মজার ব্যাপার হল, সৌন্দর্য সচেতন তরুণ-তরুণীরা চশমা পড়াটা খুব একটা পছন্দ করে না। তবে যদি সানগ্লাস হয় তাহলে ভিন্ন কথা।
যাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ তাদের না চাইতেও চশমা পড়তে হয়।
আপনি যে ধরণের চশমাই পড়ুন না কেন, সঠিকভাবে চশমা ব্যবহার না করলে চশমা থেকেও ত্বকের ক্ষতিসাধন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
চশমা পড়ুয়াদের একটি কমন অভিযোগ হচ্ছে চশমা থেকে নাকের দু’পাশে কালো দাগ পড়ে যায়।
শুধু তাই নয়, মুখের যতখানি জুড়ে চশমা থাকে, ততখানি জায়গা সূর্যের তাপ ও আলো, ধুলাবালি থেকে দূরে থাকে।
ফলে জায়গাটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়, আবার ময়লা জমে ত্বক বিবর্ণ হয়ে যায়।
চশমার দাগ এমন কোন সিরিয়াস ইস্যু না। শুধু আপনার সৌন্দর্যে খানিকটা ভাটা পড়বে।
আজকে কথা বলব ১০টি ঘরোয়া উপায় নিয়ে, যা দিয়ে নাকের দু’পাশে চশমার বিশ্রী দাগ থেকে মুক্তি পাবেন অল্প সময়ের মধ্যেই।
শেষে থাকছে চশমার দাগ পড়া কমানোর জন্য উপকারী কিছু টিপস।
১. অ্যালোভেরার রস
অ্যালোভেরার রস চশমার দাগ হালকা করে। একটি অ্যালোভেরার পাতা নিয়ে ভিতরের জেলটা বের করে দাগের জায়গায় লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
এরপর ধুয়ে ফেলুন। চাইলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন জেল ধোয়ার পর।
এই জেল আপনি রাতে ঘুমানোর আগে লাগাতে পারেন, সারারাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলবেন। দিনে ১-২ বার অ্যালোভেরার জেল লাগাবেন।
২. আলুর রস
একটি আলু প্রথমে কুচি করে রস বের করে নাকের দুইপাশে লাগিয়ে নিন। ঐ রস শুকাতে ১০-১৫ মিনিট লাগবে।
শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আলুতে থাকা এনজাইম ত্বকের মরা কোষ দূর করে ও যেকোন দাগ হালকা করে।
প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২ বার আলুর রস নাকে লাগাবেন।
৩. শসার স্লাইস
শসার পাতলা ২টি স্লাইস নিয়ে নাকের দুইপাশে বৃত্তাকারে আলতো করে ঘষতে থাকুন। ৫-৬ মিনিট মাসাজ করার পরে ধুয়ে ফেলুন।
দিনে ১-২ বার শসার স্লাইস ব্যবহারে চশমার দাগ আস্তে আস্তে হালকা হতে থাকবে।
ত্বকের যেকোন কালো ছোপ ও পোড়া দাগ দূর করতে এবং ত্বককে শান্ত রাখতে এমনিতেই শসা অতুলনীয়।
৪. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
১ চা চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগারকে ১টি ছোট কাপে (চায়ের কাপ হলে ভালো হয়) পানির সাথে মিশিয়ে নিন।
মিশানোর পর এটা তুলা দিয়ে দাগের জায়গায় লাগিয়ে নিন। ১০-১৫ মিনিট পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ভিনেগারের এই মিশ্রণ প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করলে ভালো হয়।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের ন্যাচারাল এস্ট্রিনজেন্ট চশমার দাগ হালকা করতে সাহায্য করবে।
৫. গোলাপজল
রাতে ঘুমানোর আগে কয়েক ফোঁটা গোলাপজল তুলার সাহায্যে নাকের দুইপাশে লাগান।
সারারাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন। কয়েকদিন ব্যবহার করলে নিমেষেই দাগ উবে যাবে।
গোলাপজল দিনে ২ বার ব্যবহার করবেন, ব্যবহার করার সবচাইতে ভালো সময় হচ্ছে সকালে গোসলের পরে এবং রাতে ঘুমানোর আগে।
৬. মধু
মধু ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু মেরামত করে ত্বককে উজ্জ্বল ও ময়েশ্চারাইজ করে।
১ চা চামচ মধু ও ১ চা চামচ কাঁচা দুধ একসাথে মিশিয়ে নাকের দুইপাশে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন।
সবশেষে স্বাভাবিক পানিতে ধুয়ে ফেলুন। দিনে ১-২ বার মধু ব্যবহার করবেন।
৭. কমলার খোসা বাটা
চশমার দাগ হালকা করতে কমলার খোসা বাটা আরেকটি চমৎকার অপশন। তবে কমলার খোসা ব্যবহারের আগে কিছু জিনিস মাথায় রাখা ভালো।
এটা ত্বকে শুষ্কতা তৈরি করতে পারে, তাই খোসা ব্যবহারের পরে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
কমলার ২টি খোসা রোদে ভালো করে শুকিয়ে বেটে মিহি গুঁড়া করে নিন।
এরপর এর সাথে ১ টেবিল চামচ কাঁচা দুধ মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন।
নাকের দাগের জায়গায় লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট শুকাতে দিন এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কমলার খোসার এই পেস্ট দিনে মাত্র ১ বার লাগালেই হবে৷
৮. টমেটোর স্লাইস
টমেটোর পাতলা ২টি স্লাইস নাকের দুইপাশে দাগের জায়গায় ১ মিনিট ঘষুন। এরপরে ১৫ মিনিট শুকিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এই টেকনিক ১৫-২০ দিন ফলো করবেন, ১ বার করলেই যথেষ্ট।
টমেটোতে আছে লাইকোপেন, যেটা মরা কোষ দূর করে, গভীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করে ত্বককে সুন্দর রাখে।
৯. বাদাম তেল
বাদাম তেলের বিশেষ গুণ ত্বকের দাগ হালকা করে ও রং উজ্জ্বল করে। প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে বাদাম তেল মাসাজ করবেন।
৪-৫ ফোঁটা বাদাম তেল নাকের দাগে মাসাজ করে রেখে দিন, সকালবেলা ধুয়ে ফেলবেন।
২ সপ্তাহ বাদাম তেলের মাসাজে উপকারী ফল পাবেন।
চশমার দাগ পড়া কমাতে করণীয়
- চশমা কেনার সময় হালকা ফ্রেমের চশমা বাছাই করার চেষ্টা করবেন।
ভারী চশমায় নাকে দাগ পড়ে খুব তাড়াতাড়ি।
আবার চশমার নোজপ্যাডের কারণেও দাগ সৃষ্টি হতে পারে।
নোজপ্যাড থেকে দাগ বসলে দোকানে গিয়ে নোজপ্যাড পাল্টে নিতে পারেন।
চশমা খুব টাইট হলেও নাকে দাগ বসে যায়। কাজেই আরামদায়ক চশমা দেখে কিনুন। - দাগ পড়া জায়গা শুষ্ক হওয়া থেকে ঠেকাতে নিয়মিত টোনার বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- সবসময় চশমা এবং মুখ দুটোই পরিষ্কার রাখবেন।
মুখে বা চশমায় ময়লা জমলে চশমার নিচে সেই ময়লা চাপা পড়ে দাগ হয়ে যাবে।
মুখে ঘাম বা তেল জমলে চশমা খুলে ঘাম মুছে ফেলবেন। - সারাদিন ধরে ঘন ঘন চশমা খুলবেন। এতে ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক থাকবে।