কোকিলের কুহু ডাক, দক্ষিণা হাওয়া আর বাতাসে আমের মুকুলের ঘ্রাণ, জানান দিচ্ছে বসন্ত এসে গেছে।
শীতের রিক্ততা মুছে প্রকৃতিজুড়ে সাজ সাজ রব এখন। বিবর্ণ প্রকৃতিতে জেগে উঠেছে নতুন জীবনের ঢেউ।
বসন্ত মানেই রঙের ছড়াছড়ি। শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠার আনন্দময় প্রস্তুতি এখন প্রকৃতি জুড়ে।
তাইতো ঋতুরাজ বসন্তকে আপন করে নিতে পয়লা ফাল্গুনে বাঙালি সাজে নতুন সাজে। নারী মনে লাগে বসন্তের হলদে ছোঁয়া।
নয়ন জুড়ানো প্রকৃতির এই উৎসবে শামিল হতে কে না চায়! বসন্ত বরণের প্রস্তুতি কম-বেশি সবার মাঝেই থাকে।
বদলে গেছে বাংলা বর্ষপঞ্জি। নতুন সংশোধিত বর্ষপঞ্জিতে পহেলা ফাল্গুন অর্থাৎ বসন্তের প্রথম দিনেই হচ্ছে ভালোবাসা দিবস।
ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয় সারা বিশ্বে।
আর বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন ছিলো ১৩ ফেব্রুয়ারি।
কিন্তু বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর একই দিনে পড়ছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস।
তাই ভালোবাসার বসন্তের সাজ নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
মেকআপ
প্রথমত রোদের জন্য মুখে সানস্ক্রিন লোশন লাগিয়ে ৫-৮ মিনিট অপেক্ষা করুন। সানস্ক্রিন শুকিয়ে এলে আবার বেইজ মেকআপ শুরু করা যাবে।
দিনের বেলায় ফাউন্ডেশনকে না বলাটাই ভালো। তাই বেইজ মেকআপের জন্য বিবি ক্রিম বা টিন্টেড ময়েস্চারাইজার লাগান।
কন্সিলার দিয়ে মুখের ছোটখাটো দাগগুলো ঢেকে দিতে পারেন। ফাইনাল ফিনিশিং দিতে লুজ পাউডার বা ফেইস পাউডার বুলিয়ে নিন।
যখন আপনি বুঝবেন আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে গেছে, তাহলে আপনার বেইজ মেকআপ তৈরি হয়ে গেলো।
এরপর ইচ্ছে হলে হালকা পিচ বা গোলাপি রঙের ব্লাশন লাগাতে পারেন।
চোখের সাজ
চোখের সাজের জন্য ব্যবহার করুন উজ্জ্বল রংগুলো যেমন ব্রাউন, গোল্ডেন, কপার, সোনালি বাদামি, লালচে সোনালি ইত্যাদি রঙের আইশ্যাডো।
এরপর চোখে মোটা করে কাজল লাগান এবং চোখের পাপড়িতে মাস্কারা লাগান এক কোট। ব্যাস, হয়ে গেল চোখের সাজ।
চুলের সাজ
আপনি যদি চুল খোলা রাখতে পছন্দ করেন তাহলে ব্লো ডাই, আয়রন বা স্পাইরাল রোল করে চুল ছেড়ে রাখতে পারেন।
চুলের এক পাশে ক্লিপ দিয়ে তাজা ফুল গুঁজে দিতে যেন না ভুলে যান।
সামনে দুই পাশ থেকে চুল টুইস্ট করে টেনে পেছনে নিয়ে ক্লিপ দিয়ে আটকে নিতে পারেন।
শাড়ির সাজ
শাড়ি পরলে শাড়ির সাথে চুলে খোঁপা বা বেণি করলে বেশি ভালো লাগে। গাঁদা বা বেলি ফুলের মালা দিয়ে জড়িয়ে নিন আপনার বেণীটি।
