আপনি যতই সুন্দর চেহারার অধিকারী হোন না কেনো আপনার মেকআপ করতে ভালো লাগবেই।
মেকআপ করতে কার না ভালো লাগে?
কিন্তু মেকআপের জন্য আপনার ত্বক অনুযায়ী সঠিক প্রোডাক্ট বাছাই করা অত্যন্ত জরুরি।
স্টোরে গিয়ে আপনার যেকোনো একটি ফাউন্ডেশন পছন্দ হয়ে গেলো সেটাই কিনে নিয়ে আসলেন।
বাসায় এসে দেখলেন সেটা আপনার ত্বকে ঠিক মতো বসছে না বা ত্বক কালো দেখাচ্ছে।
ফাউন্ডেশন কিনতে হলেও আপনাকে যথেষ্ট যাচাই করে কিনে আনতে হবে।
নয়তো নানান সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।
আর সঠিক ফাউন্ডেশন না বাছাই করার জন্য মেকআপের পর চেহারা কালো বা অক্সিডাইজ হয়ে যায়।
অক্সিডাইজড কেনো হয়?
অক্সিডাইজড হওয়ার নানা কারণ রয়েছে।
যাদের অয়েলি ত্বক তাদের ক্ষেত্রে ত্বক অক্সিডাইজ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আমাদের ত্বকের নিজস্ব প্রাকৃতিক তেল রয়েছে।
আর আমাদের ত্বকে ব্যবহার করা ফাউন্ডেশন অয়েল বেইজড হলে আরো সমস্যা।
এই দুই ধরণের তেল একসাথে হয়ে স্বাভাবিক ভাবেই রিঅ্যাক্ট করে। ফলে ত্বক অক্সিডাইজ হয়।
এছাড়াও আমাদের স্কিনের পি.এইচ লেভেলের কারণেও ত্বক অক্সিডাইজড হয়।
পাশাপাশি সূর্যের তাপ, বাতাসের আর্দ্রতা এগুলার প্রভাবেও স্কিন রিঅ্যাক্ট করে এবং এর ফলে ফাউন্ডেশন অক্সিডাইজড হয়ে থাকে।
সব জিনিস বাতাসে অক্সিজেনের সংস্পর্শে অক্সিডাইজড হয়। কিন্তু আমরা সব খেয়াল করতে পারি না।
খুব সহজেই লক্ষণীয় হচ্ছে আপেলের অক্সিডাইজড হওয়া।
একটি আপেল কেটে রেখে দিলে কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে সেটা কালচে হয়ে যাচ্ছে।
এর কারণ আপেল বাতাসে থাকা অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে রিঅ্যাক্ট করে কালচে আকার ধারণ করছে।
আমাদের ত্বকের কালচে হওয়া বা অক্সিডাইজ হওয়ার কারণ ও ঠিক এটাই।
মেকআপ কালো হয়ে যাওয়া বা অক্সিডাইজড হওয়া রোধ করতে আপনার করণীয়
১) অয়েল ক্লিঞ্জার
ত্বকের অতিরিক্ত তেল অক্সিডেশনের মূল কারণ।
আপনার ত্বক খুব বেশি অয়েলি হলে তা কিছুক্ষণ পরই কালো দেখা যাবে।
তাই খুব বেশি অয়েল হলে সেটা কন্ট্রোল করতে হবে। তার জন্য ভালো মানের অয়েল ক্লিঞ্জার ব্যবহার করতে হবে।
খেয়াল রাখতে হবে যেনো আমাদের ত্বকের পিএইচ লেভেলের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।
২) আইস রাবিং
মেকআপ করার আগে ত্বক ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
এরপর একটি সুতি কাপড়ে বরফ নিন। সেটা ভালো মতো পেচিয়ে চেহারায় ঘষুন।
সার্কুলার মোশনে পুরো চেহারার ঘষুন। এতে পোর মিনিমাইজ হবে।
অয়েল প্রোডিওসও ধীরে ধীরে কমে যাবে। তাই ভালোমতো মেকআপও বসবে।
৩) প্রাইমার ব্যবহার
প্রাইমার মেকআপে কোনো চেঞ্জ না করলেও এটা আমাদের মেকআপ ও ত্বকের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইমার আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
আমাদের ত্বকের অতিরিক্ত সেবাম প্রডাকশনকে নিয়ন্ত্রণ করে। যার ফলে মুখের তেলতেলে ভাব দূর হয়।
আমাদের ত্বক ও ফাউন্ডেশনের মাঝে প্রাইমার একটি দেয়াল তৈরি করে।
একটি দেয়াল তৈরি করার মাধ্যমে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে।
প্রাইমারের তৈরি দেয়াল আমাদের ত্বক থেকে সৃষ্ট অয়েলকে ফাউন্ডেশনের সাথে মিক্স হতে দেয় না।
যার ফলে ত্বক সুস্থ ও সুন্দর থাকে। আর অক্সিডাইজ হওয়া থেকে বিরত থাকে।
তাই একটি ভালো প্রাইমার ব্যবহার করা খুবই প্রয়োজন।
৪) অয়েল ফ্রি ফাউন্ডেশন
আপনার ফাউন্ডেশনের ইনগ্রিডিয়েন্স চেক করেছেন কি?
