কিছু সহজলভ্য জিনিস আমাদের হাতের কাছে থাকা সত্বেও সেটা আমাদের অদেখাই রয়ে যায়।
কিছু জিনিস আমাদের জন্য এতটাই কার্যকর যে আমরা তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না অথচ সেটা আপনার রান্নাঘরেই ঘাপটি মেরে আছে।
আমাদের রান্নাঘরে থাকা খুব সহজ উপাদান দিয়ে আমাদের ত্বক ও চুলের যত্ন খুব সহজেই নেয়া যায়।
তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চাল।
হ্যা, ঠিক শুনেছেন। আমরা বাঙালিরা চাল ছাড়া চলতেই পারি না একদিন।
অথচ ভাত রান্না করে খাওয়া ছাড়াও যে এর অনেক বিশেষ গুণ রয়েছে সেই সম্পর্কে আমরা অবগত নই।
আর সে সব জানতে হলেই পুরো লেখাটি পড়ুন।
চালে বিদ্যমান গুরুত্বপূর্ণ উপাদান
চালে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন ও আয়রন যা মাংশপেশি পুনর্গঠন ও শক্তি সঞ্চার করতে সাহায্য করে।
তাছাড়াও চালে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের এন্টি-অক্সিডেন্ট যেমন ফেনলিক আর ফ্লেভোনইড কম্পাউন্ডস, ভিটামিন-বি৬, ভিটামিন-ই, স্ট্রার্চ, কার্বোহাইড্রেট ও এমাইনো এসিড।
এসব উপাদান আমাদের চুল,ত্বক ও স্বাস্থের জন্য খুব উপকারী।
আমাদের ত্বক চুলের সৌন্দর্য বজায় ও বৃদ্ধি করতে চালের পানির কোনো জুড়ি নেই।
ভাতের মাড়ের উপকারিতা
আমরা ভাত রান্না করি আর এটি খুব সুন্দর যাতে ঝড়ঝড়ে হয় তাই ভাত ফুটিয়ে এর মাড় ফেলে দেই কিন্তু ভাতের মাড়ের গুণাবলি জানলে সেটা ফেলে দেয়ার বদলে সংগ্রহ করে রাখতেন।
তবে অনেক কেই দেখা যায় সুতি কাপড় ধোয়ার জন্য মাড় জমিয়ে রাখতো কিন্তু তাদের ধারণা নেই যে এটা চুল ও ত্বকের জন্য কত টা উপকারী।
তাছাড়াও ভাতের মাড় খেলেও তা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে কাজ করে।
রোগ নিরাময় এর ক্ষেত্রে ভাতের মাড়
ভাতের মাড়ে আছে ৮ ধরনের এমাইনো-এসিড, ক্যালশিয়াম, আয়রন ও প্রোটিন যা ডায়রিয়া বা জ্বড় থেকে দ্রুত রক্ষা করতে খুন ভালো কাজ করে।
ডায়রিয়া বা জ্বর প্রতিরোধে আপনি ভাতের মাড় প্রথমে ঠান্ডা করে নিন।
এটি ঠান্ডা করে তাতে অল্প পরিমাণে লবণ মিশিয়ে খেলে জ্বর অ ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে মুক্তি পাওয়া যায়।
আর ভাতের মাড় এলোভেরা জেল এর সাথে মিক্স করে খেলে শরীরের ভিতরের জ্বালা পোরা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
চালের পানির মাধ্যমে সৌন্দর্য বর্ধন
চালের পানি সৌন্দর্য বর্ধক হিসেবে খুব ভালো কাজ করে।
এটি তে থাকা বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিগুণ আমাদের চুল ও ত্বক এর জন্য খুব বেশি ফলদায়ক।
আমাদের আশেপাশে এখন খুব বেশি পলিউশন ও ধুলা বালি যা আমাদের স্কিন এর পাশাপাশি আমাদের চুল ও খুব ড্যামেজ করে দেয়।
এই ড্যামেজ থেকে ঠেকাতে আজই পদক্ষেপ নিন চুল ও ত্বক এর যত্ন নেয়া শুধু মাত্র একটি উপাদান দ্বারাই।
চাল ধোয়া পানি একটি এশিয়ান সিক্রেট
চীনের ‘হুয়াংলুও’ গ্রামের এক জাতী ছিলো যাদের নাম ‘রেড ইয়াও’ তাদের এই জাতী কে বলা হতো “ল্যান্ড ওফ রাপানজেল”।
তাদের চুল ছিলো মাথা ভর্তি আর পা সমান লম্বা। তাদের এই চুলের রহস্য ছিলো রাইস ওয়াটার।
চুলের জন্য কীভাবে বানাবেন?
