গরমকাল মানেই চুল নিয়ে একটু বাড়তি চুলোচুলি করতেই হয়। কারণ ঘামে ভিজে চুল আরও তেলতেলে, আরও নোংরা।
সাথে খুশকি নিত্য দিনের সঙ্গী তো আছেই। রোজ শ্যাম্পু করতে ইচ্ছা হলেও সময় নেই। ওদিকে আবার না করলে চুল ঝরতেই থাকছে।
চুলের ডগা ফেটে যাচ্ছে। চুল বাড়ছে না, এসব সমস্যা লেগেই আছে। অতিরিক্ত রোদ থেকেও চুলের ক্ষতি। তাহলে উপায় কি?
উপায় আছে আমাদের কাছে। এই সমস্ত সমস্যার ৮টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস। যারা চুলের সমস্যায় ভুগছেন মাথায় রাখুন এই টিপসগুলি।
তেল জরুরী
অনেকেই গরমকালে তেল মাখতে চাননা চুল তেলতেলে হবার ভয়ে। কিন্তু তেল তো চুলের খাদ্য তাকে সেটা দিতেই হবে।
তাই যাদের চুল তেলতেলে হয়ে যায় তারা হালকা ননস্টিকি তেল ব্যবহার করুণ। সপ্তাহে দুদিন তেল মাখুন।
আগেরদিন রাতে তেল মেখে পরেরদিন শ্যাম্পু করে ফেলুন।
সঠিকভাবে তেল মাখছেন তো?
তেল মাখার পর চুলে জট পরে? এর কারণ হল চুল ভালো করে না আঁচড়ানো। তেল মাখার আগে চুল ভালো করে আঁচড়ে নিন। চুলকে জটমুক্ত করে নিন।
তারপর চুলকে দুভাগে ভাগ করে নিন। এবার তেল স্ক্যাল্পে হালকা হাতে ম্যাসেজ করে লাগান। চাপ দেবেন না। তেলও একটু ভালো মানের ব্যবহার করা উচিত।
মিনারেল ওয়েল বা সিলিকন ফ্রী ওয়েল হলে ভালো। এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন আরগান হেয়ার ওয়েল এটা মিনারেল ওয়েল ও সিলিকন ফ্রী। ননস্টিকিও বটে।
স্ক্যাল্প ইনফেকশন দূরে রাখতে
গরম মানেই স্ক্যাল্পে ছোট ছোট ফুসকুড়ি মত হয়। আর খুশকি তো লেগেই আছে। এইগুলো সবই স্ক্যাল্প ইনফেকশন।
এইরকম ইনফেকশন থেকে দূরে থাকতে একধরণের স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন। যেটা বাড়িতেই বানিয়ে নিতে পারেন।
উপকরণ
- ব্রাউন সুগার ১চামচ (যদি ব্রাউন সুগার না থাকে তাহলে সাদা চিনিও ব্যবহার করতে পারেন।)
- মধু ১ চামচ
- অ্যাপেল সিডার ভিনিগার ১ চামচ
- আরগান ওয়েল ১ চামচ
ব্যবহার
সব উপকরণ গুলো ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার এই পেস্ট স্ক্যাল্পে লাগান। হালকা হাতে ম্যাসেজ করে লাগান।
সবটা লাগানো হয়ে গেলে, একটা শাওয়ার ক্যাপ বা পলিথিন দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন। একঘণ্টা এটা রেখে দিন।
তারপর শ্যাম্পু করে নিন। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার।
চুলের নীচের অংশে ড্যামেজের জন্য
চুলের নীচের অংশ থেকে খুব চুল ওঠে? আমাদের চুলের নীচের অংশেই বেশী ড্যামেজ হয়।
এরজন্য একটা টিপস মেনে চলতে পারেন। শ্যাম্পু করার আগে একটু কন্ডিশনার নিয়ে চুলের নীচের অংশে লাগিয়ে নিন।
কিছুক্ষণ পর ধুয়ে নিন। আবার যেমন শ্যাম্পু করেন সেইরকমই করুণ। এবং তারপর আবার কন্ডিশনার।
হেয়ার সিরাম
হেয়ার সিরাম চুলের জন্য খুবই দরকারি। সিরাম চুলের গভীরে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চুলকে সারিয়ে তোলে। চুলের গ্রোথে সাহায্য করে।
বাইরের রোদ, দূষণ ও অন্যান্য ক্ষতি থেকে চুলকে রক্ষা করে। তাই এটা ব্যবহার করলে চুল সবদিক থেকে ভালো থাকে।
হেয়ার সিরাম মানেই যে অনেক টাকা খরচ করে কিনতে হবে এমনটা নয়। বাড়িতেই বানিয়ে নিতে পারেন রান্না ঘরের কিছু সহজ উপকরণ দিয়ে।
