আমাদের ইয়াং জেনারেশনদের মাঝে চুল কালার করা খুবই জনপ্রিয়।
এটা খুবই জনপ্রিয় একটি ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছে।
কেউ কেউ পুরো চুল রাঙিয়ে তুলছে বিভিন্ন কালারে, কেওবা করছে কিছু অংশ হাইলাইট।
কিন্তু কালার করার ট্রেন্ড চালু রয়েছে।
আমাদের চুলের সাজের উপর আমাদের মুখের সৌন্দর্য নির্ভর করে অনেকাংশেই।
আমাদের চুলের সাজের উপর আমাদের চেহারার পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
আর চুলের রঙ আরো আকর্ষণীয় করে তোলে আমাদের সৌন্দর্যকে।
কিন্তু সমস্যা হলো, অনেকে চুলে কালার করতে গিয়েই বাধিয়ে ফেলছে নানান সমস্যা।
বাজারের বিভিন্ন জাতের প্রোডাক্টস রয়েছে যা কেমিক্যাল বেইজড।
এই কেমিক্যালের প্রভাবে আমাদের চুল নষ্ট হয়ে যায়।
মাঝে মাঝে সাদাও হয়ে যায়। আর কালার করতে অনেক সময় অনেকেই ব্লিচ করে।
সেটা চুলের স্বাস্থ্য আরো খারাপ করে ফেলে।
তাছাড়াও কেমিক্যাল জাতীয় প্রোডাক্ট ব্যবহারের পরে চুলের নিতে হয় এক্সট্রা কেয়ার।
তাই চুলের কালারের জন্য প্রাকৃতিক উপায় একমাত্র ভরসা।
প্রাকৃতিক উপায়ে কালার করলে বিভিন্ন ডাই কিংবা হেয়ার কালারের মতো পারফেক্ট রঙ দিতে হয়তো পারবে না।
কিন্তু এতে চুল ড্যামেজ হয় না। চুল থাকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও শাইনি।
আর ভিতর থেকেও মজবুত হবে।
প্রাকৃতিক উপায়ে চুল কালার করার উপায়
১) মেহেদি গুঁড়া ও কফি পাওডার প্যাক
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- মেহেদি গুঁড়া
- আখরোট গাছের বাকল বা ছাল
- কফি গুঁড়া
- শিকাকাই গুঁড়া
- পানি
যেভাবে তৈরি করবেন
- প্রথমে একটি বড় বাটি নিন।
এতে একটি আখরোটের বাকল নিন।
আখরোটের বাকল যেকোনো সুপার শপেই পাওয়া যাবে ওয়ালনাট ব্রাঞ্চ হিসেবে।
এবার বাকলটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন ২/৩ মিনিট।
- ২/৩ মিনিট ভিজানোর পর দেখতে পাবেন পানির রঙ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।
কিছুটা বার্গ্যান্ডি রঙ আসছে।
- তখনই এর মধ্যে অ্যাড করুন মেহেদি গুড়া।
- ভালোভাবে নেড়ে চেড়ে মিক্স করে নিন। পানি একবারেই ঢালবেন না।
অল্প অল্প করে পরিমাণ বুঝে অ্যাড করতে থাকুন।
- মিক্স করা হয়ে গেলে এর মধ্যে অ্যাড করুন মেহেদির অর্ধেক পরিমাণ কফি গুড়া।
এবার এটা ভালোভাবে মিক্স করে নিন।
- শেষ উপকরণ শিকাকাই গুড়া অ্যাড করে নিন ৩/৪ টেবিলচামচ।
- সবগুলো উপকরণ একসাথে ভালোভাবে মিক্স করে নিন।
- ভালোভাবে মিক্সিং হলে সারারাত কিংবা ৬ ঘন্টার জন্য এইভাবে রেখে দিতে হবে।
একটু ঢাকনার সাহায্যে ঢেকে রেখে দিন।
ব্যবহার করার উপায়
৬ ঘন্টা বা সারারাত রেখে দেয়ার পর এই প্যাকটি এখন অ্যাপ্লাই করার জন্য রেডি।
