চলছে রোজা। তাঁর ওপর গরমকাল। এখন বাঙ্গির মৌসুম। তাই বাজার ভরপুর গ্রীষ্মের এই ফলে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হরহামেশা ঠাট্টা-বিদ্রুপ হয় বাঙ্গিকে নিয়ে। মূলত স্বাদহীনতা এর প্রধান কারণ।
স্বাদ কম হলেও, পুষ্টিগুনে বাঙ্গি অনন্য। লতানো গাছে ধরা বাঙ্গিকে অনেকে ফুটি বলেও ডাকে।
বাঙ্গির অপর নাম খরমুজ, কাঁকুড় বা বানি। তবে রসাল ফলটির মিষ্টি কম হওয়ায় অনেকে খেতে আগ্রহ দেখায় না।
কিন্তু পুষ্টিগুণে এর জুড়ি নেই। তাই বাঙ্গিকে অবহেলা নয়। খেলে উপকার হবে নিজেরই।
তরমুজের পর এটিই অধিক প্রচলিত শসাগোত্রীয় ফল। চাষ পদ্ধতি সহজ হওয়ায় ফলন হয় সন্তোষজনক।
হাতের নাগালে পাওয়া বাঙ্গির দামও থাকে সহজলভ্য।
মসৃণ ত্বকের বাঙ্গি আকারে ছোট-বড় বেশ কয়েক রকমের হয়।
কাঁচা ফল সবুজ এবং পাকলে হলুদ রঙের হয়। একটু বেশি পেকে গেলে বাঙ্গি সহজে ফেটে যায়।
বাঙ্গির পুরোটাই জলীয় অংশে ভরপুর। এটি ভিটামিন ‘সি’, শর্করা ও সামান্য ক্যারোটিন সমৃদ্ধ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক ফলটি খেলে কী কী উপকার হয়।
পুষ্টিগুণ
বিভিন্ন খনিজ পদার্থ, নানা রকম ভিটামিন এবং ফলিক এসিড সমৃদ্ধ বাঙ্গি খুবই উপকারী এবং পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ একটি ফল।
প্রতি ১০০ গ্রাম বাঙ্গিতে আছে পানি ৭৩.২ গ্রাম, আমিষ ২.৯, শর্করা ২৩.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১১ মিলিগ্রাম, আয়রন ১.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ৭.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ১১.০৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ৮৫ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ১০৪ কিলোক্যালরি এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ ১ গ্রাম।
এসব পুষ্টি উপাদান নানাভাবে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
বয়স ধরে রাখে
বাঙ্গি ত্বকের বয়সের ছাপ দূর করে।
এটি ত্বকের কোষ নষ্ট হয়ে গেলে তা ঠিক করতে সাহায্য করে।
বাঙ্গির প্রোটিন কম্পাউন্ড ত্বককে করে সুন্দর। বাঙ্গি মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন।
এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করুন।
দূর করে ব্রণ, একজিমা
ব্রণ বা একজিমার সমস্যায় ভুগলে প্রতিদিন এক গ্লাস বাঙ্গির শরবত খান।
এছাড়াও বাঙ্গি ভালো করে ব্লেন্ড করে ছেঁকে রসটুকু বের করে তা লোশনের মতো ব্যবহার করুন।
এতে ব্রণ এবং একজিমার সমস্যা দূর হয়।
চুল পড়া কমায়
বাঙ্গিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘বি’।
এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ‘ইন্সনিটোল’, যা আমাদের চুল নতুন করে গজাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া প্রতিরোধ করে থাকে।
তাই নিয়মিত বাঙ্গি খেলে চুলের অনেক উপকার পাওয়া যায়।
এছাড়া ব্লেন্ড করা বাঙ্গি শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনারের মতো ব্যবহার করাও ভালো।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
বাঙ্গিতে আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ডায়াটারি ফাইবার, যা খাবার হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুব উপকারী বাঙ্গি
বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে।
তাই মানুষের জন্য, বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য বাঙ্গি বিশেষ উপকারী ফল।
বাঙ্গিতে কোনো চর্বি নেই
যারা দেহের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বিশেষ চিন্তায় ভোগেন তারা এ ফল খেতে পারেন নির্দ্বিধায়।
দেহের ওজন কমাতে এবং উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে বাঙ্গির ভূমিকা অপরিহার্য।
তাই বাঙ্গি খেলে মুটিয়ে যাওয়ার ভয় নেই একেবারেই।

বাঙ্গি দ্রুত ক্ষত সারাতে সাহায্য করে
বাঙ্গিতে রয়েছে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি। বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ ফল
সাধারনত মিষ্টি ফলগুলোতে সুগার এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।
বাঙ্গিতে চিনির পরিমাণ রয়েছে খুবই কম, তাই ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন সাচ্ছন্দে।

এছাড়াও
বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি, যা গরমে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
গরম ও অতিরিক্ত রোদের জন্য হয় সানবার্ন, সামার বয়েল, হিট হাইপার পাইরেক্সিয়া। বাঙ্গির রস এই অসুখগুলো প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
অ্যাসিডিটি, আলসার, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধামান্দ্য, নারীদের হাড়ের ভঙ্গুরতা রোধ করতে সাহায্য করে বাঙ্গি।
হাড়ও মজবুত করে বাঙ্গি। বাঙ্গি মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহে সহায়তা করে। ফলে মন ও শরীরের অবসাদ দূর করার ক্ষমতাও রয়েছে এ ফলের।
নিয়মিত বাঙ্গির শরবত খেলে খাবারে অরুচি, নিদ্রাহীনতা, আলসার ও অ্যাসিডিটি দূর হয়।
এখন তো জেনে গেলেন বাঙ্গির উপকারিতা। আর নয় অবহেলা। মনের সুখে বাঙ্গি খান, সুস্থ থাকুন।