আমাদের দিনের শুরুটা এমন ভাবে করা উচিত যাতে বাকি সময় খুব রিল্যাক্স ও ভালো মুড থাকে।
একটি ফ্রেশ স্টার্ট করতে হলে আমাদের কিছু খারাপ অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।
আমরা সকালে উঠেই নানা ভুলের ও বাজে অভ্যাসের মাধ্যমে আমাদের দিন শুরু করি।
যার কারণে সারাদিন আমাদের অগোছালো আর আলসেমিতে কাটে।
সারাদিন একটিভ ও সতেজ থেকে কাজ করার মজাই আলাদা।
চলুন জেনে নেই আমরা আমাদের সকাল কী ভুলগুলো দ্বারা শুরু করি।
১) স্নুজ ক্লিক করা
আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠার জন্য ৫/৬ টা করে অ্যালার্ম সেট করে থাকি।
এটা দিনের পর দিন ভুল হচ্ছে আর একটি বাজে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।
প্রথমে অ্যালার্ম বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমেই আমরা আমাদের ব্রেইনকে সিগন্যাল দিচ্ছি যে কমিটমেন্ট ভাঙা ঠিক আছে।
আরো সময় আছে বা কিছুক্ষণ বেশি ঘুমানো যাবে।
আমরা যখন প্রথম অ্যালার্ম স্নুজ ক্লিক করে ঘুমিয়ে যাচ্ছি আমরা নতুন একটি ঘুমের ঘোরে চলে যাই।
পরবর্তীতে যখন দ্বিতীয় ও তৃতীয় অ্যালার্ম বাজে তার কিছুক্ষণ পর উঠি।
ফলে সারাদিন আমাদের চোখে ঘুম লেগে থাকে আর খুব ক্লান্ত লাগে। এটাকে বলা হয় ইনার্সিয়া (Inertia)।
তাই যত কঠিন বা আলসেই লাগুক না কেন আমাদের প্রথম অ্যালার্মেই উঠে যেতে হবে।
তাহলে খুব সতেজ ও এক্টিভ অনুভব হবে।
২) ফোন চেক করা
আমরা আমাদের চোখ খোলার আগেই মোবাইল খুঁজে বেড়াই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কি চলছে তা জানার আগ্রহ প্রোকাশ করি।
এইভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দেই। কিন্তু এটা করা উচিত নয় মোটেও।
এর ফলে আমাদের ব্রেইন অপ্রয়োজনীয় চাপ নিতে থাকে।
সকালে উঠে ফোন চেক না করে পজিটিভ চিন্তা করুন।
ভালোভাবে মুখ ধুয়ে সকালের নাস্তা করে নিন। এটা আমাদের স্বাস্থের জন্য খুব উপকারী।
আপনি তার পর ইয়োগা বা ব্যায়াম করে নিতে পারেন।
৩) সকালে উঠেই চা বা কফিতে চুমুক দেয়া
চা বা কফি পান করা মোটেও খারাপ না হচ্ছে বলছিনা। তবে খালি পেটে প্রথমেই চা বা কফি না খাওয়া উচিত।
একটি হেলদি স্টার্ট করতে চাইলে আপনি সকালে এক গ্লাস পানি পান করে নিতে পারেন।
কিন্তু ভালো হয় পানি অল্প গরম করে নিন। আর তাতে অ্যাড করুন কয়েক ফোঁটা লেবুর রস। মিক্স করে পান করে নিন।
পানি বা লেবুযুক্ত পানি পান করার ফলে আপনার শরীর হাইড্রেটেড থাকবে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত।
তাছাড়াও এই পানীয় আপনার মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
যাদের কন্সটিপেশনের সমস্যা আছে সেই সমস্যাও খুব শীঘ্রই সমাধান হয়ে যাবে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে আপনার পানি রুম টেম্পারেচারের হয়।
তাতে করে আপনার শরীর শকড হবে না। আর সারাদিন মুড ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
৪) বিছানা না গুছিয়ে নেয়া
সকালে উঠে বিছানা গুছিয়ে নেয়া অযথা মনে হচ্ছে কি?
