মজবুত সুন্দর চুল কারই না ভালো লাগে বলুন! কিন্তু সকলের যে চুল সেইরকম মজবুত থাকে তা তো নয়।
বেশির ভাগ মানুষের সমস্যা হল চুল পড়ে যাওয়া, চুলের ডগা ভাঙা, অকালপক্কতা এইসব।
আর এই সবই হলো দুর্বল চুলের লক্ষণ। কিন্তু চুল মজবুত করবেন কী করে?
কিছু সাধারণ অথচ কার্যকরী ঘরোয়া উপায়ের মাধ্যমে কয়েকদিনের মধ্যেই চুল মজবুত হয়ে উঠবে ন্যাচারালি।
১. চুলে বেশি হিট দেয়া যাবে না
যদিও চুলে হিট দেওয়া খুব যে একটা ভালো কাজ তা নয়। কিন্তু, স্টাইল না করে আমরা থাকতে পারব না, আর স্টাইল করতে গেলে চুলে খানিক হিট দেওয়া দরকার।
এছাড়া অনেকে স্নান করে ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নেন।
সাধারণ ভাবে চুল শুকিয়ে নেওয়ার সময় অনেকেরই থাকে না। তাহলে কী করবেন?
মাথার স্ক্যাল্প থেকে ৬ ইঞ্চি নিচের থেকে এই হিট অ্যাপ্লাই করুন। যাঁদের চুলের ডগা ভাঙার সমস্যা আছে, শুষ্ক চুল যাঁদের, তাঁরা কিন্তু কম ব্যবহার করবেন হিট।
হিট ব্যবহার করার সময়ে কখনই এক জায়গায় বেশিক্ষণ হিট দিয়ে রাখবেন না, সমস্ত চুলে ঘোরাবেন।
২. ভিটামিন খুবই দরকার
চুল ভিতর থেকে ভালো রাখতে ভিটামিনের বিকল্প নেই। নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, বি, সি, ডি আর ভিটামিন ই খুবই ভালো চুলের জন্য।
এবার তাহলে আপনাকে এই ভিটামিন রয়েছে এমন খাবার খেতে হবে।
মাছ, ডিম, পালং শাক, আমন্ড, মুসুরির ডাল, কুমড়ো, বাদাম এই সব থেকে আপনি ভিটামিন পেয়ে যাবেন।
ভিটামিন ডি’র জন্য রোদের সংস্পর্শে ৩০ মিনিট থাকতেই হবে।
৩. শ্যাম্পুর ব্যবহার জানুন
শ্যাম্পু যেটি ব্যবহার করছেন সেটির উপকরণ ঠিক মতো দেখছেন তো?
অনেক সময়ে শ্যাম্পুতে এমন কিছু রাসায়নিক দেওয়া থাকে যার থেকে চুলের ক্ষতি হয় বেশি ভালো হওয়ার থেকে।
মাইল্ড শ্যাম্পু বা বেবি শ্যাম্পু সবচেয়ে ভালো।
খুব তেলতেলে চুল না হলে শ্যাম্পু সপ্তাহে তিন দিনের বেশি করা ঠিক হবে না।
এতে চুলের ন্যাচারাল অয়েল শুকিয়ে যাবে। ফলে চুল ড্রাই হয়ে যাবে।
আর শ্যাম্পু করার সময় অবশ্যই খুব বেশি করে শ্যাম্পু নেবেন না।
হাল্কা হাতে ম্যাসাজ করবেন স্ক্যাল্পে। তারপর চুল ধুয়ে নেবেন।
৪. তেল দিয়ে ম্যাসাজ দরকার
চুলের খাদ্য তেল। স্ক্যাল্পে ভালো করে রক্ত সঞ্চালন করানোর জন্য তেল দিয়ে মাথায় ভালো করে ম্যাসাজ মাস্ট।
গবেষণা বলছে, যদি আপনি রোজ ৪ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করেন মাথায়, তাহলে চুলের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার পরিমাণ দুই গুণ বেড়ে যায়।
আঙুলের ডগা দিয়ে হাল্কা প্রেসার দিয়ে দিয়ে ম্যাসাজ করুন স্ক্যাল্পে।
স্নানের সময় ভিজে চুলে শ্যাম্পু করার আগেও এই কাজ করা যেতে পারে। তেলের ক্ষেত্রেও আপনি নারকেল ছাড়াও আমন্ড, ভৃঙ্গরাজ এই সব তেলও হাল্কা গরম করে দিতে পারেন।
৫. খাবারে রাখুন প্রোটিন
আমাদের চুল কিন্তু বিশেষ এক ধরণের প্রোটিন। চুলকে মজবুত রাখতে তাই প্রোটিন রোজ শরীরে দিতেই হবে।
আপনার ডায়েটে পরিমাণ মতো প্রোটিন রাখুন। এর জন্য রোজ ডিম তো খেতেই হবে।
সঙ্গে রাখতে হবে বাদাম। যাঁদের রক্তচাপের সমস্যা নেই তাঁরা নির্দিষ্ট পরিমাণে মাংস খেতে পারেন। এছাড়া পালং শাক, বিনস এই সবও খুব উপকারী।
৬. ডিমের কুসুমের মাস্ক ব্যবহার
খাওয়ার পাশাপাশি চুলে এই মাস্ক ব্যবহার করলে বিশেষ ফল পাওয়া যায়। ডিমের কুসুমে আছে ভিটামিন এ, ডি আর ফোলেট।
উপকরণ
তিনটে ডিমের কুসুম, অল্প গরম নারকেল তেল।
পদ্ধতি
ডিমের কুসুম আর গরম নারকেল তেল একসঙ্গে আগে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
এই মিশ্রণ ভালো করে চুলে, স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন।
এবার মাথায় একটা শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে অপেক্ষা করুন ১৫ মিনিটের জন্য।
ঠাণ্ডা জলে মাথা ধুয়ে নিন। এটি সপ্তাহে এক দিন করে অবশ্যই করুন।
৭. চুলে দিন ঠাণ্ডা জল
অতিরিক্ত গরম জল চুল খারাপ করে দেয়। অতিরিক্ত গরম জল চুলের কিউটিকল নষ্ট করে।
তার সঙ্গে চুলের গোড়াও খারাপ করে দেয়। এর ফলে চুল দুর্বল হয়ে পড়ে যায়।
তাই ঠাণ্ডা জল ব্যবহার করুন।
ঠাণ্ডা জল একান্তই মাথায় দিতে না পারলে উষ্ণ গরম জল দিন চুলে। এতে চুলের ক্ষতি হবে না।
৮. অ্যালোভেরার আশ্চর্য উপকারিতা
অ্যালোভেরায় আছে ভিটামিন এ, সি আর ই। অ্যালোভেরা চুলের সেল মজবুত করতে সাহায্য করে।
এর সঙ্গে চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। তাই বাড়িতে অ্যালোভেরা গাছ থাকলে সেখান থেকে রস নিয়ে নিন।
না হলে ভালো কোনও দোকান থেকে অ্যালোভেরা জেল কিনে নিন।
শুধু এই জেল চুলের মধ্যে মাখিয়ে রেখে দিন মাস্কের মতো।
তারপর ৩০ মিনিট পর ধুয়ে নিন। মাইল্ড শ্যাম্পু করে নিতে পারেন।
আমাদের আজকের ব্যস্ত দিনে এর মধ্যে থেকে যে কোনও একটা কিন্তু ব্যবহার করাই যায়।
শুধু কয়েক সপ্তাহ সময় দিন আপনার চুলকে। আপনার চুল কথা বলবে।