আমাদের দেশে সবাই মোটামুটি তৈলাক্ত ত্বক নিয়ে ভুগে থাকে।
তৈলাক্ত ত্বক এমন একটি সমস্যা যা অযত্নের অভাবে পরবর্তীতে ব্লাক হেডস ও পিম্পল সহ নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
অতিরিক্ত তেল ত্বকের পোরস এনলার্জ করে ও ময়লা আটকে পিম্পল হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।
তৈলাক্ত ত্বকের সম্পূর্ণ তেল দূর করা সম্ভব না হলেও এর অতিরিক্ত তেল দূর করে একে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করা সম্ভব।
তার জন্য কিছু ধাপ মেনে ত্বকের যত্ন নিতে হবে।

ধাপ ১: অয়েল ক্লিনজিং
আপনি ভাবতেই পারেন যে অয়েল ক্লিনজিং তো ড্রাই স্কিনের জন্য তবে অয়েলি স্কিনের জন্য কেনো বলছি?
কে বলেছে ড্রাই স্কিনের মত অয়েলি স্কিনে ওয়েল ক্লিনজার ইউজ করা যাবে না? বরং, অল টাইপ স্কিনের জন্যই অয়েল ক্লিনজার ইউজ করে ডিপ ক্লিন করা যাবে।
তৈলাক্ত ত্বকে যদি প্রতিদিন মেকআপ করে থাকেন তাহলে রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই এটা খুব ভালোভাবে তুলে ফেলতে হবে অয়েল ক্লিনজিং এর মাধ্যমে।
যদি এই ধাপটি না করেন সেক্ষেত্রে আপনার তৈলাক্ত ত্বক সিবাম তৈরি করে এবং ময়লা আপনার পোরস ক্লগ করে দিবে।
পোরস ময়লা দিয়ে আটকে গেলে সেটা সমাধান করা খুব কষ্টসাধ্য কারণ এর ফলে আপনার ব্রণ বা পিম্পল হওয়া শুরু করবে।
আপনার দৈনন্দিন রুটিনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে রাখুন ওয়েল ক্লিঞ্জিং যা পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্রেকআউটগুলি প্রতিরোধ করবে।
ঘুমানোর আগে আপনার পছন্দমত যেকোনো ব্র্যান্ড এর অয়েল ক্লিনজার বাছাই করুন।
এটা কিছু পরিমাণ তুলোর প্যাড এ নিয়ে সেটা দিয়ে ভালো ভাবে ত্বক পরিষ্কার করুন।

ধাপ ২: ক্লিনজিং
অয়েল ক্লিনজিং এর পর যেকোনো ফোমিং ফেইশওয়াশ দিয়ে আপনার ত্বক পরিষ্কার করে ফেলুন।
এরপর ফেইসওয়াশ দিয়ে ক্লিন করে ডাবল ক্লিনজিং প্রক্রিয়া সম্পুর্ণ করুন।
এটি একটি কোরিয়ান বিউটি মেথড।
তৈলাক্ত ত্বক খুবই সেনসিটিভ হয়।
খুব সহজেই ব্লেমিস বা দাগ পরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাই তৈলাক্ত ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল ও ময়লা দূর করা খুব জরুরি।
কিন্তু ত্বকের প্রয়োজনীয় তেল যাতে দূর না করে শুষ্ক করে ফেলে এমন কোন ফোমিং ফেইসওয়াশ বাছাই করা উচিত।

ধাপ ৩: এক্সফোলিয়েট
এক্সফোলিয়েটেশন হচ্ছে তৈলাক্ত ত্বক সহ যেকোনো ত্বকের জন্যেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তৈলাক্ত ত্বকে খুব বেশি তেল উৎপন্ন হলে এই ধাপটি তার জন্য অপরিহার্য।
আমাদের ত্বকের কোষগুলোর কিছু বয়সসীমা আছে, মানে নির্দিষ্ট সময় পর এটা ডেড সেলে পরিণত হয়।
বাইরের ত্বকের অনেকগুলো স্তর আছে যার মধ্যে স্ট্রাটাম কার্নেয়াম সারফেসে থাকে এবং মৃত কোষের লেয়ার ওখানেই জমা হতে থাকে।
কোষ নিয়মিত পুনর্গঠিত ও রিপ্লেস হয় কিন্তু কিছু কিছু বিষয় আছে যা এই ন্যাচারাল প্রসেসকে বাঁধা দেয় সেইগুলো হতে পারে এজিং, ওয়েদার চেঞ্জ, হরমোনাল প্রবলেম, ভুল প্রোডাক্ট এপ্লাই করা, ডায়েট ইত্যাদি।
মরা কোষের সাথে ত্বকের তেল বের হয়ে আর ধূলোবালি মিশে লোমকূপ বন্ধ হলেই স্কিন প্রবলেম যেমন স্কিনে ক্লগড পোর, রাফনেস, রিংকেল, ডার্ক প্যাচ দেখা যায়।
এগুলো দূর করতে হলে এক্সফোলিয়েট করা মাস্ট।
দানাদার জাতীয় উপাদান দিয়ে স্ক্রাব করাই মূলত এক্সফোলিয়েট করা বলে।
স্ক্রাবিং করার মাধ্যমে আমাদের ত্বকের উপরে যে ডেড সেল জমা হয় সেইগুলো থেকে মুক্তি পেতেই মূলত এক্সফোলিয়েট করা।
এই প্রক্রিয়া সপ্তাহে অন্তত দুই বার ব্যবহার করা উচিৎ।
এর বেশি ইউস করলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।

