ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। শুনতে আমুদে একটা ভাব থাকলেও প্রতিটা ঋতুতেই যে সমস্যাটা খুব প্রকটা আকার ধারন করে সেটা হচ্ছে চুল ওঠা।
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত – সব ঋতুতেই চুলের সমস্যা দেখা যায়। ঋতুভেদে হয়ত সমস্যার ধরন হয় ভিন্ন। তবে বর্ষায় চুল একটু বেশিই ওঠে।
সারাদিন বৃষ্টি কিংবা গুমোট আবহাওয়ায় চুল হয়ে যায় আঠা আঠা। গোসলের পরেও চুল শুকোতে চায় না।
ঘামে চুলের গোড়া প্রায় সারাটা সময় ভিজেই থাকে।
যে কারনে পুরো বর্ষা জুড়েই চুলে থাকে বিচ্ছিরি গন্ধ, খুশকি, ঘামাচি, ঊকুন, স্ক্যাল্পে ব্রণের মতন ছোট ছোট গোটা, ইনফেকশন ইত্যাদি।
আর এসবের ফলাফল চুল পরে যাওয়া। তাই বর্ষার এই সময়টায় চুলের দরকার বাড়তি যত্ন।
আজ তাই আমরা জানবো বর্ষাকালে চুল উঠে যাবার কারন এবং এর ঘরোয়া সমাধান সম্পর্কে।
খুশকি
খুশকি হচ্ছে আসলে মাথার স্ক্যাল্পের এক ধরনের চুলকানি বা চুলকানি প্রবণ অবস্থা।
সাধারণত শীতে খুশকি বেশি হলেও বর্ষাকালেও এর কারনে প্রচুর চুল পরে এবং খুব অস্বস্তিকর একটা অবস্থা তৈরি করে।
এর ফলে চুল তো পরেই, যেগুলো রয়ে যায় সেগুলোও খুবই রুক্ষ হয়ে যায়।
প্রতিকার
- চুলের যে কোনো ধরনের সমস্যার সমাধান করতে মেহেদীর জুড়ি নেই। মেহেদী পাতা ভালো করে ধুয়ে বেটে অথবা ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিন।
এই পেস্ট পুরো স্ক্যাল্পে আলতো করে ঘষে ঘষে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। খুশকির সমস্যা খুব বেড়ে গেলে সপ্তাহে দুদিন ব্যবহার করুন। - খুশকির সমস্যা সমাধানে টকদই খুবই দ্রুত উপকার করে। টকদই স্ক্যাল্পে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে নিন।
আধ ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন। চটজলদি খুশকি কমানোর জন্য খুবই কার্যকরী সমাধান এটি।
ভেজা চুল
চুল ভেজা থাকা চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারন। বৃষ্টির দিনে আদ্রর্তা বেশি থাকায় চুল শুকোতে চায় না একদমই।
ফলে চুলের গোড়া নরম হয়ে থাকে। চিরুণী দিয়ে আঁচড়ালেই গোড়া থেকে উঠে আসে চুল।
প্রতিকার
- কখনোই ভেজা চুল আঁচড়াবেন না। এতে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে চুল পরে যাবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- তোয়ালে দিয়ে আলতো করে চিপে চিপে চুলের পানি মুছে নিন। গামছা বা অন্য কিছু দিয়ে চুল ঝাড়বেন না।
- গোসলের পর যত দ্রুত সম্ভব ফ্যানের বাতাসে চুল শুকিয়ে ফেলুন। তবে চুল শুকাতে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করাই ভালো।
ঘামাচি ও ছোট ছোট ব্রণ
চুল পরার সমস্যার অন্যতম কারন হচ্ছে স্ক্যাল্পে ঘামাচি, ফুসকুড়ি বা ছোট ছোট ব্রণের মত গোটা হওয়া।
গরম, ঘাম, ধুলোবালি ইত্যাদি স্ক্যাল্পে জমে সৃষ্টি করে এসবের। এতে স্ক্যাল্পে প্রচন্ড চুলকানি হয় এবং চুল পরে যায়।
ফুসকুড়ি বা ব্রণের মত গোটাগুলো কখনো কখনো এত মারাত্নক আকার ধারণ করে যে চুলের হাল খুবই বাজে হয়ে যায়।
প্রতিকার
- ঘামাচি, ফুসকুড়ি, গোটা – এসব থেকে মুক্তির প্রধান শর্ত হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা। নিয়মিত চুল পরিষ্কার করুন।
চুলে স্যুট করে এমন হারবাল বা মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। - নারকেল তেলের সাথে কয়েকটা নিমপাতা, অ্যালোভেরা জেল আর সামান্য পেঁয়াজ কুচি করে মিশিয়ে জ্বাল দিন।
ঠান্ডা হলে এই তেল স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন। অ্যালোভেরা, পেঁয়াজ, নিম – এদের রয়েছে নানান রকম ঔষধি গুণ।
এরা চুল পরা কমানোর পাশাপাশি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করবে।
চাইলে এই মিশ্রণে একটি ভিটামিন-ই ক্যাপসুলও যোগ করতে পারেন। - ঘামাচি, ফুসকুড়ি, গোটা বা ব্রণ যা-ই হোক না না কেন; কখনোই চুলকাবেন না বা মাথা ভেঙ্গে দেবেন না।
এতে করে স্ক্যাল্পে বা চুলের গোড়ায় রক্ত জমাট বেধে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
উকুন
চুলের বড় একটি সমস্যা উকুন। এরা মানুষের মাথার চামড়া ছিদ্র করে রক্ত খেয়ে থাকে বেঁচে থাকে।
চামড়া ছিদ্র করার সময় প্রচন্ড চুলকানি অনুভূত হয়। চুলকালে সেই স্থান থেকে ঘা-ও হতে পারে।
প্রতিকার
- জীবন্ত উকুন দূর করার সবচেয়ে দ্রুত কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে চিকন দাঁতের চিরুণী দিয়ে চুল আঁচড়ানো।
এতে করে চিরুণীতে আটকে উকুন চলে আসে। নিয়মিত এভাবে চুল আঁচড়ালে উকুনের উপদ্রব কমে আসবে। - নিমপাতা উকুন তাড়াতে কাজ করে।
তাছাড়া নিমের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-সেপটিক উপাদান উকুনের মাধ্যমে স্ক্যাল্পে হওয়া ক্ষতি সারাতে সহায়তা করে।
পরিষ্কার নিমপাতার সাথে কয়েক কোয়া রসুন নিয়ে পেস্ট করে নিন। এই পেস্ট স্ক্যাল্পে ও চুলে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে লাগিয়ে নিন। চল্লিশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। - ভ্যাসলিন উকুনের যম। চুলের গোড়ায় ও প্রতিটা চুলে ভ্যাসলিন লাগিয়ে ত্রিশ মিনিট রেখে চিকন দাঁতের চিরুণী দিয়ে আঁচড়ে নিন।
উকুন দূর হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে চুলে দুই/একদিন চিটচিটে ভাব থাকতে পারে এবং একাধিকবার শ্যাম্পু করতে হতে পারে।
এছাড়া চুলের সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে অন্যের ব্যবহৃত তোয়ালে, ক্লিপ, চিরুণী, বালিশ ব্যবহার করবেন না এবং নিজেরগুলোও অন্যকে ব্যবহার করতে দেবেন না।
তোয়ালে, বালিশ, বিছানার চাদর নিয়মিত রোদে দিন। বেশি বেশি পানি পান করুন এবং চুল পরিষ্কার রাখুন।