সুন্দর ঝলমলে চুল কে না চায়।
কিন্তু এখনকার দূষিত আবহাওয়া আর কেমিকেলে ভরা প্রসাধনীর ব্যবহারে এত্ত শখের ঝলমলে চুলগুলো অকালেই কেমন যেন পাতলা হয়ে যায়।
চুলগুলোও কেমন যেন ফ্যাকাশে আর লালচে একটা রূক্ষতায় ভরে ওঠে।
একথা এক কথায় অনস্বীকার্য যে, খোদ পশ্চিমা দেশগুলোও এখন বডি এবং স্কিন কেয়ারে কেমিকেল এর তুলনায় হার্বাল/অর্গানিক প্রডাক্টের দিকেই বেশি ঝুঁকছে।
এমনকি দামে বেশি হলেও, কিনে ব্যবহার করতে পরোয়া করছে না।
এমনই একটা হারবাল চুলের প্রডাক্ট- নিমের তেল নিয়ে আজ গ্ল্যামোজেনের আয়োজন।
এই তেলটা সহজেই বাসায় তৈরি করে ফেলতে পারবেন।
অথচ অনলাইনেই এসব তেল ২৬০মিলি ই বিক্রি হচ্ছে বেশ চওড়া দামে, শুধুমাত্র অর্গানিক প্রডাক্ট বলে।
উপকরণ
১. এক কাপ (২৫০ মিলি) ঘাণিভাঙা বিশুদ্ধ নারকেল তেল।
২. ৪ কাপ নিমের সতেজ পাতা।
৩. ছাঁকুনি,বোতল ইত্যাদি
প্রস্তুত প্রণালী
১. প্রথমে নিমপাতাগুলো একটা নেটের ব্যাগে করে বারান্দায় এমন ভাবে শুকাতে দিন।
এমনভাবে দিবেন, যেন রোদের আলো সরাসরি না পড়ে, কিন্তু বেশ বাতাসের সংস্পর্শে আসে।
এতে করে আমাদের দেশের আর্দ্র আবহাওয়ার নিম পাতার আসল রস্টুকু শুকিয়ে যাবে না, কিন্তু পাতার মধ্যে থাকা বাড়তি পানি/জলীয় অংশ শুকিয়ে যাবে।
এভাবে শুকালে, পাতা শুষ্ক অবস্থাতেও সবুজ বর্ণের থাকবে। কিন্তু রোদের নিচে শুকালে, পাতা শুকিয়ে খয়েরী রঙের হয়ে যাবে।
২. প্রায় ২ দিন ব্যাগে ঝুলিয়ে এভাবে আধো শুকনা অবস্থায়, পাতাগুলোতে একটা ব্লেন্ডার মেশিনের ছোট কাপে নিন।
যে কাপগুলোয় গরম মশলা গুঁড়ো করা হয় সাধারণত।
৩. ব্লেন্ড করা হলে একদম পাউডার অবস্থায় নিমের পাতাগুলোকে পাবেন।
৪. এবার একটা ওভেনপ্রুফ বাটিতে ২৫০ মিলি বিশুদ্ধ ঘানি ভাঙা নারিকেল তেল নিন।
৫. প্রতি ২৫০ মিলি তেলের জন্য ২ টেবিল চামচ করে নিম-পাতার গুঁড়ো ঢালবেন তেলের মধ্যে।
৬. এবার ওভেনপ্রুফ বাটির থেকে সাইজে বড় একটা সসপ্যান/কড়াই নিন।কড়াইটি ট্যাপের পানিতে পূর্ণ করুন।
এরপর ওভেনপ্রুফ বাটিটি সেই পানিপূর্ণ পাত্রের ঠিক মাঝখানে রাখুন।
৭. এবার পুরা সস-প্যান /কড়াইটি মৃদ্যু আঁচে জ্বাল দিতে থাকবেন।
একটা চামচ বা নাড়ানি দিয়ে সমানে নাড়তে থাকুন। নাড়ানো বন্ধ করা যাবে না,নইলে তেল পুড়ে যেতে পারে ।
এই সমানে নাড়ানোই তেলটাকে সমানভাবে সবদিকে গরম করছে।
৮. এভাবে ২০-২৫ মিনিট (৫০০ মিলি এর অধিক তেল) জ্বাল দিলে দেখবেন, তেলের বর্ণ গোল্ডেন থেকে আস্তে আস্তে অলিভ গ্রিন, এবং অবশেষে গাঢ় সবুজ হয়ে গেছে।
৯. ওভেনপ্রুফ বাটিটি নামিয়ে ঠান্ডা করুন।
কুসুম গরম থাকতে থাকতে পানি ছেঁকবার ছাঁকুনি দিয়ে ছেঁকে তেল আর নিম-গুঁড়ার তলানী আলাদা করুন।
ব্যাস তৈরি হতে গেল আপনার নিম-নারকেল তেল!
