অসময়ে চুল পাকা বন্ধ করুন।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের মাথার চুল সাদা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অল্প বয়সে চুল পাকলে সেটা বিব্রতকর হয়ে যায়।
সাদা চুল ৪০ বছরের উর্ধ্বে যারা আছেন তাদের জন্য কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু ২০ বছর বা ৩০ বছরের যারা আছে তাদের জন্য এটা চিন্তার বিষয়।
চুল পাকা নিয়ে অনেকেই অস্বস্তিতে ভুগে। তারা কনফিডেন্ট ও হাড়িয়ে ফেলে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে পর্যন্ত দ্বিধা বোধ করে।
অনেকে অল্প মেয়াদী কলপ ব্যবহার করে থাকেন।যা আমাদের মাথার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
তাই চুল পাকা বন্ধ করার জন্য প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে চুল সুন্দর ও কালো রাখা যেতে পারে।
চুল সাদা হওয়ার কারণ কী?
আমাদের শরীরে পিগ্মেন্ট মিলানিন নামক একটি উপাদান গঠিত হয়। পিগ্মেন্ট মিলানিন নামক এই পদার্থ সাধারণত আমাদের চুল কালো রাখতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন কারণে এই উপাদান গঠন হওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর এই উপাদান গঠন বন্ধ হওয়ার ফলে চুল সাদা হয়ে যায়।
পিগ্মেন্ট মেলানিন গঠন বন্ধ হওয়ার কারণ
- ভিটামিন বি-১২ বন্ধ হয়ে যাওয়া: আমাদের কোষগুলো যখন মিলানিন নামক উপাদান গঠন করতে পারে না, চুল তখন সাদা হতে থাকে।
- এই উপাদান টি গঠন করার জন্য প্রয়োজন হয় ভিটামিন বি-১২। এর অভাবে চুলের অকালপক্কতা দেখা যায়।
- হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড: আমাদের শরীরের কোষ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড গঠন করে থাকে।
- কিন্তু অতিরিক্ত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড গঠন করার ফলে এটি আমাদের চুলের উপর প্রভাব ফেলে। এতে করে চুল সাদা রঙ ধারণ করতে শুরু করে
- ধূমপান: ধূমপান করার ফলে আমাদের নানা ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হয়। অকালে চুল পেকে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো ধূমপান।
- জেনেটিক্স: বংশগত কারণে অনেকের চুল পেকে যায়। এটা জেনেটিক্যালি তার বংশের মাধ্যমে আসে।
- নিউট্রিশন এর ঘাটতি: এটা স্বাভাবিক যে সুন্দর ত্বক ও চুলের জন্য নিউট্রিশন প্রয়োজন। আমরা আমাদের খাদ্য তালিকায় নিউট্রিশন যুক্ত উপাদান কমিয়ে যদি ভিটামিন আর মিনারেলস যুক্ত খাদ্য তালিকায় বেশি রাখি তবে চুল পেকে যেতে পারে।
- বিভিন্ন ধরনের অসুখ: সাদা চুল বা অকালে চুল পেকে যাওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে নানা ধরণের শারীরিক রোগ। যেমন: থাইরোয়েড, এনিমিয়া বা অতিরিক্ত স্ট্রেস।
পাকা চুল রোধ করার ৫ ঘরোয়া উপায়
কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যবহার কোনো সুফল দেয় না বরং এটি আমাদের ত্বকের জন্য খুব ক্ষতিকর। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে চুল কে সুন্দর রাখতে যে উপাদান গুলো ব্যবহার করতে পারেন তা জানানো হলো
১) আমলকি
আমলকি ফলের পুষ্টিগুণ বলে শেষ করা যাবে না। এটা আমাদের শরীরের মেদ কমানো থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ সমস্যার পাশাপাশি চামড়ার ইনফেকশন দূর করে। আমাদের শরীরের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে। অকালে চুল পাকা রোধে আমলকির কোন তুলনা হয় না। আর আমলকি খুব সহজলভ্য ও।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- ৭/৮ টি আমলকি ফল
- এক টুকরো লেবু
যেভাবে ব্যবহার করবেন:
- একটি হামান দিস্তায় ৭/৮ টি আমলকি নিবেন।
- এটা ভালোভাবে থেতলে নিবেন। চাইলে ব্লেন্ডারের মাধ্যমে ব্লেন্ড করে নিতে পারেন।
- ভালোভাবে ব্লেন্ড করে তার মধ্যে এক টুকরো লেবুর রস চিপে দিতে হবে। ভালোভাবে মিক্স করে নিন এই ২ টি উপকরণ।
এটা সপ্তাহে অন্তত ৪/৫ দিন মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করবেন। এক ঘন্টা রেখে দিবেন। এক ঘন্টা পর চুল ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলবেন।
২) কারিপাতা
কারিপাতার নাম অনেকেই শুনেছেন। এটি মূলত রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। রান্নার স্বাদ বাড়াতে এর তুলনা হয় না। রান্নার পাশাপাশি কারিপাতা চুলের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, কপার ও তামা। কারিপাতা চুলের অকালপক্কতা রোধ করে চুল কে শক্ত করে তোলে। তাছাড়াও এর সাথে নারকেল তেলের মিশ্রণ ড্যামেজ চুল রিপেয়ার করবে। চুল সুন্দর ও কন্ডিশনিং করে তুলবে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- কারিপাতা
