সুন্দর ত্বক কাকে বলে এ নিয়ে তর্ক তো অনেক করাই চলে। কিন্তু যেখানে কোরিয়ান গ্লাস স্কিনের প্রসঙ্গ আসে সেখানে সৌন্দর্যের সবচেয়ে ভাল উদাহরণ ধরা হয় একেই।
অনেকেই চেষ্টা করেন কী করে এই স্কিন পাওয়া যায়। তার জন্য কিন্তু নিয়ম জানতে হয় আর সেই পদ্ধতি ধাপে ধাপে জানাবে আজকের আর্টিকেলে।
গ্লাস স্কিন আসলে কী?
গ্লাস স্কিনের ধারণা আমরা পেয়েছি কোরিয়া থেকে। গ্লাস স্কিন অর্থাৎ কাচের মতো স্বচ্ছ একটি ত্বক। এটি একটি পারফেক্ট বা নিখুঁত ত্বককে নির্দেশ করে।
আমরা সবাই পরিষ্কার, ঝকঝকে আর স্বাস্থ্যকর ত্বক চাই। কোরিয়ান গ্লাস স্কিন পদ্ধতি আমাদের ঠিক সেটাই এনে দেয়।
ক্রিস্টালের মতো স্বচ্ছ, দাগহীন, বেবি-সফট একটি ত্বকই হল কোরিয়ান গ্লাস স্কিনের আসল কথা। কিন্তু কীভাবে পাবেন এই স্কিন!
যদি আপনি চটজলদি পেতে চান এই ধরণের স্কিন তাহলে তা সম্ভব নয়। বরং আমাদের বলে দেওয়া এই নয়টি স্টেপ নিয়ম মেনে ফলো করুন। তাহলেই গ্লাস স্কিন আপনার হাতের মুঠোয়।
কীভাবে পাবেন গ্লাস স্কিন?
কোরিয়ান গ্লাস স্কিন পদ্ধতি আসলে আর কিছুই না। ঠিক ভাবে ক্লিনসিং আর সেই ক্লিন করা ত্বকের ওপর হাল্কা প্রোডাক্ট লেয়ারের মতো ব্যবহার করা, যাতে ত্বক হাইড্রেটেড থাকে।
আর এতেই আপনার ত্বক হয়ে ওঠে আস্তে আস্তে সুন্দর, ঝকঝকে আর কোমল। আসুন পদ্ধতিগুলি পরপর দেখে নিই।
ক্লিনসার দিয়েই শুরু হোক
রোজকার ত্বকের যত্নে ক্লিনসারের ভূমিকা কিন্তু সবচেয়ে বেশি। ভালো ক্লিনসার ত্বকের ওপরের স্তর থেকে সমস্ত ময়লা, অশুদ্ধি দূর করে দেয়।
আর ওপরের ত্বকের লেয়ার পরিষ্কার হলেই তো ক্রিম বা কোনও প্রোডাক্ট ত্বকের ভিতরে যেতে পারবে। তাই একটি মৃদু ও কার্যকরী ক্লিনসার দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে নিন।
আরও খেয়াল রাখবেন, সেই ক্লিনসার যেন আপনার ত্বকে একটা জেল্লা আনতেও কাজে আসে, কারণ আপনার উদ্দেশ্য ঝকঝকে গ্লাস স্কিন পাওয়া।
ক্লিনসার হাতে নিয়ে তাতে অল্প জল মিশিয়ে নরম করে নিন। তারপর এটি মুখে হাল্কা হাতে ঘষুন। তারপর হাল্কা গরম জল দিয়ে ধুয়ে নিন।
তোয়ালে দিয়ে থুপে থুপে মুখ মুছে নিন। ঘষে ঘষে মুখ মোছা অত্যন্ত ক্ষতিকর ত্বকের ক্ষেত্রে। ক্লিনসার ব্যবহার করার ফলে আপনার ত্বক ভিতর থেকে পরিষ্কার হবে।
আর একটি কথা মনে রাখবেন। আপনি যখন মেকআপ তুলবেন, তখন কিন্তু দু’বার ক্লিনসার ব্যবহার করতে হবে। তবেই ভালো ফল পাবেন।
স্ক্রাব দিয়ে এক্সফোলিয়েট করুন
ক্লিনসিং-এর পর এবার পালা এক্সফোলিয়েট করার। ক্লিনসিং করলে ত্বকের থেকে ময়লা তো দূর হয়।
কিন্তু ত্বকের ওপরের মরা চামড়া সবটা কিন্তু যায় না। এর জন্যই দরকার হয় ভালো স্ক্রাবের।
উপযুক্ত স্ক্রাব আপনার ত্বকের ওপরে জমে থাকা মরা চামড়া দূর করে দিয়ে ভিতরের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনবে।
তবে অবশ্যই আপনাকে আপনার ত্বকের ধরণ অনুযায়ী স্ক্রাব ব্যবহার করতে হবে। যেমন ধরুন, আপনার ড্রাই স্কিন হলে এমন স্ক্রাব দেখুন যা নারিশিং হবে।
ব্ল্যাকহেডস বেশি হলে এমন স্ক্রাব খুঁজুন যা আপনার ত্বকের ভিতরে গিয়ে ভিতর থেকে ব্ল্যাকহেডস তুলে দেবে।