ব্যবহারবিধি
১. এই তেল সপ্তাহে অল্টারনেট করে ৩দিন লাগাতে হবে।
শনি-সোম-বুধ; কিংবা রবি-মঙ্গল-বৃহস্পতি।
২. রাতে শোয়ার আগে প্রথমে মাথার ত্বকে সিঁথি কেটে কেটে, এবং চুলের আগায় লাগাবার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিক।
এরপর বাকি অবশিষ্ট তেল সারা চুলে লাগান।
৩. সকালে ভালো করে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
৪. এই তেলটি অধিক কার্যকরী করতে, মাথায় প্রতিবার লাগানোর পূর্বে , একটা পাত্রে পরিমাণ মতো নিয়ে, তাতে দুইটা ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে , কুসুম গরম করে , এরপর মাথায় এপ্লাই করুন।
৫. তেলটা লাগানোর পর মাথা কিছুক্ষণ মাসাজ করুন।
এতে রক্ত চলাচল বাড়বে, নতুন যে কোষগুলো থেকে চুল তৈরি হবে, তাতে পুষ্টি সরবরাহ হবে।
এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই নিজের চুলে একটা বিশাল পরিবর্তন দেখবেন।
সতর্কতা
১. চুলায় জ্বাল দেয়ার সময়, তেলের মধ্যে যেন কড়াই থেকে পানি ছিটকে না মেশে।
২. ঠান্ডা তেলের মিশ্রণ ছাঁকুনির সময় যেন, গুড়া নিমের তলানী বোতলে না যায়।
পানি জ্বাল দেয়ার সময় মিশলে, কিংবা নিম গুড়ার তলানী বোতলে গেলে, এক মাসের বেশি এই তেলটা সংরক্ষণ করা যাবে না।
এতে পচে গন্ধ বের হবে।
আর সতর্কতা অবলম্বন করে তেলটি প্রস্তুত করলে এক বোতল তেল ৬-৮ মাস পর্যন্ত ব্যবহার উপযোগী থাকবে।
নিম নারকেল তেলের উপকারিতা
নিম পাতা বরাবরই খুব ভালো এন্টিবায়োটিক অর্থাৎ রোগ-প্রতিরোধকারী হিসেবে বিশেষ পরিচিত।
অপরদিকে নারিকেল তেল বিখ্যাত রূক্ষ্ণ চুলকে মোলায়েম করতে।
এই দুইটা উপকরণ যখন একসাথে কাজ করে, তখন যে যে পরিবর্তন বা উপকারিতাগুলো বিশেষভাবে দেখা যায়-
১.নিয়মিত নিম চুলের গোড়ায় থাকা ফাংগাস বা ব্যাক্টেরিয়াগুলোকে মেরে ফেলে। এরফলে চুল-পড়া লক্ষণীয়ভাবে কমে যায়।
এমনকি সোরিয়োসিসের মতো রোগের ক্ষেত্রে চুল পরা কমে যায়, সংক্রমিত এলাকার চামড়া ঝরে পড়তে সাহায্য করে।
২. যেহেতু ফাংগাস গুলোকে মেরে ফেলে, ফলে চুল তৈরীর কোষগুলো আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে। ওরে।ফলে নতুন চুল গজাতে থাকে।
৩. নারকেল তেল চুলগুলোকে ঝরঝরে, মসৃণ করে।
৪. নিম আর নারকেল তেলের কেমিক্যাল রিয়েকশনে সৃষ্ট নতুন উপাদান চুলের আগা ফাটা ঠেকায় এবং রুক্ষতা দূর করে।
বিশেষভাবে দ্রষ্ট্রব্য
বংশগত চুল কমে গেলে কিংবা কোন মেডিসিনের ড্রাগ রিয়েকশনে চুল কমে গেল এই টোটকা-তেল কাজে দিবে না।
সেক্ষেত্রে গ্ল্যামোজেন বিশেষভাবে পরামর্শ দিবে, সংশ্লিষ্ট ডার্মাটলোজিস্টের সাথে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করতে।
সকলের সুস্থতা কামনা এবং তথ্য সরবরাহে স্বচ্ছতাই গ্ল্যামোজেনের অনন্য বৈশিষ্ট্য।