এবারের গ্রীষ্মকাল রেকর্ড পর্যায়ের প্রচন্ড গরমের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তার উপর দেশে হাজির হয়েছে করোনার মতো মহামারীর দ্বিতীয় ফেইজ।
এই অবস্থায় একদিকে প্রচন্ড গরম, অন্যদিকে মহামারি করোনার হাত থেকে বাঁচতে বাড়তি সচেতনতা- এ দুই সামলিয়ে প্রতিদিনের রুটিনে শরীরকে ফিট রাখতে আমরা বেশ হিমশিম খাচ্ছি।
গ্ল্যামোজেন তার পাঠকদের এই হিমিশিম থেকে বাঁচাতে এবং সঠিক-পূর্ণ সায়েন্টিফিক ওয়েতে গাইড করতে নিয়েছে , গ্ল্যামোজেন স্পেশাল হেলথ টিপস।
প্রতিদিন পর্যায়ক্রমে নানা পর্বের মাধ্যমে গ্ল্যামোজেন পাঠকদের সাথে শেয়ার করছে এসব স্পেশাল হেলথ টিপস।
এসব অনুসরণ করলে, শুধুমাত্র শারীরিকভাবেই নয়; বরং মানসিক, পারিবারিক এবং সামাজিকভাবেও এই সিজনে আপনি থাকবেন আপনার পরিবার সহ সুস্থ।
আর যখন আপনি থাকবেন সকল দিক থেকে সুস্থ, তখনই তো বিকশিত হবে আপনার ভেতরের সৌন্দর্যটা বাইরের চেহারায় গ্লো করে!
আর এই ব্যাপারটাকে ফোকাস করেই আজকের সকালের নাস্তা বা ব্রেকফাস্ট এভোয়েড করা কোনভাবেই যাবে না।
কারণ এতে হতে পারে মারাত্মক সব ক্ষতি।
সকালের নাস্তা কেন এভোয়েড করছে অনেকে?
আধুনিক যুগের সুবিধাগুলোর সাথে যে কয়টা অভিশাপ এই মানব জীবণে এসেছে, তার মধ্যে ভীষণ দুশ্চিন্তার একটা হল- ওবেসিটি বা মোটা হওয়ার প্রবণতা।
বর্তমান যুগে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যে উপাদান গুলো ব্যবহার করা হয়, তার ৯০% এখন হাইব্রিড পদ্ধতিতে বানানো হয়।
অবশ্য তা ব্যবহার না করেও উপায় নেই।
এই মারাত্মকভাবে বিস্ফোরিত ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার নিত্যদিনের পর্যাপ্ত খাদ্য চাহিদা মিটাতে, এই হাইব্রিড খাবারের কোন অল্টারনেট আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।
এখন এই হাইব্রিড খাদ্যের হরমোনাল তারতম্যের জন্য, এসব খাদ্য গ্রহণ করায়, মানুষ সহজেই মোটা হতে থাকে।
তার উপর, আধুনিক যুগে, অধিকাংশ কাজের ক্ষেত্রে শারীরিক পরিশ্রম ধীরে ধীরে কমে, মেধার পরিশ্রমের দিকে যাচ্ছে টেকনলজি।
ক্রমে মেশিনরা দখল করে নিচ্ছে, শারীরিক কাজের স্থানগুলো।
মানুষের ভাগে পড়েছে কেবল মেশিনগুলোকে কয়েকটা সহজ পদ্ধতিতে চালানোর দায়িত্ব।
যেহেতু শারীরিক পরিশ্রম হচ্ছে না তেমন।
মানুষ আরও মোটা হয়ে যাচ্ছে পর্যাপ্ত ক্যালরি বার্ন না হওয়ায়।
আবার প্রতিদিন দীর্ঘসময়ে অফিস এবং নানা বাড়তি কাজে এংগেইজ থাকা হচ্ছে।
সেভাবে কেউই পারছে না এক্সট্রা ঘাম-ঝরানো কাজ করতে, যা শরীরকে ঠিক রাখতে সাহায্য করতো।
