চুলের যত্ন সম্পর্কে আপনি হয়তো অনেক কিছুই জানেন।
তবে আপনি এটা জেনে অবাক হবেন যে আপনার চুলকে স্বাস্থ্যকর এবং সর্বোত্তম রাখার উপায় সম্পর্কে এক টন অন্ধবিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে।
চুল নিয়ে প্রচলিত সকল অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্তি পেতে পুরো লেখাটি পড়ুন।
ঘন ঘন চুল কাটলে চুল দ্রুত বাড়ে?
প্রতি ৬-৮ সপ্তাহ পর পর চুল কাটলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং ড্যামেজ বা ক্ষতি প্রতিরোধ হয়।
কিন্তু চুল দ্রুত লম্বা হয় এমন কিছুর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
চুল তো মাথার তালু থেকে বৃদ্ধি পায়, চুলের আগা থেকে নয়।
কিছুদিন পর পরই চুলের জন্য ব্যবহৃত প্রসাধনীর ব্র্যান্ড পরিবর্তন করা ভালো?
বার বার প্রসাধনীর ব্র্যান্ড পরিবর্তন করার সাথে ভালো বা খারাপ চুলের কোনো সম্পর্ক এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি।
বরং রূপবিশেষজ্ঞরা চুলের ধরন বুঝে ভালো একটি ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু বা হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
তাই সব সময় চুলের সাথে মানানসই প্রোডাক্ট ব্যবহার করাই উচিত।
বিভিন্ন কারণ যেমন-গর্ভাবস্থায়, মেনোপজ, দুশ্চিন্তা বা হতাশা ইত্যাদি হলে চুলের ধরনে পরিবর্তন আসতে পারে।
তখন পরিবর্তন বুঝে প্রসাধনীও পরিবর্তন করে নিন।
ঠান্ডা পানিতে চুল ধুলে চুল হবে শাইনি?
গবেষকরা বলছেন মাথার ত্বক বা চুল পরিষ্কার বা চুলের টেক্সচার এর সাথে পানির তাপমাত্রার কোনও সম্পর্ক নেই।
তবে, কন্ডিশনিং চুলের স্বাস্থ্য ও শাইন রক্ষায় কাজ করতে পারে।
আপনার চুল চকচকে এবং ময়েশ্চারাইজড রাখতে লিভিং কন্ডিশনার ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
হেয়ার কালার চুলের ক্ষতি করে?
হেয়ার স্টাইলিং যেকোনো পণ্যই আমাদের চুলের জন্য ক্ষতিকারক।
হোক সে হেয়ার ড্রায়ার কিংবা চুল সোজা করার ওষুধ বা কৃত্রিম রং যদি না চুলে হেয়ার ফোম, বা থার্মাল প্রোটেকশন দেয় এমন বিভিন্ন কসমেটিক্স পণ্য ব্যবহার করেন।
সুতরাং এটি সম্পূর্ণরূপে নির্দিষ্ট হেয়ার প্রোডাক্টে অবস্হিত রাসায়নিক উপাদানের উপর নির্ভর করে।
আবার প্রত্যেকের মাথার ত্বক ভিন্ন, তাই হেয়ার কালার সৃষ্ট সমস্যা আপনার নাই হতে পারে।
চুলের স্প্লিট হেন্ডস বা আগা ফাটা ঠিক হওয়া সম্ভব?
আগাফাটা চুল যত্নের অভাবে নিস্তেজ, শুকনো এবং জট হয়ে যায়।
ফেটে যাওয়ার পরে স্প্লিট প্রান্তগুলি মেরামত করা যায় না এবং আগের অবস্থায় কখনোই ফেরত যাওয়া সম্ভব নয়।
কারণ: আপনার চুলের প্রতিরক্ষামূলক বাইরের স্তরের কিউটিকল ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটা ট্রিট করা অসম্ভব।
তখন একমাত্র সমাধান হল নিয়মিত চুল ট্রিম করা।
খুশকি সংক্রামক বা ছোঁয়াচে?
সাধারণভাবেই মাথার ত্বক থেকে শুষ্ক চামড়া উঠে।
এর পরিমাণ যখন বেশি হয়ে যায়, তখনই সেটা খুশকির যন্ত্রণায় পরিণত হয়।
মাথার তালুতে বৈদ্যুতিক তারের মতো ছড়িয়ে আছে অসংখ্য স্নায়ুপেশী ও ঘর্মগ্রন্থি।
ধুলাবালির কারণে মাথার ঘর্মগ্রন্থির মুখগুলো বন্ধ হয়ে গেলে খুশকি ও ফুসকুড়ি দেখা যায়।
মরা চামড়া উঠে যাওয়াকে খুশকি বলা হলেও এর পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে।
ধুলাবালি, অপরিচ্ছন্ন থাকা ও নিয়মিত গোসল না করার ফলে চর্মরোগ ও খুশকি হতে পারে।
মূলত এই কারণেই খুশকিতে আক্রান্তদের ক্যাপ বা চিরুনি ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়।
তার মানে এই নয় যে খুশকি সংক্রামক।
চুল ধোয়ার পর তোয়ালে দিয়ে মোছা?
চুল ধোয়ার পর তোয়ালে দিয়ে খুব ভালোভাবে মুছতে হবে এমন ধারণাও প্রচলিত আছে।
তবে এই অভ্যাসটি চুলের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তোয়ালে চুলের জন্য খুবই রুক্ষ।
যা ব্যবহারে চুল দুর্বল হয়ে ভেঙে যায়। তাই পানি মোছার ক্ষেত্রে চুলে তোয়ালে চেপে পানি বের করে ফেলা উচিত।
এরপর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে অতিরিক্ত পানি ঝেরে ফেললে চুলের ক্ষতি হয় না।