প্রথমেই জেনে রাখা ভালো, আপনার ত্বকের সমস্যা যদি ভয়াবহ আকার ধারণ করে, তবে দেরি না করে কোনো ত্বক বিশেষজ্ঞ (ডার্মাটোলজিস্ট) এর পরামর্শ নিন।
ত্বকের সমস্যায়, ত্বক বিশেষজ্ঞের কোনও বিকল্প নেই।
রাতজাগা, দুশ্চিন্তা, রোদে পোড়া- এমন নানা কারণ ও ত্বকের সমস্যায় মুখে ব্রণ হতে পারে।
১১ থেকে ৩০ বছর বয়সী প্রতি চারজনের একজন এই সমস্যায় ভোগেন। একটু সচেতন থাকলেই কিংবা কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করলেই ব্রণ থেকে মুক্তি মেলে।
মুখ ধোয়া
ব্রণ দূর করার প্রথম ধাপ হচ্ছে সঠিকভাবে মুখ ধোয়া।
তাই বলে আপনাকে দিনে বারবার মুখ ধুতে হবে না। এটি আবার হিতে বিপরীত হতে পারে।
সকালে-দুপুরে-রাতে নিয়ম করে বার তিনেক মুখ পরিষ্কার করলেই চলবে।
ঠান্ডা পানি ব্যবহার না করে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। মুখ মুছতে নরম তোয়ালে ব্যবহার করবেন।
সাবান ব্যবহার না করে ভালো কোম্পানির ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
কখনোই ব্রণে নখ দিয়ে খোঁচাখুঁচি করবেন না। এমন করলে দাগ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি।
প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল খান। পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
নিয়মিত ঘুম প্রয়োজন। অনিদ্রায় যেমন ব্রণের প্রবণতা বাড়ে, তেমনি অতিরিক্ত ঘুমের কারণেও ব্রণ হতে পারে।
দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে চেষ্টা করুন।
নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখতে ফেসওয়াশ ব্যবহার করা জরুরি।
তবে ব্যবহারের আগে বুঝে নিতে হবে কোন ধরনের ত্বকে কোন উপকরণে ভালো ফল মিলবে।
তৈলাক্ত ত্বক
মুখ ধোওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তেলতেলে দেখায় মুখ?
দিনের বেলায় তেলচকচকে দেখায়, রোদ্দুরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে?
তেমন হলে আপনি তেলতেলে ত্বকের অধিকারী।
তৈলাক্ত ত্বকের রোমছিদ্র বড় হয়, ঘাম, তেলময়লা রোমছিদ্রে জমে গিয়ে ব্রণর উৎপাত দেখা দেয়।
যেভাবে সামলাবেন তৈলাক্ত ত্বক
বাতাসের দূষণ আর রোদ থেকে তেলতেলে ত্বক খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাদের ত্বক একটুতেই তেলতেলে হয়ে যায়, তাদের দিনে ২–৩ বার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
ফেসওয়াশ ব্যবহারের আগে দেখে নিন তাতে শসাযুক্ত আছে কি না। কারণ এই ধরনের ত্বকের জন্য শসাযুক্ত ফেসওয়াশ ভালো। এতে ত্বক সতেজ হবে।
শুষ্ক ত্বক
খসখসে, রুক্ষ, অমসৃণ ত্বক মানেই শুষ্ক ত্বকের লক্ষণ। খুব শুকনো ত্বকে মাঝেমাঝে চুলকানিও হতে পারে। আর্দ্রতার অভাবে শুষ্ক ত্বক বিবর্ণ, নিষ্প্রাণ দেখায়।
শুষ্ক ত্বকের রোমছিদ্রগুলো খুব ছোট আর টাইট হয়, এবং দেখেই মনে হয় আর্দ্রতার অভাব রয়েছে। কাজেই আপনার ত্বকে যদি এরকম সমস্যা দেখেন, বুঝবেন তা শুষ্ক ত্বক।
যেভাবে সামলাবেন শুষ্ক ত্বক
শুষ্ক ত্বকের সবচেয়ে দরকার আর্দ্রতা। তাই ডিপ হাইড্রেশন হয় এমন ময়শ্চারাইজার আর ক্রিম ব্যবহার করুন।
দিনে একবারের বেশি সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোবেন না, বরং পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ফেসওয়াশ যেন ময়শ্চারাইজার যুক্ত হয়।