আবার ছোট ছোট ফুল বসিয়ে দিতে পারেন পুরো বেণীতে। খোঁপা করলে খোঁপার একপাশে দিতে পারেন বড় একটি ফুল যেমন জারবেরা বা গোলাপ ইত্যাদি।
আবার ফুলের মালা দিয়েও জড়িয়ে নিতে পারেন আপনার খোঁপাটি।
অথবা খোলা চুলেও হয়ে উঠতে পারেন অনিন্দ সুন্দর।
ফুলের সাজ
ফুলের সাজ বলতে, অনেকে গয়না হিসাবে ফুলকে বেছে নেয়।
সেক্ষেত্রে কানের দুল, গলায় মালা, মাথায় প্রিন্সেস ব্যান্ড বা চুলের সাজে ফুল কিংবা হাতে মালা পেঁচিয়ে নেয়া যায়।
তবে প্রাধান্য পাবে গাঁদাফুল, বেলি, গন্ধরাজ, গোলাপ, জারবেরা ইত্যাদি।
বাসন্তী রঙের কারণে পহেলা ফাল্গুন গাঁদা ফুলের সাজকে সবাই বেশি পছন্দ করে।
গয়না
যেহেতু সাজ পোশাক সম্পূর্ণই হালকা তাই গয়নাটা ও হালকা মানের দেশীয় গহনা গুলো বেছে নিন।
সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, পাঞ্জাবীর সাথে মাটি, কাঠ কিংবা মেটালের দুল পরুন। গলায় কিছু না পরাটাই ভালো। হাত ভর্তি চুড়ি পরুন।
হাতের জন্য বেছে নিন কাঠ, মাটি, মেটাল বা কাঁচের রেশমি চুড়ি। শাড়ি পরলে গলায় পরতে পারেন লম্বা পুঁতির মালা। হাত ভর্তি পরুন কাঁচের রেশমি চুড়ি।
কপালে টিপ থাকা চাই
সবশেষে, কপালে পরুন বড় একটি লাল টিপ বা কুমকুম দিয়ে ডিজাইন করে টিপ এঁকে নিতে পারেন।
আপনার সাজে স্নিগ্ধতা আনতে ঠোঁটের জন্য বাছাই করুন হালকা রঙের লিপস্টিক। সাজে সজীবতা ধরে রাখতে ব্যবহার করুন হালকা সুগন্ধি।
ফাল্গুনের সাজ নিয়ে কিছু কথা
বিশেষ করে তরুণীরা পহেলা ফাল্গুনে শাড়ী পরতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে থাকেন।
আগে বাসন্তী আর হলুদ রঙের ট্রেন্ড থেকলেও এখন তরুনীরা সহ সকল বয়সের নারীরাই তা থেকে বেশ অনেকটা দূরে সরে এসেছেন।
এখন গোলাপী, কমলা, নীল ইত্যাদি রঙ দিব্যি মানিয়ে যায় পহেলা ফাল্গুনের আবহের সাথে।
শাড়ি সামলানোর ভয়ে যদি শাড়ি পরতে না চান তবে আপনি পরতে পারেন থ্রি পিস বা গাউন।
নিজে গজ কাপড় কিনে বানিয়ে ফেলতে পারেন নিজের ডিজাইন মত পোশাক কিংবা কিনতে পারেন যে কোন বুটিক হাউজ থেকে।
প্রাধান্য দিতে পারেন হলুদ, কমলা, লাল রঙ গুলোতে। তবে ব্যাতিক্রমি সাজতে চাইলে নীল বা গোলাপিও পছন্দ করতে পারেন।
বাঙালির সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে আছে পাঞ্জাবীর নাম। আর উৎসব হলে তো কথাই নেই।
হিমুভক্ত তরুণরা এবার ফাল্গুনের প্রথম দিন পরতে পারেন হলুদ পাঞ্জাবী।
কেবল তরুন কেন যেকোন বয়সী পুরুষকে মানাবে এ রঙের পাঞ্জাবীতে। সবুজ, বেগুনী আর বাসন্তী রঙকেও প্রাধান্য দিতে পারেন।
ব্যাস, হয়ে গেলো ভালোবাসার ফাল্গুনের সাজ। চটপট রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ুন তবে!