আপনি হয়তো অনেক সময়ে চুল শুকনোর জন্য হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করেন।
আবার অনেক সময়ে চুল স্ট্রেট করার জন্য চুলে হিট দেওয়া হয়।
এর ফলে আপনি যা চান তা হয়তো খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।
আপনার চুল যেমন তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়, তেমনই চুল স্ট্রেট করে আপনি নানা রকম স্টাইল করতে পারেন।
তবে ভিতরে ভিতরে কিন্তু চুলের বারোটা বেজে যায়।
আর এই ড্যামেজ আটকানো খুবই পরিশ্রম সাধ্য কাজ হয়ে যায়, অনেক সময়ে আলাদা করে টাকা খরচ করে চুল ঠিক করতে হয়।
পার্লারে গিয়ে অজস্র টাকা খরচ না করে নিজেকে একটু সময় দিন।
যত্ন নিন চুলের। কেমিক্যাল মুক্ত জিনিস ব্যবহার করুন। তবে এখন আর খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না।
আপনি অনায়াসেই আজকের আর্টিকেল পড়ে ঘরে বসেই হিটের ফলে ড্যামেজ হওয়া চুল ঠিক করতে পারবেন।
আর চুলের যত্ন নিতে পারবেন বিনা খরচে।
হিট দিলে চুলের কী ক্ষতি হয়?
আমাদের একটা কথা খুব ভালো করে মনে রাখতে হবে।
আমাদের চুল একটি প্রাকৃতিক উপাদান আর এটি কোনও রকম অতিরিক্ত কিছু নেওয়ার জন্য তৈরি হয়নি।
যে হিট আপনি ব্যবহার করেন চুলে, সেই হিট নেওয়ার মতো সহ্য ক্ষমতা আমাদের চুলের থাকে না।
মোটামুটি ৪১০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কাছাকাছি তাপ দেওয়া হয় চুলে চুল স্ট্রেইট করার জন্য।
আপনিই ভাবুন, আপনার নরম চুল কী এই তাপ নিতে পারে?
ফলে চুলের কিউটিকল দুর্বল হয়ে যায়, চুল পড়া শুরু হয়ে যায়।
আর এই তাপে চুলের আর্দ্রতা কমে গিয়ে চুল হয় শুষ্ক আর নির্জীব।
মাঝখান থেকে তাই চুল ভেঙে যায়।
কীভাবে রক্ষা করবেন চুল?
কী কী সমস্যা হয় হিট থেকে তা তো জানলেন।
এবার জেনে বসে থাকলে তো চলবে না। সমাধান তো দরকার।
আপনাদের জন্য তাই এনেছি ছয়টি ঘরোয়া অব্যর্থ উপায়।
দেখে নিন সেগুলি কী কী।
১. তেলের পুষ্টি
ড্যামেজ চুল ভালো করার প্রথম সমাধানই হল তেলের ব্যবহার।
বিশেষজ্ঞরাও এই কথাই বলে থাকেন।
আর তেলের মধ্যে চুলের জন্য উপকারী দুটি তেলের কথা বলব আজ, অলিভ অয়েল আর নারকেল তেল।
হিট দিলে চুল শুকিয়ে যায় আর ময়েশ্চার হারিয়ে ফেলে।
অলিভ তেল চুলে ফিরিয়ে আনবে সেই আর্দ্রতা।
এতে থাকা ভিটামিন ই চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখবে।
আর হিট দেওয়ার ফলে স্ক্যাল্পে যে গরম ভাব তৈরি হয়, তা কমিয়ে আনবে নারকেল তেল।
তাই এই দুটি তেলের মিশ্রণ নিয়ম করে ব্যবহার করুন।
উপকরণ
৩ চামচ অলিভ তেল, ৩ চামচ নারকেল তেল।
পদ্ধতি
- প্রথমে এই দুটি তেল খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- এই মিশ্রণ এবার চুলে, স্ক্যাল্পে খুব ভালো করে লাগিয়ে নিন আর রেখে দিন ২ ঘণ্টা মতো।
- আপনি এটি সারা রাতও চুলে রাখতে পারেন। সেটাই বেশি ভালো হবে।
- এবার মাইল্ড কোনও শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
এটি সপ্তাহে তিন দিন অবশ্যই করুন। চুল খুব ভালো থাকবে এতে।
২. ডিমের আর দুধের প্যাক
এটিও কিন্তু খুব অনবদ্য একটি প্রোডাক্ট।
আমাদের চুল মূলত প্রোটিন দিয়ে তৈরি।
তাই চুল ভালো করতে গেলে চুলে প্রোটিনের জোগান বজায় রাখতে হবে।
ডিমের আর দুধের মধ্যে থাকা প্রোটিন এক্ষেত্রে সেই কাজ করবে সরাসরি।
আর ডিম ন্যাচারাল কন্ডিশনারও।
তাই চুলের ড্যামেজ আটকাতে নিশ্চিন্তে এই প্যাক ব্যবহার করুন।
উপকরণ
১টি ডিম, পরিমাণ মতো দুধ।
পদ্ধতি
- প্রথমে একটি ডিম ভেঙে ভালো করে ফেটিয়ে নিন।
- এবার এই ডিমের মধ্যে সাধারণ তাপমাত্রায় রাখা দুধ দিন আর ভালো করে মিশিয়ে নিন। খুব পাতলা মিশ্রণ যেন না হয়।
- এই মিশ্রণ এবার চুলে লাগিয়ে নিন আর রেখে দিন ২০ মিনিট মতো।
- সময় হয়ে গেলে চুল ধুয়ে নিন ঠাণ্ডা জল দিয়ে।