প্রতিবার মুখ ধোওয়ার পরে ময়শ্চারাইজার মেখে নেবেন।
স্বাভাবিক ত্বক
ত্বক খুব তেলতেলেও নয়, আবার খুব শুষ্কও নয়, এরকম হলে আপনার স্বাভাবিক ত্বক। এই ত্বক সাধারণত নরম আর মসৃণ দেখতে লাগে।
স্বাভাবিক ত্বক হলে অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ঠিকই, তবে নজর না দিলে স্বাভাবিক ত্বকও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
যেভাবে সামলাবেন স্বাভাবিক ত্বক
এই ধরনের ত্বকের যত্ন নেওয়া অনেকটা বিশেষ সুবিধার। অলস্কিন ধরনের যে ফেসওয়াশ বাজারে আছে সেটা ব্যবহার করতে পারেন।
শসা ও গোলাপযুক্ত উপকরণে তৈরি প্রসাধন পণ্য ব্যবহার করলে শীতে এই ধরনের ত্বকে ভালো ফল মিলবে।
কম্বিনেশন ত্বক
কম্বিনেশন ত্বক চেনা খুব সহজ।
যাদের কপাল, নাক আর চিবুকের অংশটা সহজেই তেলতেলে হয়ে যায় এবং গালের অংশ শুকনো বা স্বাভাবিক থাকে, তাদের ত্বক হলো কম্বিনেশন বা মিশ্র প্রকৃতির।
স্বাভাবিকভাবেই তেলতেলে অংশের রোমছিদ্রগুলোর আকার বড় হয়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়নায় খুব ভালো করে খুঁটিয়ে লক্ষ করলে বুঝতে পারবেন।
যেভাবে সামলাবেন কম্বিনেশন ত্বক
কম্বিনেশন ত্বকে এমন কিছু মাখুন যা আপনার ত্বক বেশি রুক্ষ বা বেশি তেলতেলে করে দেবে না।
মিশ্র ত্বকের কপাল, নাক ও থুতনির পার্টটিকে অয়েলি টি জোন বলা হয়।
কেননা এই অঞ্চলগুলো তৈলাক্ত, চিক থাকে শুষ্ক আর এই পুরো অংশটি মিলিয়ে দেখলে অনেকটা ইংরেজি অক্ষর ‘T’ এর মত মনে হবে।
সবচেয়ে ভালো হয় টি জোনের জন্য অয়েলফ্রি আর মুখের বাকি অংশে স্বাভাবিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে।
সেনসিটিভ ত্বক
সেনসিটিভ বা সংবেদনশীল ত্বক একটুতেই লাল হয়ে জ্বালা করে, চুলকোয়, ত্বকে র্যাশ বেরোয়।
ফলে সংবেদনশীল ত্বকের মালকিনেরা যে কোনও স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট মাখতে পারেন না। গরম পোশাক থেকেও ত্বকে প্রদাহ হতে পারে।
যেভাবে সামলাবেন সেনসিটিভ ত্বক
সেনসিটিভ ত্বকের যত্ন করার সময় খুব সচেতন থাকতে হবে। প্রাকৃতিক উপাদানযুক্ত স্কিনকেয়ার ব্যবহার করা এক্ষেত্রে ভালো।
নতুন কোনও প্রোডাক্ট ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে। ঘন ঘন প্রোডাক্ট পালটাবেন না।
ফেসওয়াশ কেনার আগে যা দেখে নেবেন
কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় ব্রণ খুব বেশি না থাকলেও, প্রায়ই অল্প বিস্তর ব্রণ হয় যার জন্য অস্বস্তিতে পড়তে হয়।
অর্থাৎ ব্রণ হওয়ার একটা প্রবণতা থাকে, যাকে আমরা একনে প্রোন স্কিন বলে থাকি।
ফেসওয়াশ কেনার আগে অবশ্যই খেয়াল করবেন এতে স্যালিলিক এসিড বা বেঞ্জাইল পার অক্সাইড আছে কিনা৷ কার্যকারিতার দিক থেকে স্যালিলিক এসিড কিছুটা বেশি এগিয়ে৷
একনে প্রোন স্কিন এর যত্ন
একনে প্রোন স্কিন এর জন্য সবচাইতে কঠিন সময় গরমকাল। তাই আগে থেকেই স্কিনকে প্রস্তুত রাখুন। ব্রণ উঠা একবার শুরু হলে থামানো টাফ। রেখে যায় অসংখ্য জেদি দাগও।
হরমোনাল ইম্বেলেন্স, পিরিয়ডসহ নানান কারণে সবসময় কমবেশি ব্রণ হতেই থাকে। তাই সবসময় ত্বক পরিস্কার রাখা খুব জরুরি। এক্ষেত্রে ভালো ফেসওয়াশের জুড়ি নেই।
একনে সমস্যায় ফেসওয়াশ এর ব্যবহার কি আসলেই কার্যকরী?