- নারকেল তেল
যেভাবে ব্যবহার করবেন:
- একটি প্যানে এক কাপ নারকেল তেল নিতে হবে।
- তার সাথে কয়েকটি কারিপাতা এড করে চুলা জ্বালিয়ে দিতে হবে।
- মিডিয়াম টু লো তাপমাত্রায় এটি সিদ্ধ করতে হবে।
- ধিরে ধিরে তেলের রং পরিবর্তন হতে দেখা যাবে। কারিপাতার রং চলে যাওয়া পর্যন্ত জ্বাল দিতে হবে।
- ৩০/৩৫ মিনিটের কাছাকাছি দেখা যাবে রং পরিবর্তন হয়েছে।
- চুলা থেকে নামিয়ে নিয়ে সেটা ঠান্ডা করে নিতে হবে।
মিশ্রণ ঠাণ্ডা করে ভাল করে চুলের আগাগোড়া লাগিয়ে নিন। এরপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন ভালোভাবে। সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার এই মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
৩) মেহেদী ও ডিম
প্রাকৃতিক চুল কালার পেইন্ট হওয়া ছাড়াও মেহেদী অকালপক্ক রোধ করতে পারে। মেহেদী চুলের গোড়া শক্ত করার পাশাপাশি চুলে পুষ্টি জোগায়। আর ডিম এমন একটি উপাদান খুবই উপকারী। ডিম গোড়া থেকে ন্যারিশ করে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- ২ টা সম্পূর্ণ ডিম
- মেহেদী পাতা
- দই
যেভাবে ব্যবহার করবেন:
- মেহেদী পাতা ডালা থেকে ছাড়িয়ে নিন। ভালোভাবে ধুয়ে সব পাতা কড়া রোদে শুকিয়ে নিন।
- রোদে ভালোভাবে শুকানোর পর সেটা ব্লেন্ডারের মাধ্যমে গুড়া করে নিন।
- একটি বাটিতে ২ টি ডিমের সাথে ৩/৪ চামচ মেহেদী গুড়া মিক্স করে নিন।
- ডিম ও মেহেদী পাতার মিশ্রণে ২ টেবিল চামচ দই এড করুন। কেউ প্লেইন দই এর পরিবর্তে টক দই ও ব্যবহার করতে পারেন।
- এই পেস্ট ভালোভাবে পুরো চুলে এপ্লাই করবেন। মাথার ত্বক সহ পুরো চুলে ম্যাসাজ করতে হবে।
- ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলবেন ঠান্ডা পানি দিয়ে
সপ্তাহে এই প্যাক টি ৩/৪ বার এপ্লাই করলে খুব ভালো রেজাল্ট পাওয়া যাবে।
৪) সরিষার তেল
সরিষার তেল আমাদের বাঙালি রান্নায় নিয়ে আসে অন্যরকম স্বাদ। এর ঘ্রাণ ও স্বাদ যেকোনো খাবারকে করে তোলে অতুলনীয়।
সরিষার তেল আমাদের আমাদের চুলের জন্য খুব বেশি উপযোগী। এটিতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, সেলেনিয়াম ও আর হেলদি ফ্যাট। এই উপাদান আমাদের চুল ন্যারিশ করে হেলদি রাখতে সাহায্য করে। সরিষার তেল চুল কালো রাখতে খুব উপকারী।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- চুলের লেন্থ অনুযায়ী এক বাটি সরিষার তেল
যেভাবে ব্যবহার করবেন:
- একটি প্যানে পরিমাণ মতো তেল নিতে হবে।
- সেটা ২/৩ মিনিট মিডিয়াম টু লো আঁচে তাপ দিতে হবে। আঁচ বাড়ালে তেল পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই মিডিয়াম তাপমাত্রায় রাখতে হবে।
- তেল ২/৩ মিনিট পর নামিয়ে নিতে হবে। একে ঠান্ডা হতে দিতে হবে কিছুক্ষণ।
- মাথার ত্বকে আলতো আলতো করে ম্যাসাজ করে নিতে হবে খুব ভালো করে
প্রতিদিন এভাবে করে রেগুলার করতে হবে। তাহলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
৫) ব্ল্যাক টি
অবাক হচ্ছে চা এর কথা শুনে? হ্যা একটু অবাক হওয়ার ই কথা। চা পানীয় হিসেবে পুরো পৃথিবী জুড়ে জনপ্রিয়। আর এই চা চুল কালো রাখতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- লবণ
- কালো চা
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- এক কাপ পানিতে খুব বেশি করে র- চা বা ব্ল্যাক টি জ্বাল দিতে হবে।
- তার মধ্যে এক টেবিল চামচ লবণ এড করে মিক্স করতে হবে।
- খুব ভালোভাবে জ্বাল দেয়া হয়ে গেলে নামিয়ে নিতে হবে। নামিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ঠান্ডা হতে দিতে হবে।
- মাথার ত্বকে ভালো ভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। বাকিটা চুলের মধ্যে এপ্লাই করতে হবে।
৩০/৩৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। মাসে ৪/৫ বার করলে যথেষ্ট।
প্রাকৃতিক উপাদানের তৈরি প্যাক ব্যবহারের মাধ্যমে চুল কালো ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল রাখা সম্ভব। তার পাশাপাশি নিজেদের লাইফস্টাইলের কিছু পরিবর্তন এনে নিজের চুল দীর্ঘদিন ধরে কালো রাখুন।
- ভিটামিন যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে বেশি বেশি। ভিটামিন যুক্ত খাবার চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- সূর্যরশ্মি থেকে যথাসম্ভব চুল প্রটেক্ট করতে হবে। হিজাব বা যেকোনো স্কার্ফ এর মাধ্যমে চুল ঢেকে বাইরে যেতে হবে।
- স্মোকিং বা ধূমপান পরিহার করতে হবে।