Search
Close this search box.

লেবুর খোসা খাওয়ার উপকারিতা

লেবু খেলে যতটা শারীরিক উপকার পাওয়া যায়, তার থেকে অনেক বেশি পাওয়া যায় লেবুর খোসাটা খেলে।

আসলে বেশ কিছু পরীক্ষার পর এ কথা পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে লেবুতে যে পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে, তার থেকে প্রায় ৫-১০ গুণ বেশি রয়েছে লেবুর খোসায়।

সেই সঙ্গে মজুত রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, ফলেট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম, যা নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটে

বেশ কিছু কেস স্টাডি অনুসারে, লেবুতে উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার।

এবং ভিটামিন সি, শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে দেহের রোগ প্রতিরোধি ব্যবস্থা দারুন শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

ফলে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে সংক্রমণের মতো রোগও দূরে থাকতে বাধ্য হয়।

কিডনি স্টোনের মতো রোগ দূরে থাকে

গবেষণায় এমনটা দেখা গেছে, নিয়মিত লেবুর খোসা খাওয়া শুরু করলে শরীরে সিট্রিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

যার প্রভাবে কিডনিতে স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে থাকে না বললেই চলে।

তাই এমন ধরনের রোগের খপ্পরে পরতে না চাইলে নিয়মিত লেবুর খোসা খেতে ভুলবেন না যেন!

কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমে

লেবুর খোসায় উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার শরীরে প্রবেশ করা মাত্র এমন কিছু খেল দেখায় যে কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।

সেই সঙ্গে আলসার এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যাও কমে যায়।

তাই প্রতিদিন সকালেই যাদের মল ত্যাগ করতে গিয়ে কষ্ট সহ্য করতে হয়, তাদের রোজের ডায়েটে লেবুর খোসকে অন্তর্ভুক্ত করা ছাড়া আর যে কোনও উপায় নেই, তা তো বলাই বাহুল্য!

ক্যানসারের মতো মারণ রোগ দূরে পালায়

লেবুর খোসায় উপস্থিত স্য়ালভেসস্ট্রল কিউ ৪০ এবং লিমোনেন্স নামে দুটি উপাদান ক্যানসার সেলের ধ্বংসে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ফলে নিয়মিত লেবুর খোসা খেলে শরীরের ভিতরে ক্যানসার সেলের জন্ম নেওয়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না।

এখানেই শেষ নয়, লেবুর খোসা খাওয়া মাত্র ব্যাকটেরিয়াল এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশেনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

মুখ গহ্বরের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে

ভিটামিন সি-এর ঘাটতি হলে মুখ গহ্বর সংক্রান্ত একাধিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।

তাই তো নিয়মিত লেবুর খোসা খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

কারণ এতে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক অ্যাসিড মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, জিঞ্জিভাইটিস সহ একাধিক রোগের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

সারা শরীরে রক্তের প্রবাহে উন্নতি ঘটে

লেবুর খোসা খাওয়া মাত্র শরীরের ভিতরে এমন কিছু রদবদল হতে শুরু করে যে সারা শরীরে রক্তের সরবারহ বাড়তে শুরু করে।

ফলে দেহের প্রতিটি কোনায় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যাওয়ার কারণে সার্বিকভাবে শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়তে সময় লাগে না।

ফলে ছোট-বড় সব ধরনের রোগই দূরে পালায়।

দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে

পেকটিন নামে একটি উপাদান প্রচুর মাত্রায় থাকায় লেবুর খোসা নিয়মিত খেলে ওজন কমার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।

কারণ এই উপাদানটি শরীরে উপস্থিত অতিরিক্ত চর্বিকে ঝড়িয়ে ফেলতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।

হার্টের ক্ষমতা বাড়ে

লেবুর খোসায় উপস্থিত পলিফেনল নামে একটি উপাদান শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।

অন্যদিকে লেবুর পটাশিয়াম ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণা রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের রাগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।

