অনেকের ত্বকেরই একটা সমস্যা হলো বড় বড় রোমকূপ।
সাধারণত নাকের পাশে দেখা যাওয়া এসব রোমকূপ মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়।
এদের কারণে ত্বক দেখায় অমসৃণ। ত্বকের পোর বা রোমকূপ অনেকটা রাবার ব্যান্ডের মতো।
এগুলোর নিজের একটি শেপ থাকে বটে। কিন্তু রাবার ব্যান্ডের মতোই তা বড় হয়ে যেতে পারে।
বয়স, রোমকূপে ময়লা জমা, ব্রণ খোঁচানো- এসব কারণে পোরস বড় হয়ে যেতে পারে।
ত্বকে বড় বড় রোমকূপ যেমন দৃষ্টিকটু, তা ত্বকের জন্যেও খারাপ এবং বড় রোমকূপ থাকলে মেকআপ ভালোভাবে বসে না।
তবে রোমকূপ বড় হয়ে গেলে তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
এতে পোরস দেখতে ছোট লাগবে।
এক্সফলিয়েট
ত্বকে মরা কোষ জমে গেলে তা রোমকূপে ঢুকে পড়তে পারে।
এতে পোর ব্লক হয়ে তাকে আরও বড় দেখায়।
ত্বক থেকে মৃত কোষ দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো তা এক্সফলিয়েট করে ফেলা।
আপনার যদি ত্বকে ব্রণ বেশি হয়, তাহলে বেটা হাইড্রক্সি এসিড বা স্যালিসাইলিক এসিড আছে এমন স্ক্রাব বা এক্সফলিয়েটর ব্যবহার করতে পারেন।
যাদের ত্বক স্বাভাবিক তারা আলফা হাইড্রক্সি এসিড আছে এমন ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়া রেটিনল ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
সিবাম কমান
ত্বকে তেল উৎপাদন বেশি হলে পোর বড় লাগে দেখতে।
এই তেল বা সিবামের উৎপাদন কমাতে পারেন ক্লে বা চারকোল ফেসওয়াশ বা ক্লিনজার ব্যবহারে।
এসব ক্লিনজার ত্বকের তেল দূর করার পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া ও ময়লাও টেনে বের করে।
প্রাইমার
মেইক-আপ ব্যবহারের আগে প্রাইমারের ব্যবহার ত্বকে আমুল পরিবর্তন আনে।
এটা ব্যবহারে ত্বক মসৃণ ও কোমলভাব আসে।
অধিকাংশ ত্বকের ক্ষেত্রে সিলিকন বা ডিমেথিকন সমৃদ্ধ প্রাইমার খুব ভালো কাজ করে।
কোলাজেন উৎপাদন বাড়ান
ত্বক টানটান ও তরুণ দেখানোর জন্য কাজ করে কোলাজেন নামের প্রোটিনটি।
কোলাজেন রোমকূপের দেয়াল টানটান করে তাকে ছোট রাখে।
বয়সের সাথে কোলাজেন উৎপাদন কমে আসে বলে আপনার ত্বকের রোমকূপ বড় দেখাতে পারে।
মাইক্রোনিডলিং বা লেজার ট্রিটমেন্টে কোলাজেন উৎপাদন বাড়ে।
এছাড়া রেটিনয়েড ব্যবহার করলেও কোলাজেন বাড়ে।
চারকোল অথবা ক্লে ফেসমাস্ক
ফেসপ্যাক বা ফেসমাস্ক অনেকেই ব্যবহার করেন ছুটির দিনগুলোতে।
এক্ষেত্রে চারকোল বা মুলতানি মাটি বা অন্য কোন ক্লে আছে এমন ফেসমাস্ক ব্যবহার করুন।
এই মাস্ক ব্যবহারে আপনার ত্বক থেকে চলে যাবে অতিরিক্ত তেল।
স্টিম