আর মনে রাখবেন, স্ক্রাব করার উদ্দেশ্য মুখ পরিষ্কার করে মুখের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা আবার ফিরিয়ে আনা।
তাই যে স্ক্রাব ব্যবহার করলে মুখ লাল হয়ে যায় সেটা ব্যবহার না করাই ভাল।
শিট মাস্ক ব্যবহার করুন
গ্লাস স্কিনের কথা এলে শিট মাস্ক ব্যবহার কিন্তু অন্যতম অঙ্গ হয়ে ওঠে। শিট মাস্ক যখন আপনারা মুখ থেকে তুলে ফেলেন তখন দেখবেন মুখটা কতটা ঝকঝক করছে।
কোরিয়ান গ্লাস স্কিন পেতে হলে এই ফেস মাস্ক অত্যন্ত দরকারি কারণ এটি ত্বকের গভীরে কাজ করে।
একটি ভালো ফেস মাস্ক ত্বকের আর্দ্রতা আর উজ্জ্বলতা দুই-ই বজায় রাখে আর বাড়াতে সাহায্য করে।
হাইড্রেটিং টোনারের ব্যবহার
হাইড্রেটিং টোনার অবশ্যই এমন ব্যবহার করা উচিত যাতে অ্যালকোহল থাকে না।
আরও ভালো করে বললে, সেই ধরণের হাইড্রেটিং টোনারই ব্যবহার করা উচিত যাতে প্রো-ভিটামিন বি-৫ থাকবে। টোনার ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখে।
আর তাই ত্বক থাকে নরম আর তুলতুলে। একটি কটনের বলের ওপর কয়েক ফোঁটা টোনার নিয়ে থুপে থুপে মুখে লাগান।
টোনার এমনিতেই শুকিয়ে যাবে, তাই ধোয়ার প্রয়োজন নেই।
এবার হাইড্রেটিং সিরাম
গ্লাস স্কিন কেয়ারের ক্ষেত্রে হাইড্রেটিং একটা বড় জায়গা নেয়। স্কিন ভিতর থেকে আর্দ্র না হলে কোমলতা বা সেই উজ্জ্বলতা আসে না।
আর উজ্জ্বলতা, কোমলতা, বেবি-সফট স্কিনই তো গ্লাস স্কিন কেয়ারের আসল কথা। তাই হাইড্রেটিং টোনারের পর এবার হাইড্রেটিং সিরাম ব্যবহারের পালা।
আপনি যদি নিয়মিত সিরাম ব্যবহার না করে থাকেন তাহলে এবার থেকে শুরু করুন।
যেখানে গ্লাস স্কিন কেয়ারের কথা, সেখানে বেশি ভালো হয় যদি আপনি হাইঅ্যালিউরনিক অ্যাসিড আছে এমন কোনও হাইড্রেটিং সিরাম ব্যবহার করেন।
এটি তাড়াতাড়ি স্কিনের সঙ্গে মিশে যায় ও হাইড্রেশনের ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ দেয়। কীভাবে ব্যবহার করবেন?
হাতের তালুতে কয়েক ফোঁটা সিরাম নিয়ে মুখে আর গলায় লাগান আপওয়ার্ড মোশনে। তারপর স্কিনের সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য ছেড়ে দিন।
লাইটওয়েট ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পালা
টোনিং-এর পর এবার ময়েশ্চারাইজিং। টোনার ব্যবহার করার পর তার ওপরেই ময়েশ্চারাইজার লাগান।
এতে টোনারের ব্যবহারের জন্য আপনার স্কিন যে ময়েশ্চার পেয়েছিল তা লক হয়ে থাকবে। ভালো ময়েশ্চারাইজার স্কিনের পি.এইচ ব্যাল্যান্স ধরে রাখে।
ময়েশ্চারাইজার কিন্তু আপনার কমপ্লেকশনকেও আরও ভালো জায়গায় নিয়ে যায়।
ফাউন্ডেশন তুলে নিন হাতে
আপনি যদি গ্লাস স্কিনের ফাইনাল গ্লোয়িং লুক চান তাহলে এবার ফাউন্ডেশনের পালা। তবে মনে রাখবেন, ম্যাট ফিনিস ফাউন্ডেশন এক্ষেত্রে ব্যবহার করবেন না।
তাহলে বিপরীত ফল পাবেন। গ্লাস স্কিন পেতে হলে মিডিয়াম-কভারেজ ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন।
এতেই আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত রেডিয়েন্ট লুক পাবেন। চড়া ফাউন্ডেশনও কিন্তু গ্লাস স্কিনের ক্ষেত্রে খুব একটা ভালো নয়।
স্কিন হাইলাইট করুন