- আপনি প্রথমে চুল শ্যাম্পু করে নিন।
কারণ পরিষ্কার চুল ও ত্বকে অ্যাপ্লাই করতে হবে।
- মাথার ত্বকে বা চুলে যেনো কোনরকম ময়লা বা তেল না থাকে সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
- এবার চুল ভালোভাবে আঁচড়ে নিন। ভাগ ভাগ করে নিন।
এবার প্রত্যেক ভাগে ভাগে একটি ব্রাশ বা হাতের সাহায্যে অ্যাপ্লাই করুন।
- পুরো স্ক্যাল্পে দেয়া হলে চুলের নিচে লাগিয়ে ফেলুন।
- সম্পূর্ণ মাথা ও চুলে অ্যাপ্লাই করা হলে একটি শাওয়ার ক্যাপ বা পলিব্যাগ দিয়ে মাথা ঢেকে ফেলুন।
- ২ ঘন্টার জন্য রেখে দিন। তারপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
একটি মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন।
তারপর অবশ্যই কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
চুলে ব্রাউনিশ আভা পেয়ে যাবেন।
কিন্তু ভালো রেজাল্টের জন্য সপ্তাহে অন্তত একবার অ্যাপ্লাই করুন।
৩/৪ বারেই কাঙ্ক্ষিত কালার দেখতে পাবেন।
২) মেহেদি গুড়া ও বিট রুট প্যাক
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- মেহেদি গুঁড়া
- বিট রুট
- পানি
যেভাবে তৈরি করবেন
- একটি বিট রুট অর্ধেক পরিমাণ নিন।
এটা কেটে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন খোসা সহ।
- একটি পাত্রে এক লিটার পানি নিন।
তাতে বিট রুট টুকরোগুলো ছেড়ে দিন। এবার সেদ্ধ হতে দিন।
- কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যাবে পানির রঙ লাল হয়ে গিয়েছে।
পাঁচ মিনিট রেখে জ্বাল দিন আরো কিছুক্ষণ।
তারপর আঁচ বন্ধ করে দিন।
- পাত্রটি নামিয়ে নিয়ে আসুন। একটু ঠান্ডা হতে দিন।
ঠান্ডা হলে বিট রুট টুকরোগুলোকে ছেকে আলাদা করে নিন পানি থেকে।
- এবার এই লাল বিট রুটের পানির সাথে মেহেদি গুড়া অ্যাড করুন।
খুব ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন।
- ভালোভাবে মিক্স করে নিন। ২/৩ ঘন্টা এইভাবে রেখে দিন।
আর সারারাত রাখতে পারলে আরো ভালো।
ব্যবহার করার উপায়
- আগে থেকে তেল দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। পরিষ্কার মাথাতেই অ্যাপ্লাই করুন।
- একটি ব্রাশ দিয়ে চুলে ভাগ ভাগ করে লাগিয়ে নিন।
- এবার একটি শাওয়ার ক্যাপ বা পলিব্যাগ দিয়ে মাথা মুড়িয়ে নিন।
- ২/৩ ঘন্টা রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
সাথে অবশ্যই কন্ডিশনার করতে ভুলবেন না।
উপকারিতা
মেহেদি চুলের যত্নে খুবই উপকারী।
চুলের খুশকি দূর করে প্রাকৃতিক ভাবে কালার এনে দেয় এই মেহেদি।
তাছাড়া রুক্ষতা, শুষ্কতা, অকালপক্বতা দূর করে মেহেদি খুবই কার্যকরী।
এর সঙ্গে অ্যাড করা অন্যান্য উপাদানও আমাদের চুলের জন্য খুবই উপকারী।
চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত করতেও সাহায্য করে।