বলিরেখা, রীতিমতো আমাদের ইয়াং জেনারেশনের কাছে একটা নাইট্মেয়ার!
এই দুঃস্বপ্নটাকে কাটাতে যুগে যুগে ওষুধ কিংবা কেমিক্যাল কিংবা হারবাল নানা পদ্ধতি মানুষ চেষ্টা করে গেলে, যা এপ্লাই করে কাটাতে চেয়েছে এই বলিরেখা।
কেমিক্যালের প্রডাক্টগুলো ব্যবহার করে আপাতঃভাবে কিছুটা রেমিডি পেলেও, অদূর ভবিষ্যতে দেখা গেছে হিতে বিপরীত সাইড ইফেক্ট।
অনেকে হারবাল উপটানেও ঝুঁকেছে।
কিন্তু ত্বকের ধরণ ভেদে নানা হারবাল উপাদান নানা ভাবে রিয়েক্ট করায়, সব ত্বকের জন্য সব প্রডাক্ট দিয়ে বলিরেখা কমানোর ট্রিট্মেন্টটা সাকসেসফুল হইয়ে ওঠে নি।
আজ গ্ল্যামোজেনের আয়োজনে এমন একটি হারবাল উপটান বা মাস্ক নিয়ে আলোচনা করা হবে, যা ত্বকের ধরণ ভেদে অধিকাংশ ত্বকেই বলি রেখা দূরীকরণের কাজ করবে।
উপকরণ:
১. মধু
২. বেসন
৩. মূলতানি মাটি
৪. গোলাপ জল
৫. শসার রস
প্রস্তুত-প্রণালী:
১. প্রথমে শসা কুচি করে, থেঁতলে ভালো একটা পেস্ট বানাতে হবে।
২. পেস্টটা একটা পানির ছাঁকুনি দিয়ে ছেঁকে কমপক্ষে ৩ টেবিল চামচ রস একটা ছোট পাত্রে নিতে হবে।
৩. এক চা চামচ মুলতানি মাটি তাতে যোগ করতে হবে।
৪. ১ চা চামচ বেসন মিশ্রণটিতে যোগ করতে হবে।
৫. এরপর দুই টেবিল চামচ গোলাপ জল যোগ করে ভালো মতো মিশ্রণটি মেশাতে হবে।
৬. এরপর তাতে যোগ করতে হবে বলিরেখা দূরীকরণের আসল উপাদান- মধু। পরিমাণে ২ চা চামচ।
অতঃপর মিশ্রণটি ভালো করে মিশিয়ে, ফ্রিজে ১০ মিনিটের জন্য ঠান্ডা করতে দিতে হবে, একটা ঢাকনযুক্ত পাত্রে।
ব্যবহারবিধি:
১. মুখটা ভালো করে ফেশওয়াশ দিয়ে ধুতে হবে, যেন কোন ময়লা বা তেলতেল ভাব না থাকে।
২. একটা ছোট বরফ কিউব মুখে ডলতে হবে, যতক্ষণ না সম্পূর্ণ গলে শেষ হয়।
৩. এরপর ফ্রিজ থেকে ঐ ঠান্ডা প্যাকটা বের করে, সারা মুখে, গলায় এবং হাতের উপরের পিঠে লাগাতে হবে।
৪. প্রায় ৩০ মিনিটের মতো স্থির হয়ে শুয়ে থাকতে হবে, যেন চেহারায় কোন ভাজ না আসে।
৫. ৩০ মিনিট পর, কিছু চিনির দানা হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে ডলে প্যাকটা উঠিয়ে ফেলতে হবে পানির সাহায্যে।
৬. এরপর একটা টোনার বা বেবি ক্রিম লাগিয়ে নিতে হবে।
সতর্কতা:
১. প্যাকটি লাগানো অবস্থায় ঐ ৩০ মিনিট চুপচাপ শুয়ে থাকাই বেশি শ্রেয়।
এই সময় এমন কোন কাজ বা কথা বলা যাবে না, যাতে মুখ কুঁচকে যায়। কুঁচকে গেলে, হিতে বিপরীত ফল হয়ে যাবে।
২. চিনির দানা দিয়ে ডলে মাস্কটা উঠানোর সময়, ধৈর্য্য নিয়ে আস্তে আস্তে উঠাতে হবে।