এটি সপ্তাহে এক দিন অবশ্যই করুন। কয়েক দিনের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
৩. চা পাতা
চা খেয়ে পাতা ফেলে না দিয়ে এবার ব্যবহার করা শুরু করুন।
চা পাতার মধ্যে আছে পলিফেনল আর ভিটামিন। হিটের ফলে চুল পড়ে যায় আর গজানো বন্ধ হয়ে যায়।
পলিফেনল আবার নতুন করে চুল গজাতে সাহায্য করবে।
এছাড়া এটি চুলকে ক্ষতিকর আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে বাঁচাবে আর আনবে আলাদা সাইন।
তাই চুলের সৌন্দর্যের জন্য ব্যবহার করুন চা পাতা।
উপকরণ
গ্রিন টি বা ব্ল্যাক টি।
পদ্ধতি
- প্রথমে একটি পাত্রে জল গরম করে নিন।
- এবার এই জলের মধ্যে টি ব্যাগ দিয়ে দিন আর জলে লিকার হতে দিন।
- ৫ মিনিট পর টি ব্যাগ সরিয়ে নিন আর জল খানিক ঠাণ্ডা হতে দিন।
- এই জল চুলে দিন আর অপেক্ষা করুন ৩০ মিনিট।
- এবার চুল মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।
এই পদ্ধতি আপনি সপ্তাহে দু দিন অবশ্যই করুন। আপনার ড্যামেজ হওয়া চুল আবার সুন্দর ঝলমলে হয়ে উঠবে।
৪. অ্যালোভেরা আর দইয়ের প্যাক
অ্যালোভেরা নিজেই চুলের জন্য খুব উপকারী। তার উপর এর সঙ্গে যুক্ত হবে দই।
এই দুই উপাদানই চুলের জন্য খুব ভালো। চুলের ড্যামেজ ঠিক করে চুল করে তুলবে মোলায়েম।
অ্যালোভেরা স্ক্যাল্প ঠাণ্ডাও রাখে। আর এই গরমে তো মাথা একটু ঠাণ্ডা থাকলে আর কি চাই বলুন!
উপকরণ
৩ চামচ অ্যালোভেরা জেল, ২ চামচ দই।
পদ্ধতি
- প্রথমে একটি পাত্রে দই নিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিন।
- এবার দইয়ের মধ্যে অ্যালোভেরা জেল নিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন।
- এই মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে রাখুন ১ ঘণ্টা মতো।
- তারপর চুল মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।
এই প্যাক ব্যবহার করতে হবে নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে, অন্তত এক বার। তাহলেই উপকার পাওয়া যাবে।
৫. কলা আর মেয়োনিজের প্যাক
কলায় আছে প্রচুর ভিটামিন এ। ড্যামেজ হওয়া চুলকে সহজেই ভিটামিন এ ভালো করে।
আর কলা ন্যাচারাল কন্ডিশনার হিসেবেও কাজ করে।
পাশাপাশি মেয়োনিজ চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখে।
উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এই হেয়ার প্যাকটি।
উপকরণ
১টি বড় কলা, ২ চামচ সাধারণ ফ্ল্যাভার ছাড়া মেয়োনিজ।
পদ্ধতি
- কলা একটি পাত্রে নিয়ে চটকে নিন ভালো করে।
- এর মধ্যে এবার মেয়োনিজ দিয়ে ভালো করে প্যাক বানিয়ে নিন।
- সেই প্যাক চুলে ব্যবহার করুন আর রেখে দিন ১৫ মিনিট।
- ভালো করে শ্যাম্পু করে নিন। সঙ্গে সঙ্গেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
এটিও সপ্তাহে এক দিন অন্তত করা জরুরী।
৬. অ্যাভোকাডো আর মধুর প্যাক
এই দুটি উপাদান একসঙ্গে জাস্ট ফাটাফাটি।
অ্যাভোকাডো যেখানে চুল ভিতর থেকে ভালো করবে, শক্তি ফিরিয়ে আনবে, সেখানে মধু আনবে চুলে সাইন আর করবে উজ্জ্বল, ময়েশ্চারাইজড।
চুলকে ভেতর থেকে পুষ্ট করে চুলের স্পেশাল কেয়ার নেয়।
উপকরণ
- অর্ধেক অ্যাভোকাডো
- ২ চামচ মধু
পদ্ধতি
- অ্যাভোকাডো থেকে বীজ বের করে আগে মিক্সিতে পেস্ট করে নিন।
- এই পেস্টের মধ্যে ব্যবহার করুন মধু আর একটি ঘন মিশ্রণ বানান।
- এই মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে রেখে দিন ৩০ মিনিট।
- ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন।
সপ্তাহে দু দিন করলে এক মাসের মধ্যে উপকার পাবেন।
উপরের এই কয়েকটি পদ্ধতির মধ্যে যে কোনও একটি বা দুটি আপনি আপনার সুবিধে মতো ব্যবহার করুন।
আর দেখুন ঘরোয়া পদ্ধতিতে কীভাবে আপনার ড্যামেজ চুল আবার সুন্দর, ঝলমলে হয়ে ওঠে।
নিয়মিত ব্যবহার করে দেখুন একমাসে ভালো রেজাল্ট পাবেন।