মেছতার নাম শুনলেই সবাই ভয় পেয়ে যাই। হ্যা, জিনিসটা এমনই ভয়াবহ।
একটু সুন্দর আর নিখুঁত ত্বকের জন্য আমরা সবাই কত কি না করি।
বিশেষ করে আমরা মেয়েরা এটা সেটা নানান প্রোডাক্ট ব্যবহার করি ত্বককে সুন্দর রাখতে।
কিন্তু মেছতা এমন একটি সমস্যা যা খুব বেশি পরিমাণে জেদি ও নাছরবান্দা।
এগুলো একবার ত্বকে দেখা দিলে আর যাওয়ার নাম নেই।
নতুন বা খুব অল্প সময়ের মধ্যে মেছতা দেখা দিলে তার প্রতিকার করা সম্ভব।
কিন্তু যেইগুলো দীর্ঘদিনের সেইগুলো নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
কারণ সেইগুলো ১০০% যাবে এমন গ্যারান্টি দেয়া যায় না।
কেউ কেউ উপকার পায় আবার কারোটা রয়ে যায়। তাই শুরু থেকেই যত্ন নিতে হবে।
মেছতা হওয়ার কারণ কী?
১. সূর্যরশ্মি
আমরা যখন বাইরে যাই তখন সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি আমাদের ত্বকে পড়ে।
এটি আমাদের ত্বকের মেলানিন বাড়িয়ে দেয়।
আমাদের যে অংশ গুলো সাধারণত খোলা থাকে সেই অংশগুলোতে সূর্য রশ্মি পড়ে কিছু কিছু জায়গায় মেলানিন বাড়িয়ে তোলে।
সেক্ষেত্রে আমাদের ত্বকের মধ্যে কালো ছোপ ছোপ দাগ কিছুটা লাল তিলের মতো এমন দেখা যায়।
এইগুলো বিশেষত মেছতা।
২. হরমোন
বার্থ কন্ট্রোল পিলস, প্রেগ্ন্যান্সি আমাদের হরমোনে ব্যঘাত ঘটাতে পারে।
ত্বকের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে যার ফলে মেছতা দেখা দিতে পারে।
৩. বিভিন্ন অসুস্থতা
কিছু অসুখ থাকে যেমন থাইরোয়েড বা যারা খুব বেশি চিন্তিত কোন বিষয় নিয়ে তাদের মেছতা হওয়ার প্রবণতা বেশি।
মেছতা রোধে কিছু ঘরোয়া উপায়
আগেই বলেছি যে মেছতা খুবই জেদি একটি সমস্যা।
আপনি যদি কোন মেডিকেল ট্রিটমেন্ট না নিয়ে ঘরোয়া উপায়ে প্রাকৃতিক ভাবে দূর করতে চান অবশ্যই খুব ধৈর্য ধরে করতে হবে।
অনেক ধৈর্য আর রেগুলার ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি একটি কাঙখিত ফলাফলে পৌঁছাতে পারবেন।
কারণ প্রাকৃতিক উপাদান খুব ধিরে ধিরে কাজ করে। তাই আপনাকে সময় নিয়ে করতে হবে।
যেমন কস্তুরি হলুদ বা এলোভেরা এর ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে ভালো ফলাফল পেতে হলে প্রতিদিন ব্যবহার করতে হবে।
এখন জেনে নিন কি কি প্রাকৃতিক উপায়ে মেছতা দূর করা সম্ভব।
১) কস্তুরি হলুদ
কস্তুরি হলুদের মূলে রয়েছে কারকিউম জাতীয় উপাদান। কারকিউম তৈরি হয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রোপার্টি দ্বারা।
যেমন অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টাল ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামাটরি যা আমাদের ত্বকের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া রোধে সবচেয়ে কার্যকরী।
সাধারণ হলুদ আর কস্তুরী হলুদের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল কস্তুরী হলুদ ব্যবহার করলে ত্বকে হলুদ ছোপ পড়ে না যা সাধারণ হলুদ ব্যবহার করলে পড়ে।
কস্তুরি হলুদের রঙ কিন্তু সম্পুর্ন হলুদ না। কিছুটা ক্রিম কালার।
তাই কস্তুরি হলুদ আয়ুর্ভেদিক রুপচর্চায় খুব জনপ্রিয়।
কস্তুরি হলুদের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ ব্রণ ও ব্রণর দাগছোপ কমাতে দারুণ কাজ করে।
ত্বকের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখার পাশাপাশি ত্বক উজ্জ্বল রাখতেও সাহায্য করে।
মেছতা নিরাময়ে এটি খুব কার্যকরী। এটি আমাদের ত্বককে সুরক্ষা করে আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
নিম, কাচা দুধ ও ময়দা ও যষ্টি মধুর সাথে মিক্স করে এপ্লাই করুন। ১৫/২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
একদিন পর পর ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
২) এ্যালোভেরা জেল
