আপনি কি জানেন যে আপনার ত্বক আর চুলের জন্য মধু কত উপকারি? মধু কিন্তু খেতে যতটা ভালো, উপকারের দিক থেকেও ততটাই উপকারি।
তাই আজ আসুন জেনে নিই মধু আমাদের ত্বক আর চুলের যত্নে আমরা কিভাবে কাজে লাগাতে পারি।
ত্বকের যত্নে মধু
আমাদের ত্বকের সার্বিক যত্নে আমরা মধুকে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতেই পারি। সেই প্রাচীনকাল থেকেই মধু ত্বকের পরিচর্যায় আমাদের সঙ্গে আছে।
শুষ্ক ত্বকে মধু
আপনার যদি ড্রাই স্কিন হয় তাহলে চামড়া ফেটে অনেকসময় রক্ত পর্যন্ত পড়ে। আজ থেকেই মধু ব্যবহার করতে থাকুন।
উপকরণ
১ চা চামচ মধু, ১ চা চামচ দুধ।
পদ্ধতি
সবকটি উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে আর হাতে, গলায় লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট রেখে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
শীতকালে গরম পানিতে ব্যবহার করতে পারেন। দু’সপ্তাহ পর থেকেই উপকার পেতে শুরু করবেন।
উজ্জ্বলতা বাড়াতে
ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতেও কিন্তু মধুর তুলনা নেই।
উপকরণ
১ চামচ মধু, পরিমাণমতো টম্যাটোর রস।
পদ্ধতি
দুটি উপকরণ মিশিয়ে নিয়ে মুখে, হাতে, গলায় মেখে রাখুন ২৫ মিনিট মতো। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
দেখবেন এক সপ্তাহ পর থেকেই আপনি স্কিনে আলাদা একটা গ্লো পেতে থাকবেন। তবে এটা সপ্তাহে ৩-৪ দিন করলে ভালো হয়।
কালো দাগ দূর করতে
অনেকসময়ই আমাদের শরীরে কালো ছোপ দাগ হয়ে যায়। যেকোনো ছোপ দাগকেই দূর করতে মধু খুবই কার্যকরী।
উপকরণ
২ চা চামচ মধু, ৩ চা চামচ গোলাপজল।
পদ্ধতি
দুটি উপকরণ ভালো ভাবে মিশিয়ে স্কিনে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট মতো। এরপর তুলে ফেলুন। সপ্তাহে ৪-৫ দিন করুন।
দেখবেন যত পুরনো দাগই হোক না কেন, দু’সপ্তাহ পর থেকেই হাল্কা হতে শুরু করবে।
বলিরেখা আটকায়
আজকাল কম বয়স থেকেই বলিরেখা হতে শুরু করে। আর বলিরেখা হওয়া মানেই বয়সের আগেই বুড়িয়ে যাওয়া।
তাই আপনার চির তারুণ্য ধরে রাখুন মধু দিয়ে আর মুখে ভাঁজ হয়ে যাওয়া আটকান।
উপকরণ
পরিমাণমতো মধু, দুধ আর দই।
পদ্ধতি
সবকটি উপকরণ মিশিয়ে যেখানে ভাঁজ হয়ে যাচ্ছে সেখানে লাগিয়ে রাখুন প্রায় ১০ মিনিট মতো। হাল্কা শুকিয়ে আসলে তুলে ফেলুন।
সপ্তাহে ৪ দিন মতো করুন এটা।বলিরেখা আর তো হবেই না, আগে যা হয়েছিলো, সেটাও আস্তে আস্তে কমে যাবে।
লোমকূপের ময়লা পরিষ্কার করে
সাধারণ মানের ফেসওয়াশ লোমকূপের খুব গভীর থেকে ময়লা সবসময় বের করতে পারে না।
কিন্তু মধু এক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ দেয়। অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্যাকটেরিয়াও হতে দেয় না।
উপকরণ
২ টেবিল চামচ মধু, ২-৩ চামচ বেকিং সোডা।
পদ্ধতি
দুটি উপাদান খুব সুন্দর করে মিশিয়ে মুখে হাতে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।এরপর হাল্কা গরম পানি দিয়ে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করে তুলে ফেলুন।
আপনি এটা পারলে রোজই করুন। দেখবেন এক সপ্তাহ পর থেকেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
ব্রণ দূর করতে
এইটা একটা বড় সমস্যা। ব্রণ হওয়ার থেকেও বড় সমস্যা ব্রণর দাগ থেকে যাওয়া।
