Search
Close this search box.

ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল পড়া বন্ধের উপায়

চুল পড়া আজকাল একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। কাপড়ে, মেঝেতে, বালিশে, বাথরুমে সব জায়গায় শুধু চুল পড়ে থাকতে দেখা যায়।

সমস্যা বেড়ে মাথা টাক হয়ে যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু এর সমাধান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আমরা চুল পড়ার সমস্যা থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন ধরণের কেমিক্যাল জাতীয় প্রোডাক্ট ব্যবহার করে থাকি।

যা দিন শেষে চুল পড়া কিছুটা কমালেও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। 

অল্প বয়সে চুল পড়ে যাওয়া একটা দুঃস্বপ্ন।

চুল পাতলা হয়ে পরবর্তিতে টাক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তাই কেমিক্যাল জাতীয় প্রোডাক্ট এর ভরসায় না থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে এর সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। 

আমাদের রান্না ঘরে পড়ে থাকা কিছু উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমেই আমরা আমাদের চুল পড়া রোধ করতে পারি। আজকে সেটাই জানানো হবে। 

চুল পড়ার কারণ

  • পলিউশন: আমরা এমন জায়গায় বসবাস করি যেখানে চারপাশেই পলিউশন।
    গাড়ি ও অন্যান্য কলকারখানার ধোয়া বাতাসে মিশে দূষিত করে।
    যা আমাদের চুলের উপর বাজে প্রভাব ফেলে তা নষ্ট করে দেয়। 
  • দুশ্চিন্তা: সারাদিন কর্মব্যস্ততার কারণে নিজের খেয়াল রাখা হয় না।
    ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে যায় কাজ ও পড়াশোনার চাপে।
    এমন মানসিক দুশ্চিন্তা ও চাপের কারণে চুল পড়া বৃদ্ধি পায়। 
  • পুষ্টিগুণের ঘাটতি: আমাদের চুলের জন্য ভিটামিন ও মিনারেলস দরকার হয়।
    চুল বা আমাদের মাথার ত্বক ঠিক মতো খাবার না পেলে এই চুল পড়া বাড়তে থাকে। 
  • থাইরয়েড সমস্যা: থাইরয়েড সমস্যা যাদের, চুল পড়ার সমস্যা তাদের বেশি। 
  • হরমোনাল চেইঞ্জ: হরমোনের পরিবর্তনের ফলে সেটা চুলের উপর প্রভাব ফেলে।
    যেমন বয়ঃসন্ধিকাল, প্রেগনেন্সি, বার্থ কন্ট্রোল পিল নেয়া ইত্যাদি চুল পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। 

ঘরোয়া উপায়ে চুল পড়া বন্ধ করবেন যেভাবে

১. ডিমের তৈরি হেয়ার মাস্ক 

ডিমের গন্ধের কারণে এড়িয়ে যাবেন না। ডিম অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর।

এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, জিংক, সালফার ও ফরফরাস।
এই উপাদান গুলো চুল পড়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে চুল পড়া কমায়।

তাছাড়াও এটা আগা ফাটা বন্ধ করে চুলের গোড়া শক্ত করে তোলে। 

রেগুলার ব্যবহারের মাধ্যমে এর গন্ধটাও খুব শীঘ্রই সহ্য হয়ে যাবে।

তার সাথে সাথে মনেও শান্তি আসবে চুল পড়া কমে যাওয়ার। 

উপকরণ 

  • ডিম
  • অলিভ অয়েল 
  • মধু
  • হেয়ার ব্রাশ

যেভাবে ডিমের হেয়ার মাস্ক তৈরি করবেন

  • প্রথমেই একটি বাটিতে একটি আস্ত ডিম ভেঙে ফেটিয়ে নিন। 
  • তাতে এক টেবিলচামচ অলিভ অয়েল ও মধু অ্যাড করুন। 
  • সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিক্স করুন। ঘন পেস্ট তৈরী করুন।
  • একটি ব্রাশের সাহায্যে চুলের গোড়া ও আগায় ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করুন। 
  • অ্যাপ্লাই করার পর কিছুক্ষণ রেখে দিন এইভাবেই। ২৫/৩০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। 

এইভাবে সপ্তাহে ১/২ বার ব্যবহার করতে হবে। 

২. চুল পড়া রোধে নারকেল তেলের ম্যাসাজ

নারকেল তেল পুষ্টিগুনে ভরপুর। নারকেল তেলে রয়েছে প্রয়োজনীয় ফ্যাট ও প্রোটিন।

এই উপাদান চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে।

তাছাড়া এই তেলে পাওয়া যায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও পেনিফেনোলস।

এ ছাড়া নারকেল তেলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদানও থাকে। 

উপকরণ 

  • মেথি বীজ
  • নারকেল তেল 

প্রস্তুত প্রণালী 

  • প্রথমে একটি প্যানে এক টেবিলচামচ মেথি বীজ নিবেন। 
  • তাতে এককাপ নারকেল তেল অ্যাড করুন। এবার চুলায় জ্বাল দিন।
  • কমপক্ষে পাঁচ মিনিট চুলায় জ্বাল দিন। চুলার আঁচ মিডিয়াম টু লো তাপমাত্রায় রেখে জ্বাল দিতে হবে। 
  • পাঁচ মিনিট পর নামিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। 