অতঃপর এক্সট্রিম ডায়েট
সবচেয়ে যে সহজ পন্থায় মানুষ শরীরকে ঠিক রাখার চেষ্টা করছে, আর তা হল এক্ট্রিম ডায়েট করা।
যারা অভিজ্ঞ নয়, স্বাস্থ্যকর জীবন সম্পর্কে অজ্ঞ, তারা না খেয়েই চেষ্টা করছে শরীরকে ব্যালেন্সে রাখতে।
এর প্রভাব পড়ছে সকালের ব্রেকফাস্টের উপর।
অনেকে ভেবে নিচ্ছে, সকালে কিছু না খেলে, একটা দীর্ঘকালীন ইন্টারমিডিয়েট ফাস্টিং ডায়েট হয়ে যাবে।
এর জন্য, জেনে বুঝেই তারা খাচ্ছে না সকালের প্রয়োজনীয় খাবার।
দেরীতে ঘুমোতে যাওয়াও একটা কারণ…
আধুনিক যুগের এই সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রেন্ডিং সমাজে, রাতে বেশ দেরী করে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে বেশ বেলা করে উঠতে অভ্যস্ত মানুষের সংখ্যাই বেশি।
তার উপর মহামারি করোনার লকডাউনে, বাইরে যাওয়া আসার ব্যাপারটা যেহেতু নিয়মিত নয়।
ফলে রাত জেগে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে সময় কাটিয়ে সকালে বেশ বেলা করে ঘুম থেকে জেগে পরাটাকেই একতা অলিখিত রুটিন হয়ে গেছে।
এর প্রভাব পড়ছে ব্রেকফাস্টের উপরেও।
দেরীতে, রাত ১-২ টার দিকে ঘুমাte যাচ্ছে, কিংবা একদমই সারা রাত না ঘুমিয়ে সকালে মানুষ ঘুমিয়ে যাচ্ছে।
এবং সকালের দিকে ঘুমের গভীরতা অপেক্ষাকৃত বেশি হচ্ছে।
তখন হেলদি রুটিন মেনে,ঘুম ভেঙে ব্রেকফাস্ট করার চাইতে, গভীর ঘুমটাকে ইঞ্জয় করতেই বেশি ইচ্ছুক থাকছে মানুষ।
ফলস্বরূপ বাদ যাচ্ছে নিয়মিত ব্রেকফাস্ট করার ব্যাপারটা।
ব্রেকফাস্ট না করায় শরীরের উপর বিরূপ প্রভাব
আপাতঃ দৃষ্টিতে, না খেয়ে একটা বেশ ইন্টেন্স ডায়েট হচ্ছে মনে হলেও, আসলে শরীরে এই ব্রেকফাস্ট না খাওয়াটা উল্টো ইফেক্ট ফেলছে।
ইংলিশে একটা কথা আছে, “Have breakfast like a King”, অর্থাৎ রাজার হালে সকালের নাস্তা কর।
কথাটা কিন্তু এমনি এমনি আসেনি।
গোটা দুনিয়াজুড়ে কম-বেশি সকল পুষ্টিবিদ একই উপদেশ দেন যে, ব্রেকফাস্টটা যেন একটু ভারি করা হয়।
কেননা,এই ব্রেকফাস্ট সারাদিনের জন্য শরীরের মেটাবলিজমের জ্বালানি অর্থাৎ ক্যালরিকে রেডি করে।
এখন ব্রেকফাস্ট যদি না করা হয়, শরীরকে দীর্ঘ সময়ে যদি ক্ষুধার রাখা হয়, তখন শরীর অটোমেটিক নিজের ক্যালরিগুলো ভবিষ্যতের সুরক্ষায়, অতি অল্প খাবারের থেকেই সঞ্চয় করে রাখে ফ্যাট টিস্যু হিসেবে।
শরীরের মেটাবলিজম কমিয়ে দেয়।
ফলে, যেই স্লিম এন্ড ফিট থাকার লক্ষ্যে সকালের নাস্তাটা এভোয়েড করছিলেন, সেটাই নষ্ট হয়ে যায় আল্টিমেটলি!