তাই তো যাদের পরিবারে কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্টের রোগের ইতিহাস রয়েছে তারা প্রতিদিনের ডায়েটে লেবুর খোসাকে অন্তর্ভুক্ত করুন।

দেখবেন উপকার পাবেন।

লিভারের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত লেবুর খোসা খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ এত মাত্রায় বেড়ে যায় যে লিভারের ভিতরে জমে থাকা টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যেতে শুরু করে।

ফলে শরীরে এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির কর্মক্ষমতা বাড়তে সময় লাগে না।

হাড় শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে

প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম থাকার কারণে লেবুর খোসা খাওয়া শুরু করলে ধীরে ধীরে হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে শুরু করে।

সেই সঙ্গে ইনফ্লেমেটরি পলিআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপরোসিস এবং রিউমাটয়েড আথ্রাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়

একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, লেবুর খোসার ভিতরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের নিচে জমে থাকা টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়।

ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের বয়স কমতে শুরু করে।

সেই সঙ্গে বলিরেখা যেমন কমে, তেমনি ত্বক টানটান হয়ে ওঠে।

এই কারণেই তো বয়স ৩০-এর কোটা পরলেই প্রতিদিন লেবুর খোসা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে

ফাইবার সমৃদ্ধ যে কোনও খাবার হজম ক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

আর এই উপাদানটি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে লেবুর খেসায়।

তাই তো বদ-হজন থেকে গ্যাস-অম্বল, যে কোনও ধরনের হজম সংক্রান্ত সমস্যায় এই প্রকৃতিক উপাদানটি দারুন উপকারে আসে।

স্ট্রেসের মাত্রা কমে

লেবুর খোসায় উপস্থিত সাইট্রাস বায়ো-ফ্লেভোনয়েড শরীরের ভিতরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমতে শুরু করে।

ফলে সার্বিকভাবে মন, মস্তিষ্ক এবং শরীর একেবারে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তাই তো এবার থেকে যখনই দেখবেন শরীর আর চলছে না, তখন অল্প করে লেবুর খেসা নিয়ে চটজলদি খেয়ে ফেলবেন। দেখবেন উপকার মিলবে।

কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

লেবুর অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। মুরগির স্যুপের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে দুর্বলতা কমে।

ক্যানসার বা অস্ত্রোপচারের পর এভাবে স্যুপ খেলে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব।

খেলাধুলার পর লেবুর শরবত খেলে শরীরে ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য রক্ষা হয়।

তবে অনেকে বেশি ভালো ফল পাওয়ার আশায় পুরো একটা লেবু বা একাধিক লেবু একবারে খেয়ে ফেলেন, যা মোটেও ঠিক নয়।

মনে রাখবেন অতিরিক্ত কিছুই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।

  • যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত লেবু খেলে বুক জ্বালা করে।
  • লেবুতে কারো কারো অ্যালার্জি হয়ে থাকে, তাই আগে থেকে জেনে নিয়ে লেবু চিকিৎসা শুরু করা উচিত৷ তা নাহলে হিতে-বিপরীত হতে পারে৷
  • ওজন কমানোর জন্য খাদ্যাভ্যাসে লাগাম টানা হলে কার্বোহাইড্রেট ও অন্যান্য পুষ্টিগুণের অভাব দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে লেবুপানি পানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে শরীরে ক্লান্তি ভর করতে পারে।
  • অতিরিক্ত লেবু সেবনে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে পেট ফাঁপাসহ নানান ধরনের সমস্যা ও অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
  • অতিরিক্ত লেবু ও লেবুর শরবত পানের ফলে পেটে ও তলপেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  • লেবুর শরবত বেশি পান করলে কিছুটা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
  • যেকোনো মানুষের পরিমিত লেবু খাওয়া স্বাস্থের জন্য ভালো কিন্তু অতিরিক্ত লেবু স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।