সবাই একটি নির্দিষ্ট সময় পর বয়সজনিত কারণে ত্বকের সমস্যার মুখোমুখি হই। তার উপর পরিবেশ দূষন তো রয়েছেই। এগুলোর প্রভাব আমাদের স্কিনের উপর গিয়ে পড়ে।
ফলে দেখা দেয় নানা ধরণের ত্বকের সমস্যা। ত্বকের পিম্পল এমন একটি জেদি সমস্যা । অযত্নের কারণে হয়ে যেতে পারে বড় সমস্যা।
পিম্পল চেহারাকে বেমানান ও দেখতে খারাপ করে দেয়। অনেকেই পিম্পলের জন্য কনফিডেন্ট এর অভাবে ভুগে। আর পিম্পল এমনই নাছোরবান্দা যা একবার হয়ে গেলে দূর করা কষ্টসাধ্য। আর দূর হলে ও চেহারায় এদের জেদি দাগ রয়ে যায়।
এমনটি হওয়ার আগেই একে প্রতিরোধ করুন। কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে একে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
ব্রণ কেন হয়?
প্রধানত হজমের সমস্যা, অ্যালকোহল, বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের প্রভাবে ব্রণ হয়। অনেকের বংশগত কারণও হতে পারে। প্রোপাইনি ব্যাকটেরিয়াম একনিস নামের একধরনের জীবাণুর জন্য ত্বকে পিম্পলের সংক্রমণ ঘটে।
কি কি প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন?
১. বেশি বেশি পানি পান করা
ত্বক যত বেশি হাইড্রেট থাকবে ততই ত্বক ও শরীরের জন্য ভালো। শরীরে ময়লা বা টক্সিন যত কম হবে,পিম্পল হওয়ার সম্ভাবনা তত কম হবে। আর পানি টক্সিনের বিরোধী। সেটা আমরা সবাই জানি। তাই ব্রণের প্রকোপ কমাতে রোজ অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
তবে হালকা গরম পানি হলে আরও বেশি কাজে দেবে।
২. ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল পরিষ্কার করা
ত্বকের সেবাসিয়াস গ্রন্থি বা পোরস থাকে। পোরস হতে সেবাম নামের তৈলাক্ত পদার্থ বের হয়। এটি ত্বককে তৈলাক্ত ও মসৃণ করে তোলে। পোরস এর মুখ বন্ধ হয়ে গেলে সেবাম বের হতে পারে না। ফলে এটি বাধাগ্রস্ত হয় এবং তা জমে ফুলে ওঠে। সেটাকেই আমরা ব্রণ বা পিম্পল হিসেবে জানি। প্রায়ই ব্রণের চারপাশে প্রদাহ হয় এবং লাল হয়ে যায়। জীবাণুর সংক্রমণ হলে এতে পুঁজ হয়। পুজ বের করার পর সেটা সেরে যায় কিন্তু জেদি দাগ রয়েই যায়।
এজন্য ত্বকের অতিরিক্ত তেল পরিষ্কার করে রাখতে হবে। তাহলে পিম্পলের সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
৩. ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার রাখা
ময়লা ত্বকে ব্যাক্টেরিয়া আক্রমণ করে। ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণে পিম্পল হয়ে সেটা খারাপ পর্যায়ে চলে যায়।
তাই আমাদের উচিত রেগুলার আমাদের ত্বক পরিষ্কার রাখা। কিন্তু ক্ষার জাতীয় সাবান ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ক্ষার ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
এটা আমাদের ত্বককে রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ করে দেয়। কোনো মাইল্ড ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে।
কিন্তু অবশ্যই ঘন ঘন ব্যবহার করা যাবে না। সেক্ষেত্রে ত্বকের প্রয়োজনীয় তেল উৎপাদন কমে যাবে। ত্বক ময়েশ্চারাইজড থাকবে ন। ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যাবে।