ক্লিনসিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং সবই তো হল। আপনার স্কিন এখন ভিতর থেকে পরিষ্কার আর উজ্জ্বল। এবার পালা এই স্কিনকে অতিরিক্ত উজ্জ্বলতা দেওয়া।
আর তাই ব্যবহার করুন স্কিন হাইলাইটিং লোশন। এই লোশন ব্যবহারের সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হল, আঙুলের ডগায় কয়েক ফোঁটা লোশন নিন।
মুখে আস্তে আস্তে মেশান। নাক এবং থুতনির কাছে বেশি গুরুত্ব দিন। সঙ্গে সঙ্গেই একটা উজ্জ্বলতা বুঝতে পারবেন।
সবার শেষে লাস্ট টাচ-আপ
আপনি এবার শেষ পর্যায়ে চলে এসেছেন। এবার দরকার আপনার সেই প্রতিক্ষিত নিখুঁত গ্লো, কাচের মতো স্বচ্ছতা।
এর জন্য গ্লো বুস্টিং হাইলাইটার আরেকবার ব্যবহার করতে হবে। কয়েক ফোঁটা লোশন আবার নিয়ে কপাল, নাক, থুতনি এই সব অংশে আস্তে আস্তে লাগান।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি মেকআপ ব্ল্যান্ডার দিয়ে সারা মুখে, গলায় মিশিয়ে নিতে পারেন।
কীভাবে সম্পূর্ণতা পাবে আপনার গ্লাস স্কিন কেয়ার
গ্লাস স্কিন লুক পাওয়ার জন্য ওপরের সব স্টেপ তো করলেন। কিন্তু এবার মেকআপ করবেন কী করে!
গ্লাস স্কিনের উজ্জ্বলতা বজায় রাখার জন্য মেকআপও কিন্তু অনেক ভেবে করতে হয়।
খানিক চড়া মেকআপ বা কম মেকআপ কিন্তু আপনার গ্লাস স্কিনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে দিতে পারে। তাই ভারসাম্য বজার রাখা খুব দরকার।
খানিক রঙ থুতনিতে
গ্লাস স্কিন লুক তখনই পূর্ণতা পায় যখন আপনার থুতনি খানিক উজ্জ্বল রঙের হয়। হাল্কা ব্রাশ-আপই এর জন্য যথেষ্ট।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি ডাস্টিং রোস টিন্টেড হাইলাইটার ব্যবহার করতে পারেন।
মেকআপ ব্রাশের সাহায্যে গালে, থুতনিতে এই হাইলাইটার ব্যবহার করুন। একটা গ্লিটারিং এফেক্ট দেওয়ার জন্য এইটুকুই অনেক।
বুঝে করুন চোখের মেকআপ
আপনি যে কোরিয়ান গ্লাস স্কিন পেলেন, সেটা বজায় রাখার জন্য চোখের মেকআপও হওয়া উচিত সাদামাটা।
ওপরের লেভেলে আই-লাইনারের পাতলা লেয়ার হলেই হবে। আইশ্যাডোর ক্ষেত্রে হাল্কা আর নুড কালার বেছে নিন।
আর সবশেষে মাস্কারা ব্যবহার করতে ভুলবেন না। মনে রাখবেন, চোখের মেকআপ যেন এতো বেশি না হয় যেটা আপনার গ্লাস স্কিনকে ঢেকে দেয়।
আই ব্রোয়ের বিশেষ যত্ন
চোখের মেকআপ ততক্ষণ শেষ হয় না যতক্ষণ আই-ব্রোয়ের যত্ন না নেওয়া হয়। সবচেয়ে বড় কথা, ওয়াটার প্রুফ ব্রো জেল ব্যবহার করতে পারেন।
এতে চোখের ভুরূ বেশ বড় বড় দেখাবে। তবে খুব ডিপ করে লাগাবেন না। ওয়াটার প্রুফ ব্যবহার করতে বলার কারণ এটি তাড়াতাড়ি স্কিনের সঙ্গে মিশে যায়।
উজ্জ্বল ঠোঁটের জয় সর্বত্র
গ্লাস স্কিনের মেকআপ জমে যাবে যদি আপনার ঠোঁট হয় উজ্জ্বল। ঠোঁটে তাই উজ্জ্বল গ্লসি লিপস্টিক ব্যবহার করুন।
লিপস্টিকের ওপর শাইনি লিপজেল দিতে পারেন। তবে দেখবেন যেন স্টিকি না হয় ব্যাপারটা। চকচকে ঠোঁট গোটা গ্লাস স্কিনকেই ভালো কমপ্লিমেন্ট করবে।
এবার আপনারা জেনে গেলেন ঘরে বসেই স্টেপ-বাই-স্টেপ কোরিয়ান গ্লাস স্কিন কেয়ারের পদ্ধতি।
আপনার রূপের আলাদা ট্রেন্ড দেখিয়ে আপনিই কিন্তু হয়ে যেতে পারেন এবার ট্রেন্ড সেটার। নিয়ম করে ওপরের স্টেপ মেনে চললে কাচের মতো স্বচ্ছ স্কিন পাওয়া কোনও ব্যাপারই না।