এ্যালোভেরা হলো সব গুণাগুণের একটি ছোট্ট ভান্ডার। ত্বকের প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন রোধের জন্য এটি জনপ্রিয়।
এটি ত্বক কে ময়েশ্চারাইজড করে ত্বককে ভিতর থেকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে।
ত্বককে ভিতর থেকে হাইড্রেট করে ঠান্ডা অনুভুতি দেয় আর ত্বকে শেলটার তৈরি করে আল্ট্রা ভায়োলেন্ট রশ্মি থেকে সুরক্ষা করে।
মেছতা প্রতিরোধে এটি খুব কার্যকরী।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
একটি ফ্রেশ এ্যালোভেরা নিয়ে মাঝখান থেকে চাকু দিয়ে কেটে নিন।
ওই অবস্থাতেই মাঝের জেল টি কুচি কুচি করুন। এটি মেছতার জায়গায় ৩/৪ মিনিট পর্যন্ত ঘষুন।
তারপর এইভাবেই রেখে দিন ১৫/২০ মিনিটের জন্য। তারপর ধুয়ে যেকোনো ময়েশ্চারাইজার ইউস করুন।
এইভাবে এটি প্রতিদিন করতে হবে। তাহলে মেছতার দাগ ধিরে ধিরে হালকা হতে থাকবে।
৩) টমেটো পেস্ট
সূর্যরশ্মি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মেছতা দেখা দিলে, টমেটো সেক্ষেত্রে খুব উপকারী।
সূর্যরশ্মি দ্বারা আমাদের ত্বকে ফটোড্যামেজ হয়। লাইকোপিন নামক এমন একটি উপাদান রয়েছে যা টিমেটোর মূল উপাদান।
এটি সূর্যরশ্মি থেকে হওয়া ড্যামেজ প্রতিরোধ করে মেছতার দাগ কমাতে সাহায্য করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
একটি আস্ত টমেটো নিন। এটি কে ফলা করে কেটে চামচ বা হাতের মাধ্যমে থেতলে নিন।
এবার এক টেবিল চামচ ওলিভ ওয়েল মিক্স করুন। দুইটি উপকরণ মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট সপ্তাহে অন্তত ২ বার ব্যবহার করতে হবে।
৪) কলার খোসা
কলা খুবই মজাদার ও উপকারী ফল আমরা জানি।
কলা খেয়ে খোসাটা ছুড়ে ফেলে দেই। কিন্তু কলার খোসার উপকারিতা জানার পর আজকে থেকে কলার খোসা ফেলবেন না।
এটিতে আছে ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ ও বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন। এটি মেছতা রোধে খুবই উপকারী।
আপনার যদি মেছতার সমস্যা না থাকে তবুও তা আপনার ত্বককে উজ্জ্বল ও গ্লো করতে সাহায্য করবে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
কলার খোসা কলা থেকে আলাদা করে নিন। কলার খোসার ভিতরের দিকটি দিয়ে মেছতার জায়গায় ৩/৪ মিনিট ঘষুন।
এরপর সেটা আপনার ত্বকে ১০ মিনিট রেখে দিন যাতে কলার খোসার অংশগুলো ত্বক শুষে নেয়।
এইভাবে প্রতিদিন চেষ্টা করুন। তাহলে মেছতা ফেইড হতে থাকবে।
৫) অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল বহুগুনে ভরপুর। এটি নানান কাজে ব্যবহৃত হয়।
মেছতা নিরাময়ে এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে বলে মনে হয় না।
অলিভ অয়েল রেগুলার ম্যাসাজ করলে দাগ হালকা হিতে হতে মিশে যাবে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
প্রথমে অলিভ অয়েল একটি পাত্রে গরম করে নিন।
এটি হালকা ঠান্ডা করে আঙ্গুলে অল্প তেল নিয়ে মেছয়া যে জায়গা গুলোতে আছে সেইখানে সার্কুকার মোশোনে ম্যাসাজ করুন।
যতক্ষণ না ত্বক তেল শুষে নেয় ততক্ষণ ম্যাসাজ করুন।
এবার ঘন্টাখানেক রেখে দিন। হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে সেটা আলতো করে মুখ মুছে ফেলুন।
আপনি দিনে ২-৩ বার ও এইভাবে মেছতার উপর লাগাতে পারেন।
এতে আপনার ত্বক ময়েশ্চারাইজড ও থাকবে।
প্রতিকারের পূর্বে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন যেভাবে
- যথাসম্ভব সূর্য থেকে দূরে থাকবেন। বেশিক্ষণ সূর্যের আলোতে দাড়াবেন না।
- ঘরে বা বাইরে, যেখানেই থাকেন সানস্ক্রিন ব্যবহারক করবেন।
- বেশি করে পানি পান করুন
- ত্বককে যথাসম্ভব ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত গরমে ত্বকে বরফ ম্যাসাজ করুন।
- সপ্তাহে একবার বা দুইবার স্ক্রাব করুন।