তাই বাসায় থাকা অবস্থায় সকালে ও রাতে ব্যবহার করবেন। আর বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাসায় এসেই পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
৪. বালিশ এর কাভার রেগুলার পরিবর্তন করা / বালিশে পরিষ্কার কাপর মুড়িয়ে ঘুমানো
ঘুমানোর সময় আমরা বালিশে মাথা রেখে ঘুমাই। এপাশ ওপাশ করায় ত্বকে বালিশের সাথে ঘর্ষণ লেগে যায়। বালিশের কভার ময়লা হয় বেশি।
নিয়মিত পরিবর্তন না করলে ময়লা চেহারায় চলে যেতে পারে। এইভাবে পিম্পল হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। প্রতি সপ্তাহেই পরিবর্তন করুন ।
তবে সবসময় সম্ভব না হলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বালিশ ঢেকে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
৫. চুল যেনো চেহারায় না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে
আমাদের চুলে ময়লা জমে খুব সহজেই। চুলে তেল দেয়া থাকলে সেটা ময়লা আটকে রাখে। সেটা ত্বকের উপরে পড়েও ময়লা জমে।
ফলাফলে পিম্পল এর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে।তাই চুল পনিটেইল বা উঁচু খোপা করে রাখবেন।
তাহলে চুল বার বার চেহারায় আসবে না।
৫. আইস রাবিং
আইস আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। আমাদের ত্বককে ময়েশ্চারাইজড করে গ্লোয়িং ফিনিশিং দেয়। ত্বককে ঠান্ডা করে এর ভেতরের ময়লা দূর করে ফেলে।
ফলে ত্বক অনেক বেশি ভালো থাকে।
তাছাড়াও ত্বকের পোরস মিনিমাইজ হয়।যার ফলে সেবাম নিঃসরণ হয় না। অতিরিক্ত তেল ও উৎপন্ন হয় না।
ফলে ত্বক সুন্দর ও ভালো থাকে।
৬. চেহারায় ঘন ঘন হাত না লাগানো
আমরা আমাদের হাতের মাধ্যমে নানান কাজ করে থাকি। তাই হাতে ধুলো ময়লা লেগে যায় খুব সহজেই।
ময়লা হাত চেহারার স্পর্শ করলে চেহায়ায় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়ে ঘটাতে পারে পিম্পল ও ব্রণ সহ কিছু ত্বকের সমস্যা।
৭. মেকআপ যত সম্ভব কম ব্যবহার করা
যারা প্রায় রোজ মেকআপ ব্যবহার করেন আজই ওয়ার্নিং দিচ্ছি!
মেকআপ যত কম ব্যবহার করবেন, সেটা স্কিনের জন্য তত ভালো হবে।
মেকআপ এর ফলে ত্বকে ময়লা আটকে থাকে। যা কিনা পিম্পল হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। তাই মেকআপ কম করার চেষ্টা করুন।
আর অবশ্যই রাতে মেকআপ তুলে ঘুমাবেন। এজন্য যেকোন ক্রিম বা অয়েল তুলোর প্যাডে নিন।
সেটা দিয়ে ভালোভাবে মুখের মেকআপ তুলে ফেলুন।
তবে কেউ চাইলে মিশাইলার ওয়াটার ও ব্যবহার করতে পারেন।
এবং ময়েশ্চারাইজার এপ্লাই করে ঘুমিয়ে পড়ুন। ব্যাস!
৮. স্কিন কেয়ার রুটিন
ত্বকের যত্নে ৮ ধাপের স্কিন কেয়ার রুটিন অবশ্যই ফলো করতে হবে।
যেমন- ক্লিনজিং, ময়েশ্চারাইজিং, টোনিং, সিরাম, সানস্ক্রিন ইউস, সপ্তাহে ২/৩ বার ন্যাচারাল ফেসপ্যাক ব্যবহার করা। এসব আপনার রুটিনে রাখবেন।
এভাবে যত্ন নিলে ত্বক সুন্দর ও সাবলীল থাকবে। পিম্পল ও উঠবে না।