আপনার স্কিন সুন্দর রাখার জন্য, ভালো রাখার জন্য আপনি কত আলাদা কিছুই না করেন।
দিনের জন্য ডে কেয়ার ক্রিম, রাতের জন্য নাইট কেয়ার ক্রিম আলাদা ভাবে ব্যবহার করেন।
তাহলে চুলের জন্য রাতে কীভাবে যত্ন নেবেন ভাবেননি কেন আগে?
রাতে ঘুমানোর আগে চুলের খেয়াল কীভাবে রাখবেন রইলো তার যাবতীয় খুঁটিনাটি।
রাতে আলাদা যত্ন কেন?
সারাদিন আমাদের চুলের ওপর অনেক ধকল যায়। কখনও চুলের নানারকম স্টাইল, কখনও স্ট্রেটনিং, চুলে নানা রকমের এক্সপেরিমেন্ট আমরা করে থাকি।
এছাড়া চুলের মধ্যে ঘাম জমা, ময়লা জমা এসব তো রইলই।
রাতে এসে আমাদের মতো আমাদের চুলও খানিক রিল্যাক্স হতে পারে। সেই সময়ে আমরা যদি চুলকে আরেকটু প্যাম্পার করি, তাহলে চুল কিন্তু পরের দিনের জন্য এক্কেবারে তৈরি হয়ে যায়।
তাই রাতে কিছু জিনিস মেনে চললে আর কিছু জিনিস এড়িয়ে চললে আপনার চুল ভালোই থাকবে।
কী কী করবেন?
চুলের জন্য রাতে কি কি করবেন সেটা আমরা সার্বিক ভাবে বলে ছেড়ে দেব না। বরং আপনার চুলের ধরণ অনুযায়ী আলাদা আলাদা ভাবে বলবো।
১. রুক্ষ চুলের যত্ন (ড্রাই হেয়ার কেয়ার)
চুল রুক্ষ হওয়া মানেই চুলের ডগা ভাঙা, চুল বেশি পড়ে যাওয়া। রুক্ষ চুল থেকেই কিন্তু চুলের ড্রাইনেস বাড়ে, আর আপনার চুল হয়ে যায় ড্রাই চুল।
ড্রাই বা রুক্ষ চুল মানেই তাতে আর্দ্রতা কম, হাইড্রেশনের অভাব।
এই ধরণের চুলে ময়েশ্চারের জোগান দেওয়া খুব দরকার। আর সেটি রাতে করলে অনেকক্ষণ চুল সেই ময়েশ্চার পায়।
তাই রুক্ষ চুলের যত্নের জন্য রাতে অবশ্যই নারকেল বা আমলকির তেল খানিক গরম করে হাল্কা হাতে চুলে, স্ক্যাল্পে লাগান।
তারপর একটি হেয়ার মাস্ক লাগিয়ে নিন। এতে চুল ভাল থাকবে।
সারা রাত রেখে দিন। সকালে উঠে মাথা ধুয়ে নিন ভালো করে। ইচ্ছে হলে শ্যাম্পু করতে পারেন।
২. তৈলাক্ত চুলের যত্ন (অয়লি হেয়ার কেয়ার)
তেলতেলে বা অয়েলি চুল ভাল থেকবে তখনই যখন তার থেকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ হবে না। তাই সারাদিনের পর রাতে এসে অবশ্যই শ্যাম্পু করতে হবে।
এর ফলে সারাদিনের ময়লা যেমন স্ক্যাল্প থেকে চলে যাবে, তেমনই অতিরিক্ত সিবাম তৈরি বন্ধ হবে।
অবশ্যই পারলে ডাস্ট শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করুন। ডাস্ট শ্যাম্পুর মধ্যে লিকুইড কেমিক্যাল কম থাকে, তাই এটি তেলতেলে চুলের জন্য ভালো।
শ্যাম্পু করার পর অ্যাকোয়া বেশ কন্ডিশনারই ব্যবহার করুন, কোনও তেলতেলে লোশন বা জেল নয়। রাতে রোজ আপনারা তেল দেবেন না।
৩. স্ট্রেইট চুলের যত্ন
