কে না চায় ঠোঁট গোলাপের মতো সুন্দর হোক।
লাল টকটকে খানিক ফোলা ফোলা ঠোঁটই তো এখনকার ট্রেন্ড।
কিন্তু আজকাল অনেক সময়েই আমরা দেখি এই সুন্দর ঠোঁট আমরা আর ধরে রাখতে পারি না।
ঠোঁট হয়ে যায় কালো।
সবচেয়ে মজার কথা হল, দামী দামী লিপস্টিক বা লিপবাম দিয়েও কিন্তু এই কালো ঠোঁটের থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না।
আর সব সময়ে তো এই সব ব্যবহার করাও যায় না।
তাই এবার ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করুন আর ঠোঁটের কালো ভাব দূর করুন।
কেন ঠোঁট কালো হয়?
নানা কারণে ঠোঁট কালো হতে পারে।
আজকাল সবাই যেহেতু ব্যস্ত আমরা তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে খানিক চা বা কফি খেয়ে নেওয়া আমাদের অভ্যেস।
এতে পেট খানিক ভরে। কিন্তু বারবার এই কফি বা চা খাওয়া কিন্তু আমাদের ঠোঁট কালো করার বড় কারণ।
আর আজকাল সিগারেটের প্রতি আমাদের আসক্তি বেশি।
আর কে না জানেন যে সিগারেট খেলে ঠোঁট খুব তাড়াতাড়ি কালো হয়।
এছাড়া সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসা, ঠিক মতো যত্ন না নেওয়া এই কালো দাগ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
১. নারকেল তেল
নারকেল তেলে আছে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি অ্যাসিড।
তাই ঠোঁট থাকে হাইড্রেটেড, সহজে শুকিয়ে যায় না। আর আর্দ্র থাকার জন্য মোলায়েম আর গোলাপি থাকে।
কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল ব্যবহারেই পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন।
২. আমন্ড তেল
পদ্ধতি
আপনি দিনের বেলা নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন লিপবাম হিসেবে, যদি না আপনি বাইরে যান।
এছাড়া আপনি রাতে শুতে যাওয়ার আগেও এটি ব্যবহার করতে পারেন। সারা রাত রেখে দিন ঠোঁটে।
আমন্ড ত্বকের জন্য যে খুবই ভালো তা তো আমরা সবাই জানি।
আপনার ঠোঁট ভালো রাখতেও কিন্তু আমন্ডকে সঙ্গী করতে পারেন।
এটি খুব সুন্দর করে ঠোঁটের কালো ভাব দূর করে।
উপকরণ
কয়েক ফোঁটা আমন্ড তেল
পদ্ধতি
রাতে শুতে যাওয়ার আগে দু ফোঁটা আমন্ড তেল নিয়ে ঠোঁটে ভালো করে লাগান।
এটা নিয়মিত ঠোঁটে লাগান রোজ রাতে। দেখবেন তাড়াতাড়ি ঠোঁটের কালো দাগ চলে যাচ্ছে।
৩. লেবু-মধু
লেবু ন্যাচারাল ব্লিচিং। যে কোনও দাগ সহজে তুলে দেয়।
তাই ঠোঁটের দাগ তুলতেও খুব কার্যকরী লেবু। তাঁর সঙ্গে মধু নিয়ে নিন। ঠোঁট থাকবে নরম।
উপকরণ
৩ ফোঁটা লেবুর রস, ২ ফোঁটা মধু
পদ্ধতি
একটি পাত্রে লেবুর রস আর মধু নিয়ে মিশিয়ে সেটা আপনার ঠোঁটে লাগিয়ে নিন।
এক ঘণ্টা মতো রাখুন আর তারপর পাতলা কাপড় দিয়ে মুছে নিন।
এটা দিনে বেশ কয়েক বার করুন।
৪. গ্লিসারিন
সূর্যের আলোর জন্য আপনার ঠোঁট পুড়ে গিয়ে যে কালো দাগ হয় বা পিগমেন্টেশন হয়, তা দূর করতে গ্লিসারিন অনবদ্য কাজ দেয়।
এটা ঠোটকে শুকিয়ে যেতেও দেয় না।
উপকরণ
গ্লিসারিন কয়েক ফোঁটা, তুলোর বল।
পদ্ধতি
রাতে শুতে যাওয়ার আগে তুলোর বলে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন নিয়ে ঠোঁটে দিন।
সারা রাত রেখে দিন। নিয়মিত করলে খুব ভালো ফল পাবেন।
৫. অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরায় আছে ফ্লেভোনয়েড।
এই পলিফেনোলিক উপাদানটি ঠোঁটের কালো ভাব দূর করে সহজেই।
পাশাপাশি ঠোঁট উজ্জ্বলও করে।
উপকরণ