তবে আপনি ভুল। আপনি যদি ভেবে থাকেন আপনার মা, বাবা বা অন্য কেউ আপনার বিছানা গুছিয়ে দিবে বা আপনার বিছানা এইভাবেই থাকবে রাতে এসে ঘুমিয়ে যাবেন।
তাহলে বলে দিচ্ছি এটা একদম ভালো অভ্যাস না।
নিজের বিছানা নিজেই গুছিয়ে নিলে তা পরবর্তীতে আপনাকে অন্য কাজ করতে আগ্রহী করবে।
আপনাকে মোটিভেট করবে আর উৎসাহী করবে।
বিছানা গুছিয়ে নেয়ার মাধ্যমে আপনি একটি ভালো অভ্যাসে চলে যাবেন যা আপনাকে নিয়মানুবর্তিতা ও সময়ানুবর্তিতা শিখাবে।
৫) ব্রেকফাস্ট না করা
অনেকেই আমরা সকালের নাস্তা না করেই কাজে বের হয়ে যাই।
তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে যাওয়ার ফলে আমাদের পেট খাবার পায় না।
যেটা দিন দিন খারাপ অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে।
সকালের নাস্তা খুবই উপকারী আমাদের জন্য।
কারণ সারারাত আমাদের পেট কোনো ধরণের খাবার পায় না। সকালে উঠে তাই খেয়ে নেয়া জরুরি।
তাছাড়াও সকালের নাস্তা এড়িয়ে চললে অনেক অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে মন চাইবে।
যা আরেকটা সমস্যার সম্মুখীন করবে।
তাই সকাল শুরু করুন হেলদি ব্রেকফাস্ট দিয়ে।
খাবারের তালিকায় রাখুন পুষ্টিকর খাবার ও বিভিন্ন ফলের জুস।
এতে করে আপনার শরীর শক্তি পাবে যথেষ্ট।
আর সারাদিন মুড ভালো থাকতেও সাহায্য করবে।
৬) সূর্যের আলো ঘরে প্রবেশ করতে না দেয়া
সূর্যের আলো ঘরে প্রবেশ না করতে দেয়া আমাদের অন্যতম বাজে অভ্যাস।
আপনার চোখকে সারাদিনের সূর্যের আলোর সাথে মানিয়ে নিতে হলে সকালের রোদ আপনার ঘরে প্রবেশ করানো উচিত।
জানালার পর্দাগুলো সরিয়ে নিজেকে ঘুম থেকে উঠানোর একটি ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সকালের রোদ আপনার শরীর সেরোটোনিন ও কর্টিসল উৎপন্ন করে। এটি আপনার ভালো মুড রাখতে ও কাজে ফোকাস হতে সাহায্য করে।
রোদের সংস্পর্শে আপনার শরীরের ব্যাক্টিরিয়া ধ্বংস হয় আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
সকালের রোদ আপনার শরীর ও মনের উপর খুব ভালো প্রভাব ফেলে। যা আপনার জন্য উপযোগী।
৭) সকালে উঠে শারীরিক ব্যায়াম না করা
সকালে উঠে আপনার মনে চাইতে পারে পুরো শরীর একটু স্ট্রেচ করে নেই।
হ্যা, অল্প ওয়ার্ম আপ করে আপনার শরীরকে শারীরিক ব্যায়ামের জন্য তৈরি করে নিন।
সকালে উঠে ব্যায়াম করার মাধ্যমে আপনার শারীর ও মন দুইটাই ভালো থাকবে। আপনি কাজ করেও আনন্দ পাবেন খুব।
শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে স্ট্রেস কমে যায়। আর সারা দিনের কাজ করে নেয়া খুব সহজ ও ভালো হয়।
এই অভ্যাসগুলো ত্যাগ করে আপনি একটি চালো অভ্যাস গড়ে তুলতে পারবেন।
যার ফলে আপনার জন্য আপনার কাজের রুটিন গুছিয়ে সেই অনুযায়ী চলতে খুব সুবিধা হবে।