এই ধরণের চুলের যত্ন খুব সহজ। ড্রাই শ্যাম্পু পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করলে আর ধুতে হয় না। ভালো দোকানে বা শপিং মলে পেয়ে যাবেন। সেই শ্যাম্পু চুলে দিন।
তারপর হাল্কা করে চুল ব্রাশ করে নিন। তারপর আলগা ছোট একটা পনি টেইল করে চুল বেঁধে দিন। ব্যাস, পরের দিনের তরতাজা চুলের জন্য আপনি রেডি।
৪. কোঁকড়ানো চুলের যত্ন
স্ট্রেইট চুলের বিপরীতে এই চুল নিয়ে যেন চিন্তা আমাদের বেশি। কিন্তু রাতে সহজেই কোঁকড়ানো চুলের যত্ন আপনি করতে পারেন।
রাতে কোঁকড়ানো চুল ভালো করে ব্রাশ করে ছোট ছোট বিনুনি করে রেখে দিন। খুব মোটা বিনুনি করার দরকার নেই।
এই বিনুনি কোঁকড়ানো চুলকে মজবুত করে আর কোঁকড়ানো চুল আরও সুন্দর লাগে।
কী কী করবেন না?
এখানে সাধারণ ভাবে কিছু না করার লিস্ট আপনাদের সামনে রাখি। এই কাজগুলো কিন্তু চুলের রকমভেদ ছাড়া সবাইকেই মানতে হবে।
১. অপরিষ্কার চুলে ঘুম নয়
যতই ক্লান্ত হন, কখনই অপরিস্কার চুল নিয়ে ঘুমোতে যাবেন না। চুল পরিষ্কার না করলে একদিনের ময়লাই আপনার চুলের বারোটা বাজাতে পারে।
তাই শ্যাম্পু করে বা এমনি জল দিয়ে ধুয়ে ঘুমোতে যান। শীতকালে হাল্কা হট শাওয়ার নিতে পারেন।
২. রাতে কম্বিং মাস্ট
হাল্কা হাতে কম্বিং করতে অবশ্যই ভুলবেন না। ব্রাশ করা মানে চুলকে খানিক বিন্যস্ত করা। চুলে ময়লা থাকলে তা চলে যায়, বা চুলে হাল্কা জট পড়লে তাও কেটে যায়।
তাই চুল রাতে ঘুমোবার আগে হাল্কা হাতে ব্রাশ করে নেবেন।
৩. ব্রাশ করুন হাল্কা করে
ব্রাশ করার সময়ে খুব জোরে ঘষবেন না। এতে চুল ছিঁড়ে যাবে। স্ক্যাল্পের ওপর বেশি চাপ পড়ায় তেল নিঃসরণও বাড়তে পারে। তাই একদম হাল্কা হাতে চুল আঁচড়ান।
৪. চুল আলগা রাখুন
শক্ত করে চুল বেঁধে ঘুমাবেন না। এতে চুলের ওপর চাপ বাড়ে, চুল ফেটে যায়। তাই চুল এক জায়গায় করে ঘুমোন। দরকার পড়লে হাল্কা একটা বিনুনি করুন বা শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে ঘুমোন। এতে চুল এক জায়গায় থাকবে।
৫. বালিশের কভার পরিষ্কার তো?
অপরিষ্কার তোয়ালে, বালিশের কভার চুল খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ। রাতে ঘুমনোর সময় তাই দেখে নিন পরিষ্কার বালিশের কভারে ঘুমোচ্ছেন কিনা।
তিন দিন অন্তর কভার পাল্টান। চেষ্টা করুন নরম বালিশে শোবার। এতে চুল ভালো থাকে।
এই কয়েকটি সামান্য ডু এবং ডোন্টস লিস্ট মেনে চললে আপনার চুলের রাতের যত্ন খুব ভালোই হবে। এটা কোনও রকেট সায়েন্স নয়। তাই অবশ্যই আপনারা করতে পারবেন।