চুলের যত্ন চাল ও পানি দ্বারাই খুব সহজে ২ ধরণের উপায়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন রাইস ওয়াটার বা চালের পানি।
১. ফার্মেন্টেড রাইস ওয়াটার
২. নন ফার্মেন্টেড রাইস ওয়াটার
নন ফার্মেন্টেড রাইস ওয়াটার খুব ই সহযে তৈরি করে ফেলতে পারেন যা আপনার নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে।
প্রথমে আপনি কিছু চাল পানির মধ্যে ভালো ভাবে ধুয়ে নিন।
কারণ বাহির থেকে আসার কারণে খুব ধুলো বালি জমে থাকে।
সেটা ধুয়ে ঝড়িয়ে নিন। ঝড়ানোর পর একটু জগ এ চাল গুলো রেখে তার মধ্যে এক/দুই কাপ পানি দিন।
ভালোভাবে নেড়েচেরে নিন যাতে করে চালের মধ্যে থাকা স্টার্চ ও সকল ভিটামিন পানির মধ্যে চলে আসে।
একটা ক্লাউডি বা মেঘের মত মিক্সার হবে। এমন হলেই বুঝতে পারবেন আপনার রাইস ওয়াটার রেডি।
কিন্তু ফার্মেন্টেড রাইস ওয়াটার, সেটা আবার কিভাবে?
ফার্মেন্টেড মানে আরো বেশিক্ষণ রাখা।
চালগুলো একটি এয়ার টাইট বক্স এ নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে পুরো ২৪ ঘন্টা।
২৪ ঘন্টা পর ই রেডি ফার্মেন্টেড রাইস ওয়াটার।
এটা নন ফার্মেন্টেড রাইস ওয়াটার এর চেয়েও খুব বেশি উপকারী।
এটা ২৪ ঘন্টা রাখার পর এর থেকে এসিডিক স্মেল পাওয়া যাবে।
একটু অসহনীয় হলেও এটি খুব জাদুকরী কাজ করে।
চুলের কীভাবে এপ্লাই করবেন?
রাইস ওয়াটার ফার্মেন্টেড বা নন ফার্মেন্টেড যেটাই হোক না কেনো এপ্লাই করা খুব সহজ।
আপনার রেগুলার শিডিওল অনুযায়ী নরমাল গোসলে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনের পর আপনি পুরো চুলে রাইস ওয়াটার হাত দিয়ে ম্যাসাজ করে করে এপ্লাই করবেন।
খেয়াল রাখবেন স্ক্যাল্প এ যাতে ভালো মত যায়।
স্প্রে বোতলে করে এপ্লাই করতে চাইলে সেটা আরো সহজ ও সব জায়গায় পৌঁছে যায়।
হেয়ার টোনার হিসেবে
হেয়ার টোনার হিসেবে আপনি ফার্মেন্টেড রাইস ওয়াটার ইউস করতে পারেন।
একটি কটন বল দিয়ে ড্যাব ড্যাব করে প্রথমে স্ক্যাল্প এ লাগাতে হবে পরে সম্পুর্ণ চুলে এপ্লাই করতে হবে।
শাওয়ার ক্যাপ পরে আধা ঘন্টা অপেক্ষা করুন।
তারপর ধুয়ে ফেলুন। নিজেই এর পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
চুলের জন্য যা যা উপকার করে
রাইস ওয়াটার প্রথম ওয়াশ থেকেই খুব সহজে পার্থক্য বুঝতে পারবেন। এটি চুলের জন্য খুব ই উপকারী, যেমন-
