প্রতিদিন গাদাগুচ্ছের নামীদামি ব্র্যান্ডের ক্রিম, সিরাম, ময়শ্চারাইজার মুখে মাখছেন।
অথচ ত্বকের অবস্থার হেরফের নেই একটুও? এরকম হলে সত্যিই মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়।
মনে হয় টাকা, পরিশ্রম, সময়, সবই নষ্ট হলো!
তবে একেবারে হাল ছেড়ে দেওয়ারও যেহেতু মানে হয় না, তাই একটু প্রোডাক্টগুলোর দিকে নজর দিয়ে দেখুন তো!
এমন কি হতে পারে, যে সব প্রোডাক্ট আপনি ব্যবহার করছেন তা আদৌ আপনার ত্বকের উপযোগীই নয়?
কাজেই ফল যে পাবেন না, সেটাই স্বাভাবিক! আশ্চর্য লাগলেও এটাই সত্যি!
অনেক মেয়েই এমন প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন যা তাদের ত্বকের জন্য সঠিকই নয়! এর কারণ,তারা নিজেদের ত্বকের ধরন সম্পর্কেই ঠিক মতো জানেন না!
ত্বক তৈলাক্ত, শুষ্ক, নাকি কম্বিনেশন, এটা বুঝতে বুঝতেই সময় চলে যায় আর ভুল প্রোডাক্টের ব্যবহারে ত্বকের অবস্থা উত্তরোত্তর খারাপ হতে শুরু করে।
এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তির উপায় একটাই। নিজের ত্বকের ধরন সম্পর্কে খুব ভালো করে বুঝে নেওয়া।
ত্বকের মোটামুটি পাঁচরকম ধরন হতে পারে – তৈলাক্ত ত্বক, শুষ্ক ত্বক, স্বাভাবিক ত্বক, কম্বিনেশন ত্বক এবং সেনসিটিভ ত্বক।
বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখে ত্বকের ধরন বোঝা সম্ভব। দেখে নিন আপনার ত্বক কোন শ্রেণিতে পড়ে, এবং সেইমতো বেছে নিন আপনার উপযোগী স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট।

তৈলাক্ত ত্বক
মুখ ধোওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তেলতেলে দেখায় মুখ? দিনের বেলায় তেল চকচকে দেখায়, রোদ্দুরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে?
তেমন হলে আপনি তেলতেলে ত্বকের অধিকারী। তৈলাক্ত ত্বকের রোমছিদ্র বড়ো হয়, ঘাম,তেলময়লা রোমছিদ্রে জমে গিয়ে ব্রণের উৎপাত দেখা দেয়।
কীভাবে সামলাবেন তৈলাক্ত ত্বক
বাতাসের দূষণ আর রোদ থেকে তেলতেলে ত্বক খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অয়েল ফ্রি ক্লেনজার দিয়ে দিনে তিনবার মুখ ধুয়ে ফেলুন। জেল-বেসড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।

শুষ্ক ত্বক
খসখসে, রুক্ষ, অমসৃণ ত্বক মানেই শুষ্ক ত্বকের লক্ষণ। খুব শুকনো ত্বকে মাঝেমাঝে চুলকানিও হতে পারে। আর্দ্রতার অভাবে শুষ্ক ত্বক বিবর্ণ, নিষ্প্রাণ দেখায়।
শুষ্ক ত্বকের রোমছিদ্রগুলো খুব ছোট আর টাইট হয়, এবং দেখেই মনে হয় আর্দ্রতার অভাব রয়েছে। কাজেই আপনার ত্বকে যদি এরকম সমস্যা দেখেন, বুঝবেন তা শুষ্ক ত্বক।
কীভাবে সামলাবেন শুষ্ক ত্বক
শুষ্ক ত্বকের সবচেয়ে দরকার আর্দ্রতা। তাই ডিপ হাইড্রেশন হয় এমন ময়শ্চারাইজার আর ক্রিম ব্যবহার করুন।
দিনে একবারের বেশি সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোবেন না,বরং পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ফেসওয়াশ যেন ময়শ্চারাইজার যুক্ত হয়।
প্রতিবার মুখ ধোওয়ার পরে ময়েশ্চারাইজার মেখে নেবেন।

স্বাভাবিক ত্বক
ত্বক খুব তেলতেলেও নয়, আবার খুব শুষ্কও নয়, এরকম হলে আপনার স্বাভাবিক ত্বক। এই ত্বক সাধারণত নরম আর মসৃণ দেখতে লাগে।
স্বাভাবিক ত্বক হলে অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ঠিকই,তবে নজর না দিলে স্বাভাবিক ত্বকও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
কীভাবে সামলাবেন স্বাভাবিক ত্বক
প্রতিদিন নিয়ম করে ক্লেনজিং-টোনিং-ময়েশ্চারাইজিংয়ের রুটিন মেনে চলুন। সপ্তাহে অন্তত দু’বার এক্সফোলিয়েশন করতেই হবে।
নিয়মিত ময়শ্চারাইজার মাখুন, যাতে ত্বক রুক্ষ হয়ে না যায়।

কম্বিনেশন ত্বক
কম্বিনেশন ত্বক চেনা খুব সহজ।যাদের কপাল, নাক আর চিবুকের অংশটা সহজেই তেলতেলে হয়ে যায় এবং গালের অংশ শুকনো বা স্বাভাবিক থাকে,
তাদের ত্বক হলো কম্বিনেশন বা মিশ্র প্রকৃতির।
স্বাভাবিকভাবেই তেলতেলে অংশের রোমছিদ্রগুলোর আকার বড়ো হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়নায় খুব ভালো করে খুঁটিয়ে লক্ষ করলে বুঝতে পারবেন।
কীভাবে সামলাবেন কম্বিনেশন ত্বক
কম্বিনেশন ত্বকে এমন কিছু মাখুন যা আপনার ত্বক বেশি রুক্ষ বা বেশি তেলতেলে করে দেবে না।
মিশ্র ত্বকের কপাল, নাক ও থুতনির পার্টটিকে অয়েলি টি জোন বলা হয়। কেননা এই অঞ্চলগুলো তৈলাক্ত, চিক থাকে শুষ্ক।
আর এই পুরো অংশটি মিলিয়ে দেখলে অনেকটা ইংরেজি অক্ষর ‘T’ এর মত মনে হবে।
সবচেয়ে ভালো হয় টি জোনের জন্য অয়েলফ্রি আর মুখের বাকি অংশে স্বাভাবিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে। তার সঙ্গে নিয়মিত ক্লেনজিং-টোনিং- ময়েশ্চারাইজিং তো আছেই!

সেনসিটিভ ত্বক
সেনসিটিভ বা সংবেদনশীল ত্বক একটুতেই লাল হয়ে জ্বালা করে, চুলকোয়, ত্বকে র্যাশ বেরোয়।
ফলে সংবেদনশীল ত্বকের মালকিনেরা যে কোনও স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট মাখতে পারেন না। গরম পোশাক থেকেও ত্বকে প্রদাহ হতে পারে।
কীভাবে সামলাবেন সেনসিটিভ ত্বক
সেনসিটিভ ত্বকের যত্ন করার সময় খুব সচেতন থাকতে হবে। প্রাকৃতিক উপাদানযুক্ত স্কিনকেয়ার ব্যবহার করা এক্ষেত্রে ভালো।
নতুন কোনও প্রোডাক্ট ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে। ঘন ঘন প্রোডাক্ট পাল্টাবেন না।