অ্যালোভেরা জেল
পদ্ধতি
ফ্রেস অ্যালোভেরা জেল নিয়ে ঠোঁটে দিন আর শুকিয়ে যেতে দিন।
তারপর হাল্কা গরম জল দিয়ে ধুয়ে নিন। আপনি সঙ্গে সঙ্গেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
রোজ এক বার করে করতে পারেন।
৬. অ্যাপেল সিডার ভিনিগার
অ্যাপেল সিডার ভিনিগারে আছে আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড, যার ফলে এটি খানিক অ্যাসিডিক।
তাই এটি দাগ তোলার ক্ষেত্রে একটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে কাজ করে।
উপকরণ
১ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার, খানিক জল, তুলোর বল।
পদ্ধতি
একটি পাত্রে খানিক জল নিয়ে তাঁর মধ্যে ভিনিগার মেশান।
এর মধ্যে তুলোর বল চুবিয়ে ঠোঁটে রেখে দিন আর শুকোতে দিন।
১০ থেকে ১২ মিনিট পর গরম জল দিয়ে ঠোঁট ধুয়ে নিন। দিনে একবার করতে পারেন।
বেশিক্ষণ ঠোঁটে এটি রাখবেন না কারণ এতে ঠোঁট শুকিয়ে যেতে পারে।
৭. বেকিং সোডা
যে কোনও দাগ তুলতে বেকিং সোডা যে খুবই কার্যকরী সেটা তো আমরা জানিই।
ঠোঁটের কালো দাগ অনেক সময়ে মরা চামড়া দূর না হওয়ার জন্য হতে পারে।
বেকিং সোডা এই মরা চামড়া সুন্দর করে দূর করতে পারে।
তাই ঠোঁট আবার তাঁর নিজের গোলাপি রঙ ফিরে পায়।
উপকরণ
১ চা চামচ বেকিং সোডা, জল, টুথ ব্রাশ।
পদ্ধতি
একটি পাত্রে জল আর বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন।
তারপর তাঁর মধ্যে টুথ ব্রাশ মাখিয়ে সেটা দিয়ে আস্তে আস্তে ঠোঁট ঘষুন।
তারপর তিন মিনিট পর ধুয়ে নিন।
ধুয়ে নেওয়ার পর অবশ্যই লিপবাম বা অলিভ তেল দেবেন ময়েশ্চার ধরে রাখার জন্য।
৮. বিটের রস
বিট খেতে আমাদের অনেকেরই ভালো লাগে না।
কিন্তু ঠোঁটের কালো ভাব দূর করতে বিটের রস খুব কার্যকরী।
এটি খুব সুন্দর করে ট্যান দূর করে ঠোঁট থেকে।
এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ঠোঁটের স্বাস্থ্য ধরে রাখে আর গোলাপি ভাব অনেক দিন থাকে।
উপকরণ
কয়েক টুকরো বিট
পদ্ধতি
একটি বিট নিয়ে কয়েক টুকরো করে ফ্রিজে রেখে দিন।
তারপর আপনার অবসর সময় মতো সেই টুকরো বের করে ঠোঁটে ঘষুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিন।
তারপর ধুয়ে নিন। রোজ এক বার করুন এটি।
৯. শশার রস
ত্বকের দাগ ছোপ দূর করতে শশা তো ব্যবহার করেই থাকেন আপনি।
এবার এই শশার রস আপনি ঠোঁটের কালো দাগ দূর করতেও ব্যবহার করুন।
দেখবেন উপকার পাবেনই।
উপকরণ
কয়েক ফোঁটা শশার রস।
পদ্ধতি
তুলোর বল শশার রসে ডুবিয়ে ঠোঁটের উপর মাখুন।
দিনে কয়েক বার করুন। ১০ মিনিট করে রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটা সপ্তাহে তিন দিন ধরে করুন।
১০. গোলাপ জল
ত্বকের উন্নতির জন্য গোলাপ জল আমরা টোনার হিসেবে ব্যবহার করে থাকি।
এবার আপনার ঠোঁট সুন্দর করতে গোলাপ জল ব্যবহার করুন নিশ্চিন্তে।
গোলাপ জল ঠোঁটের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। তাই ঠোঁট গোলাপি থাকে।
কয়েক দিন করলেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
উপকরণ
ঠাণ্ডা গোলাপ জল, তুলোর বল।
পদ্ধতি
তুলোর বলে গোলাপ জল নিয়ে তা ঠোঁটের উপর লাগান আর রেখে দিন ১৫ মিনিট মতো।
তারপর ধুয়ে নিন। আপনি এটা দিনে যত বার খুশি করতে পারেন।
এবার তো কালো ঠোঁট নিয়ে হাসি চেপে রাখতে হবে না। ঠোঁট সুন্দর রাখুন, মন খুলে হাসুন আর সুন্দর থাকুন। গ্ল্যামোজেনের টিপস সঙ্গে রইলো।