ফেসওয়াশ হলো প্রতিদিন ব্যবহার করার জন্য একটি প্রসাধনী। প্রতিদিন আমাদের ত্বকে যে ময়লা জমে সেটা দূর করার জন্য ফেসওয়াশ ব্যবহার করা হয়।
যদি দৈনিক মুখের ত্বক পরিস্কার না করা হয় তবে নানাবিধ সমস্যা দেখে দিতে পারে, যা প্রাথমিকবভাবে প্রতিহত করে একটি ভালো মানের ফেসওয়াশ।
বাজারে আপনার ত্বকের সুরক্ষার জন্য নানা রকমের ফেসওয়াশ পাওয়া যায় ৷ কিন্তু সব ফেসওয়াশ সব ধরণের ত্বকের উপরে প্রয়োগ করা উচিত নয় ৷
অবশ্যই প্রত্যেকের ত্বকের ধরণ অনুযায়ী ফেসওয়াশ ব্যবহার করা উচিত।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য একধরণের ফেসওয়াশ আবার রুক্ষ বা শুষ্ক ত্বকের জন্য অন্য ধরণের ফেসওয়াশ ব্যবহার করা উচিত ৷
যেমন তৈলাক্ত ত্বকের জন্য জেল ফেসওয়াশ উপযুক্ত যা ত্বকের অতিরিক্ত তেলকে জমতে দেয় না।
এবং শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিম ফেসওয়াশ উপযুক্ত যা ত্বককে হাইড্রেটেড এবং ময়েশ্চারাইজ করে।
একটি ভালো মানের ফেসওয়াশ আপনার ত্বকে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে ত্বককে পরিষ্কার ও মোলায়েম করে তোলে।
এটি মেকআপ থেকে রয়ে যাওয়া ময়লাও পরিষ্কার করে রোমকূপের মুখ বন্ধ না হতে দিয়ে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ ফেসওয়াশ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয় বলে ত্বকের অল্প কোনো অসুবিধা যেমন চুলকানি জাতীয় কোনো সমস্যা থাকলে এটি তা নিরাময় করে।
যা আপনার ত্বককে রোমকূপের গোড়া থেকে পরিষ্কার করে ত্বকের সজীবতা ফিরিয়ে আনে।
নিয়মিত ফেসসওয়াশ ব্যবহারে আপনার ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতাকে ফিরিয়ে আনে। ত্বককে মৃত কোষ থেকে মুক্ত করে।
হারিয়ে যাওয়া আদ্রতা খুঁজে পাবেন ভালো ময়েশচারাইজার বেজড ফেসওয়াশে। ফেসওয়াশে থাকা ভিটামিন ই থাকার জন্য এটি ত্বকের কোমলতা বজায় রাখে।
একটি ভালো মানের ফেসওয়াশ ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখার পাশাপাশি ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয়না।
ত্বকের পিগমেন্টেশন দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ব্যবহার করলে ত্বক থেকে শুকনো ভাব দূর করে।
নিয়মিত ভালো মানের ফেসওয়াশ ব্যবহার করলে ত্বকের নানাবিধ সমস্যাকে প্রাথমিকভাবে প্রতিহত করে, ফলে একনে প্রোন স্কিন এর জন্য খুবই কার্যকরী ফেসওয়াশের ব্যবহার।