু যেন মুখের চেহারাটাই বদলে দেয়! সে জন্যই সুগঠিত ভুরুর জন্য এত কাঠখড় পোড়াই আমরা।
কিন্তু অনেক সময়ই কোনও নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই ভুরু থেকে রোম ঝরে যেতে শুরু করে, পাতলা হয়ে যায় ভুরু।
এই ব্যাপারটা নিশ্চিতভাবেই খুব দুশ্চিন্তার, কারণ ভুরুর শেপ ও ঘনত্ব ঠিকঠাক না থাকলে আমাদের মুখটা একদম অন্যরকম দেখাতে পারে।
ফলে ভুরু পাতলা হতে শুরু করলে প্রথমেই তার কারণটা খোঁজা দরকার।
শরীরের অভ্যন্তরীণ কোনও অসুস্থতার জন্য ভুরুর রোম উঠে যেতে পারে, আবার এর পিছনে বাহ্যিক কোনও কারণও থাকতে পারে।
আসুন দেখে নেওয়া যাক সাধারণভাবে ভুরু পাতলা হয়ে যাওয়ার কারণগুলো কী কী হওয়া সম্ভব:

অতিরিক্ত প্লাকিং
যারা টুইজার দিয়ে ভুরু প্লাক করেন, তাদের ভুরু অনেক সময়ই পাতলা হয়ে যায়।
কারণ টুইজার ভুরুর রোমটিকে ফলিকল থেকে টেনে তুলে দেয়, ফলে ফলিকল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
দিনের পর দিন নিয়মিত প্লাকিংয়ের ফলে ফলিকল পাকাপাকিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় এবং তা থেকে আর নতুন রোম গজায় না।

ত্বকের অসুখ
এগজিমা, সোরিয়াসিস, সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের মতো চর্মরোগ থাকলে তা থেকে ভুরুর চারপাশে লালচেভাব, চুলকানি, প্রদাহ হতে পারে।
বেশি চুলকোলে ভুরুর রোম উঠে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে ফলিকল ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, তাই চর্মরোগটি সেরে গেলে নতুন করে ভুরুর রোম গজায়।

থাইরয়েডের সমস্যা
থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের সমস্যা থাকলে চুল উঠে যায়, ভুরুর রোমও তার ব্যতিক্রম নয়। থাইরয়েড প্রয়োজনের তুলনায় কম সক্রিয় হলে ভুরুর বাইরের দিকের রোমগুলো উঠতে শুরু করে। এমন হলে দেরি না করে থাইরয়েডের চিকিৎসা শুরু করা দরকার।

পুষ্টির অভাব
শরীর দীর্ঘদিন প্রয়োজনীয় পুষ্টি না পেলে মাথার চুল উঠে যেতে শুরু করে, ভুরুর রোমও বাদ যায় না।
তাই খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, জ়িঙ্ক, প্রোটিন, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২, বায়োটিন এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার রাখুন।

মানসিক চাপ
শুধু মানসিক চাপই নয়, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম থেকেও চুল উঠে যেতে পারে।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে ট্রাইকোটিলোম্যানিয়ার মতো মানসিক রোগ দেখা দেয়।
এ ক্ষেত্রে রোগী নিজের মাথার চুল, চোখের পল্লব,ভুরুর রোম নিজেই টেনে টেনে তুলে ফেলেন।

কীভাবে আবার ঘন করে তুলবেন আপনার ভুরু?
ভুরুর রোম পাতলা হয়ে যেতে শুরু করলে মন খারাপ হওয়া খুব স্বাভাবিক।
কিন্তু মন খারাপ করে বসে থাকাটা কোনও কাজের কথা নয়!
শারীরিক কারণে ভুরুর রোম উঠে গেলে সবার আগে তার চিকিৎসা করতে হবে।
পাশাপাশি ভুরুর রোম যাতে নতুন করে গজায়, তার জন্য কাজে লাগাতে পারেন কিছু সহজ টোটকা।

ক্যাস্টর অয়েল
চুলের ফলিকলে পুষ্টি জোগায় ক্যাস্টর অয়েল, তাই চুল ঘন করতে ক্যাস্টর অয়েলের ব্যবহার বহুল প্রচলিত।
কটন বাডে করে ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে ভুরুতে লাগিয়ে মিনিট দুয়েক মাসাজ করুন। আধ ঘণ্টা রেখে হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলবেন।

অলিভ অয়েল
চুলের গোড়ায় আর্দ্রতা জোগায় অলিভ অয়েল, তাছাড়া অলিভ অয়েলের ভিটামিন ই রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তুলে চুলের বৃদ্ধি জোরদার করে তোলে।
আধ চাচামচ অলিভ অয়েল মাইক্রোওয়েভে কয়েক সেকেন্ড রেখে গরম করে নিন।
তারপর এই গরম তেল দিয়ে ভুরুতে দু’ মিনিট মাসাজ করুন। আধঘণ্টা রেখে হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলুন।

অ্যালোভেরা
ঘৃতকুমারী বা অ্যালো ভেরার মতো সর্বরোগহর আর দুটি নেই!
অ্যালোভেরার ময়শ্চারাইজার চুলের ফলিকলে পুষ্টি জোগায়, ফলে চুলের বাড়বাড়ন্ত ভালো হয়।
অ্যালোভেরা পাতা চিরে ভিতরের জেলটা বের করে নিয়ে তা ভুরুতে মাসাজ করুন। আধঘণ্টা রেখে হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলতে হবে।

মেথি বাটা
প্রোটিন, ভিটামিন বি 3 আর লেসিথিনে ভরপুর মেথি আপনার ভুরুর ঘনত্ব অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে।
এক চাচামচ মেথি সারা রাত জলে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে বেটে নিন।
মেথি বাটায় এক চাচামচ নারকেল তেল মেশান।
এবার এই মিশ্রণটা রাতে শোওয়ার আগে ভুরুতে লাগিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালে উঠে জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

পেঁয়াজের রস
এই টোটকাটা ব্যবহার করলে একটু গন্ধ লাগতে পারে, কিন্তু সেটা সহ্য করে নিতে পারলে দারুণ ভালো ফল পাবেন।
পেঁয়াজের ফ্ল্যাভোনল আর সালফার টাক পড়া কমিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
একটা পেঁয়াজ বেটে নিয়ে ছিবড়ে থেকে রসটুকু আলাদা করে ফেলুন।
পেঁয়াজের রস দিয়ে ভুরুতে পাঁচ মিনিট মাসাজ করুন। পেঁয়াজের রস শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
প্রতিদিন দু’বার করতে হবে। কয়েক সপ্তাহ নিয়মিত করলেই ফল পাবেন।