পার্লারে গেলে সব সময়েই দেখা যায় একটা স্টিম মেশিন।
এটার মূল কাজই হলো মুখে বাষ্পের ঝাপটা দিয়ে পোরগুলো খুলে ফেলা।
এরপর খুলে থাকা পোরের ভেতর থেকে ময়লা বের করে ফেলা হয়।
তারপর পোর বন্ধ হয়ে গেলে অনেক ছোট দেখায় এগুলোকে।
বাড়িতেও আপনি নিতে পারেন এমন স্টিম।
এর জন্য গরম পানি, টাটকা গোলাপের পাপড়ি, তুলসি এবং পুদিনা পাতা নিতে পারেন একটা বড় বোলে।
বোলের ওপরে একটা তোয়ালে দিয়ে ঢেকে দিন।
এর ৫ মিনিট পর তোয়ালে সরিয়ে নিজের মুখ রাখুন বোলের ওপরে ধোঁয়ায়।
তোয়ালেটা দিয়ে নিজের মাথা ও বোল একসাথে ঢেকে দিন যাতে পুরো স্টিম আপনার মুখে লাগে।
১০-১৫ মিনিট এভাবে স্টিম নেবার পর মুখ সরিয়ে নিন। ঈষদুষ্ণ পানিতে মুখ ধুয়ে আলতো করে মুছে নিন।
এছাড়াও রইলো রোমকূপ ছোট দেখানো আরও কিছু টিপস
- মুখ পরিষ্কার রাখুন। কখনো মেকআপ না তুলে ঘুমাতে যাবেন না।
- পোর বড় হবার পাশাপাশি ব্রণ হবার প্রবণতা থাকলে স্যালিসাইলিক এসিড আছে এমন কোন এক্সফলিয়েটিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।
- সূর্যরশ্মি ত্বকের যে ক্ষতি করে তার ফলেও পোর বড় দেখাতে পারে। সবসময় ব্যবহার করুন সানস্ক্রিন।
যেসব জিনিস অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দেওয়া উচিৎ নয়
নেইল কাটার
হাতের আঙ্গুলে, নখের ফাঁকে থাকে নানা রকম জীবাণু।
খুব সাধারণ একটি নেইল কাটার ব্যবহারের মাধ্যমে হতে পারে বড় ইনফেকশন।
একজনের নেইল কাটার আরেকজন ব্যবহার করলে ফাঙ্গাল ডিজিজ এবং এইচপিভি হতে পারে।
চিরুনি
হাতের কাছে যেই চিরুনি পান সেটা দিয়েই চুল আঁচড়ান?
তাহলে সাবধান হওয়া জরুরী। কারণ, চিরুনির মাধ্যমে উকুন, স্ক্যাবিস ছড়াতে পারে।
এমনকি মাথার ত্বকে ইনফেকশনও হতে পারে।
অন্য কেউ যদি আপনার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে ফেলে তাহলে সেটাকে স্যানিটাইজার দিয়ে সাথে সাথে পরিষ্কার করে ফেলুন।
তোয়ালে
অনেকসময় বাড়িতে এক তোয়ালে কয়েকজনকে ব্যবহার করতে দেয়া যায়।
একজনের তোয়ালে আরেকজন ব্যবহার করলে ফাঙ্গাল ইনফেকশন এবং ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারে।
ফলে র্যাস, ব্রণ এবং কনজাঙ্কটিভাইটিস হতে পারে।
চার-পাঁচ বার ব্যবহারের পরেই তোয়ালে ভালো করে ধুয়ে কড়া রোদে শুকিয়ে নেয়া উচিত।
কসমেটিকস
আই লাইনার, লিপস্টিক, কনসিলার, ফাউন্ডেশন, মেকআপ ব্রাশ ইত্যাদি জিনিস অন্য কাউকে ব্যবহার করতে না দেয়াই ভালো।
এমনকি মেকআপ স্টোরেও ট্রায়াল দেয়ার জন্য যেগুলো রাখা হয় সেগুলো ব্যবহার করবেন না।
নানা জীবাণু ছড়াতে পারে এসব কসমেটিকস এর মাধ্যমে।