উপকরণ
- ১ চামচ অ্যালোভেরা জেল
- ৭ থেকে ৮ ফোঁটা টি ট্রি ওয়েল
- ১ চামচ মরক্যান আরগান ওয়েল
ব্যবহার
সব উপকরন ভালো করে মিশিয়ে নিন। সিরাম তৈরি। এবার হাতে অল্প সিরাম নিয়ে চুলে ও স্ক্যাল্পে জাস্ট হালকা করে লাগিয়ে নিন। ব্যাস এটাই সিরামের কাজ করবে।
সকালবেলা হেয়ার ম্যাসাজ
সকালবেলা হেয়ার ম্যাসাজ কিন্তু বেশ উপকার চুলের জন্য। তেল নয় জাস্ট এমনই হালকা হাতে ম্যাসেজ করুণ। মাথা উল্টো করে নিন।
এবার ওই উল্টো অবস্থাতেই ম্যাসেজ করতে থাকুন। এতে মাথার ব্লাড সার্কুলেশন উন্নত হয়। চুল পড়া কমে ও চুলের গ্রোথ হয়।
রাতে অবশ্যই চুল বেঁধে শোবেন
এটা অনেকেই এড়িয়ে যান। কিন্তু এটা এড়িয়ে যাবার মত বিষয় একদমই নয়। রাতে খোলা চুলে শুয়ে পড়লে, বালিশের সাথে চুল ঘষা লেগে চুলের খুব ক্ষতি হয়।
তাই অবশ্যই চুল বেঁধে শোওয়া দরকার। সবচেয়ে ভালো একটা বিনুনি করে শুলে। এতে চুল বেশী ঘষা লাগবে না ভালো থাকবে।
চুলের ডগা ফাটা আটকাতে
ডগা কেন ফাটে এটা ভেবেছেন? চুলে উপযুক্ত ময়েশ্চারের অভাব। চুল অতিরিক্ত রুক্ষ হয়ে গিয়ে ডগা ফাটতে শুরু করে।
তাই চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখা একান্ত দরকার। নারকেল তেল দিয়ে ম্যাসেজ করুণ। বিশেষ করে চুলের ডগায় নারকেল তেল দিন।
এটা চুলকে ময়েশ্চারাইজড রাখে চুলের ডগা ফাটা রোধ করে।
এছাড়াও উপযুক্ত পুষ্টির অভাবেও কিন্তু ডগা ফেটে যায়। কারণ চুল একটা প্রোটিন আর এই প্রোটিনকে ভালো রাখতে প্রোটিন প্যাক ভীষণ কাজে দেয়।
তাই বাড়িতে তৈরি বিভিন্ন প্রোটিন প্যাক যেমন ডিমের প্রোটিন প্যাক লাগাতে পারেন। কিন্তু সেটা তো সপ্তাহে এক বা দুদিন।
রোজের হাইড্রেশনের জন্য হেয়ার মিস্ট ব্যবহার করতে পারেন। কিচ্ছু না জাস্ট অ্যালোভেরা জেল জলের সাথে মিশিয়ে পাতলা করে নিন।
এটাই এবার স্প্রে বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। একটু ঠাণ্ডা হলেই এটাই মাঝেই চুলে স্প্রে করতে থাকুন।
দেখবেন চুল যেমন হাইড্রেটেড থাকবে তেমনই সবদিক থেকে ভালো থাকবে।
এই বিষয়গুলো জরুরী
- গরমে চুলে একটু বেশী শ্যাম্পু করার দরকার হয়। কারণ স্ক্যাল্পে অনেকবেশী ময়লা জমে। তাই অন্তত সপ্তাহে দুদিন শ্যাম্পু করতেই হবে।
- শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ভুললে চলবে না।
- চুলে রোদ কম লাগান। রোদের ইউভি রে থেকেও চুলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। একটা হালকা স্কার্ফ বা ছাতা ব্যবহার করুণ।
- মাঝে মাঝে স্টিম নিয়ে নিতে পারেন। বিশেষত শ্যাম্পুর আগে। এতে স্ক্যাল্পের রোমকূপগুলি খুলে যায় এবং জমে থাকা তেল ময়লা পরিষ্কার হয়। গরমজলে তোয়ালে ভিজিয়ে সেটা মাথায় জড়িয়ে রাখুন।
- কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট, হেয়ার ড্রায়ার যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করুণ। কারণ অতিরিক্ত তাপে চুলের খুব ক্ষতি হয়। একান্তই মাঝে মাঝে দরকার পড়লে হেয়ার সিরাম লাগিয়ে তারপর করুণ। এতে ক্ষতি কিছুটা আটকানো যাবে।
- চুল অতিরিক্ত টাইট করে না বাঁধাই ভালো।
- এছাড়াও মাঝে মাঝে বাড়িতে তৈরি হেয়ার প্যাক লাগাতে পারেন। চুল পুষ্টি পাবে।