ধাপ ৪: টোনার
ক্লিনজিং এর পর আপনার ত্বকে দিন টোনিং এর স্বাদ।
টোনার ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করে।
এটি ত্বকের বাড়তি পুষ্টি জোগায় এবং ত্বকের পি এইচ লেভেলের ভারসাম্য বজায় রাখে।
এ ছাড়া লোমকূপ সংকুচিত করে ব্রণ থেকে মুক্তি পেত্ব সাহায্য করে।
টোনিং ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং অতিরিক্ত তেল হওয়া থেকে বিরত রাখে।
তবে অবশ্যই অ্যালকোহল ছাড়া টোনার ব্যবহার করতে হবে।

ধাপ ৫: এসেন্স
আপনার যেকোনো ধরণের ত্বক ই হোক না কেনো ত্বক কে ভিতর থেকে হাইড্রেট করতে হলে এসেন্সিয়াল অয়েল এর ব্যবহার খুব জরুরি।
তৈলাক্ত ত্বক এমনি হাইড্রেটেড ভাবতে পারেন।
কিন্তু এর ও হাইড্রেশন খুব প্রয়োজন।

ধাপ ৬: সিরাম
সিরাম হলো একটি উচ্চ ঘনত্ববিশিষ্ট শক্তিশালী উপাদান যা খুব কম সময়ে ত্বকের গভীরে পৌঁছয়।
সিরাম মূলত বানানো হয় ভিন্ন ভিন্ন ত্বকের চাহিদার উপর ভিত্তি করে।
আমাদের ত্বকের স্পেসিফিক বা যে জায়গাগুলোতে সমস্যা বেশি সেসব জায়গাগুলোত্ব সিরাম জাদুকরী কাজ করে।
এটি ত্বকের বলিরেখা, দাগ ছোপ, স্কিন টোন ও টেক্সচার এর মত দিকগুলোর সমাধান করে।
টোনিং এর পর সিরাম ব্যবহার করলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান হবে আর ত্বক ভালো থাকবে।

ধাপ ৭: শিট মাস্ক
সিরাম ব্যবহার করার পর আপনার ত্বকের বিশেষ যত্নের জন্য এপ্লাই করুন শিট মাস্ক।
এটা ত্বককে কমল রাখতে সাহায্য করে।
এই গরমে শীট মাস্ক ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে সেটা এপ্লাই করতে পারেন।
ঠান্ডা মাস্ক মুখে ব্যবহার করলে নিমিষেই ত্বক ঠান্ডা লাগবে সাথে হবেন রিফ্রেশড।
তবে যাদের ঠান্ডার সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই নরমাল টেম্পারেচারে এই মাস্কটি ব্যবহার করতে পারেন।

ধাপ ৮: ময়েশ্চারাইজিং
আমাদের ত্বককে আর্দ্রতা প্রদান করা ময়েশ্চারাইজারের প্রধান কাজ।
ময়েশ্চারাইজার আমাদের ত্বকের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি ধাপ।
এটি আমাদের ত্বককে ভেতর থেকে হেলদি ও গ্লোয়িং রাখে, যাতে বাইরের দূষণ স্কিনের ক্ষতি করতে না পারে।
ময়েশ্চারাইজার ছাড়া আমাদের স্কিন তার সতেজতা বজায় রাখতে পারে না।
ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস, মুখে হওয়া কালো দাগ, ছোপ থেকে আমাদের দূরে রাখতে ময়েশ্চারাইজার অসাধারণ কাজ করে।
সকালে ও রাতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য বজায় থাকবে ও সাথে স্বাস্থোজ্জ্বল হবে।
এই ৮ টি ধাপ সম্পুর্ণ করার মাধ্যমে আমরা আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখতে পারবো। এবং এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা হওয়ার হাত থেকেই রক্ষা করবে।