১. চুলের গ্রোথ বৃদ্ধি পাবে
২. চুল লম্বা ও ঘন হবে
৩. চুলের খুশকি দূর করবে
৪. চুলের উজ্জ্বল বাড়াবে
৫. চুল পড়া রোধ করবে
ত্বকের যত্নে চালের পানি
ত্বক কে সুন্দর করতে চালের পানি বিভিন্ন ভাবে এপ্লাই করে ত্বকের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে ও এর যত্ন নিতে পারেন।
টোনার
চাল সিদ্ধ করে মাড় সংগ্রহ করুন। রুম ট্যাম্পারেচার এ রেখে এটি ঠান্ডা হতে দিন।
ঠান্ডা হয়ে এলে আপনি একটি কটন প্যাড বা বল এর মাধ্যমে ড্যাব ড্যাব করে এপ্লাই করুন।
২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
এটা ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে তাই এর পর আর ময়েশ্চারাইজার এপ্লাই করার দরকার নেই।
ফেইস মাস্ক
ভাতের মাড় এক্ষেত্রে বেশি ফলদায়ক হবে।
যেকোনো ভাড়ি শিট মাস্ক এর মধ্যে ডুবিয়ে নিন।
তার পর একটু নিংড়ে নিয়ে অতিরিক্ত অয়ানি ফেলে দিন।
এটা ২০/২৬ মিনিটের জন্য ফেইসে এপ্লাই করে রেখে দিন। পরে ধুয়ে ফেলুন।
আইস রাবিং
পোর মিনিমাইজ এর জন্য যে কোনো আইস ট্রে তে চালের ধোয়া পানি নিয়ে সেটা কে ফ্রিজিং করুন।
এক কিউব করে রেগুলার ফেইসে ম্যাসাজ করুন।
তাতে করে পোর মিনিমাইজ ও স্কিন টাইট হবে।
সানবার্ন রিমুভ করতে
সানবার্ন রিমুভ করতে এটা বেশ ইফেক্টিভ।
রাইস ওয়াটার এর সাথে এলোভেরা জেল ব্লেন্ড করে সেটা এপ্লাই করে বের হলে সানবার্ন হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে আর ট্যান থাকলে সেটাও রিমুভ হবে।
ফেইস মিস্ট
এটা ফেইসে এ ঠান্ডার অনুভূতি দেয়।
আর এতে থাকা এন্টি সানহিট প্রোপার্টি সানবার্ন দূর করতে সাহায্য করে।
তাই ছোট কোনো স্প্রে বোতলে রাইস ওয়াটার নিয়ে রাখুন।
ঘর থেকে বের হলেই মুখে স্প্রে করুন।
বডি ওয়াশ
চালের পানি বা রাইস ওয়াটার বডি ওয়াশ হিসেবে ব্যাবহার করলে খুব সুফল পাওয়া যাবে।
যাদের র্যাশ, এলার্জি বা একজাইমা আছে তারা রেগুলার তাদের গোসলের পানির সাথে চালের পানি মিক্স করে সেটা এপ্লাই করলে খুব ভালো রেজাল্ট পাবেন।
স্টোরিং
রাইস ওয়াটার স্টোর করা খুব ই সহজ।
বানানোর পর শুধু এটিকে ফ্রিজে রেখে ১/২ সপ্তাহ পর্যন্ত ইউস করে নতুন করর আবার বানিয়ে ফ্রিজে রেখে সংতক্ষণ করতে পারবেন।
এত্ত এত্ত বেনিফিট শুধু মাত্র একটি উপাদান এ যা আবার আপনার রান্নাঘরে সবসময়ই থাকে।
তাই আজ থেকেই এই ট্রিক এপ্লাই করে ফেলুন।