ফুল পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়। ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক।
এটি ঘর সাজানো থেকে শুরু করে কাওকে উপহার দেয়ার জন্যও ব্যবহৃত হয়।
জবা ফুল এমন একটি ফুল যা সবারই খুব পরিচিত।
এই ফুলের গুণাবলী সম্পর্কে জানেন না এমন কেউ নেই।
আমাদের দেশে বিভিন্ন রঙের জবা ফুল দেখতে পাওয়া যায়।
কিন্তু লাল রঙের জবা তাদের মধ্যে অন্যতম।
লাল জবায় রয়েছে ঔষধি গুণাবলির অন্যন্য উপাদান আর সেটা রুপচর্চায় চমৎকার ভুমিকা পালন করে।
বিভিন্ন ঔষধি গুণাগুণের পাশাপাশি ত্বকের ক্ষেত্রে এটি খুবই উপকারী।
আর চুলের কথা নাই বা বললাম।
নানানভাবে ব্যবহার করলেও কিভাবে জবা ফুলের তেল বানিয়ে সেটা অনেকদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে তা নিয়েই আজ কথা বলবো।
প্রাকৃতিক উপায়ে তেল বানানোর নিয়ম
জবা ফুলের পাশাপাশি এর পাতাও খুব উপকারী।
কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই আপনি এটা বাসায় তৈরি করতে পারবেন আর দীর্ঘদিন এটা সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন।
জেনে নিন কিভাবে জবার তেল প্রাকৃতিক ভাবে ঘরে তৈরি করতে পারবেন-
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- ১ কাপ নারকেল তেল
- ৩ চামচ মেথি গুড়া
- ৯/১০ টি জবা ফুল
- ৯/১০ টি জবা ফুল গাছের পাতা
পদ্ধতি
ফুল গুলো থেকে পাপড়ি আলাদা করে ছিড়ে নিন। সব পাতা ও পাপড়ি গুলো খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
এতে করে গাছের উপর ও ফুলের উপরে পরে থাকা ময়লা দূর হবে।
তারপর একটি স্টিলের পাত্রে এক কাপ নারিকেল তেল আর গ্রাইন্ড করা মেথি খুব ভালোভাবে মিক্স করুন।
মিক্স করে মিডিয়াম টু লো তাপমাত্রায় সিদ্ধ করতে থাকুন।
৩ মিনিট পর জবা ফুলের পাপড়ি সহ পাতা গুলোকে ওই মেথি সহ তেলের মিশ্রণটিতে ঢেলে দিন।
মিডিয়াম টু লো ফ্লেইম এ রেখেই পুরো প্রসেস টি করতে হবে।
জ্বাল হতে হতে একসময় দেখা যাবে পাপড়ি গুলোর রঙ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে আর পাতা গুলোও ফ্যাকাসে হয়ে কিছুটা বাদামী বর্ণ ধারণ করেছে।
তখন বুঝে নিতে হবে পাতা ও পাপড়ি গুলোর গুণাবলী পানির মদ্ধে চলে গিয়েছে।
এরপর পাত্র টি চুলা থেকে নামিয়ে নিয়ে ঠান্ডা হতে দিন।
কিছুক্ষন পর ঠান্ডা হয়ে এলে এটি ভালো কাচের বা প্লাস্টিকের বোতলে সংরক্ষণ করুন।
হয়ে গেলো প্রাকৃতিক ভাবে জবার তেল।
এটি খুবই উপকারী কারণ এই তেলে আছে নারকেল, মেথি ও জবার পুষ্টিগুণ যা চুলের খাদ্য সরবরাহ করে চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে।
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
এই তেল সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার চুলে ব্যবহার করতে হবে।
হাতের তালুতে নিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ব্যবহার করুন।
স্ক্যাল্প এ ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন যাতে চুলের গোড়ায় ভালোভাবে পৌঁছাতে পারে।
তেল ব্যবহারের পর একটি গরম তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন।
খেয়াল রাখতে হবে তোয়ালে যেনো খুব বেশি গরম না হয়।
সেক্ষেত্রে মাথার ত্বক পুরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে আর এতে করে চুল পরাও বাড়তে পারে।
স্টিম এর জন্য অল্প গরম তোয়ালেই যথেষ্ট।
তোয়ালে দিয়ে পেচিয়ে রাখার ফলে আপনার মাথার ত্বকে বন্ধ ছিদ্রগুলো খুলে যাবে এবং তেলের পুরো পুষ্টি চুল শোষণ কররে সক্ষম হবে।
তেলটি মাথায় ৪০/৪৫ মিনিটের জন্য রেখে দিতে হবে এভাবেই। তারপর তোয়ালে ছাড়িয়ে নিয়ে ভালোভাবে শ্যম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
জেনে নেয়া যাক জবা ফুল তেলের উপকারিতা
চুল পড়া রোধে
জবা ফুলে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো এসিড এবং ভিটামিন সি।
এই উপাদান গুলো আমাদের মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে।
রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পেলে আমাদের চুল পড়াও কমে যাবে। যা টাক পরে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে।
এই তেল টাক পড়ে যাওয়া জায়গায় রেগুলার ম্যাসাজ করলে চুল গজাতে সাহায্য করবে।
চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে
চুলের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং রুক্ষতা দূর করতে জবা ফুলের গুরুত্ব অনেক বেশি পরিমাণে।
আর এর সাথে রয়েছে নারকেল তেলের গুণাগুণ।
জবা ফুলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, ভিটামিন- সি ও ভিটামিন- বি ১৩, যা আপনার চুলের কোলাজেন উৎপাদনকে বাড়িয়ে দেয়।
যার ফলে আপনি ফিরে পাবেন আপনার চুলের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা। নিয়মিত ব্যবহারে চুল হবে সফট ও স্মুথ।
চুল পাকা রোধে
সাদা চুল কালো করতে না পারলেও এটি চুল পাকা রোধে ভূমিকা পালন করতে পারে।
কারণ জবা ফুল হল এর ফাস্ট এবং ম্যাজিকাল একটি সল্যিউশন।
এতে আছে আলফা হাইড্রক্সি এসিডস, মিনারেলস, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস যা আপনার চুলকে দেয় পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণ ও চুল রাখে ঝলমলে, কালো ও সুন্দর।
তাই কালো রাখতে চাইলে এই তেল নিয়মিত ব্যাবহার করুন।
খুশকি দূর করতে
জবা ফুলে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো এসিড এবং ভিটামিন-সি।
এটি চুলের কেরোটিন তৈরিতে সাহায্য করে। আর মেথিতে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ম্যাগনেসিয়্যাম, ফসফরাস এবং ভিটামিন বি৬।
এই উপাদান গুলো চুলের খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। এবং খুশকি আসা আটকাবে।