কিছুতেই যেতে চায় না। মধু ব্যবহার করলে ব্রণ আর ব্রণর দাগ দুই-ই কমে যাবে।
উপকরণ
২ চামচ মধু, চন্দনের গুঁড়ো।
পদ্ধতি
উপকরণগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে ৩০ মিনিট মতো লাগিয়ে রাখুন। তারপর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
দেখবেন আস্তে আস্তে কমে আসছে। চন্দনও ব্রণ সারাতে খুব কার্যকরী।
খুব সময় না পেলে সপ্তাহে দু’দিন অন্তত করুন।
রোদে পোড়া ভাব কমাতে
আমাদের গরমের দেশে রোদে পোড়া তো আমাদের ভবিতব্য। কিন্তু পোড়া দাগ তো রেখে দিতে পারি না।তাই মধু ব্যবহার করুন।
উপকরণ
পরিমাণমতো মধু, অ্যালোভেরার রস।
পদ্ধতি
মধু আর অ্যালোভেরার রস পোড়া অংশে লাগান। শুকিয়ে গেলে কিছুক্ষণ হাল্কা হাতে ম্যাসাজ করে তুলে ফেলুন।
ম্যাসাজ করার সময় ব্যবহার করুন গরম পানি। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই ট্যান চলে যাচ্ছে।
চুলের যত্নে মধু
ত্বকের মতো চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু মধু খুবই উপকারি। আপনি নানাভাবে মধু ব্যবহার করতে পারেন।
ন্যাচারাল কন্ডিশনার হিসাবে
শ্যাম্পু করার পরই তো কন্ডিশনার লাগে। অনেক কন্ডিশনার লাগানোর সময় আপনি হয়তো দেখেছেন যে তাতে মধু আছে।
তা মধু দিয়ে কন্ডিশনার নিজেই বানান না বাড়িতে এবার।
উপকরণ
২-৩ চামচ মধু, পরিমাণমতো নারিকেল তেল।
পদ্ধতি
শ্যাম্পু করার পর এই দুইয়ের মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে নিন। কিছুক্ষণ রেখে ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
নারিকেল তেল শুনে মুখ ঘোরাবেন না। যে ফলাফলটা তারপর পাবেন সেটা সব ভুলিয়ে দেবে।
চুল পড়ার সমস্যায়
আপনার যদি খুব চুল উঠে থাকে, তাহলে অন্য অনেক কিছু ব্যবহার না করে করুন শুধু মধু।
দেখবেন চুল ওঠা অনেক কম হবে। আর মধু তো হাতের কাছেই পাবেন।
উপকরণ
পরিমাণমতো মধু।
পদ্ধতি
মধু পানিতে গুলিয়ে সেটা চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ২-৩ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এরপর পুরো চুলে লাগিয়ে ঘন্টা তিনেক রাখুন।
তারপর হাল্কা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা আপনি সপ্তাহে ৩-৪ দিন করুন। দেখবেন খুব উপকার পাচ্ছেন।
চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে
চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে মধু খুবই উপকারি।
উপকরণ
২ চামচ মধু,কয়েক ফোঁটা আপেল সিডার ভিনিগার।
পদ্ধতি
দুটি উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট পর হাল্কা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুলের উজ্জ্বলতা কেমন বাড়ছে সুন্দরভাবে।
চুলকে ময়েশ্চারাইজ করতে
শুধু ত্বককে নয়, চুলকেও ময়েশ্চারাইজ করা দরকার। তার জন্য মধুকেই সঙ্গী করুন এবার থেকে।
উপকরণ
আধ কাপ মধু, ১/৩ ভাগ অলিভ অয়েল।
পদ্ধতি
দুটি উপকরণ মিশিয়ে চুলে দিন। চাইলে মিশ্রণটা একটু গরম করে নিতে পারেন। সপ্তাহে তিন দিন করুন।
তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। দেখবেন চুল সুন্দর ভাবে ময়েশ্চারাইজড হচ্ছে, কোমল থাকছে।
এবার থেকে তাহলে মধু ব্যবহার করুন আপনার ত্বক আর চুলের সার্বিক পরিচর্যায়।
কিন্তু বাজার চলতি মধু নয়, ব্যবহার করতে হবে বিশুদ্ধ মধু। তাহলেই আপনি পাবেন মধুর আসল উপকার। আর নতুন করে মধুর প্রেমে পড়ে যাবেন।