বেশি তাড়াহুড়ো করলে, বা জোরে জোরে ডললে, চামড়া ছিলে যেতে পারে।
৩. পুরো প্যাকটা চিনি দিয়ে ডলে তুলতে যতোটা সম্ভব কম পানি ব্যবহার করতে হবে।
নইলে, বেশি পানিতে ধুয়ে গেলে, চিনি দিয়ে ডলার ইফেক্টটা খুব বেশি পড়বে না।
পৌষ্টিক-বিবরণঃ
মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবেই উপস্থিত এমন সব উপাদান, যা ত্বককে ন্যাচারাল্ভাবেই সাহায্য করে ফ্রেশ রাখতে।
এর মধ্যে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট খুব ভারী এমাউন্টের থাকে, যা ত্বকের বিভিন্ন অংশের বলিরেখা- যেমন চোখের পাশের অংশ, কপালের মাঝে, গালে- হাসি রেখা বরাবর তৈরি রিংকেলসগুলো কমিয়ে ফেলে।
শসার মধ্যে থাকা ন্যাচারাল পানি আর এন্টি অক্সিডেন্ট ত্বকের জন্য মোটামোটি অক্সিজেন হিসেবে কাজ করে।
অক্সিজেন বেশি থাকা মানে, সে অংশে ব্যাক্টেরিয়া বা নানা জীবানুর এক্টিভিটি কমে যাওয়া।
জীবানুর এক্টিভিটি কমে গেলে , সে অংশে পিম্পলস হবে কম।
র্যাশ কম উঠবে।
ফলে ত্বকের ক্ষতিসাধন কম হবে।
চিনি স্ক্র্যাবারের কাজ করে।
চিনি দিয়ে ডলার সময়ে, ত্বকের মরা কোষগুলো উঠে যায়।
এছাড়া মেক আপ কিংবা দূষিত আবহাওয়া থেকে ত্বকে প্রবেশ করা নানা অনুজীব,ময়লা , পোওর চিনি দিয়ে ডলার সময়, মাস্কটার সাথে উঠে আসে।
ফলে বলিরেখা পড়ার মতো কারণগুলো সংখ্যায় কমে যায়।
ব্যবহারের সময়বিধিঃ
ইয়াং এইজ, গড়ে ২৬ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে এই প্যাকটা নিয়মিত ব্যবহার শুরু করা উচিৎ।
বলিরেখা তৈরির প্রদুর্ভাব সাধারণত ৩০ এর পর থেকে শুরু হয়।
তাই ৩০ এর কিছু বছর আগের থেকেই এই প্যাকটা ব্যবয়ার করলে, অনেকটাই বলিরেখা প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
এক্ষেত্রে সপ্তাহে ২ দিন এই প্যাক ব্যবহার করলেই হয়ে যায়।
তবে ৩০ এর পর, হরমোনের কারণেই বলিরেখা পড়ার হার বেড়ে যায়।
তাই ৩০ বছরের পর থেকে প্রতি সিপ্তাহে অন্তত ৪ দিন এই প্যাকটা ব্যবহার করতে হবে।
নিয়মিত এই প্যাকটি ব্যবহারে, বছরখানেকের মধ্যেই, নিজের সম-বয়সী অন্যদের তুলনায় নিজের ইয়াং স্কিন প্যাটার্নের চেঞ্জ, নিজেই টের পাবেন।
এছাড়া বেশ কিছু খাবারও খেতে হবে নিয়মিত, এই ইয়াং স্কিনটা মেইন্টেইন করতে।
তবে তা নিয়ে আজ আর নয়।
খাবারের প্যাটার্ন নিয়ে আলোচনা হবে, আগামী পর্বে।
সেই খাদ্য তালিকাগুলো পেতে, চোখ রাখুন গ্ল্যামোজেনের পর্দায়।