এবার এই মেথি যুক্ত তেল মাথার ত্বক ও চুলে ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে।

কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে ওভারনাইট রেখে দিন।

সকালে ধুয়ে ফেলবেন। এইভাবে একদিন পরপর বা দুইদিন পর পর অ্যাপ্লাই কর‍তে হবে। 

৩. যষ্টি মধু গুঁড়া

যষ্টি মধু গুঁড়া ত্বকের পাশাপাশি চুলের জন্যেও খুব উপকারী।

এর পুষ্টিগুণ আমাদের চুল পড়া রোধ করে চুলকে ন্যারিশ করতে সাহায্য করে।

উপকরণ 

  • কাঁচা দুধ
  • জাফরান
  • যষ্টি মধু গুঁড়া

প্রস্তুত প্রণালী 

  • যষ্টি মধু গুঁড়া এক টেবিলচামচ নিন। এর চার ভাগের এক ভাগ জাফরান অ্যাড করুন। 
  • এর সাথে এক কাপ কাঁচা দুধ অ্যাড করে ভালোভাবে মিক্স করুন। 
  • ভালোভাবে মিক্স করে আপনার মাথার ত্বকে ও চুলে অ্যাপ্লাই করুন।
  • এই প্যাকটি মাথায় সারা রাতের জন্য রেখে দিন। 

সকালে উঠে ধুয়ে ফেলবেন। এইভাবে সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করতে হবে।

চুল পড়া বন্ধ হবে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। 

৪. গ্রীন টি 

গ্রীন টি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। গ্রীন টি ব্যবহারে চুল পড়া রোধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

এটা চুল লম্বা করতেও সাহায্য করে। 

উপকরণ 

  • গ্রীন টি 

প্রস্তুত প্রণালী 

  • চুলের লেন্থ অনুযায়ী একটু প্যানে পানি নিয়ে নিন। 
  • তাতে ৩/৪ টেবিলচামচ গ্রীন টি অ্যাড করুন। 
  • মিশ্রণটি ভালোভাবে জ্বাল দিয়ে রঙ গাঢ় হতে সময় দিন। 
  • জ্বাল দেয়া হয়ে গেলে প্যান নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন। 

এই পানি আপনার মাথার ত্বকে আলতো ভাবে ম্যাসাজ করে নিন।

সম্পূর্ণ মাথার ত্বকে ও চুলে ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করে নিন। কিছুক্ষণের মধ্যে ধুয়ে ফেলুন। 

৫. আমলকী ও লেবুর প্যাক

আমলকী যেমন সহজলভ্য, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর।

ভিটামিন-সি উপাদানে ভরপুর আমলকী ত্বক থেকে চুল সব কিছুর পক্ষে দারুণ উপকারী।

চুলের স্বাস্থ্যরক্ষায় আমলকীর ব্যবহার তো সকলের জানা। 

উপকরণ 

  • লেবু
  • আমলকী

প্রস্তুত প্রণালী 

  • একটি হামান দিস্তা বা শিল পাটায় কয়েকটি আমলকী থেতো করে নিন।
    এর সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস অ্যাড করুন। 
  • দুটি উপাদান ভালোভাবে মিক্স করে নিন।
  • এবার আপনার চুল ভাগ করে নিয়ে মিক্সারটি ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করুন। 

সপ্তাহে ১/২ বার এই প্যাকটি ব্যবহার করতে হবে। 

চুল পড়া কন্ট্রোল করার কিছু টিপস

  • শ্যাম্পু: আপনার মাথার ত্বক অনুযায়ী একটি ভালো শ্যাম্পু চুজ করা প্রয়োজন। তাছাড়াও আপনার ত্বক অনুযায়ী শ্যাম্পু করবেন।
    আপনার মাথার ত্বক বেশি ড্রাই হলে শ্যাম্পু করার পরিমাণ কমিয়ে সপ্তাহে ২/৪ বার করতে পারেন।
    এর চেয়ে বেশি শ্যাম্পু করলে ত্বক ময়েশ্চারাইজড থাকবে না ফলে চুল পড়া বেড়ে যাবে। 

তৈলাক্ত ত্বকের জন্যে রেগুলার শ্যাম্পু করতে হবে। তা না হলে অতিরিক্ত তেল জমে চুল পড়া বৃদ্ধি করবে। 

  • কন্ডিশনার: আমরা অনেকেই কন্ডিশনারকে গুরুত্ব দেই না।
    কিন্তু শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার না করলে চুল রুক্ষ হয়ে যায়।
    কন্ডিশনারে উপস্থিত অ্যামাইনো এসিড চুল ময়েশ্চারাইজ করে।
    যার ফলে চুল ড্যামেজ হওয়া থেকে রক্ষা পায় ও চুল পড়া বন্ধ হয়। 
  • ডায়েট: আপনার ডায়েট চার্টে প্রোটিন ও মিনারেলস এর পরিমাণ কম থাকলে তা চুল পড়া বৃদ্ধি করে।
    চুলের পুষ্টির যোগান দিতে আমাদের ডায়েটে অ্যাড করতে হবে প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলস যুক্ত খাবার।
    তাতে চুল তার খাবার পাবে ও চুল পড়া বন্ধ হবে।