না করে থাকলে এখনি চেক করুন।
আপনার ত্বক অয়েলি হলে অবশ্যই আপনার ফাউন্ডেশন অয়েল ফ্রি পছন্দ করতে হবে।
সম্পূর্ণ অয়েল ফ্রি না হলেও তেলের মাত্রা বা পরিমাণ যাতে কম থাকে সেই অনুযায়ী বাছাই করে নিতে হবে।
ভিটামিন-ই ও গ্রীন টি এর নির্যাসযুক্ত ফাউন্ডেশন ত্বক অক্সিডাইজ হওয়া রোধ করে।
তাই কেনার আগে অবশ্যই ইনগ্রিডিয়েন্স দেখে কিনুন।
৫) ত্বক ব্লটিং করুন
ব্লটিং পেপার খুব নরম ও এর তেল শোষনের ক্ষমতা ভালো।
সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে মেকআপ রিমুভ না করেই ব্লটিং পেপারের সাহায্যে সহজেই ত্বকের অতিরিক্ত তেল মুছে ফেলতে পারবেন।
তাছাড়াও মেকআপ করার সময় ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করার আগে ব্লটিং করে নিবেন।
তাহলে অতিরিক্ত তেল দূর হবে আর ত্বক
ফ্রেশ থাকবে।
৬) স্কিন কেয়ার রুটিন
আমাদের ত্বককে অক্সিডাইজড হওয়া থেকে রক্ষা করতে হলে বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলতে হবে।
প্রতিদিনের ত্বকের পরিচর্যা আপনার ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন
- ক্লিঞ্জিং: ত্বকের গভীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করার জন্য ক্লিঞ্জিং অবশ্যই জরুরি।
- অয়েল ক্লিঞ্জিং: ত্বক যদি অতিরিক্ত অয়েলি হয় তবে অয়েল ক্লিঞ্জিং আবশ্যক।
এতে ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর হয়।
- স্ক্রাবিং: স্ক্রাবিং খুবই উপকারী একটি ত্বকের যত্নে।
কিন্তু যাদের পিম্পলের সমস্যা আছে তাদের অবশ্যই এই ধাপটি এড়িয়ে যেতে হবে।
তাছাড়া সাধারণ ত্বকের জন্য সপ্তাহে ১/২ অন্তত স্ক্রাবিং করা উচিত।
- টোনিং: অনেকেই ভেবে থাকেন যে টোনিং খুব প্রয়োজনীয় না।
কিন্তু টোনিং আমাদের ত্বকের পিএইচ লেভেল বজায় রেখে ত্বক ভালো রাখে। তাই টোনিং করা খুবই উপকারী।
- সিরাম: ত্বকের অবস্থা বা ধরন অনুযায়ী আমাদের বিভিন্ন সিরাম ব্যবহার করা উচিত।
- ময়েশ্চারাইজিং: আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা আবশ্যক।
আমাদের বডির মতই আমাদের ত্বকেরও ডিহাইড্রেট থাকা প্রয়োজন।
আর ত্বক ডিহাইড্রেট রাখতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
- সানস্ক্রিন: দিন হোক বা রাত, আমাদের সবসময়ই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
শুধুমাত্র সূর্যের তাপ থেকেই রক্ষার কাজ সানস্ক্রিন করে তেমনটি নয়।
আমাদের ত্বককে রক্ষা করতে হবে চুলার তাপমাত্রা ও বাইরের পলিউশন থেকেও।
যার জন্য একটি ভালো এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন প্রয়োজন।
৭) ত্বকের পিএইচ লেভেলের ভারসাম্য বজায় রাখা
ত্বক অক্সিডাইজ হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো ত্বকের পিএইচ লেভেলের ভারসাম্য বজায় না থাকা।
তারজন্য আমাদের অ্যাপ্লাই করতে হবে টোনার।
একটি ভালোমানের টোনার আমাদের ত্বকের পিএইচ লেভেলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
টোনিং করার ফলে ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে।
তাই আমাদের ত্বক উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত লাগে দেখতে।
আমাদের নিয়মিত স্কিন কেয়ার রুটিনে টোনিং যুক্ত করা আবশ্যক।
এই নিয়মগুলো মেনে চললে আশা করছি অক্সিডাইজ হওয়া থেকে ত্বক রক্ষা পাবে।