কিভাবে করা যায় এই অভ্যাস ?
অফিস, আদালত বলুন কি ঘরের কাজ, ব্রেকফাস্টটা সকালে একটু ভারি করে করার অভ্যাস করলে দেখা যায়, পূর্বের তুলনায় শরীরে অল্পতে কাহিল হয় না।
এনার্জেটিক শরীরের সাথে মনটাও ফুরফুরে থাকে।
ফলে কাজ করার এনার্জি এবং মনযোগ-দুটোই ভালো পরিমাণেই পাওয়া যায়।
অনেকে আবার ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা করতে পারেন না।
স্বাদে প্রব্লেম হয় তাদের।
ব্যাপার না।
ঘুম থেকে উঠে ২ গ্লাস পানি খালি পেটে খেয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করুন।
নইলে নাস্তা বানাতেই সময় নিন।
আধা ঘন্টা পর নাস্তা করতে বসুন।
শুরুতে প্রব্লেম হলেও, একটা সময়ে অভ্যাস হয়ে যাবে।
তখনই বুঝবেন, এই নিয়ম মেনে প্রতিদিন সকালে ব্রেকফাস্ট করার সুফল।
দরকার হলে, একটু সকাল সকালই বিছানায় যান রাতে, যেন সকালে উঠতে পারেন।
সকালে একটু আগে উঠলেই দেখবেন, ৩০ মিনিটের মধ্যে ক্ষুধার একটা চাহিদা অটোমেটিক সকালের ফ্রেশ আবহাওয়ার জন্য তৈরী হবে।
নিয়মিত মাস খানেক এই রুটিন ফলো করলে, দেখবেন অনেকটাই হেলদি লাইফ স্টাইলে ফিরে গিয়েছেন আপনি।
ব্রেকফাস্টের মেন্যু
যেহেতু পুষ্টিবিদেরা সকালের নাস্তাটাকেই সবচেয়ে ফোকাস করেন, তাই বেশ ভারি খাবার খেতে পারেন।
রুটি, নুডুলস কিংবা পাস্তা টাইপের ভারি কার্বোহাইড্রেট।
যদি সম্ভব হয় পাউরুটিও খেতে পারেন।
তবে যাদের এসিডিটির সমস্যা আছে, ইস্ট দেয়া রুটি কিংবা তেলে ভাজা পরোটা এভোয়েড করাই বেটার।
সাথে এডার হিসেবে ডিম,সবজি ভাজি কিংবা মাংস ২ পিস নেয়া যেতে পারে।
তবে কোনটাই যেন খুব বেশি তেল-সমৃদ্ধ না হয় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে।
নাস্তার শেষে এক কাপ চা শরীরকে সারাদিনের জন্য বুস্ট আপ করে।
অনেকেই আগে ব্রেকফাস্টেই নানা মৌসুমী ফল রাখার ব্যাপারে বেশ সচেতন ছিলেন।
তবে, সাম্প্রতিক স্টাডি বলছে, সকালেই ফল না খেয়ে, সেটা টি ব্রেকে অর্থাৎ ১১-১২ টার দিকে খেতে।
এতে করে সহজেই হজম হবে।
শরীরটাও স্বস্তিকর পর্যায়ে থাকবে।
সুন্দর স্বাস্থ্য মানেই আপনাকে অজান্তেই একটা সুস্থ মন উপহার দিবে।
আর শরীর এবং মন যখন সুস্থ থাকবে, তখনই আপনার ভেতরের সৌন্দর্য আপনার ব্যক্তিত্ব এবং চেহারার গ্লো এর মাধ্যমে বিকশিত হবে।
এই ব্যাপারটাকে টার্গেট করলে, সকালের নাস্তায় নিয়মিত হওয়ার কোন বিকল্প নেই।